বামাবোধিনী পত্রিকা -র সম্পাদক, প্রকাশকাল, স্থায়ীত্ব, প্রধান কার্যালয়, পত্রিকার ধরণ, মূল্য বা দাম, নামের অর্থ, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন, বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন, বামাবোধিনী পত্রিকার উদ্দেশ্য কি ছিল, বামাবোধিনী পত্রিকার গুরুত্ব কি ছিল?
মাসিক বামাবোধিনী পত্রিকা
ধরণ | মাসিক পত্রিকা |
প্রকাশকাল | ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ |
প্রথম সম্পাদক | উমেশচন্দ্র দত্ত |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশনা স্থান | শিমুলিয়া, কলকাতা |
ভূমিকা :- উনিশ শতকে প্রকাশিত নারী কেন্দ্রীক পত্রিকা গুলির মধ্যে বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্রিকা।
বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
- (১) বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত। তার হাত ধরেই প্রথম এই পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। তিনি প্রায় ৪৪ বছর পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
- (২) উমেশচন্দ্রের পরবর্তী কালে বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সুকুমার দত্ত, তারাকুমার কবিরত্ন, সূর্যকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তি।
- (৩) বামাবোধিনী পত্রিকার সর্বশেষ সম্পাদক ছিলেন আনন্দকুমার দত্ত৷
বামাবোধিনী পত্রিকার প্রকাশকাল
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে ব্রাহ্ম সমাজ -এর বামাবোধিনী সভার মুখপত্র হিসাবে “বামাবোধিনী পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়।
বামাবোধিনী পত্রিকার অস্তিত্ব
১৮৬৩ থেকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা প্রায় ৬০ বছর এই পত্রিকা চলেছিল। এত দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা থেকেই বোঝা যায়, সমকালীন সময়ে পত্রিকাটি কতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
বামাবোধিনী পত্রিকার প্রধান কার্যালয়
বামাবোধিনী পত্রিকার প্রধান কার্যালয় ছিল ১৬ নং রঘুনাথ স্ট্রিট, শিমুলিয়া, কলকাতা।
বামাবোধিনী পত্রিকার ধরণ
বামাবোধিনী ছিল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি মাসিক শিক্ষা মূলক পত্রিকা।
বামাবোধিনী পত্রিকা নামের অর্থ
“বামা” শব্দটির অর্থ হলো নারী এবং “বোধিনী” শব্দটির অর্থ হল বন্দনা, প্রশংসা বা প্রশস্তি। অর্থাৎ পত্রিকার নামকরন থেকেই বোঝা যায় যে, এটি ছিল একটি নারী কেন্দ্রীক বা নারী বিষয়ক পত্রিকা।
বামাবোধিনী পত্রিকার মূল্য বা দাম
প্রথম দিকে বামাবোধিনী পত্রিকার মূল্য ছিল এক আনা। পরবর্তীতে এর দাম কিছুটা বাড়িয়ে করা হয়েছিল এক আনা দু পয়সা এবং দু আনা ও চার আনা।
বামাবোধিনী পত্রিকার আলোচ্য বিষয়বস্তু
নারীদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ছিল বলে এই পত্রিকায় নারীকেন্দ্রীক নানা বিষয় আলোচনা করা হতো।
- (১) ধর্ম, নীতি শাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ঘরোয়া চিকিৎসা ও ঔষুধ পত্র, শিশু পরিচর্যা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হত।
- (২) এছাড়া, মেয়েদের অর্থনৈতিক দিকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের হাতের কাজ, কারু ও চারু শিল্পের শিক্ষাও এই পত্রিকার মাধ্যমে দেওয়া হতো।
- (৩) মেয়েদের সাহিত্য ও কবিতা রচনায় উৎসাহিত করার জন্য তাদের সৃষ্টিশীল বিভিন্ন স্মারক গুলির বিবরণ এই পত্রিকায় তুলে ধরা হত। এমনকি নারীদের উৎসাহিত করে তোলার জন্য বিশেষ খ্যাতি সম্পন্ন নারীদের কৃতিত্বের দিক গুলিও এই পত্রিকায় আলোচিত হত।
বামাবোধিনী পত্রিকার উদ্দেশ্য
বামাবোধিনী পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য গুলি হল –
- (১) নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এবং নারীদের শিক্ষিত করে তোলা।
- (২) বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার সম্পর্কে নারীদের সচেতন করে তোলা।
- (৩) নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের ক্ষেত্রে যোগ্য করে তোলা।
- (৪) নারীদের যেকোনো গৌরবোজ্বল কাজের বিবরণ প্রকাশ করে তাদের উৎসাহিত করে তোলা।
- (৫) নারী জাতির সর্বাঙ্গিন উন্নতি সাধন করা।
বামাবোধিনী পত্রিকার বৈশিষ্ট্য
এই পত্রিকার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন –
- (১) ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল একটি নারী কেন্দ্রীক পত্রিকা।
- (২) উনিশ শতকের নারী কেন্দ্রীক পত্রিকা গুলির মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল বামাবোধিনী পত্রিকা।
- (৩) প্রথম দিকে যাবতীয় লেখা গুলি পুরুষরা লিখলেও শেষের দিকে নারীরা এই পত্রিকায় লিখতে এগিয়ে এসেছিলেন।
- (৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পত্রিকায় লেখকদের নাম প্রকাশ করা হত না। অনেকে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
- (৫) বামাবোধিনী পত্রিকার অধিকাংশ লেখিকাই অবশ্য ছিলেন অখ্যাত নামা গৃহবধূ।
- (৬) লাবন্যপ্রভা বসু, স্বর্নপ্রভা বসু (জগদীশ চন্দ্র বসুর বোন), শৈল্যবায়া জায়া প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য নারী লেখিকা।
- (৭) নারী মুক্তি, নারী প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বামাবোধিনী পত্রিকা চরমপন্থার পরিবর্তে মধ্যপন্থার নীতি নিয়েছিল।
- (৮) এই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিলো নারীদের সুগৃহিনী, আদর্শ পত্নী ও সুমাতা হতে উৎসাহিত করে তোলা।
বামাবোধিনী পত্রিকার গুরুত্ব
ভারতে নারী মুক্তি ও নারী জাগরনের ক্ষেত্রে বামাবোধিনী পত্রিকা এক বিরাট ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। এর গুরুত্বের প্রধান দিক গুলি হল –
(১) নারী প্রগতির প্রেক্ষাপট রচনায় বামাবোধিনী পত্রিকা
বিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা, সাহিত্য ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে যে কয়েকজন বিশেষ কৃতিত্ব সম্পন্না নারীর উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করি, তার প্রেক্ষাপট রচনায় বামাবোধিনী পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
(২) বামাবোধিনী পত্রিকার মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার সুযোগ লাভ
উনিশ শতকে সামাজিক রক্ষনশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারনে নারী শিক্ষা ছিল খুবই সীমাবদ্ধ। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এই পত্রিকার মাধ্যমে নারী শিক্ষাকে গৃহস্থের অভ্যন্তরে পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে আপামর নারী সমাজ শিক্ষার সুযোগ লাভ করে।
(৩) বামাবোধিনী পত্রিকায় সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার আয়োজন
ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা শিক্ষা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, গৃহ পরিচর্যা, শিশু প্রতিপালন, বিজ্ঞান শিক্ষা, ইত্যাদি সর্বাঙ্গিন শিক্ষার মধ্য দিয়ে নারী সমাজকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য এক ব্যাপক আয়োজন এই পত্রিকায় করা হয়।
(৪) সামাজিক সমস্যা পর্যালোচনায় বামাবোধিনী পত্রিকা
নারী শিক্ষার পাশাপাশি সমাজে নারীদের বাল্য বিবাহ ও তার কুফল, অসম বিবাহ ইত্যাদি নানা বিষয়েও এই পত্রিকা নারীদের সচেতন করে তোলার কাজে সচেষ্ট ছিল।
উপসংহার :- উনিশ শতকে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও রক্ষনশীলতাকে অতিক্রম করে বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষার প্রসারে নারী সমাজের কাছে গৃহশিক্ষকের ভূমিকা পালন করে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বামাবোধিনী পত্রিকা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বামাবোধিনী পত্রিকা ও হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা।
উমেশচন্দ্র দত্ত।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে।
উমেশচন্দ্র দত্ত।