প্রখ্যাত ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানী ও “ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক” হলেন এম এস স্বামীনাথন (১৯২৫-২০২৩)। তিনি উচ্চফলনশীল শস্যের উন্নয়নে অবদান রাখেন, যা ভারতকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তোলে। তার গবেষণা এবং নীতি সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলা করতে সহায়ক হয়। স্বামীনাথন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং কৃষিক্ষেত্রে তার অবদান বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনকম্বু সাম্বসিভন স্বামীনাথন
ঐতিহাসিক চরিত্র | এম এস স্বামীনাথন |
পুরো নাম | মনকম্বু সাম্বসিভন স্বামীনাথন |
জন্ম | ৭ আগস্ট, ১৯২৫ খ্রি |
জন্মস্থান | তামিলনাড়ু, ভারত |
কর্মক্ষেত্র | কৃষিবিজ্ঞান, উদ্ভিদ প্রজনন |
বিশেষ উপাধি | ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক |
সম্মাননা | পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার |
মৃত্যু | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি |
ভূমিকা :- ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানের ভাগ্যবিধাতারূপে যে বিজ্ঞান প্রতিভা স্বীকৃতি লাভ করেছেন তাঁর নাম মনকম্বু সাম্বসিভন স্বামীনাথন বা এম. এস স্বামীনাথন। এই নিরলস কর্মযোগী তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন দেশের মানুষের সেবায়।
এম এস স্বামীনাথনের জন্ম
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট তামিলনাডুর কুম্বাকোনাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন স্বামীনাথন। তাঁর প্রথম পড়াশুনাও শুরু হয় এই শহরেই।
স্বামীনাথনের শিক্ষা
ছেলেবেলা থেকেই পড়াশুনায় ছিল গভীর মনোযোগ। নিত্য সঙ্গী ছিল বই। সাহিত্য বিজ্ঞান সব বিষয়েই সমান রুচি। স্কুলে বরাবরই ভাল ফল করে শিক্ষকদের স্নেহদৃষ্টি লাভ করেছেন। সসম্মানে স্কুলের গন্ডি পার হয়ে ভর্তি হলেন কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এক কলেজে-বিজ্ঞান বিভাগে। এখান থেকেই স্নাতক হলেন। এবারে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা। বিষয় নির্বাচন করলেন কৃষিবিজ্ঞান। ভর্তি হলেন কোয়েম্বাটুর কৃষি মহাবিদ্যালয়ে।
এম এস স্বামীনাথনের জীবনে রাজনৈতিক প্রভাব
এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া স্বামীনাথনের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এ উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। অপরদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর অশুভ ছায়াপাত হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। তার প্রভাব নবজাগ্রত ভারতের জনজীবনেও। এই আবহাওয়ার মধ্যেই স্বাধীনতা-উন্মুখ ভারতের ভূমিপুত্র স্বামীনাথন তাঁর জীবনের ভবিষ্যৎ পথটি স্থির করে নেন।
অর্থনীতির ভাবী সৈনিক এম এস স্বামীনাথন
পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার মন্ত্রে জেগে উঠেছে দেশ। দুদিন আগে হোক পরে হোক বিদেশী শাসক বিতাড়িত হবেই। দেশে আসবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। তরুণ স্বামীনাথন বুঝেছিলেন ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নটিও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি স্থির করলেন এই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের ভাবী সৈনিক হিসেবেই তিনি তৈরি করে তুলবেন নিজেকে।
এম এস স্বামীনাথনের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন
কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পরে তিনি চলে এলেন দিল্লি। এখানে ভারতীয় কৃষিঅনুসন্ধান সংস্থা থেকে উদ্ভিদ প্রজননবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা আরম্ভ করলেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে লাভ করলেন ডিপ্লোমা। এরপর মেধাবৃত্তি নিয়ে চলে যান লন্ডনে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট হলেন।
