ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল

বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতৃপরিচয়, উদ্ভাবনী শক্তি, কর্ক স্ক্রু সূত্র আবিষ্কার, চুম্বক শলাকার দিক নির্ণয়, তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব, গ্ৰন্থ রচনা, গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, রোগাক্রান্ত ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল

ঐতিহাসিক চরিত্রজেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল
জন্ম১৩ নভেম্বর, ১৮৩১ খ্রি:
দেশস্কটল্যাণ্ড
পরিচিতিগণিতবিদ ও বিজ্ঞানী
আবিষ্কারকর্ক স্ক্রু সূত্র
মৃত্যু৫ নভেম্বর, ১৮৭৯ খ্রি:
বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল

ভূমিকা :- চুম্বক, তড়িৎ ও তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গতত্ত্বের উপর যার গবেষণা এককালে একটা প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিল, সেই বিজ্ঞানীর নাম জেমস ক্লার্ক মাক্সওয়েল।

ম্যাক্সওয়েলের জন্ম

জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন।

বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের পিতৃপরিচয়

  • (১) তাঁর পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। তবুও বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর অনুরাগ। তাই চেয়েছিলেন, পুত্রকে তিনি বিজ্ঞান পড়াবেন। মার্ক্সওয়েলের লেখাপড়ার যথেষ্ট সুব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর পিতা।
  • (২) এমন কি অবসর সময়ে নিজেই বসতেন ছেলেকে পড়াতে। একমাত্র পুত্র ছিলেন বলে হয়ত পিতার স্নেহের মাত্রা একটু বেশিই ছিল। তথাপি পুত্রের উন্নতির জন্য শাসন করতেও কুণ্ঠিত হতেন না।

ম্যাক্সওয়েলের উদ্ভাবনী শক্তি দেখে বিস্মিত বাবা

  • (১) মাত্র ষোল বছর বয়সে ম্যাক্সওয়েলের উদ্ভাবনী শক্তি দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন পিতা। যে কয়েকটি যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন ম্যাক্সওয়েল, সেগুলি পিতা একদিন দেখতে দিলেন তৎকালীন একজন নামকরা বিজ্ঞানী ফোরবীজ কে।
  • (২) ফোরবীজ সেগুলি দেখে বালকের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রেরণ করেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে। শোনা যায়, রয়েল সোসাইটি ম্যাক্সওয়েলের প্রশংসা করে সার্টিফিকেট প্রদান করেছিল।

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ম্যাক্সওয়েল

সতের বছর বয়সের সময় ম্যাক্সওয়েল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পাশ করার পর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বেশ কিছুদিন চুম্বক ও তড়িৎ সম্বন্ধে গবেষণা করেন।

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্সওয়েল

অতঃপর উন্নততর গবেষণার জন্য তিনি যোগদান করেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইখানে ১৮৫১ খ্রীস্টাব্দে তিনি আবিষ্কার করেন তাঁর প্রসিদ্ধ “কর্ক স্কু সূত্রটি।”

ম্যাক্সওয়েলের কর্ক স্ক্রু সূত্র

তড়িৎ বিজ্ঞানে তিনি যে সূত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন সেই সূত্রটি “ম্যাক্সওয়েলের কর্ক স্ক্রু সূত্র” নামে প্রসিদ্ধ। এই সূত্রের সাহায্যে তড়িৎপ্রবাহের ফলে চুম্বক শলাকার দিক নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

পরীক্ষার দ্বারা ম্যাক্সওয়েলের চুম্বক শলাকার দিক নির্ণয়

ম্যাক্সওয়েল পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করেন, পরিবাহী তারের মধ্যদিয়ে যে দিকে তড়িপ্রবাহ চালনা করা হয়—উদাহরণস্বরূপ একটি ডানপাকের কর্ক স্ক্রুকে পরিবাহী তার বরাবর সেই দিকে ঘোরান হলে হাতের বুড়ো আঙুলটি যে দিকে ঘুরে চুম্বক শলাকার উত্তর মেরু সেই দিকে বিক্ষিপ্ত হয়। ম্যাক্সওয়েলের এই আবিষ্কারটি তড়িৎ বিজ্ঞানে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

কিংস কলেজের অধ্যাপক ম্যাক্সওয়েল

ম্যাক্সওয়েল কেবলমাত্র পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন না, অঙ্কশাস্ত্রে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানেও ছিল তাঁর সমান দক্ষতা। তাঁর বহুমুখী প্রতিভার জন্য ১৮৬০ খ্রীস্টাব্দে কিংস কলেজ তাঁকে আমন্ত্রণ জানায় এবং ম্যাক্সওয়েলও গ্রহণ করেন এখানকার পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার প্রধান অধ্যাপকের পদ । কিংস কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৮৬৪ খ্রীস্টাব্দে ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করেন আলোকের তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গতত্ত্ব।

ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব

গণিতবিদ ম্যাক্সওয়েলের যে আবিষ্কারটিকে যুগান্তকারী আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে সেটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব। প্রকৃতপক্ষে উক্ত তরঙ্গতত্ত্ব সম্বন্ধে প্রথম সঠিক ধারণা দিয়েছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অথবা চুম্বক ক্ষেত্রে সামান্যতম বিশৃঙ্খলা ঘটলেই আলোর গতির সমান একটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ বেরিয়ে আসে। ঐ তরঙ্গের ধর্মও সাধারণ আলোর ধর্মের মতই অর্থাৎ আলোকের মত ওদেরও হয় প্রতিফলন, প্রতিসরণ, পোলারাইজেশন প্রভৃতি।

বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের অনুপ্রেরণা

গণিতবিদ ম্যাক্সওয়েল বড় গণিতজ্ঞ ছিলেন বলে উক্ত তরঙ্গতত্ত্বের ধারণা করা সম্ভব হয়েছিল তাঁর। অবশ্য তৎকালীন বিজ্ঞানীদের ইথার ও আলোক তরঙ্গের ধারণা, বিদ্যুৎ কারেন্ট ও চৌম্বক ক্ষেত্র প্রভৃতি থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন তিনি। পরে আলোক তরঙ্গকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সহজ গণিতের পরিবর্তে উচ্চ গণিতের দুটি শাখা ‘ভেক্টর’ ও ‘ক্যালকুলাস’ প্রয়োগ করেছিলেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে ম্যাক্সওয়েলের গবেষণা

ম্যাক্সওয়েল কিছুকাল জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধেও গবেষণা করেছিলেন। একদা শনিগ্রহের বলয় সম্বন্ধে লেখা তাঁর একটি প্রবন্ধ চারিদিকে আলোড়ন তুলেছিল এবং উক্ত প্রবন্ধটির জন্য তিনি লাভ করছিলেন “এডমস্ পুরস্কার”।

বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল রচিত গ্ৰন্থ

কতকগুলি মূল্যবান গ্রন্থেরও রচয়িতা ম্যাক্সওয়েল। গ্রন্থগুলি মধ্যে “তাপতত্ত্ব” এবং “পদার্থ গতি” নামক দুখানি গ্রন্থ বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ পরিচিত। তাছাড়া ১৮৭৩ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত “ট্রিটিজ অন ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম” নামক গ্রন্থটি তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে।

গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় ম্যাক্সওয়েল

ম্যাক্সওয়েলের জীবনের একটি বড় কীর্তি লন্ডনে “ক্যাভেন্ডিস ল্যাবোরেটরি” নামক বিখ্যাত গবেষণাগারটির প্রতিষ্ঠা। সম্পূর্ণ নিজের তত্ত্বাধানেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন উক্ত গবেষণাগারটি এখনও গবেষণাগারটির সুনাম বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

রোগাক্রান্ত ম্যাক্সওয়েল

অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে ম্যাক্সওয়েলের। চল্লিশ বছর বয়স অতিক্রমের পরই তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তবুও গবেষণা এবং পুস্তক রচনায় ভাটা পড়েনি।

ম্যাক্সওয়েলের মৃত্যু

অবশেষে সুদীর্ঘকাল রোগভোগের পর ৪৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ছিল ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ই নভেম্বর।

উপসংহার :- ম্যাক্সওয়েল দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারলে বিজ্ঞানে হয়ত আরও বহু মূল্যবান তথ্য সংযোজিত হতো। তবুও যা তিনি দান করেন গেছেন তার পরিমাণও বড় কম নয়।

(FAQ) বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল কে ছিলেন?

স্কটল্যাণ্ডের একজন গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী।

২. কর্ক স্ক্রু সূত্র আবিষ্কার করেন কে?

জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল।

৩. ম্যাক্সওয়েলের বিখ্যাত গ্ৰন্থের নাম কি?

“ট্রিটিজ অন ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম”।

৪. তড়িৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন কে?

জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল।

Leave a Comment