স্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র

বিখ্যাত ইংরেজ কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক স্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে স্যামুয়েল জনসনের পরিচিতি, স্যামুয়েল জনসনের খ্যাতি, স্যামুয়েল জনসনের প্রেম, স্যামুয়েল জনসনের প্রেমিকা ও স্যামুয়েল জনসনের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

কবি স্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রস্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র
দেশইংল্যান্ড
পরিচিতিইংরেজ কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক
প্রেমিকাঅলিভিয়া লয়েড
স্ত্রীমিস এলিজাবেথ পোর্টার
অন্তরঙ্গ বান্ধবীমিসেস থ্রেল
স্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র

স্যামুয়েল জনসন (Samuel Johnson) – তার ধারণা ছিল যে তার মত খাঁটি ইংরাজ বুঝি আর নেই – কথায় ও কাজে ফালে এত নিকট সম্পর্ক বুঝি আর কারও নেই। তাঁর মত সৎ ও সুবিবেচক আর কেউ নয়। নারী সম্বন্ধে তাঁর ধারণা খুব উচ্চ। নারীর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় তিনি বাল্যকাল থেকেই পঞ্চমুখ। তাঁর চরিত্রের এ দুর্বলতা তিনি স্বীকার না করলেও লোকে তা অনায়াসেই বুঝতে পারত। পুরুষের চেয়ে নারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে তিনি সর্বদাই অগ্রণী। তিনি যখন স্কুলে পড়তেন সেই সময়ই অলিভিয়া লয়েড নামে এক বিদেশিনীর প্রেমে পড়েছিলেন – শুনা যায় তাকে তিনি কবিতায় পত্র লিখতেন; সে সব পত্রের কোনো সন্ধান বর্তমানে পাওয়া যায় নি।

তার স্ত্রী মিস এলিজাবেথ পোর্টার ছিলেন তার চেয়ে বয়সে অনেক বড – প্রায় দ্বিগুণ, স্থুলাঙ্গিনী কিন্তু জনসন ঠিক তার বিপরীত। লোকে এই নিয়ে ব্যঙ্গ করলে তিনি বলতেন, এ বিবাহ প্রেমজ – আমরা উভয়ে উভয়কে ভালবেসেই বিয়ে করেছি।

মিসেস থ্রেল (Mrs. Thrale) ছিলেন জনসনের অন্তরঙ্গ বান্ধবী। তাঁকে এবং পরিবারকে কেন্দ্র করেই জনসন জীবনে সুখী হয়েছিলেন। যখন তাঁদের উভয়ের পরিচয় হয় তখন Thrale এর বয়স ২৪ কিংবা ২৫ – দেখতে বেশ সুন্দরী, মার্জিত রুচি, চতুরা, বুদ্ধিমতী, পুলকচঞ্চলা। মনের সমস্ত গোপন কথাই তাঁকে তিনি বলতেন আর মিসেস থ্রেলও বেশ মনোযোগ দিয়ে সে সব শুনতেন। থ্রেলকে অনেক চিঠিই লিখেছিলেন। আমরা তার দু একখানি প্রকাশ করলাম :

সুপ্রিয়াসু,

ভদ্রে, তুমি সৰ্ব্বদাই বল লেখার কথা (চিঠি); মনে হয় এই কাজটা বোধহয় তোমারই নিজস্ব, আর কারও দ্বারা সম্ভব নয়। আমাদের এই সব চিঠি পত্র যদি কোনো দিন বের হয় তবে ভবিষ্যতে যারা এসব পড়বেন তাঁরা নিশ্চয় বলতে বাধ্য হবেন যে আমিও একজন ভাল লেখক।

বলবার যখন কিছুই নেই তখন চুপ করে বসে থাকা কিম্বা কি বলছি সে সম্বন্ধে নিজেরই কোনো জ্ঞান না থাকা, অথবা বলার পর যা বলেছি তার কিছুই মনে নেই – এই যে ভাব – এই যে ক্ষমতার প্রকাশ এত সহজ নয়! অবশ্য আমার যে এ ক্ষমতা আছে তা নিয়ে গর্ব করে আমি নিজেকে কলুষিত করতে চাই না, কিন্তু আমার বিশ্বাস এ ক্ষমতা প্রত্যেকের নেই।

বন্ধুবান্ধব কি প্রিয়জনকে চিঠি লিখতে গিয়ে কেউ স্নেহের আতিশয্য দেখান – কেউ বা নিজেকে বিজ্ঞ প্রতিপন্ন করতে জ্ঞানের কথা লেখেন – কেউ বা মিষ্টি মধুর আলাপ ও আনন্দের কথা লেখেন – কেউবা গোপন কথা – কেউ করেন নিছক সংবাদের আদান প্রদান – কারো বা থাকে প্রেমের অভিব্যক্তি; কিন্তু এসব না করে নানা রকম আতিশয্য অভিব্যক্তি ও ব্যঞ্জনা না করে সহজ সরল যে লেখা – সে-ই হল প্রকৃত আর্ট-শিল্প – তাতে ক্ষমতার দরকার।

মানুষের চিঠিই ত তার অন্তরের প্রকাশ – উন্মুক্ত হৃদয়ের পরিচয়। মনের যা প্রকৃত রূপ সে ও তার চিঠির দর্পণে প্রতিফলিত হয় না। মনে যা হয় তারই অনাড়ম্বর ও স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ এই পত্র – এতে কিছু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয় না, কিছু বাধা থাকে না। মনের দুয়ার আপনা-আপনিই খোলা হয়ে যায় – উদ্দেশ্য বুঝতে পারা যায়।

