বিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা

বিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা প্রসঙ্গে অত্যাচারি পুলিশ নৃপেন্দ্রর হত্যার সিদ্ধান্ত, নৃপেন্দ্রর গুপ্তহত্যা, ধৃত ছাত্র, গুপ্তহত্যা কাণ্ডে নির্দোষ ছাত্র নির্মলকান্ত, গুপ্তহত্যায় নিহত সত্যেন সেন, গুপ্তহত্যায় নিহত রামদাস ও বসন্ত চাটার্জির মৃত্যুর নোটিশ সম্পর্কে জানবো।

বিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা

ঐতিহাসিক ঘটনাবিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা
নৃপেন হত্যাশোভাবাজার মোড়
সত্যেন হত্যাচট্টগ্ৰাম
রামদাস হত্যাঢাকা
মৃত্যুর নোটিশবসন্ত চাটার্জি
বিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা

ভূমিকা :- বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারত -এ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। এই সময় বিপ্লবীরা গুপ্তহত্যার মাধ্যমে অত্যাচারি ও বিশ্বাসঘাতকদের নিশ্চিহ্ন করতে থাকে।

অত্যাচারি পুলিশ নৃপেন্দ্রর হত্যার সিদ্ধান্ত

কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের কুখ্যাত ইনস্পেক্টর নৃপেন্দ্রনাথ ঘোষ কলকাতার বিপ্লবীদের সম্পর্কে তথ্যাদি অনুসন্ধান করে বের করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেন। এর জন্য বিপ্লবীরা তাঁকে হত্যা করবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

অত্যাচারি পুলিশ নৃপেন্দ্রর গুপ্তহত্যা

একদিন সন্ধ্যাবেলায় নৃপেন ঘোষ চিৎপুর শোভাবাজার মোড়ে ট্রাম থেকে নামা মাত্র কয়েকজন যুবক একত্রে তাকে গুলি করেন। নৃপেন্দ্রের প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়া পড়ে। তার দেহরক্ষী পুলিশটি বিপ্লবীদের পশ্চাদ্ধাবন করলে বিপ্লবীদের গুলির আঘাতে নিহত হয়, বিপ্লবীরা অসংখ্য মানুষের ভিড়ের মধ্য দিয়া পালিয়ে যায়।

গুপ্তহত্যা কাণ্ডে ধৃত ছাত্র

ইতিমধ্যে কয়েকজন পুলিশ গোলমাল শুনে দৌড়ে আসে এবং পাড়ার কয়েক জন গুণ্ডার সাহায্যে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। এই যুবকটি নির্মলকান্ত রায় নামে কলেজের এক ছাত্র।

গুপ্তহত্যা কাণ্ডে নির্দোষ ছাত্র নির্মলকান্ত

নির্মলকে নিয়ে হাইকোর্টে জুরির বিচার আরম্ভ হয়। নির্মলের পক্ষ সমর্থন করেন সেই সময়ের বিখ্যাত ব্যারিস্টার নর্টন সাহেব। জুরিরা নির্মলকে নির্দোষ বলে রায় দেন, কিন্তু জজসাহেব পুনর্বিচারের আদেশ দেন। এবারের বিচারেও জুরিরা নির্দোষ বলে রায় দিলে নির্মল মুক্তিলাভ করেন।

গুপ্তহত্যায় নিহত সত্যেন সেন

চট্টগ্রামের সত্যেন সেন নামক এক ব্যক্তি পুলিশের বেতনভোগী গুপ্তচর হিসাবে বিপ্লবীদের পিছনে ছায়ার মত ঘুরত। তার জ্বালায় বিপ্লবীদের কাজে বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ১৯শে জুন চট্টগ্রাম শহরের রাজপথে বিপ্লবীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেন।

গুপ্তহত্যায় নিহত রামদাস

  • (১) রামদাস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে ছিল গুপ্তসমিতির সভ্য, পরে সে পুলিশের সাথে যোগ দিয়ে বিপ্লবীদের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করে। এই ব্যক্তি কুখ্যাত ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট বসন্ত চাটার্জির সাথে ঘোরাফেরা করত।
  • (২) ১৯শে জুলাই তারিখে রামদাস ও বসন্ত চাটার্জি একত্রে ঢাকার বাকল্যাণ্ড ব্রিজের উপর দিয়ে যাবার সময় লুক্কায়িত বিপ্লবীদের রিভলভার গর্জে ওঠে। রামদাস ধরাশায়ী হয়। কিন্তু বসন্ত চাটার্জি জলে ঝাঁপিয়ে কোন রকমে সে যাত্রায় বেঁচে যায়।

বসন্ত চাটার্জির মৃত্যুর নোটিশ

বেঁচে গেলেও রামদাসের হত্যাই কুখ্যাত ডেপুটি সুপারিন্টেণ্ডেন্ট বসন্ত চাটার্জির মৃত্যুর নোটিশ হয়ে থাকে। এই নোটিশ পুনরায় জারি করাও হয়ছ যায়।

গুপ্তহত্যা থেকে বসন্ত চাটার্জির রক্ষা

২৫শে নভেম্বর সন্ধ্যাকালে বসন্ত চাটার্জি কলকাতার এক বাড়িতে বসে যখন বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনের পরামর্শ করছিলেন, তখনই সেই ঘরে বোমা নিক্ষিপ্ত হয়, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি বাইরে গিয়াছিলেন বলে সেবারেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

উপসংহার :- এইভাবে বিপ্লবীরা কৌশলে অত্যাচারি পুলিশ, বিশ্বাসঘাতকদের গোপনে হত্যা করতে থাকেন।

(FAQ) বিপ্লবীদের দ্বারা গুপ্তহত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিপ্লবীদের হাতে নিহত নৃপেন্দ্রনাথ ঘোষ কে ছিলেন?

কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের কুখ্যাত ইনস্পেক্টর।

২. নৃপেন হত্যাকাণ্ডে কে নির্দোষ প্রমাণিত হয়?

কলেজ ছাত্র নির্মলকান্ত।

৩. ঢাকার বাকল্যাণ্ড ব্রিজে কাকে হত্যা করা হয়?

রামদাস।

৪. কার মৃত্যুর নোটিশ হয়ে যায়?

ডেপুটি সুপারিন্টেণ্ডেন্ট বসন্ত চাটার্জির।

Leave a Comment