গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধের সূচনা, যুদ্ধে বিপ্লবীদের গুলিবর্ষণ, যুদ্ধে পুলিশের দূর পাল্লার রাইফেল, পুলিশ কর্তৃক বিপ্লবীদের বেষ্টন, সতীশ পাকড়াশী ও নলিনী বাগচীর পলায়ন সম্পর্কে জানবো।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধ |
স্থান | আসামের গৌহাটি পাহাড় |
সময়কাল | ডিসেম্বর ১৯১৭ খ্রি: |
বিপ্লবী | সতীশ পাকড়াশী, নলিনী বাগচী |
ভূমিকা :- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গৌহাটি পাহাড়ে পুলিশের সাথে বিপ্লবীদের যুদ্ধ বুড়ী বালামের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
গৌহাটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
আসামের গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) ঢাকা অনুশীলন সমিতির ভাঙন
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকেই সরকারী দমননীতির প্রচণ্ড আঘাতে ঢাকা অনুশীলন সমিতির সংগঠন ভেঙে পড়ে। বিপ্লবীরা দলে দলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে থাকেন। সমিতির পরিচালকদের পক্ষে ঢাকায় গুপ্তভাবে থেকে সমিতির কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে উঠে।
(২) পুলিশের নাগালের বাইরে সমিতির কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত
সুতরাং তাঁরা স্থির করেন, পুলিশের নাগাল হতে দূরে কোথাও গিয়ে সেখান থেকে সমিতির কার্য পরিচালনা করবেন।
(৩) আসামের গৌহাটি শহরে সমিতির কেন্দ্র স্থাপন
এই সময় আসামে বিশেষ কোনো বৈপ্লবিক সংগঠন বা বৈপ্লবিক ক্রিয়াকলাপ ছিল না। কাজেই আসামের উপর পুলিশের নজর নেই মনে করে সমিতির নেতৃবৃন্দ আসামের গৌহাটি শহরে সমিতির কেন্দ্র স্থাপন করেন।
(৪) সমিতির পরিচালকদের গৌহাটি আগমন
সমিতির তৎকালীন পরিচালক সতীশ পাকড়াশী, নলিনী বাগচী প্রমুখ কয়েকজন ঢাকা থেকে পালিয়ে গৌহাটিতে আশ্রয় নেন। এরা সেখান থেকেই সমিতির বাংলাদেশ জোড়া সংগঠন পরিচালনা করতে থাকেন। বিপ্লবীরা দুটি বাড়িতে ভাগ হয়ে থাকতেন।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধের সূচনা
ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন শেষ রাতে বহু সশস্ত্র পুলিসসহ গোয়েন্দা অফিসারগণ বিপ্লবীদের দুটি বাড়িই ঘিরে ফেলে। এরপরই শুরু হয় গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধ।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধে বিপ্লবীদের গুলিবর্ষণ
বিপ্লবীরা কোন প্রকারে পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পুলিশ পাহাড়ের নিকটবর্তী আসা মাত্র লুক্কায়িত সাতজন বিপ্লবী তাঁদের রিভলভার ও পিস্তল থেকে গুলিবর্ষণ আরম্ভ করেন। পুলিশ ভয় পেয়ে পশ্চাৎ অপসরণ করে।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধে পুলিশের দূর পাল্লার রাইফেল
কিন্তু পুলিশের বুঝতে বিলম্ব হল না যে, বিপ্লবীদের হাতে কেবল রিভলভার, পিস্তল প্রভৃতি ছোট অস্ত্র রয়েছে, রাইফেল নেই এবং বিপ্লবীদের গুলিগোলাও সামান্য। আর অন্যদিকে তাদের হাতে আছে দূর পাল্লার রাইফেল এবং গুলিও যথেষ্ট।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধে পুলিশ কর্তৃক বিপ্লবীদের বেষ্টন
সুতরাং সশস্ত্র পুলিশ নিঃশব্দে অন্ধকারের আড়ালে পাহাড় ঘিরে ফেলে। এদিকে মরিয়া হয়ে গুলি ছুঁড়বার ফলে বিপ্লবীদের গুলি নিঃশেষ হয়ে আসে। পুলিশদল তা বুঝতে পেরে বিপ্লবীদের বেষ্টন করে তাঁহাদের নিকটবর্তী হয়। সেই স্থানে পাঁচজন বিপ্লবী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধের পর সতীশ পাকড়াশী ও নলিনী বাগচীর পলায়ন
পুলিসের দল যখন বিপ্লবীদের ঘিরে ফেলে উল্লাসে চিৎকার করতে করতে তাদের নিকটবর্তী হচ্ছিল, তখন অন্য দুজন বিপ্লবী – সতীশ পাকড়াশী ও নলিনী বাগচী সকলের অলক্ষ্যে সরে পড়েন। দুইজন বিপ্লবী দুই দিক দিয়ে হাঁটাপথে কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। গাড়িতে উঠলে পাছে ধরা পড়ে যান এই ভয়ে তাঁরা অরণ্য-পর্বত উল্লঙ্ঘন করে হাঁটতে আরম্ভ করেন।
গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধের বিপ্লবী নলিনীর বসন্ত রোগ
সতীশ পাকড়াশী কলকাতায় পৌঁছাবার কয়েকদিন পর একদিন ভোরবেলা একজন বিপ্লবী কর্মী নলিনীকে অচেতন অবস্থায় কলকাতার ময়দানে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন নলিনীর সর্বাঙ্গে বসন্ত ফুটে বের হয়েছে, ভয়ংকর জ্বরে তিনি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। কর্মীটি নলিনীকে নিয়ে কোন প্রকারে তার বাড়িতে পৌঁছান।
উপসংহার :- ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহাস তার ও অপর কয়েকজন কর্মীর আপ্রাণ সেবা ও যত্নে নলিনী সে যাত্রা বেঁচে উঠেন।
(FAQ) গৌহাটি পাহাড়ের যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ডিসেম্বর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে।
সাতজন।
সতীশ পাকড়াশী ও নলিনী বাগচী।