অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সংঘটিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আন্দোলনের বিস্তার, স্বরাজের অর্থ, সাম্প্রদায়িক ঐক্য, কৃষক, শ্রমিকদের যোগদান, বারদৌলী সত্যাগ্রহের রূপ, শ্রমিক ধর্মঘট, নারী সমাজের যোগদান ও বিভিন্ন গঠন মূলক কাজ সম্পর্কে জানবো।

অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

ঐতিহাসিক ঘটনাঅসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
সূচনাকাল১৯২০ খ্রিস্টাব্দ
লক্ষ্যস্বরাজ অর্জন
পন্থাঅহিংস অসহযোগ
নেতামহাত্মা গান্ধী
অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা:- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এই বছরে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হন এবং তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন -এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

অসহযোগ আন্দোলনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

(১) সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আন্দোলনে বিস্তার

এই আন্দোলনের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের গণ্ডী ভেঙ্গে গ্রামের কোটি কোটি নিরক্ষর মানুষের মধ্যে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়।

(২) স্বরাজের অর্থ

‘স্বরাজ’ বলতে গান্ধীজি কেবলমাত্র ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি বোঝেন নি দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং রোগের হাত থেকেও মুক্তি বুঝেছিলেন।

(৩) সাম্প্রদায়িক ঐক্য

হিন্দু-মুসলিম ঐক্য তো বটেই— জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হয়।

(৪) কৃষক, শ্রমিকদের যোগদান

কৃষক, শ্রমিক, চা-বাগানের কুলি এবং গ্রামের সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হয়। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ, প্রতাপগড় ও রায়বেরিলী জেলা, মাদ্রাজ এবং অন্ধ্রের গুন্টুর জেলা, পাঞ্জাবে অকালি শিখ ও জাঠ কৃষকরা আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়।

(৫) বারদৌলী সত্যাগ্রহের রূপ

গুজরাটের বারদৌলী তালুকে কৃষকদের খাজনা বন্ধ আন্দোলন চলতে থাকে। পরে তা বারদৌলী সত্যাগ্রহ -এর রূপ ধারণ করে।

(৬) শ্রমিক ধর্মঘট

আসামের চা-বাগানের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক ধর্মঘট করে। মেদিনীপুরে গ্রামবাসীরা চৌকিদারি ট্যাক্স না দেওয়া ও ইউনিয়ন বোর্ড বর্জনের আন্দোলন শুরু করে। এই সময় ভারত-এ মোট ৪০০টি শ্রমিক ধর্মঘট হয় এবং তাতে প্রায় ৫ লক্ষের বেশি শ্রমিক অংশগ্রহণ করে।

(৭) নারী সমাজের যোগদান

নারী সমাজ দলে দলে পর্দা ছেড়ে বেরিয়ে এসে সভা, শোভাযাত্রা ও পিকেটিং-এ যোগদান করেন। তাঁরা সানন্দে কারাবরণ করতে থাকেন। ‘তিলক স্বরাজ তহবিল তাঁদের দানের অলংকারে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বাসন্তী দেবী, সরোজিনী নাইডু, জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়, ঊর্মিলা দেবী, হেমপ্রভা মজুমদার প্রমুখ বঙ্গনারী এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এইভাবে অসহযোগ আন্দোলন প্রকৃত গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়।

(৮) বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ

চরকা’ ও ‘খাদি’-র প্রসার এবং মদ্যপান নিবারণ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, জাতীয় শিক্ষা ও সালিশি সংগঠন স্থাপন প্রভৃতি গঠনমূলক কাজ এই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।

(৯) স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠন

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠিত হয় এবং এই স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামে-গঞ্জে অসহযোগের বার্তা ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন।

উপসংহার:- ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন যে, “সারা দেশ জুড়ে এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। “কিন্তু অভূতপূর্ব উদ্দীপনা সত্ত্বেও অসহযোগ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

(FAQ) অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কে, কখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন?

মহাত্মা গান্ধী ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে।

২. অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানকারী দুজন নারীর নাম লেখ।

বাসন্তী দেবী, সরোজিনী নাইডু।

৩. অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতে কতগুলি ধর্মঘট পালিত হয়?

৪০০টি।

৪. অসহযোগ আন্দোলনের দুটি গঠনমূলক কাজের উদাহরণ দাও।

চরকা ও খাদির প্রসার।

Leave a Comment