রাজনৈতিক ডাকাতি প্রসঙ্গে ডাকাতির কারণ, সাংঘাতিক সামাজিক অপরাধ, সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য ডাকাতি, ধনীর ঘরে রাজনৈতিক ডাকাতি, গেরিলা যুদ্ধের অপরিহার্য অংশ রাজনৈতিক ডাকাতি, রাজনৈতিক ডাকাতি সম্পর্কে গুপ্ত সমিতির মতভেদ, দীক্ষা ও প্রতিজ্ঞা গ্ৰহণ সম্পর্কে জানবো।
রাজনৈতিক ডাকাতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | রাজনৈতিক ডাকাতি |
উদ্দেশ্য | স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ সংগ্রহ |
স্থান | বাংলাদেশ |
বিরোধিতা | পি. মিত্র |
ভূমিকা :- ডাকাতি বা গুপ্তহত্যা বীরত্বের লক্ষণ নয়। বীর জাতিরা এই সকল উপায় অবলম্বন করে না, তারা সম্মুখ যুদ্ধ করে। এই সকল কথা বিপ্লবী নায়কদের অবিদিত ছিল না, তাঁরা এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হয়েই এই বিপজ্জনক পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক ডাকাতির কারণ
- (১) স্বাধীনতা-সংগ্রামের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন, কিন্তু গরীব মধ্যশ্রেণীর যুবকদের অর্থ নেই, সম্পদ নেই, তাদের আছে কেবল প্রবল ইংরেজ শত্রুকে বিতাড়িত করে স্বদেশের মুক্তি সাধনের দুর্জয় সঙ্কল্প। কিন্তু দেশের লোক টাকা দেয় না।
- (২) দু’চার জন ‘ব্রিফলেস্’ ব্যারিস্টার, যারা নেতাগিরি করতেন, তারাই কিছু কিছু সাহায্য করিতেন। কাজেই রাজনৈতিক ডাকাতি করে বৈপ্লবিক কর্মের জন্য অর্থ সংগ্রহ করবার মতবাদ বৈপ্লবিক গুপ্ত সমিতিতে প্রথম থেকেই ছিল।
রাজনৈতিক ডাকাতি সাংঘাতিক সামাজিক অপরাধ
কিন্তু বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন যে, রাজনৈতিক বা অরাজনীতিক যে কোনো কারণেই হোক, ডাকাতি একটি সাংঘাতিক সামাজিক অপরাধ।
সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য রাজনৈতিক ডাকাতি
এটা সর্বজন স্বীকৃত সত্য যে, চুরি-ডাকাতি সামাজিক অপরাধ, কারণ এর দ্বারা সামাজিক মঙ্গলের মূলনীতি বিপর্যস্ত করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ডাকাতেরা সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের (বিপ্লবের) উদ্দেশ্য নিয়েই ডাকাতি করে। সুতরাং বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য ক্ষুদ্র মঙ্গল বিসর্জন দিলে তাতে পুণ্য ছাড়া পাপ হয় না।
ধনীর ঘরে রাজনৈতিক ডাকাতি
কিন্তু তাই বলে ডাকাতি দ্বারা সকলের অর্থ কেড়ে নেওয়া চলবে না। যে ধনীর অর্থ সমাজের জন্য ব্যয়িত হয় না, তার অর্থই কেড়ে নেওয়া উচিত। কাজেই যদি বিপ্লবীরা সমাজের কোনো কৃপণ অথবা বিলাসী সভ্যের অর্থ বলপূর্বক কেড়ে নেয়, তবে তাদের কাজ সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত বলেই ধরে নিতে হবে।
গেরিলা যুদ্ধের অপরিহার্য অংশ রাজনৈতিক ডাকাতি
এই জন্য রাজনীতিক ডাকাতিকে ইংরেজ বিরোধী গেরিলা যুদ্ধের একটি অপরিহার্য অংশ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ডাকাতি সম্পর্কে গুপ্ত সমিতির মতভেদ
