একজন ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে ললিত মোদীর জীবনী প্রসঙ্গে তার জন্ম, শিক্ষা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন, তার প্রতি হুমকি, সুরক্ষা, বিসিসিআই এর হয়ে চুক্তি সম্পাদন, পুরস্কার অর্জন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার স্বীকৃতি লাভ সম্পর্কে জানবো।
ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে ললিত মোদীর জীবনী
ঐতিহাসিক চরিত্র | ললিত মোদী |
জন্ম | ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৩ খ্রি: |
জন্মস্থান | দিল্লী |
পরিচিতি | ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক |
পদ | ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের চেয়ারম্যান |
ভূমিকা :- ললিত মোদী একজন ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের চেয়ারম্যান ও কমিশনার, চ্যাম্পিয়নস লিগের চেয়ারম্যান, বিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ললিত মোদীর জন্ম
২৯ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে ভারতবর্ষ -এর দিল্লি শহরে একটি মাড়ওয়াড়ি পরিবারে ললিত মোদী জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্পূর্ণ নাম ললিত কুমার মোদী।
ললিত মোদীর শিক্ষা
নৈনিতালের মর্যাদা সম্পন্ন সেন্ট জোসেফস কলেজে ললিত মোদী লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্যুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিপণন বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
ললিত মোদীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন
- (১) ললিত মোদী ও তার স্ত্রী মিনালের দুই সন্তান – রুচির (পুত্র) ও আলিয়া (কন্যা)। পুত্র রুচিরকে বহু IPL খেলায় দেখতে পাওয়া গেলেও তার ও কন্যা আলিয়া কে খুব কম ক্ষেত্রেই তার সঙ্গে দেখা গেছে।
- (২) মুম্বাইয়ের শহরতলির জুহু তে তার বিচ হাউসে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খুব বিলাসিতায় জীবন কাটান। মুম্বাইয়ের প্রান্তভাগে ওর্লিতেও তাদের একটি ফ্ল্যাট আছে।
বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া-তে ললিত মোদীর নির্বাচন
২০০৫ সালে ক্ষমতার লড়াইয়ে মোদীর অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। তিনি প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদের প্রধান জগমোহন ডালমিয়া কে সরিয়ে একজন প্রতিপত্তিশালী রাজনীতিক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, শরদ পাওয়ার বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া-তে নির্বাচিত হন।
ললিত মোদীর প্রতি হুমকি
- (১) ২০০৯ সালের মার্চের শেষের দিকে মুম্বাই পুলিশ অপরাধ জগতের ডন ছোটা শাকিলের দলের ঘাতক রশিদ মালবারি কে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানা যায় যে ক্রিকেট প্রধান ললিত মোদী, তার স্ত্রী মিনাল ও পুত্র রুচির কে হত্যা করার একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল।
- (২) এই তথ্য একটি সরকারি গোয়েন্দা দফতরের দ্বারা সমর্থিত হয়। গোয়েন্দা দফতর ছোটা শাকিল ও তার বস দাউদ ইব্রাহিমের ফোনের কথোপকথন জোগাড় করে, যেখানে ৪ জন ঘাতক ভাড়া করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং মোদী ও তার পরিবার কে দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা ভারতবর্ষে হত্যা করতে বলা হচ্ছে।
- (৩) গোয়েন্দা দফতরের মতে ছোটা শাকিল তার বন্দুকবাজদের নির্দেশ দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা মুম্বাইয়ে মোদীকে হত্যার লক্ষ্য বানাতে। ফোনের সংলাপ ছিল “উসকো খতম কর দো ইন্ডিয়া ইয়া সাউথ আফ্রিকা মে”। এই হুমকির কারণ, মোদী কর্তৃক পাকিস্তান-এর ক্রিকেটারদের আইপিএল-২ এ অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি।
ললিত মোদীর সুরক্ষা
