আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে উজির ও তার দায়িত্ব, আলাউদ্দিনের বিভিন্ন উজীর, রাজস্ব বিভাগ, সামরিক বিভাগ, প্রাদেশিক শাসন, প্রাদেশিক শাসকের ক্ষমতা ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবো।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থা |
সুলতান | আলাউদ্দিন খলজি |
শীর্ষস্থান | সুলতান |
প্রধান সহকারী | উজীর |
কৃষি বিভাগ | আমির-ই-কোহি |
ভূমিকা :- আলাউদ্দিন তাঁর সাম্রাজ্যকে শাসন করার জন্য এক আমলাতন্ত্র গঠন করেন। সুলতান এই আমলাতন্ত্রের শীর্ষে সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিরাজ করতেন।
উজীর ও তার দায়িত্ব
- (১) সুলতানের প্রধান সহকারী ছিলেন উজীর। উজীরের পদটি মূলত অসামরিক হলেও আলাউদ্দিন এই পদটিকে সর্বতোমুখী করে ফেলেন। উজীর কেন্দ্রীয় শাসনের কেন্দ্রে শুধু থাকতেন না, প্রদেশের শাসনকেও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
- (২) বিভিন্ন স্থানে ‘আমিল’ নিয়োগ করে তিনি রাজস্ব আদায়ের সুব্যবস্থা করতেন। কারণ রাজস্ব বিভাগের তদারকি ছিল উজীবের বিশেষ দায়িত্ব। ইফাদাররা রাজস্ব ফাঁকি দিলে উজির তা ধরে ফেলার চেষ্টা করতেন।
- (৩) দুর্নীতিগ্রস্থ ইক্তাদারদের শাস্তি দেওয়া হত। আলাউদ্দিনের ইচ্ছায় উজিরকে দেশরক্ষা, রাজ্য জয়, বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব পালন করতে হত। এজন্য উজীরকে যুদ্ধে যেতে হত।
আলাউদ্দিনের বিভিন্ন উজীর
আলাউদ্দিনের প্রথম উজীর খাজা খতির যুদ্ধ জানতেন না। দ্বিতীয় উজীর নসরৎ খান রণথম্ভোরের যুদ্ধে মারা যান। এরপর সৈয়দ খানও যুদ্ধ করতেন। শেষ উজীর মালিক কাফুর ছিলেন বিশিষ্ট সেনাপতি। মোট কথা আলাউদ্দিন উজীরের পদটিকে সামরিক চরিত্র দান করেন।
রাজস্ব বিভাগ
উজিরের নীচে পদমর্যাদায় ছিলেন দেওয়ান-ই-আশরফ। ইনি ছিলেন হিসাবরক্ষা ও রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। দেওয়ান-ই-মুস্তাফি বা হিসাব পরীক্ষকদের প্রধান তাকে সাহায্য করতেন। এই সকল রাজস্ব কর্মচারী ও তাদের সহকারীদের দ্বারা উজীর রাজস্ব বিভাগ, রাজ্যের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সামরিক বিভাগ
- (১) সামরিক বিভাগের শীর্ষে সুলতানের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন আরজ-ই-মামালিক বা যুদ্ধ মন্ত্রী। বকসী-ই-ফৌজ সেনাদলের বেতন ও খরচের দায়িত্ব বহন করতেন। কৃষি বিভাগের কর্তা ছিলেন আমীর-ই-কোহি।
- (২) তবে সুলতানি যুগে সামরিক ও অসামরিক বিভাগের কোনো পার্থক্য ছিল না। যখন দরকার পড়ত যে কোনো কর্মচারীকে সামরিক বিভাগে কাজ করতে হত। এছাড়া আরও বহু নিম্নবর্গের কর্মচারী বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করতেন।
- (৩) আলাউদ্দিন খলজির বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করার পর দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ ও শাহানা-ই-মান্ডী নামে দুটি উচ্চপদের সৃষ্টি করেন। শাহানা-ই-মান্ডী বাজারে মূল্য মান স্থির করতেন এবং ব্যবসায়ীদের নাম নথিভুক্ত করতেন। দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ ওজনপত্র পরীক্ষা এবং দরদান পরীক্ষা করতেন ও আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি দিতেন।
প্রাদেশিক শাসন
- (১) আলাউদ্দিন শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তার প্রত্যক্ষ শাসিত সাম্রাজ্যকে ১১টি প্রদেশে ভাগ করেন। প্রতি প্রদেশের দায়িত্ব তিনি একজন বিশ্বস্ত মালিকের হাতে দেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কাজের ওপর তিনি গুপ্তচর দ্বারা নজর রাখতেন।
- (২) প্রদেশের শাসনকর্তারা নিজ নিজ প্রদেশে কেন্দ্রের আদলে সর্বেসর্বা হয়ে বসেন। যতক্ষণ তারা সুলতানের আস্থাভাজন থাকতেন ততক্ষণ তাঁরা বহু ক্ষমতা ভোগ করতেন।
প্রাদেশিক শাসকের ক্ষমতা
- (১) প্রাদেশিক শাসনকর্তারা প্রদেশের রাজস্ব আদায়, শান্তিরক্ষা, বিচার পরিচালনার কাজ করতেন। তাঁরা প্রাদেশিক শাসন পরিচালনা ও প্রাদেশিক সেনাদলের খরচ মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রে পাঠাতে বাধ্য থাকতেন।
- (২) সাধারণত কেন্দ্র দুর্বল হলে এই অর্থ প্রদান করা হত না। তবে আলাউদ্দিনের বিশ্বস্ত কর্মচারী গাজী মালিক, আলপ খান, মালিক কাফুর নিয়মিত রাজস্ব ও খামস বা লুণ্ঠনের ভাগ পাঠাতেন।
বিচার ব্যবস্থা
- (১) আলাউদ্দিন ইসলামীয় আদর্শ অনুযায়ী কাজীদের দ্বারা বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। তিনি নিজে খোলা দরবারে আপীলের মামলার নিষ্পত্তি করতেন। প্রধান কাজী বা কাজী-উল-মুমালিক -এর পদটিকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। সদরজাহান সদরউদ্দিন বহুদিন এই পদে নিযুক্ত ছিলেন।
- (২) সদর কাজী বা প্রধান কাজীকে নায়ের কাজী, মুফতি, দাদবেইগ প্রভৃতি কর্মচারীরা সাহায্য করত। প্রভাবশালী লোকেরা অপরাধ করলে মীরদাদ তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য হাজির করত। আলাউদ্দিন কাজীদের কাজকে খুবই গুরুত্ব দিতেন।
- (৩) বরণীর মতে, বিচার বিভাগে দুর্নীতি ছিল। আলাউদ্দিনের ফৌজদারী আইন ছিল খুবই কঠোর। বেত্রাঘাত প্রভৃতি দণ্ড ছিল সাধারণ। অঙ্গহানি, শূলে চড়ান, লোহার শিকলে বেঁধে রাখা প্রভৃতি শাস্তি দেওয়া হত। তাছাড়া মৃত্যুদণ্ড ছিল।
উপসংহার :- আইন-শৃঙ্খলা, চুরি, ডাকাতি নিবারণের জন্য কোতোয়াল, দেওয়ান-ই-রিয়াসৎকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বারিদ বা গুপ্তচররা সর্বত্র নজর রাখত। সরকারী সংবাদ পাঠাবার জন্য “দাভা” বা পাইক এবং “আউলাখ” বা অশ্বারোহী ডাকের ব্যবস্থা ছিল।
(FAQ) আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আউলাখ।
উজীর।
দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ ও শাহানা-ই-মান্ডী।