ঋকবৈদিক যুগের বিদুষী নারী বাক দেবী প্রসঙ্গে অন্তন ঋষির কন্যা, ঋকবেদ সংহিতার মন্ত্র রচনা, দেবী সূক্তের বক্তা, অদ্বৈতবাদের প্রবক্তা ও তার মন্ত্রগুলির বক্তব্য সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী বাক দেবী প্রসঙ্গে অন্তন ঋষির কন্যা বাক, বাক দেবী কর্তৃক ঋকবেদ সংহিতার মন্ত্র রচনা, অদ্বৈতবাদের প্রবক্তা বাক ও দেবী সূক্তের বক্তা বাক সম্পর্কে জানব।
ঋকবৈদিক যুগের বিদুষী নারী বাক
ঐতিহাসিক চরিত্র | বাক |
পরিচিতি | উপনিষদের যুগের বিদুষী নারী |
পিতা | অন্তন ঋষি |
খ্যাতি | ঋকবেদ সংহিতার মন্ত্র রচনা |
চণ্ডীপাঠের পূর্বে পাঠ্য | দেবীসূক্ত |
ভূমিকা :- অন্তন ঋষির কন্যা হলেন বাক। এই বিদুষী মহিলা ঋগ্বেদসংহিতার দশম মণ্ডলের ১২৫ সংখ্যক সূক্তের আটটি মন্ত্র পরমাত্মা দেবতার উদ্দেশে রচনা করেন। বাক দেবীকে এই সূক্তের বক্তা অর্থাৎ ঋষি বলে নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু বাক যে এই সূক্তের বক্তা, সূক্তের ভিতর তার কোনও নিদর্শন নেই। বক্তা নিজেকে সর্বনিয়ন্তা ও সর্বনির্মাতা বলে পরিচয় দিয়েছেন।
দেবীসূক্ত
বাক দেবী রচিত এই মন্ত্রগুলি দেবীসূক্ত নামে পরিচিত। চণ্ডীপাঠের পূর্বে আমাদের দেশে এই দেবীসূক্ত পাঠ করা হয়ে থাকে।
বাক দেবীর মন্ত্র অবলম্বন
অনেকের মতে বাকের প্রণীত এই আটটি মন্ত্র অবলম্বন করে ‘মার্কণ্ডেয় পুরাণের’ চণ্ডীমাহাত্ম্যপ্রকরণ রচিত হয়েছে। এই জন্য বাক দেবীর নাম ভারতবর্ষ-এর সর্বত্র আজও গৌরবের সাথে উচ্চারিত হয়।
অদ্বৈতবাদের প্রবক্তা বাক দেবী
যে অদ্বৈতবাদের প্রবর্তক বলে শঙ্করাচার্যের নাম পৃথিবীর সর্বত্র বিঘোষিত, যে মতকে আশ্রয় করে শঙ্করাচার্য বৌদ্ধ ধর্ম-এর কবল থেকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উদ্ধার সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেই মতের প্রধান গৌরব ও খ্যাতি বাক দেবীরই বহুল পরিমাণে প্রাপ্য বলা যেতে পারে। কারণ, অদ্বৈতবাদের মূল সূত্রটি বাক ঋষিই প্রচার করেছিলেন।
বাক দেবী বক্তব্য
- (১) আমি রুদ্রগণ ও বসুগণের আত্মাস্বরূপ তাদের সঙ্গে বিচরণ করি। আমি আদিত্যদের সঙ্গে এবং তাবৎ দেবতাদের সঙ্গে থাকি। আমিই মিত্র ও বরুণ, ইন্দ্র ও অগ্নি এবং অশ্বদ্বয়কে ধারণ করি।
- (২) আমি সমুদয় বিশ্বজগতের অধিশ্বরীরূপে বিরাজ করি। আমাকে দেবতারা নানাস্থানে সন্নিবেশিত করেছেন, আমার আশ্রয়স্থান বিস্তর, আমি বিস্তর প্রাণীর মধ্যে আবিষ্ট হয়ে আছি।
- (৩) যিনি দর্শন করেন, প্রাণধারণ করেন, কথা শ্রবণ করেন, তিনি আমারই সাহায্যে সেই সকল কাজ করেন। আমাকে যারা জানে না, তারা বিনষ্ট হয়ে যায়। হে বিদ্বান! শ্রবণ কর, আমি যা বলছি তা শ্রদ্ধার যোগ্য।
- (৪) দেবতারা এবং মনুষেরা যার শরণাগত হয়, তার বিষয়ে আমিই উপদেশ দিয়ে থাকি। যাকে ইচ্ছা, আমি বলবান, অথবা স্তোতা, অথবা ঋষি, অথবা বুদ্ধিমান করতে পারি ।
- (৫) রুদ্র যখন স্তোত্রদ্বেষী শত্রুকে বধ করতে উদ্যত হন, তখন আমিই তাঁর ধনু বিস্তার করে দিই। আমিই জনগণের কল্যাণার্থে যুদ্ধ করি। আমি দ্যুলোকে ও ভুলোকে আবিষ্ট হয়ে আছি।
- (৬) আমি পিতা আকাশকে প্রসব করেছি; সেই আকাশ এই জগতের মস্তক-স্বরূপ। সমুদ্রে জলের মধ্যে আমার স্থান। সেই স্থান হতে সকল ভুবনে বিস্তারিত হই, নিজের উন্নত দেহদ্বারা এই দ্যুলোককে আমি স্পর্শ করি।
উপসংহার :- আমিই তাবৎ ভুবন নির্মাণ করতে করতে বায়ুর ন্যায় বহমান হই। আমার মহিমা এতাদৃশ বৃহৎ হয়েছে যে, দ্যুলোককেও অতিক্রম করেছে, পৃথিবীকেও অতিক্রম করেছে। – এই উক্তির মধ্যেই বাক দেবীর গৌরবময় প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।
(FAQ) বাক সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
উপনিষদের যুগের বিদুষী নারী ছিলেন বাক।
অন্তন ঋষির।
ঋগ্বেদসংহিতার দশম মণ্ডলের ১২৫ সংখ্যক সূক্তের আটটি মন্ত্র পরমাত্মা দেবতার উদ্দেশে রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন বাক।