ফ্লবেয়ার প্রেমপত্র

ফ্রান্সের ‘ন্যাচারালিজম্’-এর জনক ফ্লবেয়ার প্রেমপত্র প্রসঙ্গে ফ্লবেয়ার পরিচিতি, ফ্লবেয়ার খ্যাতি, ফ্লবেয়ার প্রেম, ফ্লবেয়ার প্রেমিকা ও ফ্লবেয়ার মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

গুস্তাভ ফ্লবেয়ার প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রফ্লবেয়ার প্রেমপত্র
পরিচিতিফরাসি ঔপন্যাসিক
বিখ্যাত উপন্যাস‘জোলা’
অভিধাফ্রান্স-এর ‘ন্যাচারালিজম্’-এর জনক
প্রেমিকালুইসা কলেৎ
গুস্তাভ ফ্লবেয়ার প্রেমপত্র

ফ্লবেয়া ছিলেন ফ্রান্সে ‘ন্যাচারালিজম্’-এর জনক, যার পরিপূর্ণ ফসল আমরা দেখতে পাই ‘জোলা’ উপন্যাসে। তাঁর রচনায় পাওয়া যায় গভীর অধ্যবসায় ও কঠোর নিষ্ঠার পরিচয়, পাতায় পাতায় তার স্বাক্ষর। তাঁর জীবন-দর্শনে কিছুটা ব্যঙ্গের সুর। লুইসা কলেৎ নামে একজন লেখিকার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, এবং তাঁকে উদ্দেশ করেই তাঁর বিপুলসংখ্যক প্রেম-পত্র রচিত। কিন্তু ফ্লবেয়া স্বয়ং ছিলেন মৃগী রোগাক্রান্ত। লুইসা শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন, এবং তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর যবনিকাপাত হয়।

বৃহস্পতিবার, রাত্রি ১টা

হ্যাঁ, আমি জানি তুমি কোনোদিন আমাকে ভালবাসনি, আমাকে জানো কি কখনও; একথা লেখায় হয়ত আমি এমন কিছু স্বীকার করছি যাতে তুমি আনন্দিত হবে। আমার মা যদি আমাকে ভাল না বাসতেন, যদি আমি তাঁকে বা পৃথিবীর অন্য় কোনো লোককে কখনও ভাল না বাসতাম তাহলে কি আনন্দের হতো; আজ আমার মন বলে, আমার হৃদয়-নিসৃত কোনো অনুভব যদি কাউকে স্পর্শ না করত অথবা অপরের হৃদয় নিসৃত কোনো অনুভব যদি কখনও আমাকে চঞ্চল না করত। যতই মানুষ বাঁচে, ততই তার যন্ত্রণা আর ক্রন্দন। এই অস্তিত্বের বোঝা বইবার জন্য সৃষ্টির আদি থেকেই কি মানুষ স্বপ্ন-কল্পনার জগৎ আর আফিম আর তামাক আর কড়া পানীয়ের সৃষ্টি করে নি? যিনি ক্লরোফর্ম আবিষ্কার করেছিলেন তিনি নিশ্চয়ই ধন্য। ডাক্তাররা বলেন, মানুষ এতে মারা যেতে পারে, কিন্তু তাতে কি যায় আসে? আসল কথা কি, জীবনের সাথে এবং জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব জিনিসের প্রতি তোমার ঘৃণা প্রবল নয়। তুমি যদি আমার দেহের অনুপরমাণুতে মিশে থাকতে তাহলে হয়তো তুমি আমাকে আরেকটু ভাল বুঝতে পারতে; আর, তাহলে আমার মনে হয়, আজ যেখানে দেখতে পাচ্ছ কাঠিন্য সেখানে দেখতে পেতে কোমলতার উদারতার করুণার এক হ্রদ। আমার কথা ভেবে অথবা আমাকে ভালবেসেই কেবল তুমি বলতে পার আমি মন্দ বা আত্মম্ভরি। কিন্তু, আমার নিজের প্রশংসায় যদি ক্ষুন্ন না হও তো বলি, আমি অন্যের চাইতে বেশি মন্দ বা আত্মম্ভবি নই, সম্ভবত অনেক কম। অন্তত, আমার সম্পর্কে এইটুকু তুমি স্বীকার করবে যে আমি সহৃদয়। আমি যা বলি তা থেকে গভীর আমার অনুভব, কারণ আমার গঠনরীতি থেকে সমস্ত অতিশয়তা আমি বর্জন করেছি।

