বাহমনী রাজ্যের চরমহিতৈষী রূপে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা

বাহমনী রাজ্যের চরমহিতৈষী রূপে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা প্রসঙ্গে সূক্ষ্ম বিচার বুদ্ধি ও কৌশল, রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা, উড়িষ্যার আক্রমণ প্রতিরোধ, মালবের আক্রমণ প্রতিরোধ, রাজ্যের সীমানা বিস্তার, বিজয়নগর ও কাঞ্চি অভিযান, শাসন সংস্কার, চরম আনুগত্য, চরম হিতৈষি ও তার বিয়োগান্ত পরিণতি সম্পর্কে জানবো।

বাহমনী রাজ্যের চরমহিতৈষী রূপে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা

বিষয়বাহমনি রাজ্যের চরম হিতৈষী হিসাবে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা
আমিরমামুদ গাওয়ান
রাজ্যবাহমনি রাজ্য
সুলতানতৃতীয় মহম্মদ
মৃত্যু১৪৮১ খ্রি:
বাহমনী রাজ্যের চরমহিতৈষী রূপে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা

ভূমিকা :- মামুদ গাওয়ান ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাদীপ্ত এক দক্ষ প্রশাসক। গাওয়ানের এক পূর্বপুরুষ পারস্যের ‘শাহে’র উজিরের পদ লাভ করেছিলেন। সুতরাং তাঁর বংশে উচ্চপদস্থ দায়িত্বপূর্ণ চাকরির ঐতিহ্য ছিল।

মামুদ গাওয়ানের আমির পদ লাভ

তিনি ছিলেন ইরানের এক গ্রামের অধিবাসী। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে আসেন এবং সুলতান দ্বিতীয় আলাউদ্দিন এই ‘পরদেশি’ ব্যাক্তির গুণে আকৃষ্ট হয়ে তাকে রাজসভায় ‘আমির’ পদে অভিষিক্ত করেন।

রাজমাতা মখদুমার কর্তৃত্ব

সুলতান হুমায়ুন গাওয়ানকে “Malik- ut-Tujjar” উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে নিজাম শাহের মৃত্যু হলে তাঁর নাবালক ভ্রাতা সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজমাতা মখদুমা রাজ্যের সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী গাওয়ান

রাজমাতার প্ররোচনায় খাজা জাহান নিহত হলে মাহমুদ গাওয়ানকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন। তাঁর দূরদর্শিতা, সমরকুশলতা ও সুদক্ষ শাসনব্যবস্থার ফলে বাহমনি রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেন।

বাহমনি রাজ্যের চরম সংকট

তিনি যখন ক্ষমতা লাভ করেন, তখন বাহমনি রাজ্যের চরম সংকট উপস্থিত হয়েছিল। সেই সময়ে রাজসভায় অভিজাতরা ‘পরদেশি’ ও ‘দক্ষিণী’ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে অভিজাতদের মধ্যে এক চরম বিদ্বেষপূর্ণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

মামুদ গাওয়ানের সূক্ষ্ম বিচার বুদ্ধি ও কৌশল

মামুদ গাওয়ান তাঁর সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধি ও কৌশলে সকলের প্রতি সমব্যবহার নীতি গ্রহণ করে বাহমনি রাজ্যের একজন চরম হিতৈষী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা মামুদ গাওয়ান

মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের তিনজন সুলতানের অধীনে কাজ করেন এবং তৃতীয় মহম্মদের রাজত্বকালে তিনিই রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি শাসনকার্যে এবং সমরক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রজাদের শ্রদ্ধা ও প্রীতি অর্জন করেছিলেন।

অভিভাবক গাওয়ান

  • (১) তিনি ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহণ করেছিলেন। কিন্তু কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন নি। ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হুমায়ুনের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র নিজাম মাত্র আট বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই নিজাম শাহেরই অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন মামুদ গাওয়ান।
  • (২) মাহমুদ গাওয়ান যখন অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন বাহমনি রাজ্যের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

নিকিতিনের বর্ণনায় বাহমনি রাজ্যের করুন দশা

  • (১) রুশ ভ্রমণকারী এথেনিসিয়াস নিকিতিন ১৪৬৯ থেকে ১৪৭৪ পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যে খাজা ইউসুফ খোরাসানি এই ছদ্মনামে পরিভ্রমণ করেছিলেন। তিনি বাহমনি রাজ্য সম্পর্কে তিনি যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে বাহমনি রাজ্যের করুণ দশার প্রতিই ইঙ্গিত করে।
  • (২) তিনি লিখেছেন, “The land is overstocked with people, but those in the country are very miserable whilst the nobles are extremely opulent and delight in luxury.”

