এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র

বিখ্যাত ডাচ লেখক এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে এডওয়ার্ড ডেকারের পরিচয়, এডওয়ার্ড ডেকারের ছদ্মনাম, এডওয়ার্ড ডেকারের খ্যাতি, এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেম, এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমিকা ও এডওয়ার্ড ডেকারের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

ডাচ লেখক এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রএডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র
পরিচিতিবিখ্যাত লেখক
দেশনেদারল্যান্ড
ছদ্মনামমুলতাতুলি
প্রেমিকা ও স্ত্রীএভারডাইন হুবারটিনা ভ্যান উইজনবার্গেন
এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র

এডওয়ার্ড ডুয়েস ডেকার ইংরেজ পাঠকবর্গের নিকট ‘মুলতাতুলি’ এই ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। তিনি জাতিতে ডাচ, তাঁর যুগান্তকারী বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেভেলিয়র’ (Havelear) ডাচ সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। জাভায় উপনিবেশগুলির উপর ডাচ সরকারের অত্যাচারের কাহিনী জ্বলন্ত অক্ষরে বর্ণনা করে তিনি তদ্দেশীর সাহিত্যের বিদ্রোহী লেখক নামে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

তিনি ছিলেন স্বাধীন মতাবলম্বী, যে কোনো বিষয় তিনি স্পষ্ট ভাষায় সাহসের সাথে ব্যক্ত করতেন। বিবাহের পূর্বে পত্নীকে যে সব প্রেমপত্র লিখেছিলেন তাতে তিনি প্রকাশ্যে যৌন সম্বন্ধে এবং নারীর ভবিষ্যৎ মাতৃত্ব বিষয়ে আলোচনা করতে মোটেই কুণ্ঠিত হন নি। ইউরোপ-এর সভ্যসমাজের কোনো কোনো পন্ডিত কিশোর ও বালকদের যৌনবিজ্ঞান শিক্ষার অনুকূলে মত প্রকাশ করেন – কিন্তু সে শিক্ষার সীমা, বয়স প্রভৃতি নিয়ে মতদ্বৈধ বর্তমান। আর সে শিক্ষা দেবেই বা কে? পিতা, মাতা, স্কুলের শিক্ষক, না চিকিৎসক? ডেকার কিন্তু নিজেই সে ব্যবস্থা করলেন – তাঁর ভাবী পত্নীর সঙ্গে খোলাখুলি ভাবে সে বিষয়ে পত্রালাপ করলেন। তাঁর পত্রের অংশবিশেষ বাদ দিয়ে (যদিও ইংরেজীতে তা ভারত-এ প্রচলিত বইয়েও বাদ নাই) আমরা প্রকাশ করলাম –

২৪শে অক্টোবর, ১৮৪৫, শুক্রবার

প্রিয়ে ইভা,

. . . . হাঁ যা বলছিলাম। আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমার যা বলবার তা এখনও বলা হয় নি। ভবিষ্যৎ বলতে আমি কি বলছি বুঝতে পারছ? ভবিষ্যৎ হচ্ছে আমাদের সন্তান – আমাদের বিবাহের অবশ্যম্ভাবী ফল, আমাদের যেসব ছেলে-মেয়ে হবে – আমি তাদের কথাই বলছি। তুমি কি মনে কর আমাদের কোনো সন্তান হবে না? নিশ্চয়ই হবে। তুমি হবে তাদের মা, এতে লজ্জার কি আছে, আমি তো তা চাই – আশা করি.! লোকে সাধারণত এ কথা এড়িয়ে যায় – এবিষয় নিয়ে কোনো কুমারীর সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না – তা সে অকারণ লজ্জার জন্যই হোক বা সাধারণ ভদ্রতার খাতিরেই হোক, মোট কথা, তারা দাম্পত্য জীবনের এই প্রধান দিকটা উপেক্ষা করে যায়। অন্য সব কুমারীর সম্বন্ধে আমি কিছু বলতে চাইনে, আমার বক্তব্য তোমাকে নিয়ে। আমি তোমাকে বালিকা কুমারী মনে করি না – তুমি আমার কাছে পূর্ণবয়স্কা নারী, তা ছাড়া দু-দিন পরে তুমি হবে আমার সঙ্গিনী আমার পত্নী; সুতরাং তোমার সঙ্গে এ আলোচনায় আমি কোনো দোষ দেখি না। আমি চাই আমার যে হবে সে নারী কচি খুকি নয়, তাই তোমাকে অনেক কথা জানিয়ে রাখতে চাই।