কোনো মানুষের পক্ষেই আপন সীমায় ছাড়া কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আমার মত যে লোক অতিরিক্ত নিঃসঙ্গতায় বুড়িয়ে গেছে, সংজ্ঞালোপ পাওয়ার মত যার বিপন্নতাবোধ, অবদমিত কামনার পীড়নে যে পীড়িত, অন্তরে বাহিরে যে সংশয়বাদী – এই লোককে তোমার ভালবাসবার কথা নয়। আমার যেমন সাধ্য তেমন আমি তোমাকে ভালবাসি, নিশ্চয়ই তা আশানুরূপ নয় বরং মন্দই আমি জানি, সব জানি আমি। হে ঈশ্বর, এ অপরাধ কার? অপরাধ নিয়তির – সেই প্রাচীন অনিবার্যতার, মুখে যার বিদ্রুপের হাসি, যা বস্তুনিচয়কে একত্রিত করে সর্বাধিক ঐক্যের আশায়, কিন্তু পরিণামে ঐক্যের বদলে দেখা দেয় বিরোধ, প্রীতির বদলে বৈরিতা।

জীবনকে অন্য কোনো উচ্চ মার্গ থেকে দেখ, কোনো মিনারে আরোহণ কর, তাহলে তুমি দেখতে পাবে অন্য কিছু নয়, তোমাকে ঘিরে চতুর্দিকে বিরাজিত অনন্ত নীল আকাশ। যদি নীল না হয় তো হবে কুয়াশাচ্ছন্ন, যদি সব কিছু বিলীন হয়ে যায় এক নিস্পন্দ বাষ্পে তো এর কি যায় আসে? কোনো নারীর এসব কথা শিখতে হলে তাকে অন্তরে সম্ভ্রম করতে হয়।

আমি নিজেকে যন্ত্রণাদগ্ধ করি ছিন্নভিন্ন করি; আমার উপন্যাস আর এগুতে চায় না। আমার সাহিত্য-রীতির কিছু অতিশয়তা আছে, আর যথাসময়ে যথার্থ শব্দ না এসে আমাকে উত্যক্ত করে। এমনি করে একটি গোটা দিন আমি ব্যয় করেছি; উন্মুক্ত জানালা, নদীতে সূর্যের সোনালী বর্ণের সমারোহ, আর পৃথিবীতে প্রগাঢ় শান্তি, এক পৃষ্ঠা লিখেছি আর গোটা তিনেক পৃষ্ঠা ছকে রেখেছি। পক্ষকালের মধ্যেই আমি ভয়ঙ্করভাবে কাজে ডুবে যাব বলে আশা করছি, কিন্তু যে রঙের সমুদ্রে আমি ডুব দিতে চাই তা এমন অভিনব যে অবাক বিস্ময়ে আমি নিমগ্ন হয়ে থাকি শুধু।

আগামী মাসের মাঝামাঝি আমি প্যারিতে যাব, দু’তিন দিন সেখানে থাকব। কাজ করে যাও একটু স্মরণে নিও আমাকে, খুব গম্ভীর ভাবে অবশ্য নয়, আর যদি তোমার স্মরণে আমার মূর্তি ভেসে আসে তো তা মধুর স্মরণগুলো বহন করুক শুধু। সব দুঃখ সত্ত্বেও মানুষকে হাসতেই হবে। সুখ স্বাচ্ছন্দ দীর্ঘজীবী হোক।

ফ্লবেয়া

(FAQ) ফ্লবেয়ার প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফ্লবেয়া কে ছিলেন?

একজন বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক।

২. ফ্রান্সে ‘ন্যাচারালিজম্’-এর জনক কে ছিলেন?

গুস্তাভ ফ্লবেয়া।

৩. গুস্তাভ ফ্লবেয়ার প্রেমিকার নাম কী?

লুইসা কলেৎ।

Leave a Comment