বাংলায় হাবসি শাসন প্রসঙ্গে হাবসি শাসন অন্ধকার যুগ, সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ, মিনার তৈরি, রাজ্যের বিস্তৃতি, সিংহাসন আরোহণের ঘটনা বিতর্কিত, শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহের সিংহাসনে আরোহণ, অত্যাচারী শামসউদ্দিন, উজির সৈয়দ হুসেনের ভূমিকা ও সশস্ত্র বিদ্রোহ সম্পর্কে জানবো।
বাংলায় হাবসি শাসন
বিষয় | বাংলায় হাবসি শাসন |
প্রতিষ্ঠাতা | সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৪৮৭ খ্রি: |
রাজত্বকাল | ১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রি: |
শেষ সুলতান | শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহ |
ভূমিকা :- ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহের গৌড়-এর সিংহাসনে আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গদেশে আবিসিনীয় হাবসি ক্রীতদাসদের শাসন শুরু হয়। বঙ্গদেশে এই আবিসিনীয় শাসন চলেছিল ছ’বছর (১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দ)।
বাংলায় প্রথম হাবসি সুলতান
সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহই বঙ্গদেশের প্রথম হাবসি সুলতান। আরও তিনজন হাবসি সুলতান রাজত্ব করেছিলেন।
বাংলায় হাবশী শাসন অন্ধকার যুগ
হাবসি শাসনকে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে অনেকেই ‘অন্ধকার যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলার হাবসি সুলতান সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ
গুলাম হোসেন সালিমের মতে, সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ ছিলেন মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি। ‘রিয়াজ’-এর মতে, তিনি বঙ্গদেশের শ্রেষ্ঠ সুলতানদের অন্যতম ছিলেন।
হাবসি সুলতান সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ কর্তৃক মিনার তৈরি
- (১) ‘রিয়াজ’-এ আরও বলা হয়েছে যে তিনি গৌড়ে একটি মিনার, একটি মসজিদ এবং একটি জলাধার নির্মাণ করেছিলেন। মিনারটি এখনও বর্তমান আছে এবং সেটি ‘ফিরোজ মিনার’ নামে পরিচিত। তবে আধুনিক কোনো কোনো ঐতিহাসিক সন্দেহ পোষণ করেন।
- (২) আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে অতি সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে এবং রাজদরবারের রাজনৈতিক অবস্থার প্রকৃতি যা ছিল, তাতে কী করে এই ‘মিনার’ তাঁর রাজত্বকালের নীরব সাক্ষী বলা যায়। অথচ এই মিনার তাঁর নামটি বহন করে আসছে কালের নীরব সাক্ষী হিসাবে।
হাবসি সুলতান সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহর রাজ্যের বিস্তৃতি
সৈফউদ্দিন যে একজন যোগ্য শাসক ছিলেন, সে তথ্য আমরা পেয়েছি বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁর লিপিগুলি প্রমাণ করে যে, উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর থেকে দক্ষিণে সাতগাঁও পর্যন্ত তাঁর রাজ্য বিস্তৃত ছিল। তিনি ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
বাংলায় হাবসি শাসন সম্পর্কে ফিরিস্তার বর্ণনা
ফিরিস্তার মতে, পরবর্তী রাজা তাঁর পুত্র নাসিরউদ্দিন মাহমুদ নাবালক থাকায় প্রথমে একজন হাবসি হবশ খান ও পরে সিদিবদর নামে একজন হাবসি তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন। সিদিবদর নাসিরউদ্দিনকে হত্যা করে ‘শামসউদ্দিন মুজাফ্ফর শাহ’ উপাধি নিয়ে ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
বাংলায় হাবসি সুলতানদের সিংহাসন আরোহণের ঘটনা বিতর্কিত
এই সময়ের বঙ্গদেশের সুলতানদের সিংহাসনে আরোহণের ঘটনাগুলি খুবই বিতর্কিত। বিভিন্ন তথ্যে বিভিন্ন রকম বক্তব্য থাকায়, এই বিতর্ক আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
বাংলায় হাবসি সুলতান শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহের সিংহাসনে আরোহণ
১৪৯১ খ্রিস্টাব্দে সিদিবদর নাসিরউদ্দিনকে হত্যা করে শামসউদ্দিন ‘মুজাফ্ফর শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
বাংলায় হাবসি শাসনে অত্যাচারী সুলতান শামসউদ্দিন
শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহকে একজন অত্যাচারী শাসক হিসাবে পরবর্তীকালের কিছু ঐতিহাসিক তথ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর অত্যাচার ও কুশাসন শুধুমাত্র আমিরদের অসন্তুষ্ট করে নি, জন সাধারণকেও শত্রু করে ফেলেছিল।
বাংলায় হাবসি শাসনে উজির সৈয়দ হুসেনের ভূমিকা
শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহের রাজত্বকালে তাঁর ‘উজির’ সৈয়দ হুসেন নিজস্ব যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা দিয়ে তিন বছরের মুজাফ্ফরের রাজ্যশাসনকে কোনোক্রমে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
বাংলায় হাবসি শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ
শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহের অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছায়, তখন সকলে তাঁর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায়। সৈন্যবাহিনীর বেতন কমিয়ে দেওয়া হলে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহী হয়। তাঁর ‘উজির‘ সৈয়দ হুসেন গোপনে এইসব বিদ্রোহীদের সমর্থন করতেন। পরবর্তীতে তিনিই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন।
উপসংহার :- নিজামউদ্দিনের মতে, সৈয়দ হুসেন অবশেষে মুজাফফরকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গদেশে হাবসি শাসনের এক অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে।
(FAQ) বাংলায় হাবসি শাসন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সৈফউদ্দিন ফিরোজ শাহ।
১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দ।
শামসউদ্দিন মুজাফফর শাহ।