পলিসের বৈশিষ্ট্য

প্রাচীন গ্ৰিসের পলিস বা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র আয়তন, স্বল্প জনসংখ্যা, শাসন কাঠামো, নাগরিক ও অনাগরিক, জনগণের প্রত্যক্ষ শাসন, গঠন বিন্যাস, স্বাতন্ত্র্য, নগরকেন্দ্রিকতা ও গ্রামকেন্দ্রিকতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ধর্মীয় বিশেষত্ব সম্পর্কে জানবো।

গ্ৰিসের নগর রাষ্ট্র বা পলিসের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে গ্রিক পলিসের ক্ষুদ্র আয়তন, গ্রিক পলিসের শাসন কাঠামো, গ্রিক পলিসের স্বল্প জনসংখ্যা, গ্রিক পলিসে জনগণের প্রত্যক্ষ শাসন, গ্রিক পলিসের নাগরিক, গ্রিক পলিসের ধর্মীয় বিশেষত্ব, গ্রিক পলিসের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও গ্রিক পলিসের গঠন বিন্যাস সম্পর্কে জানব।

পলিসের বৈশিষ্ট্য

ঐতিহাসিক ঘটনাপলিসের বৈশিষ্ট্য
আয়তনক্ষুদ্রত্ব
জনসংখ্যাস্বল্প
হেলাইয়াজুরি আদালত
অ্যাপেলাস্পার্টার সমিতি
একলেজিয়াএথেন্সের সমিতি
শ্রেষ্ঠ দেবতাজিউস
পলিসের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা :- প্রায় ২৫০০ বছর আগে গড়ে ওঠা গ্রিক পলিস বা নগর-রাষ্ট্রগুলি আধুনিক রাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন দিক দিয়ে পৃথক ছিল। আধুনিক রাষ্ট্রের বিচারে প্রাচীন গ্রিক পলিসগুলির আয়তন বেশ ক্ষুদ্র এবং জনসংখ্যা খুব কম হত। রাষ্ট্রের এই ক্ষুদ্রত্ব এবং স্বল্প জনসংখ্যাই পলিসগুলির অন্যতম গুণ বলে গ্রিকরা মনে করত। এই প্রেক্ষাপটে প্রাচীন গ্রিক পলিসগুলির নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

(ক) ক্ষুদ্রায়তন

গ্রিক পলিস বা নগর-রাষ্ট্রগুলি আকারে এবং আয়তনে আধুনিক রাষ্ট্রের তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র হত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) ক্ষুদ্রায়তনকে সমর্থন

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাঁর ‘Politics’ গ্রন্থে এবং দার্শনিক প্লেটো তাঁর ‘Republic’ গ্রন্থে পলিসগুলির ক্ষুদ্র আয়তনকেই সমর্থন করেছেন। অ্যারিস্টটল বলেছেন যে, প্রতিটি পলিসের আয়তন এমন ক্ষুদ্র হওয়া উচিত, যাতে পলিসের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে প্রত্যক্ষ পরিচয় থাকে। অবশ্য অ্যারিস্টট্ল অত্যন্ত ক্ষুদ্র পলিসকে সমর্থন করেন নি।

(২) শাসনকার্যে অংশগ্রহ

বস্তুত, গ্রিক পলিসগুলির আয়তন এমন ক্ষুদ্র হত যে, পলিসের প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের শাসনকার্যে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারত।

(৩) বিভিন্ন পলিসের আয়তন

  • (i) গ্রিস-এর কিয়স নামে ক্ষুদ্র দ্বীপটি চারটি পলিসে বিভক্ত ছিল। করিন্থ নামে একটি পলিসের আয়তন ছিল মাত্র ৩০০ বর্গমাইল। পারস্য ও বিভিন্ন গ্রিক পলিসগুলির মধ্যে যে প্লাটিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেই যুদ্ধে মাইসিনি নামে একটি পলিস মাত্র ৮০ জন সৈন্য পাঠিয়েছিল। এই বিষয়টি থেকে গ্রিসের পলিসগুলির আয়তনের ক্ষুদ্রতার বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যায়।
  • (ii) আয়তনের ক্ষুদ্রত্বের জন্য আর. জে. হোপার গ্রিক পলিসগুলিকে ‘অস্বাভাবিক রাষ্ট্র’ বা ‘Abnormal States’ বলে এবং ভিক্টর এরনবার্গ ‘Narrowness of Space’ বা ‘ক্ষুদ্র ভূখণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। অথচ প্রাচীন দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল একে ‘A Perfect Community’ বলে অভিহিত করেছেন।

(খ) স্বল্প জনসংখ্যা

পলিসের আয়তন খুবই ছোটো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি পলিসে জনসংখ্যা খুবই কম হত। এথেন্স বা সিরাকিউজের মতো কিছুটা বড়ো ও গুরুত্বপূর্ণ পলিসে জনসংখ্যা কিছুটা বেশি থাকলেও অধিকাংশ পলিসের জনসংখ্যা ছিল ৫ হাজার বা তার চেয়েও কম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) স্বল্প জনসংখ্যাকে সমর্থন

  • (i) দার্শনিক অ্যারিস্টটল খুব বেশি জনসংখ্যা নিয়ে পলিসের গঠনকে সমর্থন করেন নি, আবার মাত্র কয়েকজন নাগরিক নিয়ে পলিস গঠনেরও তিনি বিরোধিতা করেছেন। তিনি তাঁর Politics গ্রন্থে বলেছেন যে, ১০ জন নাগরিক নিয়ে গঠিত পলিস যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে না, তেমনি ১ লক্ষ নাগরিক নিয়ে গঠিত পলিসও সুদক্ষ শাসন পরিচালনা করতে পারবে না।
  • (ii) দার্শনিক প্লেটো বলেছেন যে, একটি আদর্শ পলিসের জনসংখ্যা হওয়া উচিত ৫০০০। অবশ্য একটি পলিসে ৫০০০-এর কম জনসংখ্যাকে প্লেটো সমর্থন করেননি। আবার সমকালীন হিপপোডামাস বলেছেন যে, একটি আদর্শ পলিসের জনসংখ্যা হওয়া উচিত ১০ হাজার।

(২) বিভিন্ন পলিসের জনসংখ্যা

পেলোপনেসীয় যুদ্ধের শুরুতে (৪৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) গ্রিসের মাত্র কয়েকটি পলিসের জনসংখ্যা ২০,০০০ অতিক্রম করেছিল। অ্যাটিকা নামের পলিসটির জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ছিল বলে ইতিহাসবিদ কিট্টো জানিয়েছেন। আবার ফিনলে বলেছেন যে, এই সময় এথেন্সে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার, করিন্থে ৯০ হাজার, থিবস, আরগস, করকায়রা এবং আক্রাগাস -এ ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার জনসংখ্যা ছিল। স্পার্টার আয়তন অন্য পলিসগুলির তুলনায় কিছুটা বড়ো হলেও এখানকার জনসংখ্যা যথারীতি কম ছিল।

(গ) শাসন কাঠামো

(১) প্রথমদিকে পলিসগুলি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের অধীনে শাসিত হলেও পরবর্তীকালে বেশিরভাগ গ্রিক পলিসেই রাজা বা রাজতন্ত্রের অবলুপ্তি ঘটে। এই সময় থেকে অভিজাত পরিবারগুলির সমন্বয়ে গঠিত এক-একটি গোষ্ঠী পলিসগুলির শাসন পরিচালনা করতে থাকে।

(২) পরবর্তীকালে গ্রিসের পলিসগুলিতে গণতান্ত্রিক, অভিজাততান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের শাসন কাঠামো চালু হয়। এথেন্স ছিল গণতান্ত্রিক এবং স্পার্টা ছিল অভিজাততান্ত্রিক পলিসের আদর্শ উদাহরণ। অবশ্য স্পার্টার মতো দু-একটি পলিসের রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি ছিল ব্যতিক্রমী ধরনের।

(৩) স্পার্টায় একদিকে যেমন বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল, অন্যদিকে তেমনি এই রাজতন্ত্রের অধীনে অভিজাততন্ত্রের শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। রাজা সেখানে প্রত্যক্ষভাবে শাসন পরিচালনা করতেন না, রাজা সেনাপতি ও পুরোহিত হিসেবে কাজ করতেন।

(৪) গ্রিসের পলিসগুলির শাসন কাঠামো বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রধান তিনটি অংশ ছিল –

  • (i) সমিতি,
  • (ii) পরিষদ,
  • (iii) ম্যাজিস্ট্রেট।

এগুলি ছাড়াও এথেন্সে হেলাইয়া বা জুরি আদালতের অস্তিত্ব ছিল যা অন্যান্য পলিসে ছিল না।

(i) সমিতি

এথেন্সে সমিতি একলেজিয়া নামে এবং স্পার্টায় অ্যাপেলা নামে পরিচিত ছিল। পলিসগুলিতে পরবর্তীকালে সমিতির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গণতান্ত্রিক পলিসে প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিক এবং অভিজাততান্ত্রিক পলিসে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিকরা সমিতিতে ভোটদানের অধিকারী ছিল।

(ii) পরিষদ

প্রথমদিকে পরিষদ এথেন্সে অ্যারিওপাগাসের কাউন্সিল এবং স্পার্টায় গেরুসিয়া নামে পরিচিত ছিল। সাধারণভাবে অভিজাততন্ত্রে সমিতির তুলনায় পরিষদের গুরুত্ব বেশি থাকলেও স্পার্টা ছিল এর ব্যতিক্রম।

(iii) ম্যাজিস্ট্রেট

ম্যাজিস্ট্রেটরা এথেন্সে আরকন এবং স্পার্টায় ইফর নামে পরিচিত ছিল। ম্যাজিস্ট্রেটরা এথেন্সে রাজার বিকল্প হিসেবে কাজ করতেন। তবে স্পার্টায় ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজার পাশাপাশি কাজ করতেন।

(৫) পলিসগুলির সাংবিধানিক নীতিতে ক্ষমতা বিভাজন নীতির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সমিতি ও পরিষদ একাধারে আইন প্রণয়ন, পলিসের নীতি নির্ধারণ এবং কখনো-কখনো বিচার বিভাগের কাজ সম্পাদন করত। ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রধান দায়িত্ব ছিল বিচারক হিসেবে কাজ করা। তবে তারা বিচারকার্যের পাশাপাশি আইন প্রণয়নের কাজও করতেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতেন।

(ঘ) নাগরিক ও অনাগরিক

প্রতিটি গ্রিক পলিসে বসবাসকারী জনগণ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল – নাগরিক ও অনাগরিক। অনাগরিকরা তিনভাগে বিভক্ত। বিদেশি, ক্রীতদাস ও মহিলা।

(১) নাগরিক

অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও কৃষিজীবী পলিসগুলিতে নাগরিকরা মোটামুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলেও অন্যান্য পলিসগুলিতে তারা ছিল সংখ্যালঘু। স্পার্টার মতো পলিসে নাগরিকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সাধারণত জন্মসূত্রে নাগরিক না হলে পলিসে নাগরিক অধিকার পাওয়া যেত না। নাগরিকরা দেশের বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ও প্রত্যক্ষ সুযোগসুবিধা ভোগ করত। গণতান্ত্রিক পলিসগুলিতে সকল নাগরিক মোটামুটি সমান সুযোগসুবিধা ভোগ করত। তবে কোনো কোনো পলিসে ধনী ও দরিদ্র নাগরিকদের মধ্যে অধিকারভোগের তারতম্য ছিল। যেমন – অভিজাততান্ত্রিক স্পার্টায় একমাত্র ধনীরাই অশ্বারোহী ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত পদাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারত।

(২) বিদেশি

বিদেশিরা বিভিন্ন পলিসে বসবাসের অধিকার এবং সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। এথেন্সে বিদেশিরা মেটিক নামে পরিচিত ছিল। এথেন্সের শাসক পেরিক্লিস বলেছিলেন যে, “আমরা বিদেশিদের কোনো শিক্ষা বা দৃশ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখি না।” তবে বিদেশিদের কোনো নাগরিক অধিকার ছিল না।

(৩) ক্রীতদাস

ধনীরা নিজেদের কৃষিক্ষেত্র ও অন্যান্য কাজে ক্রীতদাসদের নিয়োগ করতে, ভাড়া খাটাতে, বিক্রি করতে, এমনকি হত্যাও করতে পারত। ক্রীতদাসরা এথেন্সে থিটিস নামে এবং স্পার্টায় হেলট নামে পরিচিত ছিল।

(৪) মহিলা

মহিলারা নাগরিক হিসেবে গণ্য হত না বলে তারা সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।

(ঙ) জনগণের প্রত্যক্ষ শাসন

পলিসগুলির শাসন পরিচালনায় নাগরিকরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারত। ক্ষুদ্র পলিসগুলির নাগরিকরা প্রত্যেকেই প্রত্যেককে চিনত এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কোনো শাসনবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। শাসনকার্যের নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে পলিসের সকল নাগরিক কোনো নির্দিষ্ট একটি স্থানে উপস্থিত হত। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, সংখ্যালঘু নাগরিকরা শাসন পরিচালনার ক্ষমতা ভোগ করলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনাগরিকরা এই ক্ষমতা ভোগ করতে পারত না। মহিলা, ক্রীতদাস, বিদেশি প্রভৃতি অনাগরিকরা শাসনক্ষমতার বাইরে অবস্থান করত।

(চ) গঠন বিন্যাস

পলিসগুলির গঠন বিন্যাস ছিল নিম্নরূপ। –

(১) শাসনকেন্দ্র

অধিকাংশ পলিসের কেন্দ্রস্থলে একটি উঁচু স্থানে বা পাহাড়ি অঞ্চলে পলিসের শাসনকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হত। পাহাড়ের শিখরে প্রতিষ্ঠিত শাসনকেন্দ্রটিকে বলা হত ‘অ্যাক্রোপলিস’। অ্যাক্রোপলিস দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত থাকত।

(২) মন্দির

এ ছাড়া নির্মিত হত বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির বা উপাসনাগৃহ। ও

(৩) বাজার

অধিকাংশ পলিসেই জনসাধারণের জন্য একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হত যা ‘অ্যাগোরা’ নামে পরিচিত হত। এই বাজারগুলি পলিসের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র হিসেবে কাজ করত। এখানে একদিকে যেমন পণ্যসামগ্রী লেনদেন চলত অন্যদিকে তেমনি পলিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আলোচনা ও মতের আদানপ্রদান হত।

(৪) গ্রামীণ অঞ্চল

নগর-প্রাচীরের বাইরে ‘চোরা’ নামে একটি গ্রামীণ অঞ্চল থাকত যেখানে দরিদ্রদের বসতি, পশুচারণ ভূমি প্রভৃতি থাকত। বিদেশি আক্রমণের সময় এই অঞ্চল জনশূন্য হয়ে যেত।

(ছ) স্বাতন্ত্র্য

প্রাচীন গ্রিসের প্রতিটি পলিস একে অপরের থেকে পৃথক ছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সরকার

প্রতিটি পলিসেরই নিজস্ব পৃথক সরকার, সেনাবাহিনী, ক্যালেন্ডার প্রভৃতি থাকত। কোনো একটি কেন্দ্রীয় শক্তির দ্বারা পলিসগুলি শাসিত বা নিয়ন্ত্রিত হত না। অর্থাৎ প্রতিটি পলিসই ছিল স্বাধীন ও স্বশাসিত।

(২) মানচিত্র ও মুদ্রা

কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রতিটি পলিসের পৃথক মানচিত্র এবং মুদ্রাব্যবস্থাও ছিল।

(৩) দেবদেবী

প্রতিটি পলিসের নিজস্ব এবং পৃথক দেবদেবী থাকতেন। কোনো একটি পলিসের প্রধান দেবতা অন্য কোনো পলিসে সাধারণ মর্যাদা লাভ করতেন। বিভিন্ন পলিসের পূজা-পদ্ধতিও বিভিন্ন ধরনের হত।

(জ) নগরকেন্দ্রিকতা ও গ্রামকেন্দ্রিকতা

  • (১) পলিস বলতে বাংলায় ‘নগর-রাষ্ট্র’ এবং ইংরেজিতে City-state-কে বোঝায়। সাধারণভাবে নগর-রাষ্ট্র বলতে নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্রকে বোঝায়। কিন্তু পলিস বলতে শুধু ‘নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্র’ ছিল না। পলিস ছিল নগর-রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি কিছু। অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিসে পলিস বা নগর-রাষ্ট্রগুলিতে সর্বদা রাষ্ট্র জুড়ে নগরের অবস্থান ছিল না বা নগর কর্তৃক গ্রাম শাসনকে বোঝাত না।
  • (২) গ্রিসে তখন একদিকে যেমন এথেন্স ছাড়াও বেশ কয়েকটি উন্নত নগরকেন্দ্রিক পলিস ছিল অন্যদিকে তেমনি বহু পলিস ছিল যেগুলি মোটেই নগর ছিল না। অনেক রাষ্ট্রে নগর এবং গ্রাম উভয়ই ছিল। আবার স্পার্টার মতো বহু পলিসের মানুষ গ্রামে বসবাস করত।

(ঝ) অর্থনৈতিক বৈষম্য

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) বিভিন্ন পলিসের মধ্যে বৈষম্য

বিভিন্ন গ্রিক পলিসে বিভিন্ন ধরনের পেশার বিকাশ ঘটেছিল। করিন্থ ও মিলেটাসের মতো পলিসে শিল্প ও বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। আবার স্পার্টা, এলিস, আরকাডিয়া প্রভৃতি পলিসের কিছু মানুষ কৃষি, সৈন্যরা যুদ্ধকর ও কিছু মানুষ মন্দিরের আয়ের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। এর ফলে পলিসগুলির মধ্যে যথেষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল।

(২) একই পলিমে বৈষম্য

তা ছাড়া একই পলিসের ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যেও অর্থনৈতিক বৈষম্য যথেষ্ট তীব্রতর ছিল। এই বৈষম্যের ফলে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে কখনো কখনো সংঘর্ষও শুরু হত।

(ঞ) ধর্মীয় বিশেষত্ব

গ্রিক পলিসগুলিতে বহু দেবতার আরাধনার প্রচলন ছিল। জিউস, পসিডন, হ্যাডেস, অ্যাপোলো, আরটিমিস, এথেনা, হারমিস, ডিমিটার, হেরা প্রমুখ ছিলেন বিভিন্ন পলিসের প্রধান দেবদেবী। বিভিন্ন দেবতা বিভিন্ন ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেন, যেমন – জিউস ছিলেন আকাশের দেবতা, পসিডন ছিলেন সাগর ও ভূমিকম্পের দেবতা, হ্যাডেস ছিলেন পরলোকের দেবতা প্রভৃতি। জিউস ছিলেন দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পলিসগুলির উন্নতির সঙ্গে দেবতারা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হত। তা ছাড়া পলিস ভেদে বিভিন্ন দেবতার গুরুত্বের তারতম্য ছিল, যেমন – এথেন্সে দেবী এথেনার অত্যধিক গুরুত্ব থাকলেও স্পার্টায় তা ছিল না।

উপসংহার :- খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে সপ্তম শতকের মধ্যে পলিসগুলি তাদের প্রাথমিক রূপ লাভ করে। গ্রিক পলিসগুলি ধ্রুপদি যুগে তাদের চূড়ান্ত ও পরিণত রূপ লাভ করে।

(FAQ) পলিসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পলিসের ক্ষুদ্রায়তন কে সমর্থন করেছেন কে?

অ্যারিস্টটল।

২. এথেন্সে সমিতি কি নামে পরিচিত ছিল?

একলেজিয়া।

৩. স্পার্টায় সমিতি কি নামে পরিচিত ছিল?

অ্যাাপেলা।

৪. এথেন্সে জুরি আদালতের নাম কি ছিল?

হেলাইয়া।

Leave a Comment