মামুদ গাওয়ান কর্তৃক উড়িষ্যার আক্রমণ প্রতিরোধ

বাহমনি রাজ্যের ইতিহাসে তিনি শক্তি প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেন নি। নাবালক সুলতানের সুযোগ নিয়ে উড়িষ্যার রাজা কপিলেন্দ্র তেলেঙ্গনার রাজার সাহায্যে বাহমনি রাজ্য আক্রমণ করেন। তাঁরা বাহমনি রাজ্যের রাজধানী বিদর পর্যন্ত অগ্রসর হন, কিন্তু গাওয়ান সেই আক্রমণ প্রতিহত করে বিদর থেকে বিতাড়িত করেন।

মামুদ গাওয়ানকর্তৃক মালবের আক্রমণ প্রতিরোধ

এরপর মালবের সুলতান মাহমুদ খলজি বাহমনি রাজ্য আক্রমণ করেন ও রাজধানী বিদর দখল করেন। মামুদ গাওয়ান সঙ্গে সঙ্গে গুজরাটের সুলতান মাহমুদ বেগড়ার সাহায্যে মাহমুদ খলজিকে বিদর থেকে বিতাড়িত করেন। ১৪৬৩ মাহমুদ খলজি পুনরায় বাহমনি রাজ্য আক্রমণ করেন। কিন্তু মামুদ গাওয়ান বেগড়ার সাহায্যে পুনরায় তাঁকে বিতাড়িত করেন।

মামুদ গাওয়ানের সময় বাহমনি রাজ্যের সীমানা বিস্তার

তিনি বিজয়নগর ও উড়িষ্যার বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেন এবং বাহমনি রাজ্যের সীমানা উড়িষ্যার দক্ষিণ থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

মামুদ গাওয়ানের নিকট কোঙ্কনের রাজাদের পরাজয়

বুরহান-ই-মাসির থেকে জানা যায় যে, মামুদ গাওয়ান ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে কোঙ্কনের রাজগণকে পরাজিত করে বহু সুরক্ষিত দুর্গ দখল করেন। কোঙ্কন থেকে গাওয়ান বহু ধনসম্পদ লাভ করেন। তাঁরই সময়ে বাহমনি রাজ্যের অপর সেনাপতি রাজমহেন্দ্রী কোণ্ডাভীরের দুর্গ দখল করেন।

মামুদ গাওয়ানের বিজয়নগর ও কাঞ্চী অভিযান

১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং গোয়া দখল করেন। ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে গাওয়ান কাঞ্চীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেন।

মামুদ গাওয়ানের আমলে বাহমনি রাজ্যের প্রসার

এইভাবে বিভিন্ন অভিযানে সাফল্য অর্জনের ফলে রাহমনি রাজ্যের সীমা উত্তরে খাদেশ দক্ষিণে তুঙ্গভদ্রা নদী, উত্তর-পূর্বে উড়িষ্যা এবং দক্ষিণ- পশ্চিমে গোয়া সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রাহমনি রাজ্য প্রসারিত হয়েছিল।

মামুদ গাওয়ানের শাসন সংস্কার

  • (১) শুধুমাত্র বাহমনি রাজ্যের বিস্তার করেই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না, বাহমনি রাজ্যের শাসনব্যবস্থার সংহতি আনার জন্য সর্ববিভাগের শাসন সংস্কারে মনোযোগী হন। তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ শাসক। অনেক ঐতিহাসিক তাকে বাহমনি রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক বলে অভিহিত করেছেন।
  • (২) তিনি বাহমনি রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগের সংস্কার সাধন করে রাজ্যের উন্নতিসাধন করেন। অর্থ বিভাগ, বিচার বিভাগ, সামরিক বিভাগ, জনশিক্ষা ও রাজস্ববিভাগের সংস্কার সাধন করে বাহমনি রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে তিনি এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।
  • (৩) তাঁর চেষ্টায় সবরকম দুর্নীতি প্রশাসন থেকে দূর হয়। যারা দোষী বিবেচিত হত, তাদের কঠিন শাস্তি প্রদান করা হত।

প্রাদেশিক শাসনে মামুদ গাওয়ানের হস্তক্ষেপ

  • (১) কেন্দ্রীয় শক্তিকে দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে বাহমনি রাজ্য এতদিন, যে চারটি প্রধান বিভাগ বা ‘তরফ’-এ বিভক্ত ছিল, গাওয়ান তার প্রতিটি তরফকে দু’ভাগে ভাগ করেন এবং তরফদারের ক্ষমতা সঙ্কুচিত করেন।
  • (২) প্রাদেশিক শাসকদের ক্ষমতা সঙ্কুচিত করায়, গাওয়ানের ওপর তরফদাররা বিশেষভাবে রুষ্ট হয়। দক্ষিণীদের নেতা হাসান তরফদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গাওয়ানের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন এবং গাওয়ানকে উৎখাত করার চেষ্টা করেন।

মামুদ গাওয়ানের চরম আনুগত্য

  • (১) চরম আনুগত্যের সঙ্গে সামরিক বিভাগের সংস্কার সাধন করে তিনি তাঁর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুলতানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, অভিজাতদের ক্ষমতা দুর্বল করে কেন্দ্রীয় শক্তিকে শক্তিশালী করে তোলা।
  • (২) এতদিন রাজ্যে ‘দক্ষিণী’ ও ‘পরদেশি দের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছিল, গাওয়ানের সময় তা চরম আকার ধারণ করে। কিন্তু গাওয়ান কোনো দলে যোগ না দিয়ে সুলতানের চরম বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন এবং তিনি যে সকল সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন, সেগুলি যে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে তিনি সম্পন্ন করতে পারবেন সুলতান এ বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে পোষণ করতেন।
  • (৩) তিনি সৈন্যবিভাগেও চরম শৃঙ্খলা আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। ন্যায় বিচারক রূপেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ন্যায্য ও সম-হারে খাজনা আদায়ের জন্য গাওয়ান গ্রামের জমি জরিপ করিয়েছিলেন। এগুলি তাঁর শাসনতান্ত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে।

চরম হিতৈষী মামুদ গাওয়ান

  • (১) মামুদ গাওয়ান সুলতানের অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত হয়ে সমগ্র বাহমনি রাজ্যের একজন চরম হিতৈষীজনে পরিণত হন। বাহমনি রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি এবং সর্বাঙ্গীণ কল্যাণসাধনের ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শিতার পরিচয় প্রদান করেন।
  • (২) মামুদ গাওয়ান ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন দূরদর্শী রাজনীতিক। তিনি সততা ও আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের উন্নতিসাধনে যত্নবান হন।

বাহমনি মন্ত্রী মামুদ গাওয়ানের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা

  • (১) ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি নিরহঙ্কৃত জীবনযাপন করতেন এবং সমকালীন নৈতিক কলুষতা থেকে মুক্ত ছিলেন। তাঁর অদম্য শিক্ষানুরাগ ছিল এবং বিদরে তাঁর নিজস্ব পুস্তকালয়ে তিন সহস্রাধিক পুস্তক ছিল। অঙ্কশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা ও সাহিত্যে তাঁর অনুরাগ ছিল।
  • (২) শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। বিদরে তিনি একটি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ফিরিস্তার মতে, তিনি রোজাত-উল্‌-ইনসা এবং দিওয়ান-ই-আসর নামে দুটি গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন।

মামুদ গাওয়ানের প্রতি দক্ষিণী নেতাদের ঈর্ষা

  • (১) এত বিভিন্ন গুণের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও, গাওয়ান শুধুমাত্র ‘পরদেশি’ এই অপরাধে দক্ষিণী দলের নেতা হাসান তাঁর প্রতিপত্তিতে ঈর্ষান্বিত হন এবং গাওয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তৃতীয় মহম্মদ শাহের মন গাওয়ানের প্রতি বিদ্বিষ্ট করে তোলেন।
  • (২) পরিশেষে, মামুদ গাওয়ান উড়িষ্যার রাজার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাহমনি রাজ্য আক্রমণ করার ষড়যন্ত্র করছেন, এরকম এক জাল-চিঠির সাহায্যে দক্ষিণী দলের নেতা এবং তেলেঙ্গানার তরফদার হাসান নিজাম-উল-মুল্ক সুলতানের নিকট এক মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপিত করেন।
  • (৩) ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে শত্রুগণের কৌশলে মদ্যপায়ী সুলতান এই মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মামুদ গাওয়ানের প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। প্রতিপক্ষ দলের চক্রান্তে বাহমনি রাজ্য একজন প্রকৃত হিতৈষী ও সুদক্ষ শাসককে হারায় এবং গাওয়ানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাহমনি রাজ্যের পতন আরম্ভ হয়।

মামুদ গাওয়ানের মৃত্যু সম্পর্কে টেলারের মন্তব্য

গাওয়ানের মৃত্যু সম্পর্কে ঐতিহাসিক মিডোজ টেলার মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, “with his death departed all the cohesion and power of the Bahmani Kingdom ” তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাহমনি রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা ও সংহতি অন্তর্হিত হয়।

বাহমনি মন্ত্রী মামুদ গাওয়ান সম্পর্কে ঈশ্বরীপ্রসাদের মন্তব্য

ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ মামুদ গাওয়ান সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “The murder of such a devoted servant was a grave blunder and more than anything else it accelerated the ruin of the Bahmani dynasty “ বাহমনি রাজ্যের এরকম একজন প্রকৃত হিতৈষীর হত্যা ছিল চরম ভুল এবং অন্য যে-কোনো কারণ অপেক্ষা এটিই বাহমনি রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

মামুদ গাওয়ান সম্পর্কে ঐতিহাসিক যোশীর মত

বাহমনি রাজ্যের মন্ত্রী মামুদ গাওয়ানের হত্যাকে ঐতিহাসিক পি. এম. যোশী “this great crime” এবং “one of the tragedies of medieval India” বলে অভিহিত করেছেন।

মামুদ গাওয়ানের বিয়োগান্ত পরিণতি

  • (১) মামুদ গাওয়ানের এই বিয়োগান্ত পরিণতি সমগ্র বাহমনি রাজ্যের এক চরম বিয়োগান্ত পরিণতিতে পরিণত হয়। মামুদ গাওয়ানের মতো সুশাসক ও বাহমনি রাজ্যের এক শুভার্থীর প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
  • (২) গাওয়ানের হত্যাকাণ্ডে ভীত হয়ে ‘পরদেশি’ আমিররা রাজধানী থেকে পালিয়ে যায়। এমনকি, দক্ষিণীদের মধ্যে অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন আমির গাওয়ানের হত্যাকাণ্ডকে অনুমোদন করতে পারেন নি।

সুলতান তৃতীয় মহম্মদের মৃত্যু

সুলতান তৃতীয় মহম্মদ শাহ অবশ্য পরে তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং দুঃখিত ও অনুতপ্ত হৃদয়ে এক বছর অতিবাহিত করার পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই হাসান ক্ষমতার চাবিকাঠি হস্তগত করেন।

বাহমনি রাজ্যের অবসান

মামুদ গাওয়ানের মৃত্যুর পর উপযুক্ত শাসক না থাকায় বাহমনি রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে পাঁচটি স্বাধীন রাজ্যের আবির্ভাব হয়। এইভাবে বাহমনি রাজ্যের অবসান ঘটে।

উপসংহার :- সব ঐতিহাসিকই একমত যে, মামুদ গাওয়ানের মতো একজন বিচক্ষণ শাসকের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গেই বাহমনি রাজ্যের শেষ চিহ্নটুকু বিলুপ্ত হয়। তাই ঐতিহাসিক পি. এম. যোশী বলেছেন, এই বিরাট অপরাধই ছিল বাহমনি রাজ্যের পতনের তাৎক্ষণিক কারণ। ঈশ্বরীপ্রসাদও বলেছেন, তাঁর মৃত্যুতে বাহমনি রাজ্যের ১৭৯ বছরের এক গৌরবময় শাসনকালের অবসান ঘটে।

(FAQ) বাহমনী রাজ্যের চরমহিতৈষী রূপে মামুদ গাওয়ানের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মামুদ গাওয়ান কে ছিলেন?

বাহমনি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।

২. কোন সুলতানের আমলে মামুদ গাওয়ান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন?

তৃতীয় মহম্মদ।

৩. মামুদ গাওয়ানের মৃত্যুর পর বাহমনি রাজ্য কতগুলি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে?

পাঁচটি।

৪. মামুদ গাওয়ানের মৃত্যু কখন হয়?

১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment