গিয়াসউদ্দিন বলবনের মোঙ্গল নীতি প্রসঙ্গে মোঙ্গল আক্রমণের ভয়াবহতা, মোঙ্গলদের সঙ্গে সন্ধি, মোঙ্গল আক্রমণের এলাকা, বলবনের প্রতিরোধ স্থাপন, বাংলা সীমান্তের বিভাজন, দুর্গ নির্মাণ, রাজধানী থেকে পর্যবেক্ষণ ও যুবরাজ মহম্মদের মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের মোঙ্গল নীতি
বিষয় | বলবনের মোঙ্গল নীতি |
সুলতান | গিয়াসউদ্দিন বলবন |
উপাধি | জিলিল্লাহ |
পুত্র | মহম্মদ, বুঘরা খাঁ |
মোঙ্গল নেতা | তৈমুর খাঁ |
ভূমিকা :- বলবনের রাজত্বকালে মধ্য এশিয়ার মোঙ্গল জাতি ভারত-এ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। মোঙ্গলরা ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। মোঙ্গলদের সম্পর্কে গল্প প্রচলিত ছিল যে, জন্মের পর থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তারা ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকত।
মোঙ্গল আক্রমণের ভয়াবহতা
মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিজ খানের আক্রমণে পারস্য ও বাগদাদের খলিফার পতন ঘটেছিল। তার মৃত্যুর পরেও মোঙ্গলদের আগ্রাসন নীতি কমে যায়নি।
মোঙ্গলদের সঙ্গে সন্ধি
ইলতুৎমিস-এর মৃত্যুর পর দিল্লীর সুলতানি সিংহাসনের অধিকার নিয়ে গোলযোগের সময় মোঙ্গলরা পাঞ্জাবের কিছু অংশ অধিকার করে নেয়। সুলতান নাসিরুদ্দিনের আমলে বলবন তার প্রধান নায়েব হিসেবে মোঙ্গলদের সঙ্গে এক সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
মোঙ্গল আক্রমণের এলাকা
সিংহাসনে বসার পর বলবন দেখেন যে, উত্তর-পশ্চিমে মূলতান, পূর্ব পাঞ্জাব ও সিন্ধু ছাড়া আর কোনো স্থান দিল্লীর অধিকারে নেই। এই অঞ্চলেও মোঙ্গল বাহিনী ঘনঘন আক্রমণ চালায়।
বলবনের মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ স্থাপন
সুলতান বলবন মোঙ্গল আক্রমণকে তার রাজ্যের নিরাপত্তার সর্বপ্রধান বাধা বলে মনে করতেন। এজন্য তিনি সীমান্তে বহু দুর্গ স্থাপন করে তাতে অভিজ্ঞ রণকুশলী আফগান সেনা বসিয়ে রাখেন। সমগ্র অঞ্চলের দায়িত্ব তিনি তাঁর আত্মীয় বিখ্যাত যোদ্ধা শের খানের হাতে দেন।
বলবন কর্তৃক বাংলা সীমান্তের বিভাজন
১২৭০ খ্রিস্টাব্দে শের খানের মৃত্যু হলে বলবন সমগ্র উত্তর-পশ্চিম সীমান্তকে দুভাগে ভাগ করেন। মূলতান, সিন্ধু ও লাহোরের দায়িত্ব তিনি দেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মহম্মদের হাতে এবং পাঞ্জাবের সুনাম, দীপালপুর ও সামানার দায়িত্ব দেন তার দ্বিতীয় পুত্র বুঘরা খানের হাতে। এঁদের অধীনে সেনাদল উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল রক্ষায় নিযুক্ত হয়।
বলবন কর্তৃক দুর্গ নির্মাণ
তিনি সীমান্তে ছোট ছোট দুর্গ নির্মাণ করে সেগুলিতে অভিজ্ঞ আফগান সেনা স্থাপন করেন। মোঙ্গলরা সীমান্ত পার হলে এরাই প্রাথমিক বাধা দিত। তারপর তাঁর দুই পুত্র তাদের সেনাদল সহ দ্বিতীয় প্রতিরোধের প্রাচীর তৈরি করতেন।
রাজধানী থেকে বলবনের পর্যবেক্ষণ
বলবন নিজে রাজধানীতে বসে উত্তর-পশ্চিমের দিকে সর্বদা নজর রাখেন এবং প্রধান সেনাদল নিয়ে যে কোনো বিপদে তাঁর পুত্রদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। তিনি ৩০ হাজার সংরক্ষিত সেনা সর্বদা রাজধানীতে মজুত রাখতেন।
বলবনের পুত্র যুবরাজ মহম্মদের মৃত্যু
- (১) ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল বাহিনী পাঞ্জাবে ঢোকার চেষ্টা করলে দুই শাহজাদার যুগ্ম বাহিনী তাদের বিতাড়িত করে। ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল সেনাপতি তৈমুর খাঁর নেতৃত্বে মোঙ্গল সেনা পুনরায় আক্রমণ চালালে সম্মুখ যুদ্ধে যুবরাজ মহম্মদ নিহত হন।
- (২) অবশ্য মোঙ্গলদের এত ক্ষয়ক্ষতি হয় যে, তারা আর আক্রমণ চালান সঙ্গত মনে করেনি। বলবন তাঁর প্রিয় পুত্রের মৃত্যুতে নিদারুণ মানসিক আঘাত পান।
বলবনের মৃত্যু
১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে ৮০ বছর বয়সে বলবনের মৃত্যু হয়।
উপসংহার :- মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে তিনি দ্বিতীয় পুত্র বুঘরা খানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করতে চান। কিন্তু বুঘরা খান এই পদ নিতে অনিচ্ছা জানালে বলবন মৃত যুবরাজ মহম্মদের পুত্র কাইখসরুকে উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন।
(FAQ) গিয়াসউদ্দিন বলবনের মোঙ্গল নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
চেঙ্গিজ খান।
৩০ হাজার।
তৈমুর খাঁ।
জ্যেষ্ঠ পুত্র যুবরাজ মহম্মদ।