ইংল্যান্ডের লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের পরিচিতি, লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের প্রেম, লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।
পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের প্রেমপত্র |
দেশ | ইংল্যান্ড |
তৎকালিন রাজা | দ্বিতীয় জেমস |
প্রেমিক | লর্ড পিটারবরো |
প্রেমিকা | মিসেস হাওয়ার্ডস |
ইংল্যাণ্ডের তৎকালিন রাজা দ্বিতীয় জেমস (James II) -এর বিরুদ্ধে উইলিয়মস অব অরেঞ্জ প্রভৃতি যারা বিদ্রোহ করেছিলেন Third Earl Peterborough তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মিসেস হাওয়ার্ডস (Mrs. Howards) ছিলেন দ্বিতীয় জর্জের (George II) গৃহকর্ত্রী। Earl of Peterborough ছিলেন তারই প্রণয়াস্পদ।
লর্ড পিটারবরো লিখছেন :
তোমার দিব্যি – সত্যি বলছি আমার সঙ্গে এমন একটি স্ত্রীলোকের পরিচয় হয়েছে যার কাছে প্রথম কথা বলতেই ভয় হয়েছিল – তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আমার প্রাণে আতঙ্ক এসেছিল। আমার মনে হয় সারা দুনিয়ার নারী জাতির কাছে আমি একটি মস্ত বেকুফ প্রতিপন্ন হয়েছি।
তাতে যে আমার কি লাভ হল তা বলতে পারি না, তবে ক্ষতি যে হয়েছে তা বেশ জানি। এক কথায় বলতে গেলে আমি হারিয়েছি মনের শান্তি-আত্মার সন্তোষ। জগতের সমস্ত সুখ ও আনন্দ আমার কাছে ম্লান হয়ে গেছে। আর বোধহয় মাত্র একজন ছাড়া আর সব মেয়েদের কাছে নিরাশার পাত্র হয়ে উঠেছি।
পুরুষ যে এত সহজে হৃদয় দান করতে পারে এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তবু যে সব মেয়ে এই রকম পুরুষদের ভালবাসে তাদের আমি প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না।
আচ্ছা, এখন দেখা যাক কি কি উপাদানে পুরুষের হৃদয় তৈরী হয়েছে। তাতে আছে কতকগুলো পরস্পর বিরোধী ভাবের সমষ্টি। তাতে আছে আত্মপ্রীতি, দম্ভ, অসামঞ্জস্য ও আর এই রকম গুটিকতক সূক্ষ্মবৃত্তি আর কি! যাদের হৃদয় এই রকম তারা আবার নারীকে কি উপহার দিবে?
সত্য এবং নিষ্ঠার মুখোস মানুষ চায় না। কিন্তু প্রেমিকের হৃদয় সত্য এবং নিষ্ঠায় এতই উজ্জল যে অনেক সময় মিথ্যা ও সত্যের প্রভেদ জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলে। কারণ সময়ে সময়ে মিথ্যার চাকচিক্য চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেয়। সুতরাং আসল হৃদয়কে সহায়তা করবার জন্য একটা নকল হৃদয় চাই, বিশেষত যারা প্রেমের বেসাতি করে তাদের তো চাই-ই। আসলের মতই এই নকল হৃদয় দগ্ধ হয়, বেদনা পায়, আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়-দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এমন কি এই নকল হৃদয়ের ব্যথা-বেদনা-কাতরতা আসলের মতই লোকের চিত্ত বিমোহিত করে। তা ছাড়া এর আর একটি গুণ এই যে, যার এ রকম নকল হৃদয় আছে তাকে প্রকৃত অধীর করে তোলে না, মোটেই ভার বোধ হয় না। আমার বোধ হয় প্রভু আমারা এই মুক্ত হৃদয়েরই পক্ষপাতী! কি বল?
মিসেস হাওয়ার্ডস উত্তর দিলেন :
তোমার চিঠি পড়ে বোধ হল তুমি যেন তোমার নিজের হৃদয়ের কথা লিখছ। কারণ এই মাত্র তুমি নারী ও পুরুষের হৃদয় নিয়ে তুলনামুলক সমালোচনা করছিলে। আহা, তুমি সারা জীবন ধরে তোমার মন দিয়ে আমার মনকে বিচার করে যাও – তোমার মনের সঙ্গে আমার মনের সমতা রক্ষা করে যাও; তাতে অন্তত কিছু হোক না হোক – নকলের মুখোস পরলেও আমি তোমার রূপ যৌবন ও রসিকতার অধিকারী হয়ে থাকতে পারব, কি বল?