আমাদের উদ্দেশ্য এক, স্বার্থ এক – আমাদের জীবন গাঁথা হবে একই সূত্রে – সুতরাং আমাদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রেখে চলতে হবে, একে অন্যকে আশ্রয় করেই চলতে হবে জীবনপথে, সেই জন্যই তোমাকে বলতে আমার কোনো বাধা নেই। আমার মতে এমন কতকগুলো বিষয় আছে যা আমরা সাধারণতই একটু বেশী মাত্রায় ছেলেদের কাছে গোপন করবার চেষ্টা করি। বালকের মন যতদূর সম্ভব পবিত্র নিষ্কলুষ রাখা উচিত – স্বীকার করি, কিন্তু এই নিষ্কলুষতা যেন অজ্ঞতার নামান্তর না হয়। আমার মনে হয় বালকদের কাছে কোনো বিষয় গোপন করা মানে তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেওয়া, আর তাদের মনকে আরও জিজ্ঞাসু ও সন্দিগ্ধ করে তোলা হয়! নয় কি? প্রকৃত সত্য কি তা জানবার জন্য তারা আরও কৌতূহলী হয়ে ওঠে। অনেক সময় পিতামাতার এই গোপন করার প্রবৃত্তি তাদের চিত্তকে যতখানি কলুষিত করে – তাদের কাছে সত্য প্রকাশ করলে তাদের অপরিণত চিত্তবৃত্তিকে ততখানি মলিন করতে পারে না – কারণ মোহ, বয়স্ক ও বালক উভয়কেই সমান ভাবে আকৃষ্ট করে। ছেলে মেয়েদের এ অজ্ঞানতা প্রশংসার সন্দেহ নেই কিন্তু তারা কি এই না জানা অবস্থায় থাকবে? না, তা কখনই সম্ভব নয়। প্রকাশ্যে অজ্ঞান হয়ে থেকে তারা গোপনে গোপনে পিতা-মাতার গোপন বিষয় জানবার চেষ্টা করবেই এবং শেষ পর্যন্ত তা জেনে নেয়। তাদের খেলার সাথী সহপাঠি সমবয়সীর সঙ্গে আলোচনা করবে – লুকিয়ে বই পড়েও কতক জানবে – কতক বা কল্পনা করবে, আলো-আঁধারে থেকে তাদের মনকে আরও ভারাক্রান্ত করে তুলবে। তাদের সে জানার আকাঙক্ষা পূর্ণ পরিতৃপ্তি লাভ না করে ক্রমশই তাদের অন্তরকে অধিকতর কলুষিত করবে। ‘খারাপটা’ তারা আয়ত্ত করবেই – পাপ কি তারা জামবেই – তবু পিতামতা মনে করবে ছেলে আমাদের কিছু বোঝে না, একেবারে সুশীল সুবোধ নিষ্পাপ! ভেবে দেখ দেখি কি ভুলই না আমরা করি!

বিবাহের যে সম্বন্ধ, স্বামী-স্ত্রীর যে আদর্শ তা শুধু বাঁধাধরা সামাজিক সদাচার ও প্রথার বশবর্তী নিয়ম কানুন নয়। এর স্থান খুবই উচ্চে -এ সম্বন্ধ বড় গভীর। তাই বলে মনে করো না যে আমি সামাজিক সদাচার ও প্রথাকে মানি না। শুধু যে-গুলো নিছক প্রথা মাত্র, যাদের কোনো নৈতিক মূল্য নেই – সে সব বিধিব্যবস্থা আমি মোটেই গ্রাহ্য করি না। আমি অবিনয়ী বা অসমাজিক (অশিক্ষিত) নই – বরং অনেক ব্যপারে আমি খুব বেশী বাহ্য়-শিষ্টাচার বা লৌকিক ভদ্রতার বশীভূত। তুমি হয়ত বিশ্বাস না করতে পার, নইলে ধর এই চুম্বনের কথা। কোনো লোকের সামনে চুমু খাওয়াটা আমি মোটেই পছন্দ করি না (কারণ ওটা প্রকৃত শিষ্টাচার বিরুদ্ধ)। তারপর ধর বিবাহিত জীবন! বিয়ের পর যখন আমরা সংসার করব তখনও আমার মতে স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট থাকবে আলাদা একখানা শোবার ঘর, যেখানে ঢুকতে গেলে আমাকেও সাড়া দিয়ে, সম্ভব হলে আমার স্ত্রীর অভিমত নিয়ে ঢুকতে হবে। তুমি ভাবছ তা অস্বাভাবিক অচারণ, কিন্তু তা নয় – আমার শিক্ষাই এই রকম। যাক তা না হয় না-ই হল, কিন্তু আসল কথা শিষ্টাচারের নিয়ম মেনে চলতে আমি এতই অভ্যস্থ যে যা বললাম দরকার হলে আমি তা করতে প্রস্তুত!

