বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন কীটসের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে জন কীটসের পরিচিতি, জন কীটসের খ্যাতি, জন কীটসের প্রেম, জন কীটসের প্রেমিকা ও জন কীটসের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।
কবি জন কীটসের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | জন কীটসের প্রেমপত্র |
দেশ | ইংল্যান্ড |
পরিচিতি | বিখ্যাত কবি |
প্রেমিকা | ফ্যানি ব্রণ |
প্রেমপত্র রচনা | ৮ই জুলাই ১৮১৯ |
কবি জন কীটস -এর মূল কথা ছিল ‘সুন্দরই আনন্দময়’। কবি ম্যাথু আরনল্ড শেক্সপীয়র ও কীটস -এর তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন-দুই জনই সমান সমান। শেক্সপীয়র ও কীটসকে পৃথক করা যায় না। ফ্যানি ব্রণ ছিলেন কীটসের প্রিয়া, কীটসকে মনে করলেই ফ্যানিকে স্বতই মনে হয়।
৮ই জুলাই ১৮১৯, কবি কীটস ফ্যানিকে এই চিঠিখানা লিখেছিলেন। কীটসের উদগ্র কামনা এতে যেমন প্রকাশ পেয়েছে তেমনি এই চিঠি পড়বার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি যে সুন্দরের পূজারী তাও আমরা বেশ বুঝতে পারি।
প্রণাধিকে; তোমার চিঠি পেয়ে যে আনন্দ পেলাম এ আনন্দ তোমাকে পাওয়ার আনন্দের মতই অনাবিল। বিরহ যে এত মধুর তা আজ বুঝলাম। তোমার কথা না ভাবলেও তোমার সৌন্দর্যের জ্যোতি যেন আমায় উদ্ভাসিত করে আছে, মনে হচ্ছে তুমি তোমার মাধুর্য ও কোমলতা নিয়ে আমায় সর্বদা ঘিরে আছ। একটা কথা – তোমার চিন্তা, আমার বেদনাতুর দিন রাত্রির আসা যাওয়ায় মধ্যেও সুন্দরের উপাসনাকে ব্যাহত করতে পারে নি, বরং তোমার অনুপস্থিতিতে তা আরো প্রবল হয়ে উঠেছে – যে প্রেমসুধা তুমি আমায় পান করিয়েছ তার আস্বাদ এর আগে আর কখনও পাই নি। প্রেম যে এত মধুর তা আগে আমার ধারণাতেই আসত না – আমার ভয় হত পাছে প্রেমের অনলে পুড়ে ছাই হয়ে যাই। তোমার প্রেমে আগুন আছে কি না জানি না, কিন্তু যদি তা থাকে তবে তা আনন্দরসে স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। তার দাহিকা শক্তি নেই, আছে শুধু আনন্দের জ্যোতি। তুমি আমাদের শত্রুর কথা জিজ্ঞাসা করেছ – জানতে চেয়েছ সত্যই কি তারা তোমার আমার মধ্যে চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবে! ভুল! আমি যে তোমারই – একান্ত তোমারই।
তোমার ও দুটি হরিণ-চোখ আনন্দের উৎস, তোমার অধর যে আমার প্রেমের আধার, গতিভঙ্গিমা প্রতি পদে আমার সারা দেহে পুলক রোমাঞ্চের সৃষ্টি করে প্রিয়তমে! আচ্ছা, তুমিই বল ত তোমার সৌন্দর্যের পূজা কেনই বা না করব আমি? তুমি জান সুন্দরকে আমি ভালবাসি, তবেই ভেবে দেখ যাকে আমি ভালবাসি সে কত সুন্দর। তোমার ভালবাসা – সে তো সুন্দরের উপাসনারই নামান্তর। ভালবাসার মূলেই যে আছে চিরসুন্দর – তাইতো সে শাশ্বত-অনন্ত!। ভালবাসার অন্য় কারণ থাকতে পারে বা অন্য কারণেও ভালবাসা হতে পারে – সে ভালবাসাকে আমি শ্রদ্ধা করি, প্রশংসা করি; কিন্তু তা সুন্দরের সম্পদে মহীয়ান নয় – তার পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ হয় না, তার সৌরভে দশদিক মেতে উঠে না। তাই তোমার সৌন্দর্যের জয়গান করি আর সঙ্গে এ বিশ্বাস আমার আছে যে তোমার সৌন্দর্যের পরীক্ষা অন্য় কোনো পুরুষের দ্বারা করাতে হবে না।
তুমি বলতে চাও যে আমার ভয় হচ্ছে, ও কথা বললে যে থাকতে পারি না, তুমি আমায় ভালবাস না। না না দেবী, ওকথা বলো না, তোমার কাছে যাবার জন্য় যে বড় ব্যাকুল হয়ে পড়ি। এখানে তোমার বিরহে কোনো রকমে কবিতা লিখে দিন কাটাচ্ছি।
আমি যতই ভাবি যে তুমি শুধু আমার জন্যই আমায় ভালবাস (কারণ আমার ত অন্য কোনো গুণ নেই) ততই তোমার প্রতি আমার ভালবাসা তীব্র হয়ে ওঠে। তুমি কি নারী? না কাব্যের কবিতা – মূর্ত্তিমতী মানবী না দেবী।
তোমার লিপির প্রতি ছত্রে চুমা দিয়ে যাই কেন জানো? তুমি যে সেখানে মধু মাখিয়ে রেখেছ – আমায় আদর দিয়ে তোমার প্রেমের রসে মাতাল করে তুলেছ প্রিয়ে! বল তো কেন এত আদর দিয়েছ – আমি শুনি, দেখি কিন্তু নতুন ব্যাখ্যা করতে পারি না!
তোমারই কীটস
আর একখানা পত্র :
প্রিয়তমাসু
কবিতা লিখছিলাম – হঠাৎ তোমার কথা মনে হল। স্থির হতে পারছি না, তোমাকে দু-চার লাইন না লিখে কাব্যে আমার মন বসবে না, আর কিছু ভাবতে পার ছি না, যতই অন্য কথা ভাবি ততই তোমার মুখখানি মনের সামনে ফুটে ওঠে। তোমার প্রেম আমাকে বড় স্বার্থপর করে তুলেছে। তোমার কথা ছাড়া আর আমার কিছুই মনে থাকে না – মনে হয় আমার প্রাণশক্তির উৎস একমাত্র তুমি – তুমি ভিন্ন আর কোনো ভাব ধারণা বা অনুভূতি আজ আমার হৃদয়ে স্বাধিকার স্থাপন করতে পারে নি – বা পারছে না প্রিয়ে! তুমি আমার সমস্ত সত্তাকে হরণ করে নিয়ে বসে আছ। মনে হচ্ছে আমি নিজে যেন ক্রমে গলে জল হয়ে তোমার সঙ্গে মিশে যাচ্ছি। তোমাকে না দেখলে এই মুহূর্তে আমার সব নিঃশেষ হয়ে যাবে। তুমি যে আমার কাছে নেই, একথা মনে করতে পারি না – ভয় হয় পাছে সত্যই তুমি আমার কাছে আর না আস।
প্রিয়ে, তোমার মনের কি পরিবর্তন হবে না? তোমার থেকে দূরে থেকে আমি কি সুখী হতে পারি? এইমাত্র তোমার পত্র পেলাম। ওগো একি ব্যঙ্গ! দোহাই তোমার, ব্যঙ্গ বা রহস্যছলেও আমায় ভয় দেখিও না! দেখ, আগে মনে করতাম মানুষ ধর্মের জন্য কি করে প্রাণ দিতে পারে – সে কথা ভাবতেও তখন শরীর শিউরে উঠত। কিন্তু এখন দেখছি তা অতি সহজ! আজ আমি ধর্মের খাতিরে জীবন বিসর্জন দিতে পারি অনায়াসে। ধর্ম আমার প্রেম, প্রেমের জন্য় আত্মোৎসর্গ করতে আজ আমি প্রস্তুত – মুক্তকণ্ঠে বলছি প্রেমের সম্মান রাখতে মরণ বরণ আমার পক্ষে দেবতার আশীর্বাদ। প্রেমই আমার সাধনা, তুমি আমার ইষ্টদেবী। তুমি প্রতি মুহূর্তে আমায় আকর্ষণ করছ – আমার সাধ্য নেই যে আত্মরক্ষা করি। তোমাকে যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই বিবেকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে প্রবৃত্ত হয়েছি; কিন্তু আর তো পারি না। তোমা ছাড়া আর এক লহমাও কাটে না আমার –
তোমার কীটস
কীটসের এই পত্রের উত্তর ফ্যানি দিয়েছিলেন কী না তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। কীটসের অধিকাংশ পত্র emotional। কোনো পত্রের উত্তরে ফ্যানি নিচের পত্রখানি লিখেছিলেন তা বুঝে উঠা কঠিন – আমরা কেবল তার ভাবানুবাদ প্রকাশ করলাম :
প্রিয়তম জন,
তোমাকে অসুখী করবার ইচ্ছা আমার নেই – সে কথা ত তোমায় কতদিন বলেছি। প্রেমাস্পদকে কি কেউ কখনও ব্যথা দিতে পারে? আমিই যদি তোমার আনন্দের আধার হই তাহলে সে আনন্দ তুমি চিরদিনই পাবে। তুমি বল “সুন্দর চিরদিনই আনন্দের উৎস”; সুতরাং আমি যদি সুন্দরী হই তবে আমি তোমার – তোমার চির-আনন্দের বস্তু – আর সেই ত আমার পরম গৌরব। নারী জীবনের একমাত্র কাম্যই তাই। প্রণয়িনী চায় প্রেমিকের হৃদয় রাজ্যে চিরদিনের অধিকার। আমি তোমার কাছেই থাকি কিম্বা দূরে চলে যাই তাতে তোমার আনন্দের হ্রাস কেন হবে প্রিয়তম, চোখের আনন্দ তো আনন্দ নয় – সে তো মোহ, মনের যে অনাবিল আনন্দ – তারই নাম প্রেম – সে ত অনুভূতিসাপেক্ষ। তোমার হৃদয় সিংহাসনে যদি আমার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত তবে আমার অদর্শনে সে আসন টলে কেন? তোমার পক্ষে এ বড় অন্য়ায় কিন্তু!
আমাদের ভালবাসা, আমাদের প্রেম সাধারণ অপর পাঁচজন প্রেমিক-প্রেমিকার মত গতানুগতিক নয় – তাতে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা বাঞ্ছনীয় নয় কি – হে সুন্দরের উপাসক!
তোমার প্রেম অক্ষয় হোক – প্রেমিকার জন্য তোমার আকাঙ্ক্ষা যেন মুখের কথায় পর্যবসিত না হয়। তোমার পত্রের ছত্রে ছত্রে যে প্রেম ব্যক্ত হয়েছে তা যেন শুধু ক্রিয়াহীন মন্ত্র মাত্র না হয়। আমি জানি তা হবে না, তবু তোমায় এ কথা বলছি কারণ আমি সময়ে সময়ে তোমার দুর্বলতা লক্ষ্য করেছি; আর সে দুর্বলতার কথা তোমায় স্মরণ করিয়ে দেওয়াই ত প্রকৃত প্রণয়াস্পদের কাজ; এতে রাগ করো না।
ওগো মধুময়। তোমার চিঠি পড়ে আমার যে কি আনন্দ হয় – তা পত্রে প্রকাশ করা যায় না। তোমার সেই প্রথম প্রেমলিপি যেদিন আমি পাই সেদিনকার সে অনির্বচনীয় আনন্দ-পুলক আজও আমার অঙ্গে অঙ্গে শিহরণ আনে। আমাকে বল, শপথ করে বল তুমি শুধু আমারই, আর কারো নয় – তুমি চিরদিন আমার থাকবে – তুমি জীবনে মরণে আমার! আমিও তোমায় বলি – বিশ্বপিতার সন্তান আমি মনে প্রাণে তোমার – চিরদিন তোমার চোখে সুন্দর হয়ে ফুটে থাকব। আমাদের প্রেম অক্ষয় হোক! শেক্সপীয়রের “জুলিয়েট” যেন আমার চেয়ে গৌরব অর্জন করতে না পারে। শীঘ্রই তোমার বাহুর বাঁধনে ধরা দেব, উপস্থিত একটি –
ফ্যানি
(FAQ) জন কীটসের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
একজন বিখ্যাত ইংরেজ কবি।
ইংল্যান্ড।
ফ্যানি ব্রণ।