মেরী কুরী

পদার্থবিজ্ঞানী মেরী কুরী প্রসঙ্গে তার জন্ম, বংশ পরিচয়, পরিবারের দুর্যোগ, শিক্ষা, পদার্থ বিদ্যা ও অঙ্কে ডিগ্ৰি অর্জন, পিয়ের কুরীর সাথে বিবাহ, গবেষণা, রেডিয়াম আবিষ্কার, নোবেল পুরস্কার লাভ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

পদার্থবিজ্ঞানী মেরী কুরী

ঐতিহাসিক চরিত্রমেরী কুরী
জন্ম৭ নভেম্বর, ১৮৬৭ খ্রি:
দেশপোল্যান্ড
পরিচিতিপদার্থবিজ্ঞানী
আবিষ্কাররেডিয়াম
পুরস্কারনোবেল পুরস্কার
মৃত্যু৪ জুলাই, ১৯৩৪ খ্রি:
পদার্থবিজ্ঞানী মেরী কুরী

ভূমিকা :- মেরী কুরী ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পোলীয় ও ফরাসি বিজ্ঞানী ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান।

মেরী কুরীর জন্ম

১৮৬৭ সালের ৭ই নভেম্বর পোল্যাণ্ডের ওয়ারশতে মেরীর জন্ম।

পদার্থ বিজ্ঞানী মেরী কুরীর বংশ পরিচয়

তার বাবা ক্লোদোভস্কা ছিলেন কৃষক পরিবারের সন্তান। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করে ওয়ারশ হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হন। মেরির মা ছিলেন একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এছাড়া খুব ভাল পিয়ানো বাজাতেন। চার বোনের মধ্যে মেরীই ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।

মেরী কুরীর পরিবারে দুর্যোগ

  • (১) অকস্মাৎ তাঁর পরিবারের উপর নেমে এল দুর্যোগের ঝড়। যক্ষ্মারোগে অসুস্থ হয়ে পড়লেন মা। বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। ঈশ্বর বোধহয় খুশি হলেন মাকে তার শিশুদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে। মেরীর বয়স তখন মাত্র দশ।
  • (২) পোল্যাণ্ড তখন জার শাসিত রাশিয়ার অধিকারে। পোল্যাণ্ড জুড়ে শুরু হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন। গোপনে এই আন্দোলনে সহায়তা করবার জন্য স্কুলের চাকরি হারাতে হল মেরীর বাবাকে। অনেক চেষ্টা করেও অন্য কোথাও চাকরি পেলেন না। প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্যেও নিজেদের মনোবল হারাননি ক্লোদোভস্কা পরিবার।

বিজ্ঞানী মেরী কুরীর শিক্ষা

  • (১) মেরী কিন্তু তাঁর পড়াশুনায় ছিলেন অসম্ভব মনোযোগী। শুধু নিজের ক্লাস নয়, সমগ্র স্কুলের তিনি ছিলেন সেরা ছাত্রী । স্কুলের শেষ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক পেলেন। কিন্তু অত্যধিক পড়াশুনার চাপে শরীর ভেঙে গিয়েছিল মেরীর।
  • (২) বাবা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। মেরীকে পাঠিয়ে দেওয়া হল গ্রামের বাড়িতে। দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেল। দেহ মন সতেজ হয়ে ওঠে মেরীর। আবার ওয়ারশ-তে ফিরে এলেন। মেরীর ইচ্ছা ছিল ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করবেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁর অনুরোধ অবজ্ঞা করল।

মেরী কুরীর গভর্নেসের চাকরি

সেই সময় তাঁর বোন প্যারিসের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। মেরীর ইচ্ছা সেও বোনের সঙ্গে গিয়ে পড়াশুনা করবে। বড় বোন গেলেন প্যারিসে। তখন একমাত্র প্যারিসেই মেয়েরা ডাক্তারি পড়তে পারত। বোনের পড়ার খরচ মেটাবার জন্য গভর্নেসের চাকরি নিলেন মেরী।

পদার্থ বিজ্ঞানী মেরী কুরীর সমস্যা

অল্প কয়েক মাস যেতেই এক সমস্যা দেখা দিল মেরীর জীবনে। পড়াশুনার পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। বোনের বাড়িতে সারাদিন গানবাজনা বন্ধু-বান্ধবদের আসা-যাওয়া। মেরী স্থির করলেন কলেজের কাছেই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকবেন। প্রথমে প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মেরীর ইচ্ছাকেই মেনে নিলেন তাঁর বোন। শুরু হল সাধনা আর সংগ্রাম।

মেরী কুরীর আরামের জীবন ত্যাগ

আরামের জীবন ত্যাগ করে নিজের খরচ চালাবার দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিলেন। আয় বলতে নিজের সামান্য সঞ্চয় আর বাবার পাঠানো যৎসামান্য অর্থ, সব মিলিয়ে মাসে ৪০ রুবল।

পদার্থবিদ্যা ও অঙ্কে মেরী কুরীর ডিগ্ৰি অর্জন

শিক্ষকেরা মেরীর কল্পনাশক্তি, উদ্যাম ও দক্ষতা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তাঁকে নতুন নতুন গবেষণায় উৎসাহিত করতেন। গভীর আত্মবিশ্বাসে মেরী স্থির করলেন শুধু পদার্থবিদ্যা নয়, অঙ্কতেও তিনি ডিগ্রী নেবেন। তাঁর সাধনা ব্যর্থ হল না। তিনি প্রথমে পদার্থবিদ্যা (১৮৯৩), পরের বছর অঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করলেন।

পিয়ের কুরীর সাথে মেরী কুরীর যোগাযোগ

এই সময় একদিন পরিচয় হল পিয়ের কুরীর সাথে। পিয়ের ছিলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। কোনো নারী নয়, বিজ্ঞানই ছিল তাঁর জীবনের আকর্ষণ। একদিন দুজনের দেখা হল এক অধ্যাপকের বাড়িতে। তারা দু’জন বিজ্ঞান নিয়েই কথাবার্তা শুরু করেছিলেন এবং তাদের অজান্তেই পরস্পরের বন্ধু হয়ে যান। পিয়ের মেরীকে তাঁর গবেষণাগারে যোগ দিতে বললেন।

মেরী কুরীর বিবাহ

পিয়ের তখন চুম্বকত নিয়ে কাজ করছিলেন। মেরী তাঁর সাথে কাজ শুরু করলেন (১৮৯৪)। পরের বছর দুজনে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হলেন।

ল্যাবরোটারিতে মেরী কুরীর সময় অতিবাহিত

সেই সময় পিয়ের স্কুল অব ফিজিক্সে মাত্র ৫০০ ফ্রাঙ্ক মাইনে পেতেন। এই অর্থেই দুজনের সংসার চলত। স্বামীর ল্যাবরোটারিতে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটত মেরীর।

মেরী কুরীর গবেষণা

  • (১) ফরাসী বৈজ্ঞানিক বেকেরেল একদিন বিরল ধাতু ইউরেনিয়ামের একটি অংশ লবণ দিয়ে পরীক্ষা করবার সময় লক্ষ্য করলেন ঐ লবণ থেকে এক প্রকার অদৃশ্য রশ্মি বার হয় যা অস্বচ্ছ বস্তু ভেদ করে যেতে পারে।
  • (২) তিনি দেখেছিলেন এই অদৃশ্য রশ্মি একটা কালো কাগজে মোড়া ফটোগ্রাফির প্লেটের উপরও বিক্রিয়া করে। কোন রশ্মির ভেদ ক্ষমতা সম্পর্কে সম্ভবত এটাই প্রথম আবিষ্কার। এই ব্যাপারটি কুরী দম্পতির গোচরে আনেন বেকেরেল। তাঁরা অন্য গবেষণা ছেড়ে এই সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
  • (৩) তারা স্থির করলেন এই বিষয়টিকেই তাঁরা ডক্টরেট ডিগ্রী পাওয়ার জন্য গবেষণার বিষয় হিসাবে স্থির করবেন। পিচব্লেণ্ডের ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় মেরী নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন মাস গবেষণাগার ছেড়ে বিশ্রাম নিলেন ।

মেরী কুরীর গবেষণা বন্ধ

১৮৯৭ সালে মেরীর প্রথম সন্তান আইরিনের জন্ম হল। সন্তান জন্মের পর কিছুদিন গবেষণা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে বাধ্য হলেন মেরী। আইরিনের বয়স কয়েক মাস হতেই গবেষণার কাজে আবার স্বামীর সঙ্গী হলেন মেরী।

মেরী কুরীর অমানুষিক পরিশ্রম

১৮৯৮ থেকে ১৯০২ এই ৪৫ মাস অমানুসিক পরিশ্রম করেছেন স্বামী-স্ত্রী। দিনমজুরের মত খাটতেন মেরী। আটচালার নীচে তাঁর স্বামী নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডুবে থাকেন।

মেরী কুরীর কাজ কঠিন

প্রথমে তাঁরা ডেবেছিলেন পিচব্লেণ্ডের মধ্যে শতকরা একভাগ অন্তত অদৃশ্য বস্তুটি পাওয়া যাবে। এখন সে সব চিন্তা কোথায় হারিয়ে গেল। নতুন পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা এত বেশি যে অশোধিত আকারের মধ্যে তার অতি সামান্য পরিমাণে উপস্থিতিও সত্যি বিস্ময় জাগাত। মূল আকারের সঙ্গে এমন অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে যে, সেই ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র জিনিসটি উদ্ধার করাই হল কঠিন কাজ।

স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজকে মেরী কুরীর সমাপ্ত করার প্রতিজ্ঞা

১৯শে এপ্রিল ১৯০৪ সাল। সকাল থেকে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। পিয়ের কুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটা অধিবেশনে যোগ দিয়ে সেখান থেকে এক প্রকাশকের কাছে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। এই অপ্রত্যাশিত আঘাতে সাময়িক ভেঙে পড়লেন মেরী। কিন্তু অল্পদিনেই ধীরে ধীরে নিজেকে মানসিক দিকে থেকে প্রস্তুত করে তুললেন। নতুন এক শক্তি জেগে উঠল তাঁর মধ্যে মনে হল স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজকে সমাপ্ত করতে হবে।

বিজ্ঞান একাডেমিতে মেরী কুরীর বক্তৃতা

কর্তৃপক্ষ মাদাম কুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করলেন এবং গবেষণা কাজের সমস্ত ভার তাঁর অর্পণ করা হল। স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ১৫ই নভেম্বর ১৯০৬ সালে তিনি পিয়েরের উত্তরাধিকারী হিসাবে বিজ্ঞান একাডেমিতে বক্তৃতা দিলেন। তাঁর অসাধারণ বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন সকলে।

মেরী কুরীর নতুন জীবন শুরু

শুরু হল মেরীর নতুন এক জীবন। একদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তারই সাথে অধ্যাপনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সেরে দুটি মেয়ে আর বৃদ্ধ শ্বশুরের সেবা-যত্ন করা ১৯১০ সালে শ্বশুর মারা গেলেন। ছেলের সমাধির পাশেই বাবাকে সমাধিস্থ করা হল।

মেরী কুরীর নোবেল পুরস্কার লাভ

এই বছরেই তিনি রেডিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ রেডিয়াম নিষ্কাষণ করলেন। এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য ১৯১১ সালে নোবেল পুরস্কার কর্তৃপক্ষ তাঁকে রসায়নের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করল। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র মহিলা যিনি দু’বার এই পুরস্কার পেয়েছেন।

কুরী ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা

বহু অর্থব্যয়ে তৈরি হল কুরী ইনস্টিটিউট। এর পরিচালনার ভার দেওয়া হল মেরী কুরীর উপর। এখানে রেডিয়াম বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য গবেষণার কাজ চলবে।

মেরী কুরীর উদ্যোগে রেডিয়াম গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা

প্যারিস মেরীর কর্মভূমি হলেও নিজের জন্মভূমিকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর আন্তরিক সাহায্যে পোল্যাণ্ডের ওয়ারশতেও গড়ে উঠল রেডিয়াম গবেষণাগার।

অক্ষম মেরী কুরী

আশৈশব অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ক্রমশই মেরীর দেহ অক্ষম হয়ে পড়ছিল। কিন্তু তবুও কাজের বিশ্রাম ছিল না। দিন অতিক্রান্ত হচ্ছিল ক্রমশই চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসছিল মেরীর। কিন্তু ল্যাবরেটারি ছেড়ে ছুটি নেবার দিন ক্রমশই এগিয়ে আসছিল।

দুঃখ বিষাদ হীন মেরী কুরী

আর মনের মধ্যে কোনো দুঃখ নেই বিষাদ নেই। দুই মেয়েই উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বড় মেয়ে আইরিন গবেষণা করছে। মেরীর মৃত্যুর এক বছর পর আইরিন জোলিও ও তাঁর স্বামী ফ্রেডারিক জোলিও কুরী রসায়নে নোবের পুরস্কার পান।

ক্লান্ত মেরী কুরী

একদিন গবেষণাগার থেকে ফিরে এসে মেরী বিছানায় শুয়ে পড়লেন, আপন মনেই তিনি বললেন, “আমি বড় ক্লান্ত । “

মেরী কুরীর শরীরে রেডিয়ামের বিষ

পরের দিন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারলেন না। দেশের সেরা ডাক্তাররা তাঁর চিকিৎসা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারল না। প্রকৃতপক্ষে তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত রোগের কারণ জানা যায়নি। এটি ছিল রেডিয়ামের বিষ। তাঁরই আবিষ্কৃত সন্তান সমস্ত জীবন ধরে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

মেরী কুরীর মৃত্যু

১৯৩৪ সালের ৪ঠা জুলাই এই মহিয়সী বিজ্ঞানসাধিকার জীবনদ্বীপ চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হল।

উপসংহার :- তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন এবং তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা যার অসামান্য মেধার কারণে ১৯৯৫ সালে প্যান্থিয়নে সমাহিত করা হয়।

(FAQ) পদার্থবিজ্ঞানী মেরী কুরী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মেরী কুরী কে ছিলেন?

মেরী কুরী ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

২. কোন মহিলা বিজ্ঞানী প্রথম এবং দুবার নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?

মেরী কুরী।

৩. রেডিয়াম আবিষ্কার করেন কে?

মেরী কুরী।

৪. মেরী কুরীর জন্মস্থান কোথায়?

পোল্যাণ্ডের ওয়ারশতে।

৫. মেরী কুরীর কর্মভূমি কোথায় ছিল?

ফ্রান্সের প্যারিসে।

Leave a Comment