জার্মানীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হেনরী হাইনের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে হেনরী হাইনের পরিচিতি, হেনরী হাইনের দেশ, হেনরী হাইনের প্রেম, হেনরী হাইনের প্রেমিকা ও হেনরী হাইনের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।
কবি হেনরী হাইনের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | হেনরী হাইনের প্রেমপত্র |
পরিচিতি | জার্মানির কবি |
পক্ষপাত | ফ্রান্স |
স্ত্রী | ইউজিনি মিরাত |
প্রিয়তমা | নোনোত |
জার্মানীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন হাইনে; তাঁর গীতি-কবিতার সমতুল কবিতা একমাত্র গ্যয়টে ছাড়া আর কেউ রচনা করতে পারে নি। কিন্তু, ফ্রান্সের প্রতি তাঁর বিশেষ পক্ষপাত থাকায় স্বদেশ জার্মানীতে তিনি কখনও জনপ্রিয় হতে পারেন নি। তাঁর অধিকাংশ প্রেমের কবিতার উৎস ছিলেন তাঁর খুড়তুতো বোন আমেলি হাইনে ও থেরেসা হাইনে কিন্তু ওঁদের প্রেম সার্থক হয়ে উঠে নি। অবশেষ ১৮৪১ সালে হাইনে তাঁর বান্ধবী ইউজিনি মিরাতকে বিবাহ করেন – জাতিতে ফরাসী, কিন্তু বৈদগ্ধের ছাপ তার বিশেষ ছিল না। হাইনের আর্থিক দুরবস্থায় দিন কাটাতে হয় সর্বক্ষণ; তবে জীবনের শেষ ক’টি মাস ক্যামিলি সেলডেন নামে এক মহীয়সী মহিলার সংস্পর্শে মধুর হয়ে উঠে। এঁকে তিনি বলেছেন তাঁর “beautiful angel of death.”
হাইনে আদর করে তাঁর স্ত্রীকে ডাকতেন “নোনোত” (Nonotte) বলে। তাকে হামবুর্গ থেকে তিনি কয়েকটি চিঠি লেখেন। তারই একটি এখানে উল্লেখ করা হল।
হামবুর্গ, ৫ ই নভেম্বর, ১৮৪৩
প্রিয়তমা নোনোত,
আজ অবধি তোমার কোনো সংবাদ পেলাম না। সেজন্য আমার মন খুব অস্থির হতে আরম্ভ করছে। দোহাই তোমার, পত্রপাঠ হামবুর্গে হেরেন হফম্যান ও ক্যাম্প এর ঠিকানায় চিঠি দাও, এবং আমার অস্থির হৃদয়কে শান্ত করো। সম্ভবত আমি আরও দু’সপ্তাহ এখানে থাকব। আর স্থানত্যাগ করার আগে তোমার অতিরিক্ত বিলম্বে আসা চিঠিগুলো যাতে আবার প্যারীতে ফেরৎ পাঠান হয় তার ব্যবস্থা করে যাব।
এখানে, সকলের আদরে আমার প্রায় বকে যাওয়ার যোগাড়। আামাকে পেয়ে মা ভারি খুশী হয়েছেন, বোনেরা তো আনন্দে একরকম আত্মহারা, আর আমার কাকাবাবু তো আমার মধ্যে সমস্ত সম্ভাব্য ও অসম্ভাব্য গুণ আবিষ্কার করে বসে আছেন। আর আমিও সকলের সঙ্গে চমৎকার মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু কী দুরূহ কাজ বলো তো। যারা পৃথিবীর সর্বপেক্ষা অনাকর্ষণীয় প্রাণী তাদের নিয়ে মন রসিয়ে তোলা কি দুঃসাধ্য! এখানকার অতিরিক্ত আমুদেপণার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ প্যারীতে ফিরে গিয়ে আমাকে অনেকদিন গুমড়ো-মুখে বসে থাকতে হবে।
নিরন্তর তোমার কথা ভাবি, আর কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারি না। আর অজেবাজে ও বিবশ চিন্তার রাশি রাত্রি দিন আমকে যন্ত্রণায় দগ্ধ করছে। তুমি আমার জীবনের একমাত্র আনন্দ – আমাকে তুমি অসুখী করো না!
তোমাকে আমার সঙ্গে হামবুর্গ নিয়ে না আসার দরুণ আমার আত্মীয় স্বজনেরা সকলেই আমাকে ভীষণ গালমন্দ করছেন। আমার কিন্তু মনে হয় তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবার আগে পরিস্তিতিটা একটু যাচাই করে নেওয়াই ভাল। সম্ভবত আগামী বসন্ত আর গ্রীষ্ম ঋতু গুলো আমরা এখানে কাটাব। আমার আশা, দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমির বদলে এখানে খুব আনন্দেই কাটবে। তোমার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমি যথাসাধ্য সব করব। এবার বিদায়, দেবী আমার, প্রিয়তমা আমার, আমার ছোট্ট খুকী, আমার আদরের বউ!
মাদাম দার্তেকে আমার অজস্র প্রীতি সোহাগ জানাতে ভুলো না। আশা করি, সুবান্ধবী অরেশিয়ার সঙ্গেও তোমার প্রীতির সম্পর্ক অটুট। আমার বিশেষ অনুরোধ আমার সঙ্গে যে সব লোকের অসদ্ভাব তুমি তাদের কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করবে না; একটু বাদবিসংবাদ হলেই যে কোনো দিন তুমি ওদের দ্বারা প্রতারিত হবে। আগামী কাল বা পরশু আমি সমস্ত কাগজপত্র তোমার নিকট পাঠাচ্ছি যাতে তুমি সহজেই আমার পেন্সন আদায় করতে পার।
হায় ঈশ্বর! হায় ঈশ্বর। গত চৌদ্দ দিন ধরে আমি তোমার কলকাকলী শুনতে পাইনি। তোমার কাছ থেকে এত দূরে আমি রয়েছি, এ যেন সত্য সত্যই এক নির্বাসন! তোমার ডান গালের ছোট্ট টোলটিতে আমার চুমো রাখলাম।
হেনরী হাইনে
(FAQ) হেনরী হাইনের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জার্মানির একজন শ্রেষ্ঠ কবি হলেন হেনরী হাইনে।
ইউজিনি মিরাত
নোনোত বলে।