বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার

সুলতান বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার প্রসঙ্গে গুপ্তচর ব্যবস্থা, বেআইনি জায়গীর উচ্ছেদ, কর্মচারী নিয়োগ নীতি সম্পর্কে জানবো।

সুলতান বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার

বিষয়বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার
সুলতানগিয়াসউদ্দিন বলবন
বারিদগুপ্তচর
পাঞ্জাব শাসনযুবরাজ মহম্মদ
বাংলা শাসনবুঘরা খাঁ
সুলতান বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার

ভূমিকা :- নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ-এর পর গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লীর সুলতানী সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে রক্ত ও লৌহ নীতি অবলম্বন করেন।

সুলতান বলবনের গুপ্তচর ব্যবস্থা

  • (১) বলবন তাঁর সাম্রাজ্য-এর খবর রাখার জন্য বহু গুপ্তচর বা বারিদ নিয়োগ করেন। এই গুপ্তচররা সাম্রাজ্যের সর্বত্র খবর যোগাড় করত। বলবন গুপ্তচর নিয়োগে সতর্কতা নিতেন। সৎ ও দায়িত্বশীল লোকেদের তিনি এই পদ দিতেন।
  • (২) স্ট্যানলি লেনপুলের মতে, “বলবনের রাজ্যে এমন কিছু ছিল না গুপ্তচররা যার খবর রাখত না।” এই গুপ্তচরদের ভয়ে বিদ্রোহী আমীররা সন্ত্রস্ত থাকত।

বলবন কর্তৃক বেআইনি জায়গীর উচ্ছেদ

  • (১) ইলতুৎমিস-এর আমলে দোয়াবে বহু অশ্বারোহী সেনাকে জায়গীর দেওয়া হয়। এই ইক্তা দানের শর্ত ছিল যে, সেনারা জায়গীরের পরিবর্তে সেনাদলে কাজ করবে। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেকে মারা যায় অথবা বৃদ্ধ বা অশক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু কাজ না করলেও তারা বংশানুক্রমিকভাবে ইক্তাগুলি ভোগ করতে থাকে।
  • (২) কি শর্তে ঐ সকল ইক্তা দান করা হয় সে সম্পর্কে বলবন কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। এর ফলে ইক্তাদারদের বে-আইনী দখল ধরা পড়ে। বলবন এর পর দোয়াবের দুই হাজার ক্ষুদ্র বে-আইনী ইক্তাদার উচ্ছেদের আদেশ দেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লীর কোতোয়াল ফকরউদ্দিনের অনুরোধে এবং বহু পরিবারের ক্লেশ দেখা দেওয়ায় বলবন এই আদেশ প্রত্যাহার করেন।
  • (৩) বেতনভোগী প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণভুক্ত স্থায়ী সেনার সংখ্যা বলবনের হাতে বেশী ছিল না। তাঁকে প্রধানত ইক্তাদারী সেনার ওপরেই নির্ভর করতে হত। ইক্তাদারী সেনাদলের যাতে দক্ষতা ঠিক থাকে এজন্য আরিজ-ই-মামালিক সতত চেষ্টা করতেন।

সুলতান বলবনের কর্মচারী নিয়োগ নীতি

  • (১) বলবন তার সরকারের কর্মচারীদের কঠোর শৃঙ্খলায় বাঁধেন। তিনি কর্মচারীকে সামরিক ও অসামরিক উভয় দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করেন। তিনি শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ করার জন্য উচ্চ কর্মচারীদের নিজ হাতে নিয়োগ করতেন।
  • (২) নিম্নবর্গের কর্মচারীদের নিয়োগপত্র তিনি খুঁটিয়ে দেখতেন। তুর্কী জাতীয় লোকেদের চাকরীতে নিয়োগে সর্বদাই প্রাধান্য দেওয়া হত। তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের গুরুত্ব বুঝে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজ মহম্মদকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় পুত্র বুখরা খানকে তিনি বাংলা বা লক্ষ্মণাবতীতে শাসনকর্তা হিসেবে পাঠান।
  • (৩) এইভাবে দুই সীমান্ত প্রদেশকে তিনি দৃঢ় শাসনে রাখেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের তিনি তাঁর কাছে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেন। তিনি কোনো কর্মচারীর হাতে অধিক ক্ষমতা রাখা বিপজ্জনক মনে করতেন। এজন্য তিনি উজীরের ক্ষমতা কমিয়ে দেন। উজীরকে পুরোপুরি অর্থবিভাগের কর্মচারীতে পরিণত করেন।

উপসংহার :- ইক্তাদাররা যাতে সরকারের প্রাপ্য কর ফাঁকি না দেয় এজন্য তিনি খোয়াজা (Khawaja) নামক হিসেব বিভাগের কর্মচারী দ্বারা ইক্তার হিসেবপত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি গুপ্তচর বিভাগের সংগঠন করেন। তিনি উলেমাদের সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব আলোচনা করলেও উলেমাদের কখনও শাসনকার্যে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিতেন না।

(FAQ) বলবনের শাসন ও রাজস্ব সংস্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমলে গুপ্তচরদের কি বলা হত?

বারিদ।

২. বলবনের আমলে খোয়াজার কাজ কি ছিল?

ইক্তার হিসেব পত্র পরীক্ষা।

৩. বলবন কাকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন?

জ্যেষ্ঠ পুত্র যুবরাজ মহম্মদকে।

৪. বলবন কাকে বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন?

পুত্র বুঘরা খাঁ কে।

Leave a Comment