গ্যয়টের প্রেমপত্র

জার্মানীর শ্রেষ্ঠ কবি গ্যয়টের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে গ্যয়টের পরিচিতি, গ্যয়টের খ্যাতি, গ্যয়টের কাব্য, গ্যয়টের প্রেম, গ্যয়টের প্রেমিকা ও গ্যয়টের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

কবি গ্যয়টের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রগ্যয়টের প্রেমপত্র
পরিচিতিজার্মানির শ্রেষ্ঠ কবি
দেশজার্মানি
জীবনের ব্রতপ্রেম
প্রেমিকাফ্রাউন ফন, ক্রিশ্চিয়ানা ভালপিয়া
গ্যয়টের প্রেমপত্র

জার্মানীর শ্রেষ্ঠ কবি গ্যয়টে; জন্ম তাঁর অভিজাত বংশে, ধনীর সন্তান – তিনি সুখের ক্রোড়েই লালিত পালিত। প্রেম ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। বহুভাবে বহু নারীর সঙ্গে ছিল তার বৈধ-অবৈধ প্রণয়। ফ্রাউন ফন (Fraun Von Stein) নামে কোনো এক সুন্দরীর প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। এই মহিলাটি ছিলেন কোনো এক রাজসভাসদের পত্নী আর কবি গ্যয়টে অপেক্ষা সাত আট বছরের বড়। কবি কি ভাবে যে এর প্রেমে পড়েন তা জানা যায় না। অসামান্য রূপ ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এই নারী বহুদিন পর্যন্ত গ্যয়টের হৃদয় অধিকার করেছিলেন – কিন্তু কবি শেষে যখন অন্য কোনো ফুলের মধু আহরণে মত্ত হলেন তখন ফ্রাউনের সঙ্গে তাঁর সকল সম্বন্ধ ছিন্ন হল। তাঁদের মধ্যে যে সব পত্রের আদান প্রদান হয় তারই কয়েকখানির বঙ্গানুবাদ দেওয়া হল।

ফ্রাউন লিখছেন গ্যয়টেকে –

ফেব্রুয়ারী, ১৭৭৩

এই পৃথিবী আবার আমার কাছে সুন্দর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে – একে আবার আমার ভালবাসতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি এতদিন ছিলাম এই বসুন্ধরা সম্বন্ধে উদাসীন। কিন্তু তোমার মধ্য দিয়ে একে আবার ভালবাসতে শিখছি। আমার মন আজ আমায় তিরস্কার করছে এতদিন কেন এমন হয়েছিলাম – নিজেরই অজ্ঞাতে নিজের জন্য কণ্টক-শয্যা রচনা করেছিলাম কেন! ছয় মাস আগে আমার মৃত্যুই ছিল একমাত্র পণ – অবিরত মৃত্যুর কামনা করতাম কিন্তু আজ আর তা নয়, আজ আমার বেশী করে বাঁচতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রিয়তম – আজ যে তোমায় পেয়েছি। কি ভুলই করতাম যদি তখন মরতাম – তাহলে তো তোমায় পেতাম না প্রাণাধিক!

(চিঠিখানি পড়লে মনে হয় ফ্রাউন ফন-এর সাংসারিক জীবন যখন তিক্ত হয়ে ওঠে তখন গ্যয়টের প্রেমেই তাকে আবার নতুন উৎসাহ ও নবীন জীবন দান করে। কবি গ্যয়টের পত্রগুলির অধিকাংশই বর্ণনাবহুল ঐতিহাসিক ঘটনারই পুনরুল্লেখ। তিনি ফ্রাউনের উপরিউক্ত পত্রের কোনো উত্তর দিয়েছিলেন কি না জানা নেই, তবে বহুদিন উভয়ের মধ্যে যে পত্রের আদান প্রদান হয় নি তা সুনিশ্চিত। গ্যয়টে যখন সুদীর্ঘকাল ইতালিতে প্রবাসি ছিলেন তখন হঠাৎ ফাউনের একখানা চিঠি পেয়ে তার যেন সম্বিৎ ফিরে আসে – তখন সেই দিনেই তাকে উত্তর দিলেন –

তোমার চিঠির জন্য তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রিয়ে – প্রিয়তমে, আমায় ক্ষমা কর তোমায় যে এত ব্যথা দিয়েছি তার জন্য় নতজানু হয়ে তোমার প্রেমের রুদ্ধদ্বারে ক্ষমা চাইছি। তুমি কি আমায় ক্ষমা করতে পার না প্রেয়সী? মনে রেখো না কোনো সঙ্কোচ! তোমার কাছে আবার যেন সহজ ভাবে আগের মতই প্রেমপূর্ণ – আনন্দ-চঞ্চল সরল হৃদয় নিয়ে উপস্থিত হতে পারি। আজ মনে হয় এই পৃথিবীতে আমি একা – নির্বাসিত, এ নির্বাসন দণ্ড হতে তুমি আমায় নিষ্কৃতি দাও।

আমি পাপী – তোমার প্রতি অন্যায় করেছি – তুমি আমায় পাপ হতে উদ্ধার কর – আমায় হাত ধরে তুলে নাও। বল, তুমি কেমন আছ – বল, আজও তুমি আমায় ভালবাস! তোমার কাছে শুধু এইটুকু প্রার্থনা যে আমাকে তুমি ত্যাগ করো না – আমাকে পৃথক ভেবো না। তোমাকে হারালে ইহজগতে আর কি আছে যে তা দিয়ে তোমার অভাব পূর্ণ হবে।

তোমার অসুখ – ওঃ কি মহাপাপী আমি! আজ আমার জন্যই তুমি অসুখে পড়ে। যখনই মনে হয় যে আমার দোষেই তুমি রোগ-যন্ত্রণা ভোগ করছ তখন যে কি এক অব্যক্ত বেদনা অনুভব করি তা তো লিখে প্রকাশ করা যায় না। ওঃ আমি কি করেছি। কি করেছি। কোন্ মুখে আজ তোমার কাছে গিয়ে দাঁড়াব। কেমন করে বলব, ওগো আমায় ক্ষমা কর।

আমার অন্তরে আজ মরণ-বাচনের দ্বন্দ্ব। জীবন মৃত্যুর মাঝখানে আজ আমি দাঁড়িয়ে। তুমি যদি ক্ষমা কর তবেই আমি বাঁচব, নইলে আমার পরিণাম মৃত্যু, প্রাণাধিক। আমার এই অধপতনে আমার বিবেক ফিরে এসেছে প্রিয়ে – প্রিয়তমে, আমার ক্ষমা কর।

গ্যয়টে

কিন্তু মানুষের স্বভাব পরিবর্তন হয় না কখনও। এতক্ষন প্রার্থনা, এত কাতর অনুনয় বিনয়ের পরও গ্যয়টের প্রকৃত চৈতন্য়োদয় হয় নি। রাণীর প্রেম লুণ্ঠনে তিনি সিদ্ধহস্ত – প্রেম করা তার স্বভাব। তাই ইতালি থেকে ফিরে আসার পরই তিনি আবার অন্য় শিকারের সন্ধানে ছুটলেন – পেলেন যুবতী তরুণী ক্রিশ্চিয়ানা ভালপিয়াকে – কথার মেহিনীমায়ায় তাকে ঘিরে ফেললেন – প্রেম চলল উদ্দাম গতিতে। তাঁকে লিখলেন পত্র –

প্রিয়তমে,

আমি তোমায় পর পর অনেক চিঠিই লিখেছি। তোমাকে আবার জানাচ্ছি – আমি ভাল আছি। কিছু ভেবো না তোমায় আমি ভালবাসি – তুমি ভিন্ন আর আমার কেউ নেই। তুমিই আমার সব। শোবার জন্য পেতেছি বাসরশয্যা – তুমি যদি আমার কাছে থাকতে। দুজনে একসঙ্গে থাকার চেয়ে আর কি মধুর আছে বল তো, সেই তো হল প্রেমিক-প্রেমিকার পরম সুখ। এস তুমি আমার কাছে এস আমার ঘরের লক্ষ্মী! আমার কুটীরখানি তোমার স্পর্শে পবিত্র হোক – এস, গড়ে তোল এখানে স্বর্গের নন্দন কানন। এস, অনাথ হতভাগ্যের ভার নাও! আমার মাঝে মাঝে কি মনে হয় জান? মনে হয় আমার চেয়ে কত সুন্দর পুরুষ হয়ত তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে – তারা তোমায় কত ভালবাসবে। আমি জানি তুমি তো সে রকমের মেয়ে নও। তুমি এসব কথা মনে ঠাঁই দিও না – তুমি আমাকে শ্রেষ্ঠ বলেই মনে কর (কারণ। – আমি সে তোমায় ভালবাসি – প্রাণ দিয়ে ভালবাসি, একমাত্র তুমি ছাড়া জগতে আমার প্রিয় বলতে আর কিছুই নেই। তোমায় নিয়ে কত আজে-বাজেই না স্বপ্ন দেখি ! সে সব স্বপ্ন মাত্র – কিছু না শুধু তুমি আর আমি, আমরা পরস্পরকে ভালবাসি। এ ভালবাসা যেন চিরস্থায়ী হয় – এই আকাশে যেন কোনো মেঘ না ওঠে।

মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি কত সুন্দর সুন্দর সব সাজান জিনিস, যা দিয়ে আমাদের ঘরখানি ছবির মত করে তুলব।কিছুই অভাব তোমার রাখব না প্রিয়ে! শুধু তুমি আমার থাক – আমায় ভালবাস – দেখবে সব হবে! তোমার সুখের কোনো ত্রুটিই হবে না। তুমি যদি আমার না হও তবে এসব দিয়ে আমার কি হবে? ওগো তুমি যে আমার জীবনের ধ্রুবতারা – তোমাকে কেন্দ্র করেই যে আমার ঘোরা ফেরা! তোমার প্রেম হতে যেন বঞ্চিত না হই – চুমো নিও, ভুলো না আমায়।

তোমারই গ্যয়টে

(FAQ) গ্যয়টের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গ্যয়টে কে ছিলেন?

জার্মানির শ্রেষ্ঠ কবি।

২. গ্যয়টে তার প্রেমিকা ফ্রাউন ফনকে কবে প্রেমপত্র লেখেন?

ফেব্রুয়ারী, ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে।

৩. গ্যয়টের প্রেমিকাদের নাম কী?

ফ্রাউন ফন ও ক্রিশ্চিয়ানা ভালপিয়া

Leave a Comment