হো চি মিন

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন প্রসঙ্গে তার জন্ম, বংশ পরিচয়, ছেলেবেলা, শিক্ষা, পরাধীনতার উপলব্ধি, জেনেভা সম্মেলনে অংশ, রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, তার নেতৃত্ব ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন

ঐতিহাসিক চরিত্রহো চি মিন
জন্ম১৯ মে, ১৮৯০ খ্রি:
দেশভিয়েতনাম
পরিচিতিস্বাধীনতা সংগ্রামী
প্রধানমন্ত্রী১৯৪৬-১৯৫৫ খ্রি:
রাষ্ট্রপতি১৯৫৫-১৯৬৯ খ্রি:
মৃত্যু৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ খ্রি:
ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন

ভূমিকা :- সমস্ত বিশ্বের কাছে তিনি বিপ্লবের প্রতীক, আলোকের দূত, ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন। কোনো কোনো মানুষ জীবনে সংগ্রাম করেন। আবার কারোর গোটা জীবনটাই সংগ্রাম। হো চি মিন ছিলেন চিরসংগ্রামী সৈনিক।

অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী হো চি মিন

প্রত্যেকে তাকে ডাকে ‘আঙ্কেল’ বলে। রোগা পাতলা চেহারা, মুখে সামান্য দাড়ি। পরনে সাদাসিধে পোশাক। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কি অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর তেজ লুকিয়ে আছে মানুষটির মধ্যে।

হো চি মিনের জন্ম

১৮৯০ সালের ১৯শে মে উত্তর ভিয়েতনামের নখেআন প্রদেশের এক গ্রামে হো চি মিনের জন্ম।

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিনের বংশ পরিচয়

তাঁর পিতৃদত্ত নাম নগুয়েন থান থাট। বাবার নাম নগুয়েন মিন হুয়ে। তাঁরা ছিলেন তিন ভাইবোন। হো ছিলেন সকলের চেয়ে বড়। বাবা ছিলেন এক দরিদ্র চাষী। যখন চাষের কাজ থাকত না, অন্যের জমিতে খেতমজুরের কাজ করতেন।

হো চি মিনের ছেলেবেলা

  • (১) ছেলেবেলা থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শিশু বয়স থেকেই হো চি মিন ছিলেন গ্রামের সমবয়সীদের চেয়ে আলাদা। শান্ত ধীর। অন্যেরা যখন খেলা করত, তিনি বাবাকে কাজে সাহায্য করতেন। সারা দিন নানাম কাজকর্মে কেটে যেত।
  • (২) রাতের বেলায় মায়ের কাছে শুয়ে গল্প শুনতেন। ছেলেবেলা থেকেই হো চি মিনকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত বীর মানুষদের গল্পগাথা। হো চি মিনের শৈশবে মায়ের সান্নিধ্য ছিল সবচেয়ে প্রিয়। সেই সান্নিধ্য বেশিদিন ভোগ করতে পারলেন না হো চি মিন তখন এগারো বছরের বালক।

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিনের শিক্ষা

ছেলের বিমর্ষতা দেখে গ্রামের পাঠশালায় তাঁকে ভর্তি করে দিলেন নগুয়েন। অল্পদিনেই পড়াশুনায় আগ্রহ জন্মে গেল হোয়ের। পাঠশালার প্রাথমিক পাঠ শেষ করলেন। হো চি মিন ছিলেন পাঠশালার সেরা ছাত্র। ছেলের এই আগ্রহ দেখে নগুয়েন স্থির করলেন, তাকে বড় স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। গ্রামে বড় স্কুল ছিল না। হো চি মিন ভর্তি হলেন শহরের হাই স্কুলে।

হো চি মিনের পরাধীনতার উপলব্ধি

এই প্রথম গ্রামের বাইরে এলেন হো চি মিন। এ তাঁর চেনাজানা পরিবেশ নয়, অন্য জগৎ। এতদিন ছিলেন স্বাধীন। শহরে এসে হো চি মিন প্রথম উপলব্ধি করলেন তাঁরা পরাধীন। তাদের দেশ শাসন করছে বিদেশী ফরাসীরা। নিজেদের মাতৃভূমিতেও নিজেদের কোনো অধিকার নেই।

জেনেভা সম্মেলনের প্রস্তাবে হো চি মিনের সম্মতি

১৯৫৬ সালের ৮ই মে জেনেভায় বসল আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন। পশ্চিমি দেশগুলি শান্তির শর্ত হিসাবে ভিয়েতনামকে বিভক্ত করতে চাইল। যুদ্ধক্লান্ত ক্ষতবিক্ষত ভিয়েতনামের মানুষের কথা চিন্তা করে এই প্রস্তাব মেনে নিলেন হো চি মিন। যদিও তিনি অন্তর থেকে চেয়েছিলেন ভিয়েতনাম এক ও অবিভক্ত থাকুক।

রাষ্ট্রপ্রধান হো চি মিন

উত্তরের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন হো চি মিন। আর দক্ষিণের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন নো দিন জিয়েস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি তাঁকে এই আসনে বসিয়েছিলেন পুতুল সরকার হিসাবে দেশ শাসন করবার জন্য। স্থির হয়েছিল সেই বছরই দেশের দুই অংশে নির্বাচন হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছিল এই নির্বাচন হলে হো চি মিন হবেন সমগ্র ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপ্রধান। তাই আমেরিকার প্ররোচনায় নির্বাচন করা সম্ভব হল না।

অত্যাচারী শাসক হো চি মিন

হো চি মিন ছিলেন অত্যাচারী শাসক। অল্পদিনেই তাঁর শোষণ অত্যাচারে সমস্ত দক্ষিণের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দাবি উঠল অখণ্ড ভিয়েতনামের। তাদের সাহায্যে এবার এগিয়ে এল উত্তরের মানুষ। হো চি মিন সমর্থন জানালেন দক্ষিণের মানুষের গণ আন্দোলনকে।

হো চি মিনের নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

  • (১) হো চি মিনের সরকার বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে এবার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমেরিকা। শুরু হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক নারকীয় অত্যাচার। একদিকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দেশ আমেরিকা, অন্যদিকে এক ক্ষুদ্র সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ ভিয়েতনাম।
  • (২) সেই অজেয় শক্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সামান্যতম বিচলিত হয়নি ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষ কারণ তাদের সাথে ছিলেন তাদের প্রিয় নেতা হো চি মিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের বুকে যে পরিমাণ নাপাম বোমা ফেলেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল।

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিনের নেতৃত্ব

পরাধীন ভিয়েতনামের মানুষ হো চি মিনের নেতৃত্বে সেদিন প্রমাণ করেছিল কোন অস্ত্র দিয়েই মানুষের অদম্য মনোবলকে ধ্বংস করা যায় না। হো চি মিন দেশের মানুষকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা ইস্পাতের মত কঠিন, বজ্রের মত মহাতেজী হও।

জনগণের উদ্দেশ্যে হো চি মিনের শেষ বার্তা

তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁর শেষ বার্তা রচনা করলেন। ”যখন আমার জীবনের শেষ ক্ষণ আসবে তখন আমার সমস্ত মন ভারাক্রান্ত হবে আরো দীর্ঘদিন তোমাদের সেবা করতে পারলাম না বলে। আমার মৃত্যুর পর কোনো শোক অনুষ্ঠান করে যেন জনগনের অর্থ আর সময়ের অপচয় না করা হয় সবশেষে আমি রেখে গেলাম পার্টির সকল সদস্য, সেনাবহিনী আর প্রতিটি স্বদেশবাসীর জন্য আমার গভীর ভালবাসা।”

প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হো চি মিন

ভিয়েতনামের একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা হো চি মিন ভিয়েতনামের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী (১৯৪৬-১৯৫৫) এবং রাষ্ট্রপতির (১৯৫৫-১৯৬৯) পদে আসীন ছিলেন।

ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন -এর মৃত্যু

১৯৬৯ সালের ১০ই মে অসুস্থ হয়ে পড়লেন হো। বুঝতে পারলেন তাঁর মৃত্যু আসন্ন। এর পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সংগ্রামী মানুষের মধ্যে বিরাজমান হো চি মিন

তাঁর মৃত্যুতে ভিয়েতনামের মানুষের সংগ্রাম শেষ হয়নি। তাঁর স্বদেশপ্রেম আর আত্মিক শক্তির অনুপ্রেরণাতেই উজ্জীবিত হয়ে একদিন তারা আমেরিকাকে বিতাড়ন করে নতুন স্বাধীনতা পতাকাকে উড্ডীন করেছিল। হো চি মিন আর নেই। কিন্তু তাঁর অস্তিত্ব শুধু ভিয়েতনাম নয়, পৃথিবীর সমস্ত সংগ্রামী মানুষের মধ্যে আজও চির বিরাজমান।

উপসংহার :- ১৮ বছর বয়সে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য শুরু হয় তাঁর সংগ্রাম। ৭৯ বছর বয়সে যখন তাঁর জীবন শেষ হল তার প্রাক মুহূর্ত পর্যন্ত সংগ্রাম করে গিয়েছেন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। যেদিন সেই সংগ্রাম শেষ হল জয়ী হল তাঁর স্বদেশভূমি, সে দিন তিনি তা প্রত্যক্ষ করবার জন্য পৃথিবীতে না থাকলেও, পৃথিবীর মানুষের অন্তরে ধ্রুবতারার মত চিরজীবী হয়ে রইলেন।

(FAQ) ভিয়েতনামের প্রাণপুরুষ হো চি মিন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. হো চি মিন কোন দলের নেতৃত্ব দেন?

ভিয়েত কং।

২. হো চি মিনের প্রধানমন্ত্রী কাল কতদিন ছিলেন?

১৯৪৬-৫৫ খ্রি:

৩. হো চি মিনের রাষ্ট্রপতি কাল কতদিন ছিলেন?

১৯৫৫-১৯৬৯ খ্রি:।

Leave a Comment