সত্যি বল তো আমার এই সব কথা মনে করে তুমি কি ভাবছ। এতদিন বা এতক্ষণ ধরে যা বললাম তার মূল উদ্দেশ্য সেই এক : আমাদের পরস্পর পরস্পরকে জানতে হবে, চিনতে হবে। তোমার সঙ্গে যে সব বিষয়ে আলোচনা করলাম – ইতঃপূর্বে আর কেউ (অন্তত কোনো যুবক) করে নি, সে সম্বন্ধে তোমার মতামত আমায় প্রকাশ করে বল। আমার কাছে লজ্জা করো না। আমার চেয়ে আপনার আর কে তোমার আছে! তোমার গোপন মনের তথ্য আমার অজ্ঞাত থাকা তো উচিত নয় সুন্দরী। আমার চেয়ে তোমার বা তোমার চেয়ে আমার প্রিয় ও শ্রেয় তো কেউ নেই। মা বাপ ভাই বোন আত্মীয় স্বজন তোমার আমার কাছে প্রিয় হতে পারে – কিন্তু প্রিয়তম তো কেউ নয় – যেমন আমি তোমার – তুমি আমার। নাই বা হল প্রকাশ্যে আমাদের বিয়ে, নাই বা হল বাহ্যিক অনুষ্ঠান কিন্তু অন্তরে তো আমরা বহুপূর্বেই এক হয়ে গেছি, সুতরাং তোমার অভিমত ব্যক্ত করবার তো কোনো বাধা নেই প্রিয়তমে! আমি স্বীকার করি কুমারী মেয়েদের বেশী প্রগলভা হওয়া উচিত নয় বা এমন অনেক বিষয় আছে যা অনূঢ়া যুবতীরা সহজ ও সরল ভাবে আলোচনা করতে পারে না; তাতে হয়ত তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে ক্ষতি হতে পারে, কিন্তু তোমার সম্বন্ধে তা প্রযোজ্য নয়। আমার সঙ্গে তোমার বিচ্ছেদের কোনো আশঙ্কা নেই। এমন নয় যে দু-দিন পরে আমরা পরস্পর পৃথক হয়ে যাব – কে কোথায় চলে যাব – তখন কেই বা কার স্বামী আর কেই বা কার স্ত্রী! সে ভয় তো আমাদের নেই। এত দু-দিনের দেখা – ক্ষণিকের মোহ উন্মাদনা নয়। তুমি কি ভয় কর যে আমি দু-দিন পরে তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বাসঘাতক লম্পটের মত তোমাকে উপেক্ষা করে চলে যাব! ভাবছ বুঝি আজ যে আমি তোমার প্রেমে পাগল; কাল হয়ত তোমার এই প্রেম পদদলিত করে বসন্তের কোকিলের মত উধাও হব? সে ভয় তো তোমার নেই – আমি যে জীবনে মরণে তোমার, তার তো বহু প্রমাণই পেয়েছ। তবে এত সঙ্কোচ কেন? কেন এ দ্বিধা ও লজ্জা?

আমাকে বিশ্বাস কর, আমার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর কর – সেই জন্য়ই তো বলছি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে – খোলাখুলি ভাবে সব বিষয়ে আলাপ করতে হবে – তবেই ত বিশ্বাস আসবে, দুজনা দুজনকে চিনতে পারব – জানতে পারব।

তুমি যে আমায় ভালবাস – তোমার চিঠিগুলিই তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। আমি কি করি জান? তোমার অন্তরের গভীরতম প্রেম যে সব জায়গায় ফুটে উঠেছে, সে সব জায়গায় আমি চুমায় চুমায় ভরিয়ে দি। আচ্ছা প্রিয়ে, একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত যুবক – যার সম্বন্ধে তুমি কিছুই জান না – শুধু তারই মুখ থেকে শোনা তার আত্মপরিচয় ছাড়া – তাকে তোমার প্রেম নিবেদন কর কি করে? বড় দুঃসাহস তোমার। মানব চরিত্র সম্বন্ধে তোমার জ্ঞানই বা কতটুকু? তোমার ক্ষমতা আছে বলতে হবে। আর সেই জন্য়ই তো তোমায় এত ভালবাসি – আর ভালবাসি বলেই পাঠালাম একটি চুমা – তাকে তোমার কোমল বুকে ঠাঁই দিও – শুধু এইটুকু কামনা। আজ তবে বিদায় হই।

তোমারই এডওয়ার্ড ডেকার

(FAQ) এডওয়ার্ড ডেকারের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. এডওয়ার্ড ডেকার কে ছিলেন?

একজন বিখ্যাত ডাচ লেখক।

২. এডওয়ার্ড ডেকারের ছদ্মনাম কী?

মুলতাতুলি।

৩. এডওয়ার্ড ডেকারের স্ত্রীর নাম কী?

এভারডাইন হুবারটিনা ভ্যান উইজনবার্গেন

৪. এডওয়ার্ড ডেকার কখন তার প্রেমপত্রটি রচনা করেন?

২৪শে অক্টোবর, ১৮৪৫, শুক্রবার

Leave a Comment