নাসিকের বিপ্লব প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে মিত্রমেলা, অভিনব ভারত সংঘ, বিনায়কের পিস্তল প্রেরণ, গণেশের গ্ৰেপ্তার, গণেশের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর, মহারাষ্ট্রে ক্রোধের আগুন, ডি. এম. জ্যাকসন সাহেবের হত্যা, নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা ও তার বিচার সম্পর্কে জানবো।
নাসিকের বিপ্লব প্রচেষ্টা
ঐতিহাসিক ঘটনা | নাসিকের বিপ্লব প্রচেষ্টা |
মিত্রমেলা | ১৮৯৯ খ্রি: |
ইয়ং ইতালি | ম্যাৎসিনি |
গণেশের গ্ৰেপ্তার | ১৯০৯ খ্রি: |
নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা | ১৯১০ খ্রি: |
ভূমিকা :- মহারাষ্ট্র ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্র। নাসিক ছিল মহারাষ্ট্রের বৈপ্লবিক আন্দোলনের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
নাসিকের মিত্রমেলা
বিনায়ক দামোদর সাভারকর ভারতবর্ষ ত্যাগ করবার বহু পূর্বে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিনায়ক ও তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গণেশ সাভারকার নাসিকে ‘মিত্রমেলা’ নামে যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই সংগঠনটিকে গণেশ সাভারকর পরবর্তীতে একটি গুপ্তসমিতিরূপে পুনর্গঠিত করেন।
নাসিকের ম্যাৎসিনির অভিনব ভারত সঙ্ঘ
‘ইয়ং ইতালি’ নামক গুপ্তসমিতির অনুকরণে নাসিকের এই পুনর্গঠিত গুপ্তসমিতির নাম রাখা হয় অভিনব ভারত সঙ্ঘ। এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন গণেশ সাভারকর। বিনায়ক লণ্ডন থেকে এই সমিতির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন।
বিনায়কের পিস্তল প্রেরণ
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে বিনায়ক লণ্ডন থেকে কুড়িটি ‘ব্রাউনিং’ পিস্তল চতুর্ভুজ আমিন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে গণেশের নিকট প্রেরণ করেন।
গণেশের গ্ৰেপ্তার
অস্ত্রগুলি ভারতে আসার এক সপ্তাহ পূর্বে পুলিশ গণেশকে রাজদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার করে। গণেশ এই পিস্তলগুলির সংবাদ পেয়ে পূর্বেই একটি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে ফেব্রুয়ারী “সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম”-এর অভিযোগে গণেশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গণেশের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর
‘লঘু অভিনব ভারতমেলা’ নামে একটি বিপ্লবাত্মক কবিতার পুস্তক রচনা ও তা প্রকাশ করাই ছিল গণেশের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রমাণযোগ্য অপরাধ। গণেশের গ্রেপ্তারের সময় তাঁর বাড়িতে পুলিশ ষাট পৃষ্ঠায় টাইপ করা একটি বোমা তৈরির প্রণালী হস্তগত করে, যা বিনায়ক লণ্ডন থেকে গণেশের নিকট পাঠিয়েছিলেন। এই অপরাধে গণেশ সাভারকরকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
মহারাষ্ট্রে ক্রোধের আগুন
গণেশের প্রতি এই অমানুষিক দণ্ডদানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ‘অভিনব ‘ভারত সংঘ’-এর সভ্যগণ এক কঠোর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। গণেশের প্রতি এই প্রকার দণ্ড দানের জন্য সমগ্র মহারাষ্ট্রে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠে।
জ্যাকসন সাহেবকে হত্যার সিদ্ধান্ত
গণেশের বিচারক ছিলেন নাসিকের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকসন সাহেব। গুপ্ত সমিতির সভ্যগণ জ্যাকসনকে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নাসিকের গুপ্ত সমিতির কোনো সভ্যকে এর ভার দিলে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা বুঝে ‘অভিনব ভারত সঙ্ঘ’-এর ঔরঙ্গাবাদ শাখার একজন অল্পবয়সী সভ্যকে এই উদ্দেশ্যে আনা হয়।
ডি. এম. জ্যাকসন সাহেবের হত্যা
- (১) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর স্থানীয় থিয়েটারগৃহে জ্যাকসন সাহেবকে বিদায় সংবর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য এক জনসভার আয়োজন হয়। জনাকীর্ণ সভাগৃহে জ্যাকসন উপস্থিত এবং ঔরঙ্গাবাদ গুপ্ত সমিতির সভ্য অনন্তলক্ষণ কানহেরে বিনায়কের প্রেরিত একটি ভয়ংকর ‘ব্রাউনিং’ পিস্তল নিয়ে প্রস্তুত।
- (২) জ্যাকসন সাহেব বিদায় সংবর্ধনার উত্তর দিতে উঠামাত্র পিস্তলের গুলিতে তৎক্ষণাৎ জ্যাকসনের মৃত্যু ঘটে। অত্যাচারী বিচারক জ্যাকসন নাসিক থেকে বিদায় গ্রহণ করতে উঠে ধরাধাম থেকেই চিরবিদায় গ্রহণ করেন। হত্যাকারী বিপ্লবী যুবক পলায়নের কিছুমাত্র চেষ্টা না করে পুলিসের কাছে ধরা দেন।
নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা
জ্যাকসন হত্যার পর নাসিকের পুলিশ আতঙ্কে অস্থির হয়ে চারিদিকে উন্মত্তের মত হত্যাকারীর সহযোগীদের অনুসন্ধান করতে থাকে এবং গণেশ সাভারকরকে কেন্দ্র করয়া এক বিরাট ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে। এই অনুসন্ধানের ফলে মোট আটত্রিশ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের নিয়ে বিখ্যাত ‘নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা’ আরম্ভ হয়।
নাসিক ষড়যন্ত্র মামলার বিচার
মামলার বিচারে সর্বসমেত সাতাশ জন দোষী সাব্যস্ত হন এবং জ্যাকসনের হত্যা প্রভৃতি অপরাধে তিনজনের ফাঁসি ও অন্য সকলের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়।
উপসংহার :- এইভাবে ‘নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা’র সঙ্গে সঙ্গে নাসিকের বিপ্লব প্রচেষ্টার অবসান ঘটে।
(FAQ) নাসিকের বিপ্লব প্রচেষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে।
বিনায়ক সাভারকার ও গণেশ সাভারকার।
অনন্তলক্ষণ কানহেরে।
ম্যাৎসিনি।