প্রজনন বিদ্যার গবেষক এম এস স্বামীনাথন
ডক্টরেট হবার আগে থেকেই অবশ্য চমকপ্রদ গবেষণাপত্রের সূত্রে স্বামীনাথনের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল বিজ্ঞানী মহলে। নেদারল্যান্ড-এর ওয়াগেনসিনগেন কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনেস্কো ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ফলে উসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন বিদ্যা বিভাগে গবেষকের নিয়োগপত্র পেতে বেগ পেতে হল না। এই কাজে যোগ দিলেন ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
কটকে কেন্দ্রীয় চাল গবেষণা কেন্দ্রে এম এস স্বামীনাথন
স্বাধীনোত্তর নবভারতের আহ্বান ধ্বনিত হচ্ছিল বুকে। তাই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে স্বামীনাথন ফিরে এলেন দেশে। চাকরি পেতেও বিলম্ব হল না। কটকে কেন্দ্রীয় চাল গবেষণা কেন্দ্রে যোগ দিলেন। এখানে কাজ করতে করতেই তিনি ফলনশীল ধান তৈরির বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। আরম্ভ করলেন জাপোনিকা ও ইন্ডিকা এই দুই জাতের ধানবীজের সংকরায়ণের গবেষণা। ফল ফলল অবিলম্বেই। উচ্চফলনশীল বীজ তৈরির সাফল্যের সুবাদে সারাদেশেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল।
দিল্লির ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে এম এস স্বামীনাথন
এর পরের ধাপে স্বামীনাথন প্রজননবিদ হিসেবে যোগ দিলেন নতুন দিল্লির ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। একই সঙ্গে চলতে লাগল অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজ। অল্পসময়ের মধ্যেই উন্নীত হলেন এই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদে। মাত্র ছয় বছর এই পদে কাজ করার পরেই ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে হলেন কৃষিগবেষণা সংস্থার অধিকর্তা। ততদিনে তাঁর গবেষণা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
কৃষিমন্ত্রকের সচিব এম এস স্বামীনাথন
ছয় বছর পরে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে স্বামীনাথন পেলেন ভাবত সরকারের অধীন কৃষিমন্ত্রকের সচিব পদ, হলেন ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদের আধিকারিক। গবেষণার কাজ থেকে সরাসরি প্রশাসনিক পদ। কিন্তু বিভাগীয় কর্মব্যস্ততার মধ্যেই অব্যাহত রাখলেন নিজের গবেষণার কাজও। ভারতের কৃষি ব্যবস্থার দৈন্য অবস্থার কথা ভালভাবেই অবগত ছিলেন স্বামীনাথন। তাই সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছিলেন।
আলু সম্পর্কে এম এস স্বামীনাথনের গবেষণা
কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে স্বামীনাথনের জগদ্বিখ্যাত অবদানগুলির বিষয়ে অল্পবিস্তর পরিচিতি থাকা প্রয়োজন। কৃষিপ্রজনন সংক্রান্ত গবেষণায় তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কৃষিগবেষণা কেন্দ্রে ডিপ্লোমা করার সময়ে। তখনই তিনি লক্ষ্য করেছিলেন আলুর দুটি জাত। গুটি আলু ও গুটিহীন আলু। আমরা সচরাচর যে আলু দেখে থাকি তা সবই গুটি আলু। এদের বৈজ্ঞানকি নাম সোলানাম টিউবারোসাস। সোলানাম প্রজাতির আলু নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন তিনি। গড়েছেন নানা সংকর প্রজাতি। স্বামীনাথনই সংকর আলুর প্রথম জন্ম দিয়েছেন। এসব আলুর ফলন দেবার ক্ষমতা চমকপ্রদ। এই প্রজাতির আলুর এমনই গুণ যে তুষারপাতেও এদের কোনো ক্ষতি হয় না।
চাল, গম ও পাট নিয়ে এম এস স্বামীনাথনের গবেষণা
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে তিনি চাল, গম ও পাট নিয়ে গবেষণা করে বহু নতুন সংকর উদ্ভিদ তৈরি করেছেন। এদের ফলন দেবার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। তিনি ভারতীয় চাল ইন্ডিকার সঙ্গে জাপান-এর চাল জাপানিকার সংকরায়ন ঘটিয়েছেন। পাটের ক্ষেত্রেও দুটি সাধারণ প্রজাতি নিয়ে অসাধারণ কলম তৈরি করেছেন। স্বামীনাথনের এই সকল সৃষ্টি আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে ধান, পাট ও গম উৎপাদনের বিপ্লব এনেছে। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের নারকেল নিয়ে গবেষণা
স্বামীনাথনের নারকেল নিয়ে গবেষণার অন্যতম অবদান হল উচ্চ ফলন ক্ষমতার বামনাকৃতি নারকেল গাছ। যা অধুনা কেরালা নারকেল নামে পরিচিত।
এম এস স্বামীনাথনের নতুন কাজ মিউটাজেনেসিস
মিউটাজেনেসিস তাঁর এক উল্লেখযোগ্য নতুন কাজ। পরোক্ষভাবে বিকিরণ প্রয়োগ করে গম, বার্লি, চাল ইত্যাদির কোষে তিনি এমন পরিবর্তন ঘটিয়েছেন যার ফলে তাদের ফলন দেবার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।
স্বামীনাথনের গম নিয়ে গবেষণা
- (১) গম নিয়ে স্বামীনাথনের কাজ প্রবাদপ্রতিম। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভিদবিদ্যা শাখার প্রধান সেই সময় থেকেই গম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। মানবতাবাদী বিজ্ঞানী নর্মান বরলগ মেক্সিকোতে এক অসাধারণ সংকর গমবীজ তৈরি করেছিলেন। সেই গমের নাম নরিন। স্বামীনাথন সেই বীজ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলেন ভারতে। ভারতের মাটিতে সেই বীজ ফলাতে পারলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে জোয়ার আসবে।
- (২) স্বামীনাথন ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তরফে আমন্ত্রণ লিপি পাঠিয়ে মহাবিজ্ঞানী বরলগকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বরলগ এলেন ভারতে। ভারতীয় মাটিতে মেক্সিকোর নরিন গম যে ফলপ্রসূ হবে সে বিষয়ে মতামত দিলেন। তারপরেই মেক্সিকো থেকে আঠারো হাজার টন নরিন গমবীজ আনানো হল।
- (৩) স্বামীনাথন ভারতে সরাসরি নরিনের চাষ করালেন না। ভারতীয় গমবীজের সঙ্গে নরিনের সংকরায়ন ঘটিয়ে নতুন কয়েকটি সংকর বীজ তৈরি করলেন। নাম দিলেন সোনালিকা ও কল্যাণসোনা। কিছু সংকরের রূপান্তর ঘটল চমকপ্রদ। লাল গমের রং হল স্বর্ণাভ। এদের নাম দিলেন শরবর্তী সোলারা, পুসা লর্মা, মালবিকা প্রভৃতি।
- (৪) সব মাটিতে সব সংকর বীজ সমান ফলন দেয় না। তাই তিনি এক একটি সংকর পাঠালেন ভারতের এক এক অংশে। মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের পাহাড়ি মাটির জন্য পাঠানো হল মালবিকা। এই বীজের জন্য দরকার পর্যাপ্ত জল ও উন্নত সেচ ব্যবস্থা। ভারত সরকারকে তিনি সেবিষয়ে ওয়াকিবহাল করে দিলেন।
এম এস স্বামীনাথনের তৈরি উচ্চ ফলনশীল ধানের সংকর
গমের মতো উচ্চ ফলনশীল ধানের সংকরও তৈরি করলেন স্বামীনাথন। তার নামগুলো হল এই রকম পুসা-২-২১, সবরমতি ইত্যাদি। পুসা-২-২১ তামিলনাডুতে আশাতীত ফলন দিল। একই রকম ফল পাওয়া গেল হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, আসামে।
জাতীয় কার্যক্রম রূপায়নে এম এস স্বামীনাথন
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় কৃষিমন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় কৃষিক্ষেত্র ও কৃষকদের জন্য এক জাতীয় কার্যক্রম রূপায়িত করলেন। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা ভারতের সকল প্রান্তের গ্রামে গ্রামে ঘুরে নতুন বীজ জমিতে রোপণের উপযোগিতা চাষীদের বুঝিয়ে দিলেন। এর ফলে চাষীদের ঘরে ঘরে গেল চাল, গম, জোয়ার, ভুট্টার উচ্চফলনশীল সংকরবীজ। জমিতে ফলল সোনার ফসল।
এম এস স্বামীনাথনের জগৎজোড়া খ্যাতি
নতুন উদ্ভাবিত বীজগুলো নিয়ে স্বামীনাথন তাঁর বৈপ্লবিক অভিযান শুরু করেছিলেন দিল্লির জৌতি গ্রাম থেকে। স্বামীনাথনের উদ্যোগে গড়ে ওঠে কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলো ভারতের প্রত্যন্তের গ্রামগুলিতেও নিরক্ষর চাষীদের কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলল। এইভাবে কৃষিগবেষণা ক্ষেত্রে বিপুল অবদানের মাধ্যমে জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেন স্বামীনাথন।
বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত এম এস স্বামীনাথন
কৃষি গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে স্বামীনাথন সম্মানিত হলেন ম্যাগসেসে পুরস্কারে। এশিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষদের সম্মানিত করার জন্য ফিলিপিন্স সরকার এই পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে জীববিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ভাটনগর পুরস্কার। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে চেকোশ্লোভাকিয়ার বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি তাঁকে দেয় মেন্ডেল শতাব্দী পুরস্কার। পরের বছরেই ভারতের উদ্ভিদবিদ্যা মন্ডলী তাঁকে দেন বীরবল সাহানি পদক। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মশ্রী লাভ করেন স্বামীনাথন, ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে হন পদ্মভূষণ। তিনি সম্মানিক ডক্টর অব সায়েন্স উপাধি পান ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই সঙ্গে দেশ বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি।
আন্তর্জাতিক স্তরে এম এস স্বামীনাথনের অবদান
আন্তর্জাতিক স্তরেও তাঁর অবদান স্মরণযোগ্য। রাষ্ট্রসঙ্ঘ-এর পুষ্টি-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনি। এছাড়া মেক্সিকোর গম ও ভুট্টা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বোর্ডের সদস্য, হেগের আন্তর্জাতিক উদ্ভিদবিদ্যা কংগ্রেসের সহ- সভাপতি, ফিলিপিন্সের আন্তর্জাতিক চাল গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি হলেন লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্য। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুইডিশ বীজ অ্যাসোশিয়েশন তাঁকে ফেলো নির্বাচিত করে।
এম এস স্বামীনাথনের মৃত্যু
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে মহান কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন পরলোক গমন করেন।
উপসংহার :- এম এস স্বামীনাথন ছিলেন ভারতের কৃষি গবেষণার পথিকৃৎ, যিনি সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে ভারতকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলেছিলেন। তার উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও উচ্চফলনশীল শস্যের উন্নয়ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনে সহায়ক হয়েছিল। তার গবেষণা শুধু ভারতের খাদ্য নিরাপত্তাই নিশ্চিত করেনি, বরং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও অমূল্য অবদান রেখেছে। এম এস স্বামীনাথনের কর্মজীবন কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
(FAQ) মনকম্বু সাম্বসিবন স্বামীনাথন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে এম এস স্বামীনাথন উন্নত প্রযুক্তি এবং উচ্চফলনশীল শস্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করেন, যা ভারতের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি উচ্চফলনশীল গম ও চালের জাত উদ্ভাবন করেন এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন, যা ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় সহায়ক হয়।
স্বামীনাথন পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ এবং বিশ্ব খাদ্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন করেছেন।
তার গবেষণা শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং তার ধারণা ও উদ্ভাবন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী গৃহীত হয়।