বিরসা মুণ্ডা -র জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ, কুসংস্কারের বিরোধিতা, ধর্মপ্রচার, বিরসাইত, প্রথম আন্দোলন, বিদ্রোহের সূচনা, বিদ্রোহের প্রসার, পরাজয়, বিচার, মৃত্যু, সাহিত্যে উল্লেখ, স্মৃতি, মিউজিয়ামে স্থান, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে অবদান সম্পর্কে জানবো।
বিরসা মুন্ডা
ঐতিহাসিক চরিত্র | বিরসা মুন্ডা |
জন্ম | ১৫ নভেম্বর ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ |
পিতামাতা | সুগান মুন্ডা, করমি বাহাতু |
অবদান | মুণ্ডা বিদ্রোহ -এর প্রধান নেতা |
মৃত্যু | ৯ জুন, ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। বিরসা মুন্ডা ছিলেন এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা।
জন্ম
বিরসা মুন্ডা ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) রাঁচি জেলার উলিহাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতামাতা
তাঁর পিতা সুগান মুন্ডা ছিলেন একজন বর্গাচাষি। তার মায়ের নাম করমি বাহাতু।
শিক্ষা
বিরসা বাল্যকালে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন।
ডেভিড দাউদ নাম গ্ৰহণ
স্কুলে পড়ার সময় বিরসা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম হয় ডেভিড দাউদ।
আদিবাসী সমাজ সংস্কারক
বিরসা মুন্ডা ছিলেন ভারতের রাঁচি অঞ্চলের একজন মুন্ডা আদিবাসী এবং সমাজ সংস্কারক।
কুসংস্কারের বিরোধিতা
তিনি মুন্ডা সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারের বিরোধিতা করেন, পশুবলি বন্ধ এবং মাদক বর্জন করার কথা বলেন। তিনি মহাপ্লাবনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
ধর্মপ্রচার
বিরসা ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। তিনি নিজেকে অবতার বলে ঘোষণা করেন এবং দাবি করেন যে, তিনি ভগবানের দর্শন পেয়েছেন। তিনি মুন্ডাদের উপবীত ধারণ করতে বলেন।
বিরসাইত
তার প্রচারিত নতুন ধর্মের মূল ভিত্তি ছিল একেশ্বরবাদী মুণ্ডা ধর্ম। দলে দলে মুণ্ডা, ওরাওঁ নরনারীরা এই নতুন ধর্ম গ্রহণ করে পরিচিত হয় বিরসাইত নামে।
প্রথম আন্দোলন
১৮৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকারি বনবিভাগ মুন্ডা গ্রামের পতিত জমি অধিগ্রহণ করতে শুরু করলে বিরসা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।
বিদ্রোহের সূচনা
বিরসা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করনে। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর বিদ্রোহের দিন ঠিক হয়।
বিদ্রোহের প্রসার
১৯০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিরসার নেতৃত্বে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীরা সরকারি অফিস, থানা, ইংরেজ পুলিশ ও কর্মচারীদের আক্রমণ করতে থাকে।
মুণ্ডা বিদ্রোহীদের কাছে পরিচিতি
মুণ্ডা বিদ্রোহে যোগদানকারী বিদ্রোহীদের কাছে তিনি ‘ধরতি আবা’ বা বিরসা ভগবান নামে পরিচিত ছিলেন।
পরাজয়
প্রবল বিক্রমে লড়াই করেও বিরসা-র বাহিনী শেষপর্যন্ত ব্রিটিশবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। বিরসাকে রাঁচি জেলে বন্দি করা হয়।
বিচার
বিচারে তার ফাঁসির হুকুম হয়। ফাঁসির আগের দিন রাঁচি জেলের অভ্যন্তরে বিরসার মৃত্যু ঘটে। ধৃত অন্যান্য দুজনের ফাঁসি, ১২ জনের দ্বীপান্তর এবং ৭৩ জনের দীর্ঘ কারাবাস হয়।
মৃত্যু
রাঁচি জেলে অভ্যন্তরে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু জেলে বিষপ্রয়োগের ফলে বিরসা মুন্ডার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।
সাহিত্যে উল্লেখ
মহাশ্বেতা দেবীর জনপ্রিয় উপন্যাস ‘অরন্যের অধিকার’ শহীদ বীরসা মুন্ডার জীবন নির্ভর কাহিনী। এই উপন্যাসের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
জন্মবার্ষিকী উদযাপন
কর্ণাটকের মহীশূর ও কোদাগু জেলার আদিবাসীরা আজও বিরসার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে।
সম্মাননা স্মৃতি
বিরসা মুন্ডার নামে বেশ কিছু সংগঠন চলে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,
- (১) বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দর।
- (২) বিরসা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি।
- (৩) বিরসা মুন্ডা বনবাসী ছাত্রাবাস।
- (৪) সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিরসা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
- (৫) সম্প্রতি আই.আই.এম (রাঁচি) আদিবাসী জীবন নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানে ‘বিরসা মুন্ডা সেন্টার ফর ট্রাইবাল অ্যাফেয়ার্স’ বিভাগ চালু করেছে।
মিউজিয়ামে স্থান
ভারতীয় সংসদ বা পার্লামেন্ট মিউজিয়ামে একমাত্র আদিবাসী নেতা হিসেবে তাঁর ছবি সযত্নে রাখা আছে।
ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন
ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে তাঁর অসামান্য লড়াইয়ের কথা স্মরনে রেখে ২০০০ সালে তাঁর জন্মদিন ১৫ নভেম্বর ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন করা হয়।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
২০০৪ সালে বিরসার জীবন নিয়ে ‘উলগুলান এক ক্রান্তি’ নামে একটি হিন্দী সিনেমা প্রকাশিত হয়।
উপসংহার :- মুন্ডা সমাজে বিরসা মুন্ডা ছিলেন ত্রাতাস্বরূপ। তাঁর অসামান্য প্রতিভা মাত্র একুশ বছর বয়সেই তাঁকে মুন্ডাদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছিল।
(FAQ) বিরসা মুন্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মুণ্ডা বিদ্রোহ।
১৮৯৯ সালে।
রাঁচি।
উলঘুলান।
বিরসা মুন্ডা ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের (১৮৯৯-১৯০০ খ্রি.) প্রধান নেতা। তিনি এক নতুন ধর্ম প্রচার করে মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে মুন্ডাদের খাজনা দেওয়া বন্ধ এবং বিদেশিদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। তিনি স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথাও ঘোষণা করেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশবাহিনী বিদ্রোহ দমন করে এবং বিরসার কারাদণ্ড হয়।