বালজাক-এর প্রেমপত্র

পৃথিবী বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বালজাক-এর প্রেমপত্র প্রসঙ্গে বালজাক-এর খ্যাতি, বালজাক-এর উপন্যাস, বালজাক-এর প্রেম, বালজাক-এর প্রেমিকা, বালজাক-এর মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

ঔপন্যাসিক বালজাক-এর প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রবালজাক-এর প্রেমপত্র
পরিচিতিবিখ্যাত ঔপন্যাসিক
প্রেমিকাকাউন্টেস হানস্কা
স্ত্রীকাউন্টেস হানস্কা
প্রেমপত্র লেখার সময়কাল২১শে অক্টোবর, ১৮৪৩ খ্রি
বালজাক-এর প্রেমপত্র

পৃথিবীর অন্য়তম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক প্যারিতে কয়েক বৎসর নিদারুণ দুঃখদুর্দশায় অতিবাহিত করার পর মাত্র ত্রিশ বৎসর বয়সে অমর খ্যাতি অর্জন করেন। সমকালীন জীবনের নিখুঁত ও অনবদ্য চিত্রাঙ্কণে এবং মানবহৃদয়ের সূক্ষাতিসুক্ষ্ম বিশ্লেষনে তাঁর দোসর নেই বললেই চলে। পোলিশ মহিলা কাউন্টেস হানস্কার সঙ্গে তাঁর প্রণয় ছিল দীর্ঘকালের। অবশেষে তিনি তাঁকে বিবাহ করেন, কিন্তু মধুযামিনী যাপনের তিনমাস বাদেই বালজাকের মৃত্যু হয়। মনে হয় আজীবন ঋণের বোঝায় ভারাক্রান্ত ছিল তাঁর জীবন; অসামান্য পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই ঋণ লাঘব করার জন্য় সংগ্রাম করে গেছেন।

কাউন্টেস হানস্কাকে লিখিত তাঁর পত্র –

২১শে অক্টোবর, ১৮৪৩

আগামী কাল আমি চলে যাচ্ছি; যাওয়ার আগে এই চিঠিখানা আমাকে শেষ করতেই হবে, কারণ ওটা আমাকেই ডাকে দিতে হবে। আমার মাথাটা যেন একটা শূন্য লাউয়ের মত, মনের অবস্থা এমন অস্থির যে ভাষায় ব্যক্ত করতে পারি না। যদি ‘প্যারি’তেও এই অবস্থা হয় তো আমাকে ফিরে আসতে হবে। আমার সব অনুভব যেন মৃত; জীবনে আমার ইচ্ছা নেই, আমার বিন্দুমাত্র শক্তিও যেন আর অবশিষ্ট নেই; মনে হয়, আমার যেন আর কোনো ইচ্ছা-শক্তি নেই। মেয়েন্স থেকে আমি পুনরায় তোমাকে পত্র লিখব, অবশ্য যদি আমার অবস্থার কিছু উন্নতি হয়। ইত্যবসরে ফঁতেনেলের মত আমি আমার অবস্থাটা আঁকতে পারি – সেটা হলো, অস্তিত্বের অসুবিধা। তোমাকে ছেড়ে আসার পর থেকে আমি হাসিনি।

বিদায়, আমার হৃদয়ের মণি, বিদায়। তুমি ধন্য, শত সহস্র বার তুমি ধন্য। হয়ত এমন সময় আসবে যখন আমি তোমাকে বলতে পারব, কি চিন্তা আমাকে ছিন্নভিন্ন করেছে। আজ শুধু এইটুকু বলতে পারি যে, তোমাকে আমি এতো ভালবাসি যে সুস্থির থাকা আমার অসাধ্য; এই আগষ্ট-সেপ্টেম্বরের পর আমার মনে হয় আমি শুধু তোমার সান্নিধ্যেই দিনযাপন করতে পারব। কারণ, তোমার অনুপস্থিতিই আমার মৃত্যু। আঃ, ট্রয়স্কের সেতুর কোণে অমন মনোরম করে সাজানো বাগানটিতে তোমার সঙ্গে গল্প করতে ও বেড়াতে আমার কী আনন্দ; যদিও সেখানে এখন ঝাঁটা ছাড়া আর কিছুই নেই, তবু একদিন সেখানে শ্যামল বৃক্ষরাজি শোভা পাবে এই কল্পনায় আমরা সেখানে বেড়াতে পারি। আমার নিকট ঐটি ইউরোপ-এর সর্বাপেক্ষা মনোরম উদ্যান, মানে, অবশ্য যখন তুমি তাতে শোভা পাও। এমন সব মুহূর্ত আসে যখন তোমাকে ঘিরে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসগুলোও আমি পরিস্কার দেখতে পাই; কালো লেসের ঝালরপরা কুশন বা গদীতে হেলান দিয়ে তুমি বিশ্রাম করো তা মানসচক্ষে আমি দেখতে পাই, আর তার ফুলগুলো আমি গুণতে থাকি। এভাবে সেই অতীতে ফিরে যাওয়ার কী শক্তি আর কী আনন্দ, সেই অতীত নতুন ভাবে হৃদয়ে ধরা দেয়। সেই সব মুহূর্ত যে জীবন থেকেও অধিক; কারণ, ঐ ক্ষণে বাস্তব অস্তিত্ব থেকে ছিন্ন একটি সমগ্র জীবনকে সে লালন করেছে। অতীতের আনন্দের দিনে যে সব দ্রব্য কদাচ দৃষ্টি আকর্ষণ করে নি, তাদের চিন্তায় ও স্মরণে কী অপার আনন্দ, কী মাধুর্য আর কী শক্তি। এই অনুভূতিতে আমার কী যে সুখ কি বলবো।