এই যে অজানাকে জানা, এই যে মহাসত্যের প্রকৃত রূপ তুমি কি প্রত্যক্ষ করেছ? আমার অন্তর কি তোমার কাছে উন্মুক্ত হয় নি? তুমি কি আমার পরিচয় পাওনি? প্রিয়জনকে চিঠি লেখার বা প্রিয়জনের চিঠি পাবার এই ত আনন্দ! এতে সন্দেহ বা অবিশ্বাসের স্থান নেই; মনের যা ভাব তাই ভাষায় প্রকাশ। এই রকম চিঠিতেই মনের মিল, আত্মায় আত্মায় একত্ব বোধ। উভয়ের মনের গতি এতে সহজেই হয় একমুখী – স্বতঃস্ফূর্ত্ত।

আমি তোমার কাছে কিছুই গোপন করি নি – আর তোমার কাছে কেন সব খুলে বললাম তার জন্য আমার মনে কোনো সঙ্কোচ, দ্বিধা বা আফশোষও নেই। আচ্ছা –

তোমারই জনসন

এই ভাবে উভয়ের মধ্যে পত্রের আদান প্রদান ও বন্ধুত্ব অবাধে চলেছিল অনেকদিন, তারপর হঠাৎ একদিন মিষ্টার থ্রেল (Mr Thrale – মিসেস থ্রেলের স্বামী) ইহলোক ত্যাগ করলেন। মিসেস থ্রেল মুষড়ে পড়লেন। এই সময়ের মধ্যে স্যমুয়েল জনসনের সঙ্গে কোনো পত্র বিনিময়ের প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মাঝামাঝি মিসেস থ্রেল (Mrs. Thrale) লণ্ডনস্থ জনসনকে লিখলেন অনাড়ম্বর ছোট একখানি পত্র :

ভদ্র,

সুপ্রভাত, বহুদিন সংবাদ পাই নি, আশা করি স্বাস্থ্য আপনার ভালই। অতীত বিস্মৃত হয়ে পুনরায় বিখ্যাত গায়ক মিঃ গেব্রিয়েল পায়োজীকে বিবাহ করব মনস্থ করেছি, আপনার মতামত জানাবেন। অধিক লেখা বাহুল্য –

চিঠিখানা স্য়ামুয়েল জনসদের মনে হানল প্রচন্ড আঘাত। সে সরল অনাবিল বন্ধুত্বে এল আবিলতা – তবু জনসন সরল ও খেলাখুলি ভাবেই তাকে উত্তর দিলেন।

প্রিয় বান্ধবী,

তুমি যা মনস্থ করেছ তাতে আমার দুঃখ হয়, কিন্তু আমি বাধা দোব না, কারণ তাতে আমার কোনো ক্ষতি হয় নি। তোমার জন্য অন্তর কেঁদে ওঠে, ব্যথায় দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে – হয়ত তোমার কাছে এ নিঃশ্বাসের কোনো মূল্য নেই, কিন্তু এ আমার অন্তরের। ভগবান করুন তুমি সর্ব্বপ্রকারে সুখী হও! নশ্বর জগতের সমস্ত সম্পদ তোমার করায়ত্ব হোক।

আমার হতভাগ্য জীবনে গত বিশ বছর তুমিই ছিলে আমার একমাত্র সান্ত্বনা – যে প্রীতি ভালবাসা পেয়েছি তোমার কাছে তার প্রতিদান স্বরূপ তোমার বর্তমান জীবনের সুখ-সম্পদ বৃদ্ধির অনুকূলে আমার যদি কিছু কর্তব্য থাকে তা পালন করতে আমি সর্বদাই প্রস্তুত। আমার দ্বারা যদি তোমার কিছু উপকার হয় তবে তা হাসি মুখেই করব। সত্য বলছি এ শুধু আমার মুখের কথা নয় – তুমি তো জান আমাকে – আমার যে কথা সেই কাজ!

Mr. Piozzi-কে (মিঃ পায়োজিকে) বল যাতে তিনি ইংল্যাণ্ডে বসবাস করেন। ইতালির চেয়ে তুমি এখানে বেশ সুখে ও মর্যাদার সঙ্গেই বাস করতে পারবে; তাতে তোমার আভিজাত্য বাড়বে – তোমার সুখ-সৌভাগ্যকে আরও নিবিড় ভাবে উপলব্ধি করবে। সবিস্তারে বলবার আর কি-ই বা আছে! ইতালি সম্বন্ধে কতকগুলো ভুল ধারণা তোমার মনে বদ্ধমূল হয়ে আছে, নইলে সত্যই যা কিছু আছে তা এই ইংল্যাণ্ডে, আর আমার তাই অভিমত। আমার পরামর্শ দেওয়া হয়ত বৃথা – কিন্তু আমি আমার অন্তরের কথাই তোমায় বলছি।

তোমার জন্য সত্যই বড় দূঃখ হয় – আর বেশী কিছু বলতে পারছি না – চোখে জল আসছে। আমি ডার্বিসায়ারে (Derbyshire) চলে যাচ্ছি। তোমার শুভেচ্ছাই আমার একমাত্র সম্বল – কারণ আজও তোমায় আমি ভালবাসি!

জনসন (স্যামুয়েল)

(FAQ) স্যামুয়েল জনসনের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. স্যামুয়েল জনসন কে ছিলেন?

বিখ্যাত ইংরেজ কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক।

২. স্যামুয়েল জনসনের স্ত্রীর নাম কী?

মিস এলিজাবেথ পোর্টার।

৩. স্যামুয়েল জনসনের অন্তরঙ্গ বান্ধবীর নাম কী?

মিসেস থ্রেল।

৪. স্যামুয়েল জনসনের প্রেমিকার নাম কী?

অলিভিয়া লয়েড।

Leave a Comment