- (১) হত্যার হুমকির পর ললিত মোদী বাড়িতে থাকুন বা না থাকুন তার বাড়ি সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর দ্বারা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এছাড়াও তিনি যখনই বাড়ি থেকে বেরোবেন তখনই একটি পুলিশী নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে।
- (২) কিন্তু তার স্ত্রী মিনাল এবং পুত্র রুচির বাড়ির বাইরে পাবেন মাত্র একজন সশস্ত্র প্রহরী। মোদীর বাড়ি ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়ার জন্য তার নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে আর মোদীর নিজের নিয়োগ করা দেহরক্ষী রয়েছে যারা সারাক্ষণ তাকে, তার স্ত্রী ও পুত্রকে পাহারা দেয়।
- (৩) এ কথাও জানা যে আইপিএল এর সুরক্ষা সংস্থাও মোদীর চারিদিকে সব সময়ের জন্য সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেছে। আইপিএল এর সুরক্ষা সংস্থা নিকোলাস এন্ড স্টাইন এর একজন অংশীদার বব নিকোলাস মোদীর চার পাশে বেসরকারী সুরক্ষা বাড়ানো এবং দৃঢ় করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
- (৪) তিনি এও নিশ্চিত করেছেন যে মোদী ভারতের বাইরে থাকলেও ভারত সরকার তার জন্য দৃঢ় পুলিশী প্রহরার ব্যবস্থা করবেন। এও জানা গেছে যে ললিত মোদীর পুত্র রুচির ও কন্যা আলিয়ার স্কুলে ঢোকা আর বেরোনোর সময় সাত জন দেহরক্ষীর একটি দল থাকবে।
- (৫) সাতজন দেহরক্ষীর মধ্যে দু জন সশস্ত্র পুলিশ অফিসার আর পাঁচ জন নিজস্ব দেহরক্ষী, তাদের মধ্যে দু জন কালো পোশাকের শক্তিশালী মানুষ। জুহু তে ললিত মোদীর বাংলোতে রয়েছে পূর্ণ-সুরক্ষা।
- (৫) বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় তার বাড়ির চারপাশে দশ থেকে পনেরো জন প্রহরী ২৪ ঘণ্টা টহল দেয়। মোদীর সামনের গেটে দুই তিন জন নিজস্ব প্রহরী ২৪ ঘণ্টা এলাকাটি জরিপ করে আর প্রতিটি পথ চলতি মানুষ কে জেরা করে।
বিসিসিআই এর হয়ে ললিত মোদীর চুক্তি সম্পাদন
ললিত মোদী বিসিসিআই এর হয়ে নিম্নলিখিত চুক্তিগুলি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন –
- (১) টিম ইন্ডিয়ার ব্যয়ভার বহনের জন্য সাহারা গ্রুপের সঙ্গে ২০-১২-০৫ সালে ৪ বছরের জন্য ১০৩ মিলিয়ন ডলার বা ৪১৫ কোটির চুক্তি।
- (২) টিম ইন্ডিয়ার পোশাক পরিচ্ছদের ব্যয়ভার বহনের জন্য নায়িক-এর সঙ্গে ২৪-১২-০৫ সালে ৪ বছরের জন্য ৫৩ মিলিয়ন ডলার বা ২১৫ কোটির চুক্তি।
- (৩) নিম্বাস-এর সঙ্গে ১৮-১২-০৬ সালে ৪ বছরের জন্য ৬১২ মিলিয়ন ডলার-এর প্রচার স্বত্ব চুক্তি।
- (৪) ০৭-০৪-০৬ সালে Z-এর সঙ্গে বিদেশের খেলাগুলির প্রচার-স্বত্ব ৪ বছরের জন্য ২১৯ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
- (৫) W.S.G এর সঙ্গে বিসিসিআই এর ব্যয়ভার বহনের জন্য ২৮-০৮-০৭ সালে ৪৬ মিলিয়ন ডলার বা ১৭৩ কোটির চুক্তি।
- (৬) SONY এর সঙ্গে ১৫-০১-০৮ এ আইপিএল প্রচার স্বত্বর জন্য ১.২৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
- (৭) ২৫-০১-০৮ সালে আইপিএল টিম সেল-এর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৭২৩.৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
- (৮) ১৮-০৪-০৮ সালে লাইভ কারেন্ট মেডিয়া কে ওয়েব মেডিয়া স্বত্ব প্রদানের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
- (৯) ২০০৮ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে আইপিএল টাইটেল এবং মাঠের ব্যয়ভার বহনের জন্য ২২০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
- (১০) ২৫-০৩-২০০৯ সালে SONY, W.S.G এর সঙ্গে আইপিএল প্রচার স্বত্ব প্রদানের জন্য চুক্তি-মূল্যের ১.২৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২ বিলিয়ন ডলার-এ পূনর্নির্ধারণ।
ক্রিকেট ব্যতীত সংস্থার সাথে ললিত মোদীর যোগ
তিনি মোদী এন্টারপ্রাইজেস এর প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং গডফ্রে ফিলিপস ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।
ললিত মোদী কর্তৃক পুরস্কার অর্জন
এখনো পর্যন্ত ললিত মোদী বহু পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেছেন। যেমন –
- (১) ২০০৮ সালে ভারতের নতুন ধারণা প্রবর্তনকারী কোম্পানি হিসেবে বিসিসিআই কে গড়ে তোলার জন্য “দ্য বিজনেস স্ট্যানডার্ড অ্যাওয়ার্ড” পান।
- (২) এশিয়া ব্র্যান্ড কনফারেন্স কর্তৃক ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে “ব্র্যান্ড বিল্ডার অফ দ্য ইয়ার ” পুরস্কার পান।
- (৩) ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে সিএনবিসি আওয়াজ থেকে “দ্য কনস্যুমার অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সফর্মিং ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া” পুরস্কার পান।
- (৪) ৬ অক্টোবর ২০০৮ সালে এনডিটিভি প্রফিট এর থেকে “দ্য মোস্ট ইনোভেটিভ বিজনেস লিডার ইন ইন্ডিয়া” পুরস্কার লাভ করেন।
- (৫) ২৪ অক্টোবর ২০০৮ সালে “এক্সেলেন্স ইন ইনোভেশন” এর জন্য ফ্রস্ট এন্ড সুলিভান গ্রোথ এক্সেলেন্স পুরস্কার লাভ করেন।
- (৬) ৮ নভেম্বর ২০০৮ সালে “টিচার্স এচিভমেন্ট অফ দ্য ইয়ার” পুরস্কার লাভ করেন।
- (৭) ১২ নভেম্বর ২০০৮ সালে “স্পোর্টস বিজনেস রাশমানস অ্যাওয়ার্ড ফর স্পোর্টস ইভেন্ট ইনোভেশন” পুরস্কার অর্জন করেন।
- (৮) ২২ জানুয়ারি ২০০৯ সালে “সিএনবিসি বিজনেস লিডার” পুরস্কার পান।
- (৯) ললিত মোদী ভারতের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে নতুন চিন্তা ধারার শ্রেষ্ঠ প্রবর্তক হিসেবে এনডিটিভি পুরস্কার অর্জন করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ললিত মোদীর স্বীকৃতি
ললিত মোদী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছেন। যেমন –
- (১) ললিত মোদী ২০০৫ সালে বোর্ডে যোগ দেওয়ার পর থেকে বিসিসিআইয়ের আয় ৭ গুণ বেড়ে যায়। তাই ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন তাকে ভারতের ২০ জন সর্বাধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ভারতীয়দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
- (২) অগ্রগণ্য ক্রীড়া পত্রিকা স্পোর্টস প্রো এর ২০০৮ আগস্ট সংখ্যায় তাকে ক্রীড়া দুনিয়ার ক্ষমতাশালীদের তালিকায় ১৭তম স্থান দেওয়া হয়। পরে বিশ্বের খেলাধুলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থ উৎপাদনকারী হিসেবে গণ্য হন। ক্রীড়া প্রশাসক হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তিনি নিজের সংগঠনের জন্য চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ সংগ্রহে সক্ষম হন।
- (৩) টেলিগ্রাফ পত্রিকায় মাইক আর্থারটনের একটি নিবন্ধে তিনি ক্রিকেটের সব থেকে ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে বর্ণিত হন।
- (৪) টাইম ম্যাগাজিনের জুলাই ২০০৮ সালের সংখ্যা অনুসারে সেই বছরের বিশ্বের সর্বোত্তম ক্রীড়া কার্য নির্বাহকদের তালিকায় তিনি ১৬ তম স্থানাধিকারী।
- (৫) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পত্রিকা বিজনেস উইক এর অক্টোবর ২০০৮ সংখ্যায় ললিত মোদী ২৫ জন বিশ্ব ক্রীড়াবিদের মধ্যে ১৯ তম হিসেবে ভোট পান।
- (৬) ভারতের অগ্রণী বাণিজ্য পত্রিকা বিজনেস টুডে-র নভেম্বর সংখ্যা মোদীকে নিয়েই প্রচ্ছদের বিষয় তৈরি করে এবং তাকে ভারতের একজন অন্যতম প্রধান মার্কেটার হিসেবে চিহ্নিত করে।
- (৭) ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে বার্ষিক ক্রীড়া ক্ষমতা তালিকায় তিনি ১ নম্বরে উঠে আসেন। ডিএনএ সংবাদপত্র তাদের ৫০ জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ভারতীয়দের তালিকায় ললিত মোদীকে ১৭তম স্থান দেয়।
উপসংহার :- ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ললিত মোদী কার্যক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। ২০০৯ সালে ভারতবর্ষে আইপিএল-২ র জন্য অনুমতি না মেলায় মাত্র তিন সপ্তাহের নোটিশে দক্ষিণ আফ্রিকায় তা সংগঠিত করতে সক্ষম হন।
(FAQ) ললিত মোদী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
একজন ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের চেয়ারম্যান ও কমিশনার।
ভারতের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আইপিএল এর ক্ষেত্রে।
দিল্লীতে।
ডন ছোটা সাকিল।