বিদায়! আমি এই চিঠিখানা ডাকে দিতে চলেছি। তোমার শিশুসন্তানটিকে আমার সহস্র আদর সোহাগ, লিয়েৎ কে আমায় নমস্কার ও প্রীতি, আর তোমার জন্য আমার হৃদয়ের সর্বস্ব, আমার আয়া আমার মস্তিষ্ক।

(চিঠি ডাকে ফেলতে যেতে যেতে) তুমি যদি জানতে ঐ বাক্সে এমনি একটি মোড়ক ফেলার সময় কী এক অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করে। এই পত্রগুলোর সঙ্গে আমার হৃদয় তোমার কাছে উড়ে যায়; প্রমত্তের ন্যায় আমি ওদের কানে কানে অজস্র কথা বলি; প্রমত্তের ন্যায় আমি ভাবি মনে – ওরা আমার কথাগুলো তোমার কানে কানে গিয়ে বলবে, আমি ভাবতে পারি না, কি করে মাত্র এগার দিনে আমার অস্তিত্বের বীজভরা এই পত্রগুলো তোমার হাতে পৌঁছাবে, আর কেনই বা আমি এখানেই পড়ে আছি!

আর হ্যাঁ, কাছের-দূরের আমার হৃদয়ের মণি, নিজেকে যেমন করে ভাব তেমনি ভেবো আমাকে। তোমার প্রাণ যেমন তোমার দেহকে ছেড়ে যাবে না, তেমনি আমি বা আমার প্রেমও তোমাকে নিরাশ করবে না। আমার মরমের দোসর, আমার বয়সের কোনো লোক জীবন সম্পর্কে যখন কোনো কথা বলে, তখন তাকে বিশ্বাস করতে পারো। বিশ্বাস করো, তোমার জীবন ছাড়া অন্য কোনো জীবন আমার নেই। আমার কথা ফুরলো। দুর্ভাগ্য যদি তোমাকে গ্রাস করে, আমি চলে যাব সেথায় যেথায় কোনো লোক নেই প্রাণী নেই, সেখানে অজানা অচেনায় আমি নিজেকে নিঃশেষ করে দেব। বিশ্বাস করো, একথা শূন্যগর্ভ নয়। কোনো নারীর চরম সুখ যদি এই অনুভবে যে, সে কোনো এক হৃদয়ের একক অধিশ্বরী, অবিচ্ছেদ্যভাবে সে ভরে রয়েছে সেই হৃদয়, সেই পুরুষের হৃদয়ে তার প্রজ্ঞার আলোরূপে জ্বলে ওঠায় তার শোনিতে, হৃদয়-স্পন্দনে, চিন্তায় চিন্তারই বিষয়রূপে বিরাজিত থাকায়, আর এই নিশ্চিত বিশ্বাসে যে চিরকাল চিরকালই অপরিবর্তনীয় থাকবে; তবে, আমার হৃদয়ের সম্রাজ্ঞী, তুমি নিজেকে সুখী বলে গণ্য করতে পার, হাঁ, সুখী তুমি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি তোমারই থাকব, তোমারই। যা মানবিক তাতে একদা আমরা বীতস্পৃহ হতে পারি, কিন্তু যা স্বর্গীয় তাতে আমাদের বীতরাগ নেই। তোমাতে আমার কি আনন্দ একমাত্র স্বর্গীয় শব্দটিই তা বলতে পারে। এইমাত্র আমি যে চিঠিখানা পাঠ করেছি, তাতে যে আনন্দের স্বাদ পেয়েছি তদ্রুপ আনন্দ জীবনে আর কোনো চিঠি থেকেই পাই নি।

বালজাক

(FAQ) বালজাক-এর প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বালজাক কে ছিলেন?

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক।

২. বালজাক-এর প্রেমিকার নাম কী?

কাউন্টেস হানস্কা।

৩. বালজাক তার প্রেমিকা কাউন্টেস হানস্কাকে প্রেমপত্র কখন লেখেন?

২১শে অক্টোবর, ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment