খনা

খনা (Khona) হলেন বাংলার একজন কিংবদন্তি নারী গণিতজ্ঞ ও জ্যোতিষী, যিনি তার প্রজ্ঞা, কৃষি-জ্ঞান এবং গ্রামীণ জীবনের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার নামের সাথে যুক্ত জনপ্রিয় প্রবাদবাক্য ও লোককথা বাংলার গ্রামীণ সমাজে আজও সমাদৃত। খনার ভবিষ্যদ্বাণীগুলি বিশেষত কৃষি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে ছিল, যা “খনার বচন” নামে পরিচিত। তার এসব বচন মূলত জীবনযাত্রার সহজ, প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর প্রতিফলন।

কিংবন্তি নারী খনা

ঐতিহাসিক চরিত্রখনা
পরিচিতিগণিতজ্ঞ, জ্যোতিষী, কৃষি বিশেষজ্ঞ
সময়কালআনুমানিক ৬ষ্ঠ-১২শ শতাব্দী
খ্যাতির কারণকৃষি ও আবহাওয়া বিষয়ক প্রবাদ “খনার বচন”
প্রধান অবদানকৃষি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস, গণিত ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের ওপর জ্ঞান
ভাষাবাংলা
লোককথা“খনার বচন” নামে পরিচিত, যা বাংলার গ্রামীণ জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে
খনা

ভূমিকা :- খনার বচনের সঙ্গে বঙ্গবাসী মাত্রেরই কম বেশি পরিচয় বর্তমান। বিশেষতঃ জ্যোতিষ ও কৃষিতত্ত্ব বিষয়ে এই বচনগুলি আজও বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। খনা সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণ বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাঁর সম্পর্কে কিংবদন্তি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এই কিংবদন্তি অনুসরণ করে আমাদের ফিরে যেতে হয় খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে গুপ্তযুগে।

খনার পরিচিতি

সংস্কৃত গ্রন্থ বৃহজ্জাতক থেকে জানা যায় অবন্তী রাজ্যে (উজ্জয়িনী) এক বিরল প্রতিভাধর পুরুষ ছিলেন বরাহাচার্য। জ্যেতিষশাস্ত্রে পারদর্শিতার জন্য দেশে বিদেশে তাঁর খ্যাতি ছিল। কিংবদন্তি বলে, বরাহাচার্য তাঁর সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের পরমায়ু গণনা করে হতাশ হন। তিনি জানতে পারেন পুত্রের আয়ু মাত্র এক বৎসর। বরাহাচার্য একটি তাম্রপাত্রে শুইয়ে শিশুপুত্র মিহিরকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন। ভাগ্যক্রমে বরাহাচার্যের গণনা ভুল ছিল। সন্তানটি ছিল শতায়ু। সে সিংহলদ্বীপে যত্নীদেবী নামে এক জ্যোতিষী রমনীর কাছে আশ্রয় পায়। তার নাম হয় মিহির। সিংহলে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করে দেশে ফেরার পথে অটনাচার্যের কন্যা খনা দেবীর সঙ্গে মিহিরের বিবাহ হয়।

জ্যোতিষী ও কৃষিপন্ডিত খনা

খনা ছিলেন জ্যোতিষী ও কৃষিপন্ডিত। আবহাওয়া বিদ্যাও তাঁর অধিগত ছিল। এরপর মিহির উজ্জয়িনীর রাজসভায় স্থান পান। কিন্তু খনার সঙ্গে তাঁর শ্বশুরের জ্যোতিষের এক বিতর্কের মাধ্যমে সম্পর্ক ক্রমশই বিষিয়ে উঠতে থাকে। খনা বারবার শ্বশুরকে গণনায় পরাস্ত করেন।

কিংবদন্তি খনার জিভ কাটা

খনার অসাধারণ জ্যোতিষ গণনা সম্পর্কে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, আকাশের নক্ষত্র গুণবার বিষয়ে খনা শ্বশুরকে পরাস্ত করেন। বরাহাচার্য ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন। প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে তিনি ক্রোধে ও ঈর্ষায় কৌশলে বাজি ধরিয়ে ছলনা দ্বারা খনাকে পরাস্ত করেন। ফলে তাঁর জিভ কাটা যায়।

বঙ্গদেশে খনা

এরপর মিহির খনাকে নিয়ে উজ্জয়িনী থেকে বঙ্গদেশে চলে আসেন। এখানে তাঁরা আশ্রয় পান বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত বেড়াচাঁপার রাজা চন্দ্রকেতুর কাছে। এর পর থেকে মিহির বা বরাহ মিহির ও খনা এখানেই বাস করতে থাকেন।

জ্যোতিষী খনার স্মৃতি বিজড়িত ঢিবি

বেড়াচাঁপায় খনা-মিহিরের স্মৃতি বিজড়িত ঢিবি রয়েছে। পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এই ঢিবির অভ্যন্তরে ও আশপাশে খুঁজে পাওয়া গেছে জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত রাশিচক্র সহ নানা পুরা-সম্পদ। উল্লেখ্য যে খনা-মিহিরের নামাঙ্কিত স্মৃতিস্থান বেড়াচাঁপা ব্যতীত উভয় বাংলার অন্য কোথাও দেখা যায় না।

খনার বচন ও খনা

বিদুষী নারী খনা সম্পর্কে কিংবদন্তি যাই থাক না কেন, তাঁর নামাঙ্কিত বচনগুলি যুগ যুগ ধরে কৃষিপ্রধান বাংলার মানুষ অভ্রান্ত বলে মেনে আসছেন এবং আজও অনেকে মেনে চলেন। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, গৃহীদের নানাবিধ সমস্যা বিশেষতঃ কৃষিকাজ বিষয়ে উপদেশমূলক প্রবচন বঙ্গদেশে খনার বচন নামে প্রচলিত থাকলেও কিংবদন্তি খ্যাত খনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। খনার বচনগুলির ভাষা থেকে জানা যায় এগুলির বয়স মাত্র চারশ বছর। আবার অনেকের অনুমান খনা কোনো মহিলা নন। একজন বাঙালী পুরুষ এবং পেশায় ছিলেন কৃষিবিজ্ঞানী। খ্রিস্টীয় ছয় শতকে তিনি জীবিত ছিলেন। তবে বরাহমিহির বা বরাহাচার্য নামের কারো সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না।

জ্যোতিষী খনার বচনগুলির প্রাপ্তি

কৃষিপ্রসার নামে একটি প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে খনার বচনগুলি বিস্তৃত ভাবে পাওয়া যায়। সে সকল বচন থেকে জানা যায় কৃষিবিজ্ঞান তথা সমকালীন কৃষিব্যবস্থা সম্পর্কে খনার গভীর জ্ঞান ছিল।

চারটি বিষয়ে খনার বচন

খনার বচনগুলিতে চারটি বিষয়ে বিশেষ ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন – (১) আবহাওয়া (২) শস্যাদির যত্ন ও কৃষিপণ্য (৩) কৃষিতত্ত্ব ও কৃষিবিষয়ক সংস্কার। (৪) ফলিত জ্যোতিষ ইত্যাদি।

প্রচলিত কিছু খনার বচন

(১) বাংলা মাঘ মাসে বৃষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

মাঘ মাসে বর্ষে দেবা। রাজা ছাড়ে প্রজার সেবা।।

অর্থাৎ, মাঘ মাসে বৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত ফসল ফলে। তাই দেশের রাজাকে আর প্রজাদের জন্য চিন্তা করতে হয় না।

(২) মাঘের শেষে বৃষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

যদি বরে মাঘের শেষ। ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।।

অর্থাৎ, মাঘ মাসের শেষে বৃষ্টি হলে রাজা ধন্য হন এবং তাঁর দেশ পুণ্যভূমি বলে গণ্য হয় অর্থাৎ দেশের কৃষিসম্পদ বাড়ে। মাঘ শেষের বৃষ্টি রবি শস্যের পক্ষে উপকারী।

(৩) ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

যদি বরে ফাগুনে। চিনা কাওন দ্বিগুণে।।

অর্থাৎ, ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হলে চিনা ধান ও কাঙনি ধান দ্বিগুণ ফলে।

(৪) চৈত্র মাসে বৃষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

চৈতে বৃষ্টি নাশে রিষ্টি। চাষার ক্ষেত্রে শুভ দৃষ্টি।।

অর্থাৎ, চৈত্র মাসে বৃষ্টি হলে চাষের সুবিধা হয়, কৃষকের ওপর ঈশ্বরের শুভদৃষ্টি পড়ে অর্থাৎ কৃষক ক্ষেতের কাজ ভাল ভাবে করতে পারে। এই সময় গ্রীষ্মকালের ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করতে হয়।

(৫) যথেষ্ট শস্যের ফলন সম্পর্কে খনার বচন

মাঘের আধা ফাগুনের বাদা। চৈতের কানি বৈশাখের ফেণী।।

অর্থাৎ, মাঘ মাসের শেষ ভাগে, ফাল্গুন মাসের মাঝে, চৈত্রে কণা কণা এবং বৈশাখে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে শস্যের ফলন যথেষ্ট হয়ে থাকে।

(৬) ফসলের ক্ষতি সম্পর্কে খনার বচন

দিনে জল রাতে তারা। এই দেখবে দুঃখের ধারা।।

অর্থাৎ, বর্ষার সময় যদি দিনের বেলা বৃষ্টি হয় এবং রাতের বেলা আকাশ পরিষ্কার থাকে তবে দেশে দুঃখ কষ্ট উপস্থিত হয় অর্থাৎ রোদ না পেয়ে ফসলের ক্ষতি হয়।

(৭) পুবদিকে রামধনু সম্পর্কে খনার বচন

পুবেতে উঠিল কাঁড়। ডাঙা ডোবা একাকার।।

অর্থাৎ, পুবদিকে রামধনু উঠলে বৃষ্টি হবে এবং ডাঙা ও ডোবা জলে ভরে যাবে।

(৮) পশ্চিম দিকে রামধনু সম্পর্কে খনার বচন

পশ্চিমের ধনু নিত্য খবা। পুবের ধনু বর্ষে ধারা।।

অর্থাৎ, পশ্চিম দিকে রামধনু উঠলে খরা অর্থাৎ অনাবৃষ্টি হয়। পুবদিকে রামধনু উঠলে বৃষ্টি হয়।

(৯) নিশ্চিত বৃষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

ভাদুরে মেঘে বিপরীত বায়। সেদিন বর্ষা কে ঘুচায়।।

অর্থাৎ, ভাদ্রমাসে যে দিন আকাশে মেঘ থাকে এবং বাতাস বিপরীত দিক থেকে বয় সেই দিন নিশ্চয়ই বৃষ্টি হবে।

(১০) অতিরিক্ত বর্ষা সম্পর্কে খনার বচন

বছরের প্রথম ঈষাণে বয়। হবেই বর্ষা খনা কয়।।

অর্থাৎ, বছরের প্রথম দিকে যদি ঈষাণ কোণ অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে বাতাস বয় তাহলে সে বছর অতিরিক্ত বর্ষা হবে নিশ্চিত।

(১১) বৃষ্টির স্থায়ীত্ব সম্পর্কে খনার বচন

শনির সাত মঙ্গলের তিন। আর সব দিন দিন।।

অর্থাৎ, শনিবার বৃষ্টি আরম্ভ হলে সেই বৃষ্টি সাত দিন ধরে চলবে। মঙ্গলবারে আরম্ভ হলে তিন দিন থাকে এবং অন্যান্য বারে বৃষ্টি আরম্ভ হলে একদিন করে বৃষ্টি হয়।

(১২) আম ও তেঁতুলের ফলন সম্পর্কে খনার বচন

আমে বান। তেঁতুলে ধান।।

অর্থাৎ, যে বছর আম প্রচুর পরিমাণে ফলে থাকে সে বছর বান হয়। তেঁতুল প্রচুর পরিমাণে ফললে ধানও প্রচুর পরিমাণে ফলে থাকে।

(১৩) কৃষি সম্পর্কে খনার বচন

খনা বলে শুন কৃষকগণ। হাল লয়ে মাঠে যাবে যখন।। শুভক্ষণ দেখে করবে যাত্রা। পথে যেন না হয় অশুভ বার্তা।। মাঠে গিয়ে আগে দিক নিরুপণ। পূর্বদিক হতে কর হল চালন।। তাহলে তোর সমস্ত আশয়। হইবে সফল নাহিক সংশয়।।

অর্থাৎ, কৃষি একটি শুভ কাজ। সুতরাং হাল নিয়ে মাঠে যাবার সময় শুভক্ষণেই যাওয়া উচিত। পথে কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ অথবা অশুভ আলোচনা করা উচিত নয়। অর্থাৎ কৃষি কাজ শুরুর সময়ে মন পরিষ্কার থাকা দরকার। ক্ষেতে পুব দিক থেকে লাঙ্গল দেওয়া আরম্ভ করা উচিত। এই সকল নিয়ম পালন করলে কৃষিকাজ সুচারু রূপে সম্পন্ন হবে এবং তাতে সফলতা লাভ হবে।

(১৪) কৃষিতে খাটনি সম্পর্কে খনার বচন

খাটে খাটায় লাভের গাঁতি। তার অর্ধেক কাঁধে ছাতি।। ঘরে বসে পুছে বাত। তার ঘরে হা ভাত।।

অর্থাৎ, কৃষিকাজের জন্য অপর লোক নিযুক্ত করতে হবে, তবে তার সঙ্গে নিজেকেও খাটতে হবে। তবেই প্রচুর লাভ হবে। যিনি নিজে খাটেন না, কেবল ছাতা মাথায় দিয়ে কাজের লোকের কাজ তদারক করেন তার অর্ধেক লাভ হয়। আর যিনি তাও করেন না, ঘরে বসে খোঁজখবর নেন তার ঘরে চিরকাল অন্নকষ্ট থাকে অর্থাৎ তার ভাগ্যে ফসল জোটে না।

(১৫) আম-কাঁঠাল গাছ রোপণ সম্পর্কে খনার বচন

হাত বিশেক করি ফাঁক। আম-কাঁঠাল পুঁতে রাখ।। গাছগাছালি ঘন সবে না। ফল তাতে ফলবে না।।

অর্থাৎ, কুড়ি হাত অন্তর অন্তর আম কাঁঠালের গাছ পুঁততে হয়। এর থেকে ঘন পুঁতলে গাছে ফলন কম হয়।

(১৬) পুষ্টি সম্পর্কে খনার বচন

সিংহ মীন বর্জে। কলা খাবে আজ্যে।।

এখানে আজ্য অর্থাৎ ঘৃত। ভাদ্র ও চৈত্র মাস বাদ দিয়ে সকল মাসেই ঘি দিয়ে কলা খাবে। কারণ এটি অতিশয় পুষ্টিকর।

(১৭) ধান কাটা সম্পর্কে খনার বচন

থোড় তিরিশে ফুলে বিশে ঘোড়ামুখো তের। এই বুঝে শ্বশুর ঠাকুর কেনা বেচা কর।।

অর্থাৎ, ধানের থোড় বেরুবার একমাস পরে, ফুল বেরুবার কুড়িদিন পরে এবং শীষগুলো ঘোড়ার মুখের মতো নত হয়ে পড়বার তের দিন পরে ধান কাটবার উপযুক্ত হয়। খনা তাই শ্বশুরকে বলছেন, এই হিসাব করে ধানের কেনা বেচা করুন।

মুলো ও পাট চাষ সম্পর্কে খনার পরামর্শ

জমি চাষের ব্যাপারে খনার বচন থেকে জানা যায়, মুলো ফলাবার জন্য মাটিতে অন্ততঃ দশবার লাঙ্গল দিতে হবে। তুলোর জন্য দিতে হবে পাঁচবার। ধানের জন্য আড়াইবার আর পাট চাষ করবার জন্য জমি চষারই দরকার হয় না। মুলোর জন্য জমিকে চাষ দিয়ে করতে হবে তুলোর মতো নরম। আখের ফলনের জন্য চাই ধুলোর মতো চষা মাটি।

লাঙ্গল চালান সম্পর্কে খনার বক্তব্য

যদি পুবদিক থেকে লাঙ্গল চালান শুরু কর, তাহলে জেনো তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। যদি পূর্ণিমা বা অমাবস্যা দিনে জমিতে লাঙ্গল দেওয়া শুরু কর, তাহলে জনবে, সারাজীবন তোমাকে হা-হুতাশ করে কাটাতে হবে। তোমার বলদগুলো বাত রোগে আক্রান্ত হবে। আর সৌভাগ্যলক্ষ্মী তোমাকে ত্যাগ করবেন। খনার এই বচনকে যে অগ্রাহ্য করে সে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে।

কলা ও পান চাষ সম্পর্কে খনার পরামর্শ

পানের চাষ করবে শ্রাবণে। তাহলে এত পান হবে যে রাবণ দশমুখে চিবিয়েও তা শেষ করতে পারবে না। কলার চাষ করতে হলে জমিতে একহাত পরিমাণ গর্ত খুঁড়বে। গর্তগুলো হবে আট হাত অন্তর এবং সমান্তরাল। তারপর গর্তগুলোতে কলাগাছের চারা রোপন করবে। কলা গাছের চারা রোপন করবার পর কচিপাতা কখনও কাটবে না, তাহলে বৃদ্ধি বন্ধ হতে পারে। দেখবে এই কলা বিক্রি করেই তোমার ভাত-কাপড়ের সংস্থান হয়ে যাবে। চারা গাছ যদি দিনে রোদ আর সন্ধ্যাবেলায় জল পায় তাহলে ফুরফুরিয়ে বাড়তে পারে। ধানগাছ রোদেই ফলে আর রাতে ফলে জলে। তবে পানগাছ বাড়ে ছায়াতেই।

উপসংহার :- খনা বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নারী চরিত্র, যার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আজও সমাদৃত। কৃষি, আবহাওয়া এবং গ্রামীণ জীবনের গভীর উপলব্ধি তার “খনার বচন” এ প্রতিফলিত হয়েছে, যা বাংলার কৃষক সমাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর পরামর্শ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। খনার জীবন ও কাজগুলি তার সময়ের জন্য যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল, তেমনি আজকের দিনেও তিনি পরিবেশ ও জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত চিরন্তন সত্যের প্রতীক হয়ে আছেন। তার বচনগুলি কৃষি ও প্রকৃতির সাথে মানুষের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরে এবং সেই ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।

(FAQ) কিংবন্তি নারী খনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. খনা কে ছিলেন?

খনা ছিলেন বাংলার একজন কিংবদন্তি নারী গণিতজ্ঞ ও জ্যোতিষী। তিনি কৃষি এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত তার প্রবাদ বাক্য “খনার বচন” এর জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

২. “খনার বচন” কী?

“খনার বচন” হলো বাংলার কৃষি, আবহাওয়া এবং জীবনযাপন সংক্রান্ত প্রবাদ বাক্যগুলির একটি সংকলন, যা খনার জ্ঞানের প্রতিফলন। এগুলি সহজ ভাষায় কৃষকদের উপদেশ দিতে তৈরি হয়েছিল।

৩. খনা কোন সময়কালে জীবিত ছিলেন?

খনা আনুমানিক ৬ষ্ঠ থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে কোনো এক সময় জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে তার জীবনের সঠিক সময়কাল নিশ্চিত নয়।

৪. খনার বচন আজও কীভাবে প্রাসঙ্গিক?

খনার বচন কৃষি, আবহাওয়া, এবং প্রকৃতি নিয়ে জ্ঞানসমৃদ্ধ উপদেশ প্রদান করে, যা আজও বাংলার গ্রামীণ কৃষি সমাজে ব্যবহৃত হয়।

৫. খনার অবদান কেন গুরুত্বপূর্ণ?

খনার অবদান বাংলার গ্রামীণ কৃষি এবং আবহাওয়া পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আজও প্রাসঙ্গিক। তার জ্ঞানের প্রতিফলন আজও গ্রামীণ কৃষকদের জীবনযাত্রায় সহায়ক।

Leave a Comment