- (১) কিন্তু বাংলাদেশের বৈপ্লবিক সমিতিগুলির মধ্যেও ডাকাতি সম্বন্ধে মতভেদ ছিল। অনুশীলন সমিতির সভাপতি পি. মিত্র ডাকাতি দ্বারা অর্থ সংগ্রহের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন।
- (২) কিন্তু ঢাকার অনুশীলন সমিতি প্রথম থেকেই ডাকাতি দ্বারা অর্থ সংগ্রহের পন্থা অবলম্বন করে। এই জন্য সভাপতি পি. মিত্র একবার ঢাকার অনুশীলন সমিতির প্রধান পরিচালক পুলিনবিহারী দাসকে সমিতি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।
- (৩) কিন্তু সভাপতি মিত্র মহাশয়ের প্রবল বিরোধিতা ঢাকার অনুশীলন সমিতিকে ডাকাতির পথ থেকে নিবৃত্ত করতে পারে নি। ঢাকার সমিতির পরিচালকরা ডাকাতি দ্বারা অর্থ সংগ্রহের পন্থাকে বৈপ্লবিক সংগ্রামের একটি অপরিহার্য অংশ বলে গ্রহণ করেন এবং একদল সভ্যকে ঐ উদ্দেশ্যে বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন।
রাজনৈতিক ডাকাতির জন্য দীক্ষা
কিন্তু এই অসৎ কর্ম যাতে এই সভ্যদেরকে ও সমিতিকে দুর্নীতির পথে নিয়ে যেতে না পারে তার জন্য দীক্ষার মধ্যে ডাকাতি সম্পর্কেও প্রতিজ্ঞা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। সমিতির যে সকল সদস্যকে ডাকাতির জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হত তাদের ডাকাতি সম্পর্কে নিম্নলিখিত প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা ছিল বাধ্যতামূলক –
- (১) “স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন বলেই অসৎ কর্ম জেনেও আমরা ডাকাতি করতে বাধ্য হই। ডাকাতি-লব্ধ অর্থ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এক কপর্দকও ব্যয় না করে সমস্ত নেতার হাতে অর্পণ করব। তিনি প্রত্যেকের পারিবারিক অভাব বুঝে যা আমাদের দেবেন, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট থাকব।”
- (২) “যারা দেশদ্রোহী, স্বদেশী আন্দোলন-এর বিরোধী, সরকারের গুপ্তচর, প্রতারক, মদ্যপায়ী, বেশ্যাসক্ত, অসৎ প্রকৃতির, দরিদ্র ও দুর্বলের প্রতি উৎপীড়ণকারী, যারা জাতি বা দেশকে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, যারা অতিরিক্ত সুদখোর এবং ধনী অথচ কৃপণ, কেবলমাত্র তাদের বাড়ীতেই ডাকাতি করব।”
- (৩) “শপথ করছি যে আমরা ডাকাতি উপলক্ষে কোনো রমণী, শিশু, দুর্বল, রুগ্ন, নিঃসহায় প্রমুখের প্রতি কখনও কোনো প্রকার অত্যাচার করব না।”
উপসংহার :- ডাকাতি দ্বারা অর্থ সংগ্রহের নীতি বিশেষভাবে বাংলাদেশেই বৈপ্লবিক সংগ্রামের অংশ হিসাবে গৃহীত হয়, অন্যান্য প্রদেশে দুই-একটা ডাকাতি হলেও তা সাধারণ নীতি হিসাবে গৃহীত হয় নি। বাংলাদেশের জমিদার-মধ্যস্বত্বভোগী প্রধান সামাজিক ও আর্থনীতিক অবস্থাই বোধ হয় তার একমাত্র কারণ।
(FAQ) রাজনৈতিক ডাকাতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ধনী, কৃপণ, অসৎ, দেশদ্রোহী প্রমুখ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অর্থ সংগ্রহ।
বাংলাদেশ।
পি. মিত্র।