বিশিষ্ট ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতৃপরিচয়, শিক্ষা, স্কুল বন্ধ, পত্রিকা সম্পাদনা, হার্ড টাইমস উপন্যাস, উল্লেখযোগ্য উপন্যাস, রচনাবলী, অসুস্থতা, সাহিত্যের পরিমাণ, প্রশংসা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
বিশিষ্ট ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স
ঐতিহাসিক চরিত্র | চার্লস ডিকেন্স |
জন্ম | ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮১২ খ্রি: |
দেশ | ইংল্যান্ড |
পরিচিতি | ঔপন্যাসিক |
বিখ্যাত রচনা | অলিভার টুইস্ট |
মৃত্যু | ৯ জুন, ১৮৭০ খ্রি: |
ভূমিকা :- ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাকে ভিক্টোরিয়ান যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে মনে করা হয়। ডিকেন্স জীবদ্দশাতেই তার পূর্বসূরি লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইংল্যাণ্ডের এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের জীবন তাঁর উপন্যাসের কাহিনীর মতই বড় বিচিত্র।
চার্লস ডিকেন্সের জন্ম
১৮২২ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি পোর্টস মাউথ শহরে চার্লস ডিকেন্সের জন্ম। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের পিতৃপরিচয়
বাবা জন ডিকেন্স নৌ বিভাগের সামান্য কেরানি ছিলেন। ডিকেন্সের যখন চার বছর বয়স তার বাবা এলেন চ্যাথামে। এখানেই তার শৈশবের আনন্দভরা দিনগুলি কেটেছিল।
চার্লস ডিকেন্সের শিক্ষা
ডিকেন্সের মা ছিলেন শিক্ষিত পরিবারের সস্তান। নিজেও প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করেছিলেন। ডিকেন্সের শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় তাঁর মায়ের কাছে। কিছুদিন পর স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হলেন।
ডিকেন্সের সামনে নতুন জগতের দ্বার উন্মোচন
- (১) ছেলেবেলা থেকেই ডিকেন্স দেখতেন দোতালায় বাবার ঘরে বিরাট একটা আলমারী ভর্তি সারি সারি বই। বইগুলো তাঁকে আকর্ষণ করত কিন্তু তাতে হাত দেওয়া নিষেধ ছিল।
- (২) ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাকে ইচ্ছামত আলমারি থেকে বই নিয়ে পড়ার অনুমতি দিলেন। ডিকেন্সের সামনে যেন এক নতুন জগতের দ্বার খুলে গেল। মাত্র নয় বছরের মধ্যেই ইংরাজী সাহিত্যের অধিকাংশ দিকপাল লেখকদের লেখা বই পড়ে শেষ করে ফেললেন।
চার্লস ডিকেন্সের স্কুল বন্ধ
কিন্তু ডিকেন্সের বাবার আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছিল। বিরাট সংসারের ব্যয় মেটাতে প্রতি মাসেই ধার করতে হত। ধার শোধ হত না, শুধু সুদ বেড়েই চলছিল। নিরুপায় হয়ে কামডেনের এক বস্তি বাড়িতে গিয়ে উঠলেন। ডিকেন্সের স্কুল বন্ধ হয়ে গেল।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের পিতার জেল
পাওনাদাররা কোর্টে নালিশ জানাল। দেনার দায়ে ডিকেন্সের বাবাকে জেলে যেতে হল। কোর্টের আদেশে তাঁদের বাড়ির প্রায় সব কিছুই নিয়ে যাওয়া হল, তার মধ্যে ডিকেন্সের প্রিয় বইগুলো ছিল।
চার্লস ডিকেন্সের হার্ড টাইমস উপন্যাস
১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হল হার্ড টাইমস। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই উপন্যাস লেখা হয়েছিল। নতুন উৎপাদন ব্যবস্থায় তৎকালীন বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রগতিশীল মতবাদের বাস্তব ফল।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের পত্রিকা সম্পাদনা
একদিকে যখন অবিশ্রান্ত লিখে চলছিলেন, তখন হাউস, হোল্ড ওয়ার্ডস নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনার ভার পড়ল (১৮৫০) তাঁর উপর। প্রচণ্ড কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। কিছুদিন পর “অল দি ইয়ার রাউণ্ড” (All the Year round) নামে আর একটি পত্রিকার দায়িত্ব পালন করেন।
চার্লস ডিকেন্সের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস
- (১) বিবাহ বিচ্ছেদের পরবর্তীকালে ডিকেন্স যে সব উপন্যাস রচনা করলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এ টেল অফ টু সিরিজ (A tale of two cities), এ গ্রেট এক্সপেকটেশন (Great expectations)।
