বিসামার্কের প্রেমপত্র

জার্মানির দুর্ধর্ষ রাষ্ট্রনায়ক অটো ফন বিসামার্কের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে বিসামার্কের পরিচিতি, বিসামার্কের খ্যাতি, বিসামার্কের প্রেম, বিসামার্কের প্রেমিকা ও বিসামার্কের মূল প্রেমপত্র সম্পকে জানব।

অটো ফন বিসামার্কের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রবিসামার্কের প্রেমপত্র
পরিচিতিজার্মানির একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি
দেশজার্মানি
অভিধাআয়রণ চ্যান্সেলার
প্রেমিকা ও স্ত্রীজোহনা
বিসামার্কের প্রেমপত্র

উনবিংশ শতকের জার্মানির দুর্ধর্ষ রাষ্ট্রনায়ক অটো ফন বিসমার্ক “আয়রণ চ্যান্সেলার” (Iron Chancellor) নামেই পরিচিত। তাঁর আকৃতি ছিল যেমন বিশাল তেমনি ছিল তাঁর কর্মময় জীবন। তাঁর মত অন্তরঙ্গ বন্ধু যেমন ছিল না তেমনি শত্রুতাতেও তিনি ছিলেন ভীষণ। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে জোহানাকে তিনি বিবাহ করেন। জোহনার মত সাধ্ব, স্ত্রী বিরল। স্বামীর প্রত্যেক কর্মে তাকে সহায়তা করতেন – উৎসাহ দিতেন – স্বামীর সেবা করতেন। বিসমার্কও পত্নীপ্রেমে অধীর – তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল বড় সুখের। দৃষ্টির আড়াল হলেও মনের আড়াল কেউ কোনোদিনই হন নি। স্ত্রীকে যখন চিঠি লিখতেন তখন বিসমার্ক তাও দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি কথাটিও লিখতে ভুলতেন না। বাইরে তিনি দোর্দন্ড-প্রতাপ, অমিত বিক্রমশালী কূটনৈতিক কঠোর-হৃদয় রাষ্ট্রপতি কিন্তু অন্তরে তিনি শিশুর মত সরল, ধর্মপ্রাণ ও একনিষ্ট প্রেমিক। দূরে থাকলে প্রতি সপ্তাহেই প্রিয়তমাকে পত্র না লিখে থাকতে পারতেন না, জোহানাকে তিনি একসময় লিখছেন –

১লা ফেব্রুয়ায়ী, ১৮৪৭

জীবন-সঙ্গিনী আমার! সমস্তদিন নানা কাজের পরিশ্রমের পর সন্ধায় তোমার সঙ্গে একত্র গল্প করবার ইচ্ছা হল, তাই কালিকলম নিয়ে বসলাম। প্রিয়তমে, মনে কর আমরা পাশাপাশি একখানি সোফায় বসে আছি, তোমার একখানি কোমল হাত তুমি আমার কাঁধে রেখেছ, আমরা বসে বসে গল্প করছি। তোমার চিঠি কালকে আসবার কথা ছিল কিন্তু তা না এসে এলো এই সন্ধ্যা বেলায়! ভালই হল, তোমার কথা শুনবার (পড়বার) এই ত উপযুক্ত সময়। নয় কি?

স্টেটিনে (Stettin) বেশ দিন কাটত – কেবল খাও দাও আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে তাস খেল। কিন্তু আমার সব সময় তা ভাল লাগত না বলে আমি মাঝে মাঝে ‘বাইবেল’ পড়তাম তাই দেখে বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ আমায় ঠাট্টা করত। দিদি প্রায়ই তোমার কথা জিজ্ঞাসা করতেন। তিনি আমাকে ও তোমাকে যে কী ভালবাসেন তা লিখে প্রকাশ করা যায় না। তুমি এতদিনে বোধ হয় তাঁর চিঠি পেয়েছ।

হ্যাঁ বাইবেল পড়ার কথা! আমি একটু নির্জন পেলেই বাইবেল পড়তাম (বা এখনও পড়ি)। তাই দেখে আমার আর এক বন্ধুর তো ভয় হয়ে গেল – তার ভাবনা আমি বুঝি সব ছেড়ে একেবারে ধার্মিক হয়ে যাব। তাই সে পারতপক্ষে আমায় একলা থাকতে দিত না, সর্বদাই আমার সঙ্গে থাকত। তার ভাবটা যেন আমার অসুখ করেছে, আর সে দিন রাত আমাকে ব্যাধি মুক্ত করবার আশায় বসে বসে আমার সেবা করছে, সে যেন আমায় হারিয়েছে তাই ফিরে পাবার জন্য তার চেষ্টা ও যত্নের যেন অন্ত নেই।

আজ সারাদিন অবিশ্রাম তুষারপাত হয়েছে – সমস্ত দেশ সাদা হয়ে গেছে, কিন্তু “ব্রানডেনবার্গ”-এ এসে দেখি কিছুই নেই। বাতাসে কনকনে ভাব নেই – মাঠে চাষীরা সব লাঙ্গল দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন বসন্ত এসে গেল, আজ বুঝি আমার বিরহের হবে অবসান। আজ আর আমি একা নই! তোমার প্রেমের চিন্তায় আমি বিভোর। আমার অন্তরে বাইরে আজ তুমি।

গ্রামের পথে যেতে যেতে আমার কি মনে হয় তা জান? মনে হত গ্রাম্যজীবন কি মধুর – বিশেষত সেই গ্রাম যেখানে আমি ভূমিষ্ট হয়েছি। এর সঙ্গে আমার শুধু ইহকালের সম্বন্ধ নয়? কত জন্ম জন্মান্তর ধরে এই গ্রামের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা। কত প্রেম কত মধুর স্মৃতি বিজড়িত এই পল্লী-মায়ের মাটিতে। সূর্যের সোনালী রৌদ্রে গ্রামের পথ ঘাট মাঠ রঙিন – গ্রামের প্রত্যেকটি অধিবাসীর মুখে সাচ্ছন্দ্যের আনন্দ। মেয়েরা বেরিয়ে এসে আমায় অভিবাদন করতে লাগল, তাদের সে অকুণ্ঠ ব্যবহার – অতিথির সম্মান রক্ষার আগ্রহ আমার চোখে যেন নতুন দৃশ্য তুলে ধরল। প্রত্যেকের মুখে আমায় অভিনন্দের ভাষা। তাদের দেখে মনে পড়ে গেল তোমাকে, মনে হল তুমিও তো এদেরই মত রমণী, তাই তোমার প্রাণে এত কোমলতা, তোমার বুকেও তো আছে এদেরই মত আমায় আপনজন ভাববার ব্যাকুলতা।

সেদিন ঘরে ফিরে এসে আমায় এত একা ঠেকেছিল – তোমার অনুপস্থিতি আমায় এমন অভিভূত করেছিল যে তেমন আর কোনোদিন অনুভব করি নি। আমার মনের সে উদাস ভাব সে নিঃসঙ্গতা কি আর বলে বোঝানো যায়! দরজা খুলতেই মনে হল দুরন্ত রাক্ষস আমায় হাঁ করে গিলতে আসছে – আর ঘরের জিনিসপত্র গুলো যেন ভয়ে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে আছে! একখানা বই নিয়ে পড়বার চেষ্টা করলাম পারলাম না, নীরস শুষ্ক মনে হল। কাজ নিয়ে বসলাম – নিদারুণ বিরহ বেদনায় কোনো কাজই করতে পারলাম না। সেইদিন থেকে অনেকখানি রাত না হলে আর ঘরে ঢুকতাম না এই জন্য যাতে শয্যা ও নিদ্রা একসঙ্গে মুহুর্তে আমায় আলিঙ্গন করে। কথা বলে শেষ করতে পারব না। তোমাকে কাছে পেলেই আমার মনের বাঁধ ভেঙে যায়, কথার ঝরণা ছুটে আসে; আজ কোনো রকমে তা আটকে রাখলাম। কাল আবার এস এমনি সময়ে!

তোমারই চিরানুগত বিসমার্ক

(FAQ) বিসামার্কের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

1. বিসামার্ক কে ছিলেন?

জার্মানির একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।

2. অটো ফন বিসামার্ক কী নামে অধিক পরিচিত?

আয়রণ চ্যান্সেলার।

3. রক্ত ও লৌহ নীতি কে গ্রহণ করেন?

অটো ফন বিসামার্ক।

4. অটো ফন বিসামার্কের প্রেমিকা তথা স্ত্রীর নাম কী?

জোহনা।

Leave a Comment