রাজিয়ার রাজ্য শাসন

সুলতান রাজিয়ার রাজ্য শাসন প্রসঙ্গে উচ্চপদে নতুন নিয়োগ, প্রদেশে নতুন নিয়োগ, শাসকোচিত গুণ, নাস্তিক সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দমন, তুর্কিদের একচেটিয়া অধিকার খর্ব ও গোঁড়া মুসলিম মানসিকতায় আঘাত করা সম্পর্কে জানবো।

সুলতান রাজিয়ার রাজ্য শাসন

বিষয়রাজিয়ার রাজ্যশাসন
সুলতানরাজিয়া
রাজত্বকাল১২৩৬-১২৪০ খ্রি:
পিতাইলতুৎমিস
সুলতান রাজিয়ার রাজ্য শাসন

ভূমিকা :- ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিস কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। বিদ্রোহ দমনের পর তিনি নিজের পদকে কিছুটা সুস্থির করে শাসন-সংগঠনের কাজে অগ্রসর হন।

রাজিয়া কর্তৃক উচ্চপদে নতুন নিয়োগ

তিনি সরকারের সব দপ্তরের উচ্চপদগুলি নতুন করে বণ্টন করেন। তিনি রাজা মুহাজাবউদ্দিনকে ‘উজির’ পদে নিয়োগ করেন। মালিক কবীর খানকে লাহোরের ‘ইক্তাদার’ পদে নিয়োগ করেন।

রাজিয়া কর্তৃক প্রদেশে নতুন নিয়োগ

বিভিন্ন প্রদেশের ‘শাসক’ পদে নতুন করে নিয়োগ করেন। এর ফলে মিনহাজের মতে, মালিক ও আমিরগণ রাজিয়ার বশ্যতা স্বীকার করেন।

রাজিয়ার শাসকোচিত গুণ

নারী হলেও রাজিয়ার শাসকোচিত গুণাবলীর অভাব ছিল না। সিংহাসনে বসবার অল্পদিনের মধ্যেই তিনি শাসনকার্যে, ন্যায়বিচারে, বিদ্যোৎসাহিতায় ও সামরিক কার্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

রাজিয়া কর্তৃক নাস্তিক সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দমন

তাঁর রাজত্বের প্রথমদিকে নুরউদ্দিন নামে এক নায়কের নেতৃত্বে, ইসলামের দৃষ্টিতে নাস্তিক ‘কিরামিতা’ ও ‘মুজাহিদা’ নামে দুটি সম্প্রদায় বিদ্রোহী হয় এবং প্রায় এক সহস্র বিদ্রোহী সশস্ত্র অবস্থায় দিল্লির মসজিদে জমায়েত হয়। কিন্তু রাজিয়ার সৈন্যগণের আক্রমণে এই বিদ্রোহ অচিরেই বিনষ্ট হয়।

রাজিয়ার বিরুদ্ধে তুর্কী আমীরদের গোপন ষড়যন্ত্র

সর্বত্র তাঁর প্রভুত্ব স্থাপনের ফলে, তুর্কি আমিরদের মধ্যে এক গোপন অসন্তোষ দানা বাঁধে। কুতুবউদ্দিন আইবক-এর আমল থেকে তুর্কি অভিজাতগণ সামরিক শক্তির একচেটিয়া অধিকারে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়েছিল।

রাজিয়ার বিরোধিতা

স্বভাবতই তুর্কি অভিজাতগণ রাজিয়ার মতো শক্তিশালী শাসিকাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তুর্কি অভিজাতরা নিজেদের রাষ্ট্রের পক্ষে অপরিহার্য বলে মনে করতেন এবং তাঁরা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে তাঁদের উপর স্থান দিতে রাজি ছিলেন না।

রাজিয়া কর্তৃক তুর্কিদের একচেটিয়া অধিকার খর্ব

সুলতান রাজিয়া তাঁর শাসন-সংগঠনের ক্ষেত্রে, উচ্চপদে তুর্কিদের একচেটিয়া অধিকারকে খর্ব করেন। এতে তুর্কিগণ ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়।

রাজিয়া কর্তৃক গোঁড়া মুসলিম মানসিকতায় আঘাত

সুলতান রাজিয়া গোঁড়া মুসলিম মানসিকতাকে আঘাত করেন। কারণ, তিনি পুরুষের পরিচ্ছদ পরিধান করে, প্রকাশ্য রাজদরবারে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। হাতির পিঠে যাতায়াত করতেন ও পর্দা-প্রথাকে তিনি মোটেই আমল দেন নি। তিনি ঘোড়ার পিঠে চেপে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন।

উপসংহার :- স্বভাবতই তুর্কি আমিরগণ রাজিয়ার বিরুদ্ধে অনেক অপবাদের গুঞ্জন প্রচার করতে শুরু করেন। তাই অশেষ গুণাবলীর অধিকারিণী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকাল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

(FAQ) সুলতান রাজিয়ার রাজ্য শাসন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রাজিয়া কে ছিলেন?

ইলতুৎমিস কন্যা রাজিয়া ছিলেন দিল্লি সুলতানির একমাত্র নারী শাসিকা।

২. রাজিয়ার রাজত্বকাল কত?

১২৩৬-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ।

৩. ইলতুৎমিস কাকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন?

কন্যা রাজিয়া।

Leave a Comment