ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন প্রসঙ্গে অধিবেশনে দুটি তাৎপর্যময় ঘটনা, প্রথম ও দ্বিতীয় তাৎপর্যময় ঘটনা, মুসলিম সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, মুসলিম সমাজের চরমপন্থী মানসিকতা, লীগ ও কংগ্রেসের পাশাপাশি অবস্থান, তিলকের ভূমিকা, লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষর, লক্ষ্ণৌ চুক্তির ত্রুটি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন
ঐতিহাসিক ঘটনা | জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন |
সময়কাল | ১৯১৬ খ্রি: |
সভাপতি | অম্বিকাচরণ মজুমদার |
স্বাক্ষরিত চুক্তি | লক্ষ্ণৌ চুক্তি |
বিশেষ দিক | কংগ্রেস ও লীগের ঐক্য |
বিশেষ ভূমিকা | বাল গঙ্গাধর তিলক |
ভূমিকা :- ভারত-এর জাতীয়তাবাদীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁরা বহু দলে বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন এবং একতার অভাবে জাতীয় আন্দোলনের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম বিশেষ প্রয়োজন। দেশে জাতীয়তার মনোভাব ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্তরে ঐক্যের প্রয়োজনও বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন
এই পারিপার্শিক অবস্থায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে দুটি তাৎপর্যময় ঘটনা
ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ইতিহাসের দিক থেকে তাৎপর্যময় দুটি ঘটনার উদ্ভব হয়েছিল।
কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের প্রথম তাৎপর্যময় ঘটনা
- (ক) এই অধিবেশনে প্রথম তাৎপর্যময় ঘটনাটি ছিল কংগ্রেসের মধ্যে বিবদমান নরমপন্থী ও চরমপন্থী দলের বিরোধের অবসান ও মিলন। দুই দলের পুরাতন বিবাদ বিসংবাদ এখন অর্থহীন হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেসের ভিতর দুটি দলের সৃষ্টিতে কোনো দলেরই বিশেষ কোনো ইস্টও সাধিত হতে পারে নি।
- (খ) জাতীয় আন্দোলনের প্রবল প্রবাহ পুরাতন আমলের নেতৃবৃন্দকে লোকমান্য তিলক ও তার অনুগামী চরমপন্থীদের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদানের আহ্বান জানাতে বাধ্য করেছিল। ১৯০৭ খ্রীস্টাব্দের পর এই লক্ষ্ণৌ কংগ্রেসেই নরমপন্থী ও চরমপন্থী দুই দলের মধ্যে পুনর্মিলন সম্ভব হয়েছিল।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের দ্বিতীয় তাৎপর্যময় ঘটনা
ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ কংগ্রেসের দ্বিতীয় তাৎপর্যময় ঘটনাটি ছিল পুরাতন বাদ বিসংবাদ বিস্মৃত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ-এর মিলন, তথা একযোগে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাজনৈতিক অধিকার আদায় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের প্রাক্কালে দেশবাসীর মানসিকতায় পরিবর্তন
একদিকে মহাযুদ্ধ অন্যদিকে দুটি হোমরুল লীগের অবিশ্রান্ত আন্দোলনের কারণে দেশবাসির মানসিকতায় একটা পরিবর্তন এসেছিল। জাতীয় কংগ্রেসের কর্মধারায় এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের প্রাক্কালে মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি
এই পরিস্থিতিতে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছিল। ইতিপূর্বেই দেখানো হয়েছে যে, শিক্ষিত মুসলিম তরুণেরা রাজনীতি ক্ষেত্রে দৃঢ়তর পদক্ষেপের দিকে ঝুঁকেছিল। যুদ্ধকালে তাদের এই মনোভাবের গতিবেগ বেড়ে উঠেছিল।
কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের পূর্বে পত্রিকা নিষিদ্ধ
উগ্রপন্থী প্রচারকার্যের অভিযোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে আবুল কালাম আজাদের ‘আল হিলাল‘ ও মৌলানা মোহাম্মদ আলির ‘কমরেড’ এই দুটি পত্রিকার প্রকাশ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনের পূর্বে মুসলিম সমাজের চরমপন্থী মানসিকতা
ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য মৌলানা মহম্মদ আলি ও তাঁর ভ্রাতা মৌলানা সৌকত আলি, হজরত মোহানি এবং আবুল কালাম আজাদকে অন্তরীণ করা হয়েছিল। মুসলিম তরুণ সমাজের এই চরমপন্থী মানসিকতাকে মুসলিম লীগ উপেক্ষা করতে পারে নি।
ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের কাছাকাছি অবস্থান
আলিগড় সম্প্রদায় নামে খ্যাত গোষ্ঠির সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যে মুসলিম লীগ আর নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে নি। রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে অতঃপর মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয়েই পরস্পরের কাছাকাছি এসে পৌঁছে।
জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে লক্ষ্ণৌ চুক্তি
একটা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণত এই চুক্তিটি লক্ষ্ণৌ চুক্তি বা ‘প্যাক্ট’ নামে খ্যাত।
কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে তিলকের ভূমিকা
ভারতে কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে ঐক্যস্থাপনে লোকমান্য তিলকের বিশেষ ভূমিকা ছিল। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ এই দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজের নিজের অধিবেশন সভায় এক ধরনেরই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে কংগ্রেস ও লীগের এক ধরনের দাবি
দুই পক্ষ থেকেই এই দাবি উত্থাপিত হয়েছিল যে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে ঘোষণা করতে হবে অধিক কালবিলম্ব না করে ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হবে। হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই ‘লক্ষ্ণৌ চুক্তি’ ছিল একটি অতি আবশ্যকীয় পদক্ষেপ।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে স্বাক্ষরিত লক্ষ্ণৌ চুক্তির ত্রুটি
- (১) তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এই চুক্তিতে একটি ত্রুটি বা গলদ থেকে গিয়েছিল। এই চুক্তিতে হিন্দু ও মুসলিম শিক্ষিত সমাজকে নিজ নিজ পৃথক সত্তা বজায় রেখে মিলিত করার চেষ্টা হয়েছিল।
- (২) এই চুক্তিতে ধর্মকে রাজনীতির ক্ষেত্রে টেনে আনা হয়েছিল, একথা বোঝা বা বোঝানোর চেষ্টা হয়নি যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সকলের স্বার্থই সমান, কে হিন্দু বা কে মুসলমান এই ভেদ-ভাবনা রাজনীতির ক্ষেত্রে অবাস্তব এবং অবান্তর।
- (৩) দেখা যাচ্ছে, যে এই লক্ষ্ণৌ চুক্তি ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার পুনরাগমনের দ্বার উন্মুক্ত করেই রেখেছিল।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে স্বাক্ষরিত লক্ষ্ণৌ চুক্তির গুরুত্ব
তবে এই লক্ষ্ণৌ চুক্তির ফলে বেশ কিছু লাভও হয়েছিল। নরমপন্থী ও চরমপন্থী কংগ্রেস নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের অবসান এবং কংগ্রেস ও লীগের মিলন দেশের মধ্যে প্রচুর রাজনৈতিক উদ্দীপনা এনে দিয়েছিল। এমনকি, সন্ত্রস্ত ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ও জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে আপোষ নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল।
উপসংহার :- বস্তুত, এর পরই ভারতীর জাতীয় আন্দোলন তার তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করেছিল। এই অধ্যায়টিকে সংগ্রামমুখর গান্ধীযুগ রূপে অভিহিত করা যেতে পারে।
(FAQ) ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে।
অম্বিকাচরণ মজুমদার।
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে।
লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে।