সুলতানি যুগের বাণিজ্য প্রসঙ্গে বৃহৎ শহর, পণ্য সরবরাহ, বৃহৎ সড়ক, বন্দর, আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য, বহির্বাণিজ্য, অন্তর্বাণিজ্য, কারখানা, অন্তর্বাণিজ্যের পণ্য ও ধনবন্টনের অভাব সম্পর্কে জানবো।
সুলতানি যুগের বাণিজ্য
ঐতিহাসিক ঘটনা | সুলতানি যুগের বাণিজ্য |
বৃহৎ শহর | দিল্লী, আগ্ৰা, বারাণসী |
বন্দর | কালিকট, কোচিন, সপ্তগ্ৰাম |
আমদানি দ্রব্য | ঘোড়া, দাস, সোনা, রূপা |
রপ্তানি দ্রব্য | সুগন্ধি মশলা, কাপড়, চিনি |
ভূমিকা :- দিল্লী নগর ছিল বাণিজ্যের এক বড় কেন্দ্র। মুদ্রা অর্থনীতি ও নগরের বিস্তারের ফলে বাণিজ্যের বিস্তার ঘটেছিল। নায়েক ও মূলতানি বণিকরা বাণিজ্যে পারদর্শী ছিল।
সুলতানি যুগের বৃহৎ শহর
দিল্লি সুলতানি যুগের বড় শহরগুলির মধ্যে ছিল দিল্লী, দেবগিরি, লাহোর, আগ্রা, বারাণসী, ক্যাম্বে, লখনৌতি।
সুলতানি যুগে পণ্য সরবরাহ
নগরের লোকদের খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহ আসত।
সুলতানি যুগের বৃহৎ সড়ক
দিল্লির সুলতানি আমলে বড় সড়কগুলি বিভিন্ন নগরকে যুক্ত করত। বাংলায় গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ খলজি বহু রাস্তা তৈরি করেন, যেগুলি একাধারে নদী বাঁধ ও রাস্তার কাজ করত।
সুলতানি যুগের বন্দর
বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য ভারত-এর উপকূলের বন্দর ও উত্তর-পশ্চিমের স্থলপথের ব্যবহার হত। ভারতের পশ্চিম উপকূলে বহু বন্দর থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। বারবোসা, ইবন বতুতা প্রভৃতি পর্যটক এই বন্দরগুলির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন গোয়া, দিউ, কালিকট, কোচিন, ক্যাম্বে ও পূর্ব উপকূলে সপ্তগ্রাম। স্থলপথে মূলতান ছিল এক সীমান্ত বাণিজ্যকেন্দ্র।
সুলতানি যুগে আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য
মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া থেকে ঘোড়া ও দাস আমদানি হত। এছাড়া সোনা, রূপা, জাফরান আমদানি করা হত। ভারত থেকে মশলা, সুগন্ধি মশলা, কাপড়, চিনি, চাউল, নীল, রেশম, দামী পাথর রপ্তানি করা হত।
সুলতানি যুগের বহির্বাণিজ্য
ভারতের বহির্বাণিজ্য চলত প্রধানত পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে। এই বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল প্রধানত আরব ও পারসিক বণিকদের হাতে। তবে ভারতীয় বণিকরাও বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশ নিত।
সুলতানি যুগের অন্তর্বাণিজ্য
ইবন বতুতার বিবরণ থেকে সুলতানি যুগে ভারতের অন্তর্বাণিজ্যের চিত্র পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় উপত্যকা, মালব, গুজরাট, বাংলা, দাক্ষিণাত্য, মালাবারের মধ্যে অন্তর্বাণিজ্য চলত। প্রধান নগরগুলি ছিল অন্তর্বাণিজ্যের কেন্দ্র।
সুলতানি যুগের কারখানা
বিভিন্ন নগরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ছিল। এই রাজপথ ধরে মাল চলাচল করত। সুলতানি যুগে শিল্প উৎপাদনের জন্য বণিকদের হাতে কোনো বড় কারখানা ছিল না। রাজপরিবার ও অভিজাতদের নিত্য প্রয়োজনীয় শিল্প ও বিলাসদ্রব্যের যোগানের জন্য কিছু কারখানা চালান হত।
সুলতানি যুগের অন্তর্বাণিজ্যের পণ্য
কারখানায় ৪ হাজার কারিগর কাজ করত। দিল্লীতে বিরাট দাস ও ঘোড়ার বাজার ছিল। আমরোহা থেকে খাদ্যশস্য, আলিগড় থেকে মদ, ধার থেকে পান, অযোধ্যা থেকে কাপড়, দেবগিরি ও লখনৌতি থেকে মসলিন দিল্লীতে আসত।
সুলতানি যুগে ধনবন্টনের অভাব
- (১) মূলতানী শাহ সম্প্রদায় ছিল ধনী বণিক। মূলতানী বণিকরা সরকার ও শাসকশ্রেণীকে সুদে টাকা ধার দিত। ডঃ ইরফান হাবিবের মতে, কৃষকরা ছিল অর্থ দাস (Semi-Serf)।
- (২) গ্রামের প্রধান খুৎ ও মুকাদ্দমরা ছিল সম্পদশালী। তাদের গ্রামীণ অভিজাত বলা চলে। নগরে শাসকশ্রেণী বসবাস করত। তারাও ছিল ধনী ও বিলাসী। সাধারণ কৃষক ও কারিগরের অবস্থা ভাল ছিল না।
উপসংহার :- সুলতানি আমলে অর্থের স্বচ্ছলতা থাকলেও সমাজে ধনবণ্টন ছিল না। ফলে গরীব গরীবই থাকত। কৃষকরা খুবই দুর্দশাগ্রস্থ ছিল। জীর্ণ পোষাক ও অর্ধাশন ছিল তাদের জীবনের অঙ্গ। কৃষকদের ওপর প্রচুর করের বোঝা চাপত।
(FAQ) সুলতানি যুগের বাণিজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইবন বতুতা।
মশলা, সুগন্ধি মশলা, কাপড়, চিনি, চাউল, নীল, রেশম, দামী পাথর প্রভৃতি।
ঘোড়া, দাস, সোনা, রূপা, জাফরান প্রভৃতি।
কালিকট, কোচিন, সপ্তগ্ৰাম।