আসামে রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ

আসামে রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ প্রসঙ্গে রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের দ্বারা মহাজনদের দোকান ধ্বংস, বিদ্রোহীদের বিদ্রোহাত্মক ধ্বনি, রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের থেকে পুলিশের দূরে অবস্থান, রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বাধাদানের ফলে পুলিশের পরিকল্পনা ব্যর্থ, বিদ্রোহের বিস্তার, বিদ্রোহীদের ঘোষণা, রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দুষ্ট পরিকল্পনা ও রঙ্গিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে জানবো।

আসামে রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ

ঐতিহাসিক ঘটনারঙ্গিয়ার বিদ্রোহ 
স্থানআসাম
দেশভারত
সময়কাল১৮৯৪-৯৫ খ্রি:
ধরণকৃষক বিদ্রোহ
আসামে রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ

ভূমিকা :- কামরূপ জেলার রঙ্গিয়া প্রধানত কাছারী আদিবাসীদের বাসভূমি। রঙ্গিয়ার কাছারীরাই প্রথম বিদ্রোহ আরম্ভ করে।

রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের দ্বারা মহাজনদের দোকান ধ্বংস

১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে ডিসেম্বর বিদ্রোহী কাছারীরা রঙ্গিয়ার প্রকাণ্ড বাজারটি আক্রমণ করে এবং কুখ্যাত মহাজনদের দোকান ও ব্যবসা-কেন্দ্রগুলি লুণ্ঠন করে ধ্বংস করে ফেলে।

আসামে রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বিদ্রোহাত্মক ধ্বনি

৩০শে ডিসেম্বর প্রায় তিন হাজার বিদ্রোহী বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সারারাত্রি বিদ্রোহাত্মক ধ্বনি দিতে দিতে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে। তার পর পুলিস ঘাঁটি, পোস্ট অফিস এবং কর আদায়কারী তহসিলদারদের কাছারি বাড়ী আক্রমণ ও ধ্বংস করবার জন্ম প্রস্তুত হয়।

রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের থেকে পুলিশের দূরে অবস্থান

  • (১) জেলার পুলিস সুপারিন্টেডেন্ট সশস্ত্র পুলিস ও সৈন্যদের একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে রঙ্গিয়া উপস্থিত হন। কিন্তু বিদ্রোহী জনসাধারণের বিপুল সমাবেশ ও মরিয়া মনোভাব দেখে তিনি তাদের বাধা দিতে সাহস পান নি।
  • (২) এর পর গৌহাটি থেকে বহু সশস্ত্র পুলিস ও সৈন্য নিয়ে ডেপুটি কমিশনার স্বয়ং রঙ্গিয়ায় উপস্থিত হন। কিন্তু তিনিও অবস্থার গুরুত্ব বুঝে এবং পুলিস ও সৈন্যসংখ্যা যথেষ্ট নয় মনে করে বিদ্রোহীদের বাধা দিতে সাহসী হন নি। তাঁরা তাঁদের পুলিস ও সৈনবাহিনী নিয়ে দূরে অবস্থান করতে থাকেন।

আসামে রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বাধাদানের ফলে পুলিশের পরিকল্পনা ব্যর্থ

  • (১) এই অবস্থার ডেপুটি পুলিস কমিশনার, পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট এবং স্থানীয় জোতদার ও মহাজনগণ পরামর্শ করে বিদ্রোহী কৃষকদেরকে সংযত রাখবার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন।
  • (২) এই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়া ‘জরুরী কনেস্টবল’ হতে বাধ্য করা হয়। তাদের দিয়ে কেবল শান্তিরক্ষাই নয়, কৃষকদের কাছ থেকে ভূমিকর আদায়েরও চেষ্টা চলে। কিন্তু বিদ্রোহীদের বাধাদানের ফলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

রঙ্গিয়া বিদ্রোহের বিস্তার

ইতিমধ্যে এই বিদ্রোহ রঙ্গিয়ার পার্শ্ববর্তী পতিদরং, নলবাড়ী, বরোমা ও বাজালি তহসিলে এবং উপর বড়ভাগ ও সারুক্ষেত্রী মৌজায় বিস্তার লাভ করে। এই সকল স্থানেও ‘মেল-এর সমাবেশে কর আদায়ে বাধাদানের জন্য রঙ্গিয়ার অনুরূপ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়।

আসামে রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের ঘোষণা

  • (১) এই সকল স্থানের ‘মেল’ থেকেও ঘোষণা করা হয় “কেউ বর্ধিত ভূমিকর দিও না। কোনো ব্যক্তি বর্ধিত ভূমিকর দিলে সে সমাজচ্যুত ও একঘরে হবে।”
  • (২) রঙ্গিয়ার মত এই সকল স্থানেও করের দায়ে সম্পত্তি ক্রোকে সাফল্যের সাথে বাধা দান করা হয় এবং কেউ গোপনে বর্ধিত কর দিলে তাকে সমাজচ্যুত বা তার নিকট থেকে ভূমিকরের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা বাবদ আদায় করা হয়। বিজয় চৌধুরী নামক একব্যক্তি ২০ টাকা ভূমিকার দিলে ২৫ টাকা জরিমানা দিয়ে সে অব্যাহতি লাভ করে।

রঙ্গিয়া কৃষকদের গ্রেপ্তার

পুলিস দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ১৫ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে থানায় আটক করে রেখেছিল। এই সংবাদ প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে, ১০ই জানুয়ারী রঙ্গিয়া এবং পার্শ্ববর্তী নলবাড়ী, হাজো প্রভৃতি তহসিল ও মৌজা থেকে বহু সংস্র বিদ্রোহী কৃষকের এক বিশাল জনতা রঙ্গিয়া থানার সংলগ্ন বিস্তৃত ময়দানে সমবেত হয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে।

আসামের রঙ্গিয়া বিদ্রোহ সম্পর্কে ম্যাকেবি বর্ণনা

  • (১) ম্যাকেবি নামক একজন উচ্চপদস্থ পুলিস কর্মচারীর বিবরণ হইতে জানা যায়। “বিদ্রোহী কৃষকগণ দলবদ্ধভাবে দীর্ঘ লাঠি নিয়ে ঘুরত। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই যে, সৈন ও পুলিসদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে তারা কিছুতেই ছত্রভঙ্গ হত না।
  • (২) আমি তাদেরকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে বললে তাহরা উত্তরে জানায় তারা আসবে না, তবে আমি কেবলমাত্র পুলিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট রিলিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে গিয়ে কথা বলতে পারি। তবে কোনো দেহরক্ষী নেওয়া চলবে না।
  • (৩) আমি গিয়ে তাদের কাছে ‘মেল’-এর অধিবেশন বন্ধ করবার এবং বর্ধিত হারে খাজনা দেবার নির্দেশ দিই এবং তাদেরকে অবিলম্বে ছত্রভঙ্গ হতেও বলি। তারা সকলে একসঙ্গে চিৎকার করে জানিয়ে দিল, তারা খাজনাও দেবে না, ছত্রভঙ্গও হবে না। ‘ব্যাটাকে ধর ধর’ বলে তারা চিৎকার করে উঠে।

রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দুষ্ট পরিকল্পনা

কর্তৃপক্ষ এইভাবে আপনের ভান করে চূড়ান্ত সংগ্রাম এড়িয়ে চলতে থাকে। তারা আরও সৈন্য ও পুলিশের অপেক্ষায় ছিল। আরও সৈন্য ও সশস্ত্র পুলিস এসে পড়লেই বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ শুরু হবে। বিদ্রোহীরা কর্তৃপক্ষের এই দুষ্ট পরিকল্পনা বুঝতে না পেরে থানা আক্রমণের চেষ্টা না করে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে থাকে।

আসামের রঙ্গিয়ার সুরক্ষণ

ইতিমধ্যে শিলং থেকে গুর্খা ও ‘আসাম রাইফেলস্’-এর সৈন্যদের এক বিশাল বাহিনী রঙ্গিয়ায় উপস্থিত হয়। সৈন্যবাহিনী এসেই রঙ্গিয়ার চারদিকে বড় বড় গাছের এক প্রাচীর নির্মাণ করে এবং রঙ্গিয়ার রক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করে তোলে।

রঙ্গিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান

এরপর এই বিশাল বাহিনী অভিযান শুরু করে। বিদ্রোহীরা বিভিন্ন স্থানে শত্রু সৈনদের উপর আক্রমণ করে পলায়ন করে। বিভিন্ন স্থানের সংঘর্ষে বহু কৃষক বিদ্রোহী এবং সৈন্য, পুলিশ নিহত ও আহত হয়। রঙ্গিয়া ও তাহার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে।

উপসংহার :- দীর্ঘকাল পর্যন্ত বিদ্রোহীরা কর্তৃপক্ষের কাছে মাথা নত করে নি, কিংবা কর্তৃপক্ষও বর্ধিত কর আদায় করতে সক্ষম হয় নি।

(FAQ) আসামে রঙ্গিয়ার বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রঙ্গিয়া বিদ্রোহ কখন হয়?

১৮৯৪-৯৫ সালে।

২. রঙ্গিয়া বিদ্রোহ কোথায় হয়?

আসামের কামরূপ রাজ্যের রঙ্গিয়া অঞ্চলে।

৩. রঙ্গিয়া বিদ্রোহে কার জরিমানা হয়?

বিজয় চৌধুরী।

Leave a Comment