- (২) A tale of two cities ফরাসী বিপ্লবের উপর লেখা রোমান্টিক উপন্যাস। দুটি শহর লণ্ডন ও প্যারিস। ফরাসী বিপ্লবের সময়ে এই দুটি শহরের মানুষের জীবনকথা জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই উপন্যাসে।
- (৩) ১৮৬০ সালে প্রকাশিত হল Great expectations। এখানে নায়ক তার কাহিনী নিজেই বর্ণনা করেছেন। এই কাহিনীর নায়ক পিপ গ্রামের দরিদ্র বালক। সে স্বপ্ন দেখে একদিন সে বড় হবে। তার আশা-আকাঙ্ক্ষার বিচিত্র কাহিনী ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসের মধ্যে।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের শেষ উল্লেখযোগ্য উপন্যাস
ডিকেন্সের শেষ উল্লেখযোগ্য উপন্যাস আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ( Our Mutual Friend)। এই পর্যায়ে ডিকেন্সের প্রতিভা অনেক অংশে স্তিমিত হয়ে এসেছিল।
চার্লস ডিকেন্সের রচনাবলী
দ্য পিকউইক পেপারস, অলিভার টুইস্ট, নিকোলাস নিকোলবি, দি ওল্ড কিউরিওসিটি শপ, বার্নাবি রাজ, আ ক্রিসমাস ক্যারোল, মার্টিন চাজলউইট, ডম্বি অ্যান্ড সন্স, ডেভিড কপারফিল্ড, ব্লীক হাউস, হার্ড টাইমস, লিটল ডরিট, আ টেল অফ টু সিটিজ, গ্রেট এক্সপেক্টেশনস, আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড, স্কেচেস বাই বজ।
অসুস্থ চার্লস ডিকেন্স
গত কয়েক বছর ধরে ইংল্যান্ড, আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে একক পাঠ করতে করতে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সামান্য সুস্থ হতেই নূতন উপন্যাস শুরু করলেন, Edwin drood। রহস্য কাহিনী, কিন্তু এই কাহিনী শেষ করে যেতে পারেন নি ডিকেন্স।
চার্লস ডিকেন্সের মৃত্যু
১৮৭০ সালের ৪ঠা জুন বিশেষ অনুরোধে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে উপন্যাসের একটি অংশ পড়তে পড়তে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। পাঁচ দিন পর ৯ই জুন তাঁর মৃত্যু হল। তখন তাঁর বয়স মাত্র আটান্ন। তাঁর দেহ ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবিতে কবিদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হল।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের সাহিত্যের পরিমাণ
মৃত্যুর সময়ে তিনি বারোটি সম্পূর্ণ, একটি অসমাপ্ত উপন্যাস, ছোটদের জন্য ইংল্যাণ্ডের ইতিহাস, বাইবেলের গল্প, বেশ কিছু ছোট গল্প, কৌতুক নক্সা ও কয়েকটি নাটক রেখে যান। ডিকেন্স তাঁর জীবনব্যাপী সাহিত্য সাধনার মধ্যে দিয়ে সমগ্র ভিক্টোরিয়া যুগকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন।
চার্লস ডিকেন্সের নির্মম লেখনি
শুধুমাত্র সৃষ্টির আনন্দের জন্য তিনি কলম ধরেন নি। তিনি দেখেছিলেন সমাজের সব অবক্ষয় কদর্যতা অভিজাত সমাজের ক্ষয়ে আসা কুৎসিত জীবন, শিল্প বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত গ্লানি সব কিছুর বিরুদ্ধে তাঁর লেখনি নির্মম হয়ে উঠেছিল।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের রচনার প্রশংসা
লিও তলস্তয়, জর্জ অরওয়েল, জি. কে. চেস্টারটন প্রমুখ লেখকবৃন্দ ডিকেন্সের রচনার বাস্তবতাবোধ, রসবোধ, গদ্যসৌকর্য, চরিত্রচিত্রণের দক্ষতা ও সমাজ-সংস্কার চেতনার উচ্চ প্রশংসা করেছেন
উপসংহার :- তিনি বিপ্লবী না হলেও সমাজে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের ঢেউ উঠেছিল। এই ঢেউতে দূর হয়ে গিয়েছিল অনেক পাপ, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার। সম্ভবত সেই কারণেই বার্নার্ড শ যথার্থই বলেছিলেন, “Of all English writers… only Charles Dickens who did much to cure the evils of his time.”
(FAQ) বিশিষ্ট ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাকে ভিক্টোরিয়ান যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে মনে করা হয়।
ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরে।
চার্লস ডিকেন্স।
ওয়েস্টমিনস্টার।