ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা -র জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা, বিবাহ, স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান, আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান, গভর্নরকে কালো পতাকা দর্শন, কারগারে বন্দী, কংগ্রেসে যোগদান, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান, তমলুক থানা দখল মিছিলে নেতৃত্ব, পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার কাহিনী সম্পর্কে জানবো।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী মাতঙ্গিনী হাজরা প্রসঙ্গে মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম, মাতঙ্গিনী হাজরার পিতামাতার নাম, মাতঙ্গিনী হাজরার শিক্ষা জীবন, মাতঙ্গিনী হাজরার বিবাহিত জীবন, মাতঙ্গিনী হাজরার রাজনৈতিক জীবন, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা, গান্ধী বুড়ি হিসেবে পরিচিত মাতঙ্গিনী হাজরা, ইতিহাসে স্মরণীয় মাতঙ্গিনী হাজরা ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যু।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা
ঐতিহাসিক চরিত্র | মাতঙ্গিনী হাজরা |
জন্ম | ১৯ অক্টোবর, ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী ভারত -এর স্বাধীনতা আন্দোলন |
ভূমিকা :- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক মহান বিপ্লবী নেত্রী ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। অকুতোভয় সাহস ও অসামান্য দেশপ্রেমে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তমলুকের অদূরে আলিনান নামে একটি ছোটো গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে মাতঙ্গিনী হাজরা জন্মগ্ৰহণ করেন।
মাতঙ্গিনী হাজরার পিতামাতা
তাঁর বাবার নাম ঠাকুরদাস মাইতি ও মায়ের নাম ভগবতী দেবী।
মাতঙ্গিনী হাজরার শিক্ষা
দারিদ্র্যের কারণে বাল্যকালে প্রথাগত শিক্ষা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন।
মাতঙ্গিনী হাজরার বিবাহ
মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় ত্রিলোচন হাজরা নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সাথে এবং বিয়ের চার বছরের মধ্যে মাতঙ্গিনী বিধবা হন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে মেদিনীপুর জেলার ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের মেদিনীপুর জেলার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল নারীদের এই আন্দোলনে যোগদান।
স্বাধীনতা আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার যোগদান
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলন -এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মাতঙ্গিনী হাজরা। মতাদর্শগতভাবে তিনি ছিলেন একজন গান্ধীবাদী।
বরিষ্ঠ নেতাদের সাথে মাতঙ্গিনী হাজরার পরিচয়
কংগ্রেস নেতা গুণধর ভৌমিক তাঁকে দলের বরিষ্ঠ নেতা সতীশ সামন্ত ও অজয় মুখোপাধ্যায় -এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার যোগদান
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মাতঙ্গিনী আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি লবণ আইন (লবণ সত্যাগ্রহ) অমান্য করে গ্রেফতার বরণ করেছিলেন। অল্পকাল পরেই অবশ্য তিনি মুক্তি লাভ করেন।
গভর্নরকে মাতঙ্গিনী হাজরার কালো পতাকা প্রদর্শন
গভর্নর স্যার জন অ্যাণ্ডারসন তমলুক পরিদর্শনে এলে মাতঙ্গিনী হাজরা জনস্রোতের সামনে সমস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের এড়িয়ে গিয়ে কালো পতাকা প্রদর্শন করেন।
কারাগারে বন্দী মাতঙ্গিনী হাজরা
কর মকুবের দাবিতে প্রতিবাদ শুরু করলে আবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। এই সময় তিনি বহরমপুরের কারাগারে ছমাস বন্দি ছিলেন। তিনি হিজলি বন্দি নিবাসেও বন্দি ছিলেন কিছুদিন।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে কংগ্রেসে মাতঙ্গিনী হাজরার যোগদান
মুক্তিলাভের পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যপদ লাভ করেন এবং নিজের হাতে চরকা কেটে খাদি কাপড় বানাতেও শুরু করেন।
কংগ্রেসের অধিবেশনে মাতঙ্গিনী হাজরার যোগদান
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাতঙ্গিনী শ্রীরামপুরে মহকুমা কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে আহত হন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার যোগদান
ভারত ছাড়ো আন্দোলন -এর সময় মেদিনীপুর জেলার একজন সক্রিয় আন্দোলন কর্মীরূপে অংশগ্ৰহণ করেন।
তমলুক থানা দখলে মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্ব
প্রধানত মহিলা স্বেচ্ছাসেবক সহ ছয় হাজার সমর্থক তমলুক থানা দখলের উদ্দেশ্যে একটি মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা।
মাতঙ্গিনী হাজরা ও তাঁর সহকর্মীদের মিছিল ভাঙার নির্দেশ
শহরের উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছালে ব্রিটিশ পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
আদেশ অমান্য করে মাতঙ্গিনী হাজরার অগ্ৰসর
সরকারের আদেশ অমান্য করে মাতঙ্গিনী অগ্রসর হলে তাঁকে গুলি করা হয়। তা সত্ত্বেও মাতঙ্গিনী এগিয়ে চলেন এবং পুলিশের কাছে জনতার ওপর গুলি না চালানোর আবেদন করেন।
মাতঙ্গিনী হাজরা সম্পর্কে বিপ্লবী পত্রিকার বর্ণনা
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মুখপত্র বিপ্লবী পত্রিকার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে,
- (১) ফৌজদারি আদালত ভবনের উত্তর দিক থেকে মাতঙ্গিনী একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পুলিশ গুলি চালালে তিনি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের পিছনে রেখে নিজেই এগিয়ে যান।
- (২) পুলিশ তিনবার তাঁকে গুলি করে। গুলি লাগে তার কপালে ও দুই হাতে। তবুও তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন।
- (৩) বারংবার তার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। কংগ্রেসের পতাকাটি মুঠোর মধ্যে শক্ত করে উঁচিয়ে ধরে বন্দেমাতরম ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মাতঙ্গিনী হাজরার নামে উৎসর্গ
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে অসংখ্য স্কুল, পাড়া ও রাস্তার নাম মাতঙ্গিনী হাজরার নামে উৎসর্গ করা হয়।
কলকাতা শহরে প্রথম নারী মূর্তি মাতঙ্গিনী হাজরা
স্বাধীন ভারতে কলকাতা শহরে প্রথম যে নারীমূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি। ১৯৭৭ সালে কলকাতার ময়দানে এই মূর্তিটি স্থাপিত হয়।
গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরা
তার এলাকায় মহামারী আকারে বসন্ত-রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তিনি আক্রান্ত পুরুষ, নারী ও শিশুদের সেবা করেছেন। জনগণ সোহাগভরে তাঁকে ‘গান্ধী বুড়ি’ বলে ডাকত।
মাতঙ্গিনী হাজরা গার্লস কলেজ নির্মাণ
পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁর নামে তৈরি হয়েছে শহীদ মাতঙ্গিনী হাজরা গার্লস কলেজ ফর উইমেন।
মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যু
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর তদনীন্তন মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার সামনে ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের গুলিতে তিনি শহিদ হয়েছিলেন।
উপসংহার :- ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০০২ সালে ভারতের ডাকবিভাগ মাতঙ্গিনী হাজরার ছবি দেওয়া পাঁচ টাকার ডাকটিকিট চালু করে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মাতঙ্গিনী হাজরা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) মাতঙ্গিনী হাজরা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারত ছাড়ো আন্দোলন।
মাতঙ্গিনী হাজরাকে।
ভারত ছাড়াে আন্দোলনের সময় বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা মেদিনীপুরের তমলুকে থানা দখলের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে শহিদ হওয়ার কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন।