মোপাসাঁর প্রেমপত্র

উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক মোপাসাঁর প্রেমপত্র প্রসঙ্গে মোপাসাঁর পরিচয়, মোপাসাঁর উপন্যাস, মোপাসাঁর ছোটগল্প, মোপাসাঁর প্রেম, মোপাসাঁর প্রেমিকা ও মোপাসাঁর মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

গি দ্য মোপাসাঁর প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রমোপাসাঁর প্রেমপত্র
পরিচিতিঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার
দেশফ্রান্স
প্রেমিকামিস হেস্টিংস
মোপাসাঁর প্রেমপত্র

মোপাসাঁর পরিচয় অনাবশ্য়ক। উনবিংশ শতকে উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশ্বসাহিত্যে তাঁর সমকক্ষ কেহ ছিল না বলিলে অত্যুক্তি হয় না। প্রকৃত প্রেমপত্র তাঁর কিছু নাই। মিস হেস্টিংস (Miss Hastings) এই ছদ্মনামে পরিচিতা কোনো ফরাসী রমণী মোপাসাঁর প্রেমমুগ্ধ হন। প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে তিনি সময়ে সময়ে মোপাসাঁকে পত্র লিখতেন – মোপাসাঁও তাঁর উত্তর দিতেন, কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে কোনোদিন দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। রাত্রিতে চক্রবাক দম্পতির মত তাঁহারা চির পৃথক, তাঁদের প্রেম প্রকৃতই রহস্য়ময় ও অদ্ভুত – প্রেমকে তারা অন্তরে অন্তরে গ্রহণ করেন নি, প্রেম তাদের কাছে যেন বাইরে খেলার বস্তু ও সময়ক্ষেপের অভিনব পন্থা ছাড়া কিছুই নয়। একে অন্য়ের অচেনা তবু পরস্পর পরস্পরকে জানবার জন্য একান্ত উৎসুক। তথাকথিত প্রণয়াস্পদ মোপাসাঁকে মিস্ হেস্টিংস্ লিখেছিলেন – [অদ্ভূত প্রেমের অভিনব পত্র] –

মসিয়েঁ (মহাশয়)

আপনার বই পড়ে অনাবিল আনন্দ পেলাম। আপনি প্রকৃতির বাস্তবতার পূজারী; তবু মনে হয় প্রকৃতির যে কল্পলোক আছে তারও উর্দ্ধে আপনার বাস। আপনি আমাদের অন্তরে এমন ভাবের সৃষ্টি করেন যাতে মনে হয় আপনার মানসলোকের প্রত্যেকটি সৃষ্টি সজীব, তারা যেন একান্ত আমাদেরই। এই কারণেই আমরা আপনাকে ভালবাসি – নিজেরা নিজেদেরই ভালবাসি। আপনি ভাবছেন বুঝি সব ফাঁকা কথা? মোটেই নয়! আমি যা বলছি তার প্রতিটি অক্ষর সত্য।

কাব্যের ভাষায় বেশ অলঙ্কার দিয়ে যদি আমার মনের কথা প্রকাশ করতে পারতাম তাহলে আমার আরও আনন্দ হত – কারণ আপনার প্রশংসা করেই আমার তৃপ্তি, আমার পরম সন্তোষ। কিন্তু আমার সে ক্ষমতা ত নেই, সহজ সরল ভাবে বললাম – আমায় বিশ্বাস করুন!

আপনি খুব সুন্দর, তাই দুঃখ হয় যখন ভাবি যে আপনার ওই সুন্দর মুখের কথা শুনবার মত একজনের দরকার। আপনার সুন্দর চেহারার অন্তরালে যে মন আছে সেটিও বোধহয় বেশ চমৎকার। আমার ধারণা নিশ্চই ভুল নয়, কি বলেন। কিম্বা হয়ত এই দীর্ঘ এক বৎসর ধরে অপনার সঙ্গে পত্রের আদান প্রদান করে আপনার প্রতি যেন আমার ভালবাসা জন্মে গেছে আর সেই জন্যই বোধ হয় আপনার সম্বন্ধে আমার খুব উচ্চ ধারণা হয়েছে। হয়ত এতটা হওয়া উচিত হয় নি!

দিনকতক আগে হঠাৎ একদিন শুনলাম যে আপনার একজন গুণগ্রাহি (গুণমুগ্ধা?) জুটেছেন, আর আপনিও নাকি তাঁর ঠিকানা জানতে চেয়েছেন। শুনে আমার হিংসা হল – সঙ্গে সঙ্গে আপনার সাহিত্যিক প্রতিভা ও গুণের কথা আমার মনকে নতুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করল। কিন্তু হায়! আমিই বা কোথায় আর আপনিই বা কোথায়।

তবু শুনে রাখুন – আমি যে কে তা কোনোদিনই জানতে পারবেন না, আর আমিও আপনাকে পাবার জন্য মোটেই লালায়িত নই। আপনাকে শুধু একবার চোখের দেখা – তাও আমি পছন্দ করিনা! আমি শুধু জানি যে আপনি যুবক এবং এখনও অবিবাহিত – এইটুকু জানাই আমার পক্ষে যথেষ্ট; যতদিন বাঁচব এর বেশী আর জিজ্ঞাসা আমার নেই। কল্পনা করুন আপনিও – আমি যুবতী ও সুন্দরী, তাতেই আপনার কাজ হবে আমায় চিঠি লেখবার সময় উৎসাহ পাবেন। আমার যৌবন ও সৌন্দর্যের কল্পনাই আপনাকে শক্তি জোগাবে – পত্রের উত্তর দেবার আগ্রহ হবে।

মোপাসাঁ তার উত্তর দিলেন –

ভদ্রে

আপনি আমার প্রতি যে অনুকম্পা দেখিয়েছেন – যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার জন্য প্রথমেই আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করুন, কিন্তু আপনি যা আশা করেছেন আমার পত্রে বোধহয় তা পাবেন না। আপনি আমার বিশ্বাসের পাত্রী হতে চান? কিন্তু কোন অধিকারে? আমি তো আপনাকে চিনি না – মোটেই না। আপনি যখন সম্পূর্ণ অপরিচিতা – আপনার নাম, আপনার স্বভাব, প্রকৃতি যখন আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে তখন কেমন করে আপনাকে সব কথা বলব। যারা আমার বান্ধব, তাঁদের বলব – আপনাকে নয়। আপনাকে যদি বলি তবে কি আমার বোকামি হবে না।

মিলন যদি না হয় তবে এজাতীয় পত্রের কি মূল্য আছে? পুরুষ ও নারীর পরস্পরের প্রতি যে প্রেম (অবশ্য পবিত্র প্রেমের কথাই আমি বলছি) আলাপ-গুঞ্জনের মধ্যেই তো তার মাধুর্য। প্রিয়জনকে যখন কাছে না পাওয়া যায় তখনই চলে পত্রের বিনিময়। সে পত্র তো রহস্যাবৃত থাকে না, প্রিয়ের অনিন্দ্যসুন্দর মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে লেখকের মানসচক্ষুর সামনে, তাই চলে লেখার মধ্য দিয়ে মধুর আলাপন, চলে মনের ভাব বিনিময়। কিন্তু যেখানে অদেখার ব্যবধান সেখানে কি এসব সম্ভব? যার সঙ্গে চাক্ষুস পরিচয় নেই, যার শারীরিক গঠন, আকৃতি, যার নাক মুখ চোখ গায়ের বর্ণ, যার হাসি কান্না, যার কণ্ঠস্বর চিরদিন অচেনা অজানা তার সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া চলে কী ভদ্রে? আমার সম্বন্ধে আপনি যা হোক একটা কল্পনা করে নিয়েছেন, ভাল মন্দ তা আপনিই জানেন। যথার্থই আমি যে কি, আপনার কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের কতখানি সাদৃশ্য তা জানবার আগ্রহ আপনার নেই। তা যদি থাকত তাহলে আমাদের পরস্পর দেখা না হলেও আপনি অন্ততঃ আমার কোনো না কোনো আত্মীয়ের কাছ থেকে আমার সম্বন্ধে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতেন। আমার সঙ্গে আপনার পরিচয় শুধু আমার রচিত সাহিত্যের মধ্য দিয়ে সুতরাং আপনার এই কাল্পনিক প্রেমের অভিনয় নিছক সময় কাটাবার জন্য।

আমার দিক থেকেও একই কথা। আমিই বা আপনার সম্বন্ধে কি জানি। হতে পারেন আপনি তরুণী সুন্দরী – যার কোমল হাতের স্পর্শ পেলে হয়ত আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। কিম্বা আপনি সম্পূর্ণ বিপরীত, তরুণী না হয়ে একজন প্রাচীনা বৃদ্ধা। আচ্ছা, আপনি কি তন্বী? কিম্বা মাঝামাঝি দোহারা চেহারা আপনার? এ শুধু অন্ধকারে ঢিল মারা – সবই আন্দাজ বা কল্পনার ওপর নির্ভর করা।

আমি এরকম অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে একবার বড় ঠকেছিলাম – লোকের কাছে হাস্যাস্পদ হতে হয়েছিল। ব্যাপারটা খুলেই বলি।

– স্কুল বোর্ডিং-এর একটি তরুণীর উদ্দেশে চিঠি লেখালেখি চালিয়েছিলাম – আমি লিখতাম সেও তার জবাব দিত। আমার চিঠি মেয়েরা বেশ উপভোগ করত। তারপর একদিন সব বেফাঁস হয়ে গেল – জানতে পারলাম আমার মানসী প্রিয়া, যার সঙ্গে এতদিন পত্র বিনিময় হয়েছে সে মেয়েটি নিছক কল্পনা, স্কুলের কোনো প্রাচীনা শিক্ষয়িত্রী, ছদ্মনামে আমাকে এতদিন নাচিয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি নিজেই একদিন সে কথা আমায় বলে ফেললেন। বলুন দেখি কি মুস্কিলের ও হাসির ব্যাপার! সে দিন থেকে স্থির করেছি আন্দাজে আর কোনো কিছু করব না অন্তত চিঠি লেখা বিষয়ে। আপনাকে চিঠি লিখতে বসলে মনে হয় আমি যেন অন্ধকারে উচু-নীচু পথে হেঁটে চলেছি – প্রতি মুহূর্তে পড়ে যাওয়ার ভয় – কি জানি কখন কোন্ গর্তে পা দিয়ে ফেলব! তাই সাবধানে হাতের লাঠিটা মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে যাচ্ছি। সামনের মাটি পরীক্ষা করে নিয়ে একটি একটি করে পা বাড়াচ্ছি।

আপনি নিশ্চয় “এসেন্স” মাখেন! কি এসেন্স, কেমন গন্ধ? আচ্ছা, আপনি কি বাস্তববাদী না ভাববিলাসিনী? – রোমান্টিক? আপনার কানের গড়ন কি রকম? চোখ নীল না কালো? আচ্ছা, আপনি গান গাইতে পারেন? আপনি কি খেতে ভালবাসেন? আপনার মুখখানি কেমন? গান ভালবাসেন?

আপনি বিবাহিতা কি না আমি জানতে চাই না। যদি বিবাহিতা হন তবে বলুন “না”, আর যদি আপনার সত্যই বিয়ে না হয়ে থাকে তবে বলুন “হ্যা”। আপনার হাতখানি একবার দেখি, একটি চুমা।

মোপাসাঁ

(FAQ) মোপাসাঁর প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মোপাসাঁ কে ছিলেন?

একজন বিখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।

২. মোপাসাঁর প্রেমিক কে ছিলেন?

মিস হেস্টিংস।

৩. মোপাসাঁর প্রকৃত প্রেমপত্র কতগুলি?

প্রকৃত প্রেমপত্র তাঁর কিছু নাই।


Leave a Comment