স্যার রিচার্ড ষ্টীলের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে রিচার্ড ষ্টীলের পরিচয়, রিচার্ড ষ্টীলের খ্যাতি, রিচার্ড ষ্টীলের প্রেম, রিচার্ড ষ্টীলের প্রেমিকা ও রিচার্ড ষ্টীলের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।
স্যার রিচার্ড ষ্টীলের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | রিচার্ড ষ্টীলের প্রেমপত্র |
পরিচিতি | বিখ্যাত ‘টেটলার’ ও ‘স্পেক্টেটার’ পত্রের পরিচালক |
দেশ | আয়ারল্যান্ড |
প্রেমিকা | মেরী স্কারলক |
প্রেমপত্র রচনা | ১১ ই আগষ্ট, ১৭০৭ খ্রি |
সপ্তদশ শতকের সংবাদপত্রসেবী, বিখ্যাত ‘টেটলার’ ও ‘স্পেক্টেটার’ পত্রের পরিচালক রিচার্ড ষ্টীলের নাম ইংরাজী সাহিত্যে অমর হয়ে আছে – এ কথা সকলেই জানেন।
তিনি ছিলেন কতকটা দুসাহসিক ও অপরিণামদর্শী কিন্তু মোটের উপর সাধু স্বভাব ও সৎ অন্তঃকরণের লোক। তাঁর প্রণয়িনী মেরী স্কারলকের উদ্দেশে তিনি অমেক প্রেমপত্র লিখেছিলেন, যার ফলে যে নারী বিয়ের নামেই ক্ষেপে উঠতেন সেই স্কারলক স্বতঃপ্রবৃত হয়ে ষ্টীলকে বিবাহ করেন।
কবি কোলরিজ ষ্টীলের এই সব প্রেমপত্রের খুব সুখ্যাতি করতেন – তাঁর মতে ষ্টীলের পত্রগুলি আদর্শ প্রেমলিপি, প্রত্যেক যুবতীর ষ্টীলের মত প্রেমপত্র লেখা অভ্যাস করা উচিত।
ষ্টীল মেরী স্কারলককে প্রথম লিখেছিলেন –
১১ ই আগষ্ট, ১৭০৭
সুচরিতাসু,
যতদিন না তোমার মনের কথা জানতে পারি ততদিন আমার মনের ভাবপ্রবণতা ও উচ্ছ্বাস জানিয়ে তোমাকে বিরক্ত করব না! নারী ও পুরুষের মনের ভাব প্রকাশের কেন যে এত তারতম্য তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না।
সাধারণ প্রেমিক প্রেমিকা যেভাবে হেঁয়ালী ও অস্পষ্টতার আশ্রয় নেয় আমি কিন্তু সে ধার দিয়েই যাব না। সহজ ও সরল ভাষাতেই আমি তোমার সঙ্গে আলাপ করব। কেঁদে কেঁদে বিনিয়ে বিনিয়ে আসল কথা চেপে রেখে “ওগো তোমাকে না পেলে আমি আর বাঁচব না।” কিম্বা “তোমার জন্য মরতেও প্রস্তুত আছি” এই সব কথা না বলে সোজাসুজি এই কথাই বলব যে “তোমার সাহচর্যে আমার জীবন বেশ আনন্দে কেটে যাবে।” তুমি একদিকে যেমন সুন্দরী তেমনি রসিক, আবার অন্যদিকে তুমি যেমন বীর তোমার স্বভাবও তেমনি মধুর। এমন আমি আর কারও দেখি নি। তোমার কাছে সত্য বলছি নারীর এই সব গুণ আমি খুব পছন্দ করি। তুমি ইচ্ছা করলে তোমার এই সব সদগুণরাজি দিয়ে আমায় চিরসুখী করতে পার, আবার বিপরীত আচরণ করে আমাকে দুখও দিতে পার, সে তোমার মরজি।
পত্রখানি, এখানেই শেষ হয়েছে। এর পর স্কারলকের সঙ্গে ষ্টীলের যখন দেখা হল তখন থেকে ষ্টীল স্কারলকের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত হয়ে পড়লেন। ঘন ঘন পত্রের আদান-প্রদান চলতে লাগল। অন্তরের গভীর প্রেম প্রেয়সীকে নিবেদন করতে ষ্টীল ব্যস্ত হয়ে পড়লেন – প্রেমের সরল ও অনাড়ম্বর অভিব্যক্তি শেষে চিরন্তন উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়ে উঠল।
