মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা প্রসঙ্গে তার জন্ম, বংশ পরিচয়, ছেলেবেলা, শিক্ষা, লোকসমক্ষে আগমন, কঠোর কর্মসূচি, তুর্কি প্রজাতন্ত্র গঠন, তুরস্কের পরপর চারবারের রাষ্ট্রপতি, তার মৃত্যু ও তার প্রতি সম্মাননা সম্পর্কে জানবো।
মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা
ঐতিহাসিক চরিত্র | মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা |
জন্ম | ১৮৮১ খ্রি: |
দেশ | তুরস্ক |
পরিচিতি | তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি |
বিশেষ খেতাব | তুরস্কের জাতির জনক |
মৃত্যু | ১৯৩৮ খ্রি: |
ভূমিকা :- মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা ছিলেন একজন তুর্কি ফিল্ড মার্শাল, বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক, লেখক এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক, যিনি ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
কামাল পাশার জন্ম
মুস্তাফা কামাল ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের স্যালেনিকার এক চাষী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
কামাল পাশার বংশ পরিচয়
যে পরিবারে তাদের জন্ম, তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন গ্ৰিস-এর ম্যাসিডনের অধিবাসী। তার বাবার নাম ছিল আলি রেজা, মা জুবেইদা।
কামাল পাশার ছেলেবেলা
ছেলেবেলা থেকেই মুস্তফা ছিলেন সকলের চেয়ে আলাদা। যখন তার সাত বছর বয়স তখন বাবা মারা গেলেন। কাকা এসে তাকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন ভেড়ার পাল চরাতে হত।
কামাল পাশার শিক্ষা
মা জুবেইদা কাকাকে বলে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। সহপাঠীদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি মারামারি লেগেই থাকত। কোনো বিষয়ে অন্যায় দেখলে মেনে নিতে পারতেন না। জন্ম থেকে তার মধ্যে ছিল বিদ্রোহী সত্তা। একদিন কোনো এক শিক্ষকের অন্যায় দেখে স্থির থাকতে পারলেন না। তার সাথে মারামারি করে স্কুল ছাড়লেন।
কামাল পাশার লোকদৃষ্টিতে আগমন
পাশা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর সময় গ্যালিপলির যুদ্ধে (১৯১৫) উসমানীয় তুর্কিদের বিজয় নিশ্চিত করনে তাঁর ভূমিকার জন্য লোকদৃষ্টিতে আসেন।
কামাল পাশার নেতৃত্বে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন
- (১) উসমানীয় সাম্রাজ্য-এর পরাজয় ও বিলুপ্তির পর তিনি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। বর্তমান তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করে তিনি মিত্রশক্তির প্রেরিত বাহিনীকে পরাজিত করেন।
- (২) এইভাবে বিজয়ী হন এবং তার এই যুদ্ধ পরবর্তীতে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি ক্ষয়িষ্ণু উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটান এবং তাঁর স্থলে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি ঘোষণা করেন।
কামাল পাশার কঠোর কর্মসূচি গ্ৰহণ
নবগঠিত তুর্কি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে আতাতুর্ক একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র গঠনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের জন্য একটি কঠোর কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
শিক্ষার উন্নতিতে কামাল পাশার অবদান
- (১) ইউরোপ-এ বিভিন্ন দেশ দেখে তার মনে হয়েছিল শিক্ষার উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য স্কুল খোলা হল। সাত থেকে ষোল বৎসরের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হল।
- (২) ১৯২২ সালে নিরক্ষরতার হার ছিল শতকরা ৮২ জন। মাত্র দশ বছরের মধ্যে সেই হারকে কমিয়ে ৪২ জনে নামিয়ে আনা হল। তিনি ধর্মশিক্ষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রসারের উপর গুরুত্ব দিলেন।
- (৩) আরবি লিপির পরিবর্তে রোমান লিপির ব্যবহার শুরু হল। পৃথিবীর অন্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বর্ষপঞ্জী সংস্কার করা হল। দশমিক মুদ্রা চালু হল ।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কামাল পাশার অবদান
শুধুমাত্র দেশের শিক্ষার উন্নতি নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া হল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সমগ্র দেশ জুড়ে রেলপথ তৈরির কাজে হাত দেওয়া হল। তৈরি হল নতুন নতুন পথঘাট।
বৈদেশিক ক্ষেত্রে কামাল পাশার নীতি
শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরিণ সংস্কার নয়, বৈদেশিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করা হল। ১৯৩২ সালে তুরস্ক লীগ অব নেশনস-এর সদস্য হল।
প্রতিবেশি দেশের সাথে কামাল পাশার অনাক্রমন চুক্তি
সামরিক দিক থেকে যাতে কোনো বিপদ না আসে তার জন্য প্রতিবেশী প্রতিটি দেশের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করা হয়।
পরপর চারবারের রাষ্ট্রপতি কামাল পাশা
ইতিমধ্যে কামাল পাশা পর পর চারবার সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। ১৯২৩ সালে প্রথম তিনি নির্বাচিত হন। তারপর ১৯২৭, ১৯৩১, ১৯৩৫ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
আতাতুর্কবাদ
তিনি আদর্শগতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং তাঁর নীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক তত্ত্ব আতাতুর্কবাদ নামে পরিচিত পায়।
বিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা কামাল পাশা
সামরিক ও রাজনৈতিক কৃতিত্বের কারণে আতাতুর্ককে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
কামাল পাশার মৃত্যু
তুরস্কের সর্বাত্মক উন্নতির জন্য অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে তার স্বাস্থ্য ক্রমশই ভেঙে পড়ছিল। ১৯৩৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মারা গেলেন।
কামাল পাশার প্রতি সম্মাননা
কামাল আতাতুর্কের স্মরণে তুরস্ক জুড়ে অনেক স্মৃতিচিহ্ন তৈরি হয়েছে, যেমন ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গোল্ডেন হর্নের (হালিক) উপর নির্মিত আতাতুর্ক সেতু, আতাতুর্ক বাঁধ এবং আতাতুর্ক স্টেডিয়াম।
উপসংহার :- কামাল পাশার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন চালু করেছিলেন, সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেশ পরিচালনা করেছেন, তবুও তিনি তুরস্কের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ। যে পরিস্থিতিতে তিনি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তখন কঠোরতা ছাড়া উন্নতির কোনো পথই খোলা ছিল না।
(FAQ) মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
একজন তুর্কি ফিল্ড মার্শাল, বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক, লেখক এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক, যিনি ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা।
মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা।
মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা।