গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পরিচয় ও সিংহাসন লাভ প্রসঙ্গে তুঘলক শব্দের অর্থ, কারানা তুর্কী জাতি, জন্মকৌলিন্য গুরুত্বহীন, প্রথম জীবন, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ, খলজি বংশের প্রতি অনুগত্য, সুলতানদের আস্থা অর্জন ও তার সিংহাসনে আরোহণ সম্পর্কে জানবো।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পরিচয় ও সিংহাসন লাভ
বিষয় | গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পরিচয় ও সিংহাসন লাভ |
বংশ | তুঘলক বংশ |
প্রতিষ্ঠাতা | গিয়াসউদ্দিন তুঘলক |
প্রতিষ্ঠা কাল | ১৩২০ খ্রিস্টাব্দ |
উপাধি | গাজি মালিক |
ভূমিকা :- দিল্লী সুলতানির ইতিহাসে খলজি বংশ-এর পতন ঘটলে তুঘলক বংশের শাসন শুরু হয়। এই তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।
তুঘলক শব্দের অর্থ
তুঘলক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গাজী মালিক, গাজী তুঘলক নামে পরিচিত ছিলেন। “তুঘলক” শব্দটি জাতিবাচক নয়। এর দ্বারা কোনো জাতিগোষ্ঠী বুঝায় না। ‘তুঘলক’ শব্দটি ব্যক্তিগত নাম বা উপাধি বুঝাতে ব্যবহার করা হত।
কারানা তুর্কী জাতি
- (১) ইবন বতুতার মতে, তুঘলকরা “কারানা” তুর্কী জাতীয় ছিলেন। অতীতে সিদ্ধ ও তুর্কীস্থানের মধ্যবর্তী স্থানে এই তুর্কী উপজাতি বসবাস করত। কিন্তু ইবন বতুতার এই মত অন্য কোনো সমকালীন লেখক সমর্থন করেননি।
- (২) “কারানা তুর্কী” বলতে তুর্কীদের কোনো শাখা বা উপজাতিকে বুঝাত না বলে মনে করা হয়। তুর্কী পিতা ও ভারতীয় মাতার রক্ত সংমিশ্রণে জাত তুর্কীকে “কারানা তুর্কী” বলা হত।
ফেরিস্তার অভিমত
ফেরিস্তার মতে, গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পিতা ছিলেন গিয়াসউদ্দিন বলবন-এর এক তুর্কী দাস কর্মচারী এবং মাতা ছিলেন এক ভারতীয় জাঠ রমণী। এজন্য তুঘলকদের “কারানা” তুর্কী বলা হত।
জন্মকৌলিন্য গুরুত্বহীন
তুঘলক বংশের উত্থান পুনরায় একথা প্রমাণ করে যে সিংহাসন লাভের জন্য যোগ্যতা থাকলে জন্ম কৌলিন্যের দাবী গৌণ হতে বাধ্য ছিল। গাজী তুঘলকের কোনো জন্মকৌলিন্য না থাকা সত্বেও দিল্লীর সকল অভিজাত তাকে সিংহাসন লাভের যোগ্য বলে মনে করেন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের প্রথম জীবন
ইবন বতুতার মতে, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সুলতান আলাউদ্দিন খলজির অধীনে কর্মচারী হিসেবে জীবন আরম্ভ করেন। রণথম্ভোর দুর্গ অবরোধের সময় তিনি সেনাপতি উলুগ খানকে সহায়তা করে সুলতানের নজরে পড়েন।
মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের ভূমিকা
তাঁর কর্তব্যপরায়ণতা দেখে, আলাউদ্দিন তাকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দেন। মোঙ্গল আক্রমণের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ চালান। তুঘলক নামা থেকে জানা যায় যে, প্রায় ১৮টি মোঙ্গল অভিযান প্রতিহত করে তিনি “গাজী মালিক” নামে পরিচিত হন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সুলতানদের আস্থা অর্জন
আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর দিল্লীতে সিংহাসন নিয়ে যে প্রতিযোগিতা চলে সেই সময় পাঞ্জাবে “গাজী মালিক” বা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তার বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষ নীতির দ্বারা সুলতানদের আস্থা পান।
খলজি বংশের প্রতি গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের অনুগত্য
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি গাজী মালিক কে বিশ্বাস করতেন ও তাকে নিজ পদে বহাল রাখেন। গাজী মালিকও খলজি বংশের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আনুগত্য দেন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সিংহাসনে আরোহণ
খসরু শাহের শাসনকালে দিল্লীর তুর্কী আমীররা তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাজি মালিককে সিংহাসন অধিকারের জন্য আহ্বান জানায়। গাজী মালিক ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে খসরু শাহকে নিহত করে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন।
উপসংহার :- খলজি বংশের শেষ সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি। তার মৃত্যুর পর খসরু শাহ কিছু দিন দিল্লী শাসন করেন। খসরু শাহের মৃত্যুর পর গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের হাত ধরে দিল্লীতে তুঘলক শাসন শুরু হয়।
(FAQ) গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পরিচয় ও সিংহাসন লাভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
তুঘলক বংশ।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।
১৩২০ খ্রিস্টাব্দে।