ষ্টীল লিখলেন –
প্রেমময়ী,
তোমায় ডাকবার মত ভাষণ খুঁজে পাচ্ছি না। কি বলে ডাকলে আমার অন্তরের সবটুকু ভালবাসা ফুটে উঠবে। আমার অন্তরে তুমি ব্যথা দিয়ে যে আনন্দ পাও সেখানে তোমার জন্য় যে প্রেম সঞ্চিত করে রেখেছি, কি বলে তোমায় তা নিবেদন করব দেবি।
তোমায় চোখের আড়াল করে এক মুহূর্ত স্থির শান্ত হতে পারি না, কিন্তু আবার আমার কাছে থাকলে তুমি আমায় ধরা ছোঁয়া দিতে চাও না – আমায় দূরে দূরে রাখ, আমার আকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে তোল। তোমার মোহিনী শক্তিতে আমার চারিদিকে এমন এক মায়া মরীচিকার সৃষ্টি করে যে শত চেষ্টাতেও তোমার নাগাল পাই না। তুমি কত বড় আর আমি এত ছোট; বুঝেছি তোমায় পেতে হলে আমার সাধনা দরকার, তাই তোমায় পাবার সৌভাগ্য আমায় ধীরে ধীরে অর্জন করতে হবে, নয় কি?
এখনও তুমি কুমারী – তোমায় ‘মিস’ বলে ডেকে তৃপ্তি পাই না, কবে তোমায় ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকতে পারব, স্ত্রী বলে ডেকে ধন্য হব?
তোমার চিরানুগত দাসানুদাস
রিচার্ড ষ্টীল
ষ্টীল আর এক সময় লিখছেন –
তোমার চিন্তায় বিভোর হয়ে আছি। তোমার প্রেমে আত্মহারা, কোনো কাজই করতে পারি না, কিছুতেই মন বসে না। কিছুই ভাল লাগে না, বাড়িতে মন বসে না – যাইরে অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিই, কত দরকারী কাজ নিয়ে কত লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে ফিরে যায়। এর ফলে কি হবে জান, লোকে আমায় বাড়ীতে আটকে রাখবার ব্যবস্থা করবে।
লোকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলে তার এমন একটা অবান্তর উত্তর দিয়ে বসি যে লোকে হেসে উঠে। আজকের কথাই বলি – সকালে এক ভদ্রলোক কি একটা জায়গার কথা জিজ্ঞাসা করলে, তার উত্তরে হঠাৎ বলে ফেললাম ‘সে অসামান্য় সুন্দরী’। আর একজনকে অন্যমনস্ক হয়ে বললাম “ওঃ এই মঙ্গলবার হলে এক সপ্তাহ হবে তোমার চাঁদ মুখখানি দেখতে পাই নি”। আচ্ছা, তুমিই বল তো এতে মানুষ হাসবে না! পাগল ভেবে নিশ্চয় এখন তারা অমায় বেঁধে রাখবে। সত্যই প্রেমে মানুষ পাগল হয়!
তাই বলছি ওগো দয়া কর, দাও একটি চুমা দাও – আর যে ধৈর্য ধরতে পারি না প্রিয়তমে!
হাজার বিপদ চারিদিকে মোরা কেমনে পাইব ত্রাণ তোমার বিরহে কেমনে বাঁচিব কেমনে রহিবে প্রাণ?
ওগো, এ-প্রেম কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়! তোমায় যে কত ভালবাসি সামান্য পত্রে সে কি লেখা সম্ভব প্রিয়তমে?
তোমার ষ্টীল
(FAQ) রিচার্ড ষ্টীলের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বিখ্যাত ‘টেটলার’ ও ‘স্পেক্টেটার’ পত্রের পরিচালক।
আয়ারল্যান্ড
মেরী স্কারলক।