তোমার পত্রের শেষাংশ যেন খাপছাড়া বলে বোধ হল। তুমি তো বল যে দান তুমি আমায় করেছ (যে উপহার দিয়েছ) তুমি তার উপযুক্ত প্রতিদান আশা কর এবং এই প্রতিদান প্রথমবারের গ্রহিতার ভদ্রতার ওপরই নির্ভর করে। তুমি আবার বাইরণের কবিতার উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছিলে –
“নয়নে নয়নে তুমি চেয়েছিলে মুখে মুখে চুম্বন হৃদয়ে হৃদয়ে চাহ প্রতিদান মন বিনিময়ে মন।”
আচ্ছা এই কি প্রেম? না দাবী – যা দিয়েছ তা কড়াক্রান্তিতে আদায় করে নেবার দুর্বার আকাঙ্খা। কিন্তু যে নিঃশেষ করে সব দিয়ে দিয়েছে তার তো দেবার মত আর কিছু নেই।
মনে কর তোমার মাত্র একটিই হৃদয় আছে, আর সে হৃদয় কাকেও দান করবার অধিকার তোমার আছে কি না! আচ্ছা বলত প্যারী নগরীতে কোনো সৌভাগ্যবতী তোমার সেই হৃদয়টি লাভ করতে পেরেছে বলে মনে করে কিনা? টুরিন শহরের আর কোনো প্রণয়িনীকে তা উৎসর্গ করেছ কি না? ভেনিস, নেপলস, সিসিলি এই সব জায়গায় ছয় সাতটি তরুণীকে বারবার দান করেছ – ঠিক কিনা? আমি তাহলে তোমায় কি মনে করব? তুমি ত যাদুকর-ম্যাজিসিয়ান! দানে মুক্তহস্ত! ম্যাজিসিয়ানের টাকার খেলা – যখন যাকে মনে করছে তার হাতে টাকা দিচ্ছে – সে ভাবছে ঠিকই পেলাম – আর তুমিও দান করে যাচ্ছ স্বেচ্ছামত, আসলে কিন্তু ফাঁকা, কিছুই নয় – তোমার সেই একটি টাকা তোমার কাছেই রইল – চমৎকার!
এই চিঠির উত্তরে পিটারবরো লিখলেন :
তুমি ত অনেক কথাই বললে। এইবার আমার যা বলবার তা বলি, আশাকরি শোনবার মত সময় তোমার আছে। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তুমি করেছ সে সম্বন্ধে আমার প্রথম কথা হচ্ছে যে তোমার ধারণা ভুল এবং তোমার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তুমি প্যারীতে ফরাসী রমণীর সঙ্গে আমার হৃদয় বিনিময় তথা প্রেমের কথা বলেছ। আচ্ছা, তোমার কি তা বিশ্বাস হয়? আমি ইংরেজ, ফরাসীরা আমাদের শত্রু, তাদের দেশের মেয়েকে আমি হৃদয় দান করব? সে কি সম্ভব? তাদের কাছে আত্মোৎসর্গ করতে হয় না – তাদের যদি কিছু দিতেই হয় তবে তা বোতল কয়েক শ্যাম্পেন, হৃদয় নয়।
তারপর “টুরিনের” কথা – সেখানে গিয়ে ত রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম, আজ একে, কাল তাকে রাজা করা, রাজ্যচ্যুত করা, এইসব করেই তো দিন কেটেছে – প্রেম করবার সময় পেলাম কই? নারীর কথা চিন্তা করার অবকাশ কোথায়? তাদের মধ্যে কেউ যে আমাকে চেনে বা আমি তাদের কাউকে চিনি – তা বলে তো মনেই হয় না। তবে হ্যাঁ, ভেনিসের কথা বলতে পার, ভেনিস অলস বিলাসব্যসনের জায়গা বটে, কিন্তু কি জানি ইংরেজের আর ভেনিসীয়দের আমোদ-প্রমোদ ঢের বেশী তফাৎ – যেমন তফাৎ প্রেম ও ঘৃণার মধ্যে।
তুমি কখনও কোথাও যাওনি বা তোমার মাত্র একজন ছাড়া আর কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী নেই; তোমার সঙ্গে তুলনা হতে পারে এমন নারী আমি আর কোথাও দেখি নি – মাত্র একজন ছাড়া – আর সে হচ্ছে ইংরেজ-বালা আমার স্ত্রী। যাক মোটমাট বলতে গেলে আমার এই কুনো হৃদয়টা কখনও গ্রামের বাইরে যায় নি। আমার আসল নকল তীব্র তরল প্রথম ও শেষ যা কিছু লালসা আকাঙ্ক্ষা প্রেম সবই এই শীতের দেশে, আর সবচেয়ে গভীর ও চিরস্থায়ী ক্ষত লাভ হয়েছে আমারই নিজের লোকের কাছ থেকে, বাড়িতে। এতেও কি প্রতিদানের কথা বলা আমার পক্ষে খুব অন্যায়? জগতের ধনদৌলতের চেয়ে দুটো মিষ্টি মধুর প্রেমের কথা বেশী প্রিয় নয় কি।
হৃদয়ের বিনিময়ে হৃদয় দাবী করাই ত স্বাভাবিক, হোক তা অযৌক্তিক – কিইবা ক্ষতি হবে তাতে! ওগো প্রিয়ে প্রিয়তমে! আমার হৃদয় আমার প্রেম প্রত্যাখ্যান করো না! তোমার হৃদয় নিয়ে তুমি যা ভাল মনে কর করতে পার – ইচ্ছা হয় রাখতে পার – আর কাউকে দিতেও পার, তবে এই অনুরোধ যদি কাউকে দিতেই হয় তবে দান করার উপযুক্ত লোকের সন্ধান যত দিন না পাও ততদিন তোমার হৃদয় তোমার কাছেই রেখো – যাকে তাকে বিলিয়ে দিও না।
(FAQ) লর্ড পিটারবরো ও মিসেস হাওয়ার্ডসের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইংল্যান্ড।
একজন ইংরেজ রাজনীতিবিদ।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় জর্জের স্ত্রী।