বাহমনি-বিজয়নগর সংঘর্ষ প্রসঙ্গে সংঘাতের কারণ, উর্বরা ও সমৃদ্ধি অঞ্চল, সংগ্ৰামে লিপ্ত, সংঘাতের সূত্রপাত, মুজাহিদ শাহের আক্রমণ, শান্তির নীতি, দ্বিতীয় হরিহর, প্রথম দেবরায় ও ফিরোজ শাহের সংঘাত, তৃতীয় বার যুদ্ধ, অপমানজনক সন্ধি, বার্ষিক করের উপস্থিতি ও মামুদ গাওয়ানের বিজয়নগর আক্রমণ সম্পর্কে জানবো।
বাহমনি-বিজয়নগর সংঘর্ষ
বিষয় | বাহমনি-বিজয়নগর সংঘাত |
উদ্দেশ্য | রায়চুর দোয়াব দখল |
রায়চুরের যুদ্ধ | ১৩৯৮ খ্রি |
বাহমনি রাজা | প্রথম মহম্মদ শাহ, মুজাহিদ শাহ, ফিরোজ শাহ |
বিজয়নগরের রাজা | দ্বিতীয় হরিহর, প্রথম দেবরায়, দ্বিতীয় দেবরায় |
ভূমিকা :- বাহমনী-বিজয়নগর সংঘাতকে ভৌগোলিক আধিপত্য ও অর্থনৈতিক ক্ষমতালাভের সংঘাত হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বাহমনি-বিজয়নগর সংঘাতের কারণ
এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের প্রথম কারণ ছিল তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর আধিপত্য লাভের জন্য দুই প্রতিবেশী শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই তিনটি অঞ্চল ছিল –
- (ক) তুঙ্গভদ্রা দোয়াব
- (খ) কৃষ্ণা-গোদাবরী দোয়াব
- (গ) মারাঠাবাদী অঞ্চল
বাহমনি-বিজয়নগর সংঘর্ষে উর্বরা ও সমৃদ্ধি অঞ্চলের কর্তৃত্ব
তুঙ্গভদ্রা দোয়াব ছিল কৃষ্ণা ও তুঙ্গভদ্রার মধ্যবর্তী উর্বরা অঞ্চল। কৃষ্ণা ও গোদাবরী দোয়াব ছিল অপর একটি উর্বরা অঞ্চল। কোঙ্কন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে ছিল মারাঠাবাদী অঞ্চল। পশ্চিমঘাট পর্বত ও সমুদ্রের মধ্যে এই অঞ্চলটিও ছিল খুব উর্বরা। এই অঞ্চলে ছিল মালাবার উপকূলের সেরা বন্দর গোয়া। ইরাণ ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে বহু দামি যুদ্ধের ঘোড়া আমদানি হত।
সংগ্ৰামে লিপ্ত বাহমনি-বিজয়নগর
দুই প্রতিবেশী বাহমনী ও বিজয়নগর এই সমৃদ্ধিপূর্ণ তিনটি অঞ্চলের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
বাহমনি-বিজয়নগর সংঘাতের সূত্রপাত
বাহমনি সুলতান প্রথম মহম্মদ শাহের আমল থেকেই কৃষ্ণা-তুঙ্গভদ্রার মধ্যস্থিত উর্বরা ভূখণ্ড রায়চুর দোয়াব ও মারাঠাবাদী অঞ্চলের আধিপত্য নিয়ে বাহমনী-বিজয়নগরের ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনা হয়।
বাহমনি সুলতান মুজাহিদ শাহের বিজয়নগর আক্রমণ
মুজাহিদ শাহ বিজয়নগর আক্রমণ করেন। কিন্তু বিজয়নগরের আনেগুণ্ডি দুর্গ অধিকার করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফিরে আসেন।
বাহমনি-বিজয়নগর শান্তির নীতি
বাহমনি রাজা দাউদ শাহ ও দ্বিতীয় মহম্মদ শাহ বিজয়নগরের ক্ষমতা প্রতিপত্তির কথা ভেবে এই রাজ্যের সঙ্গে শান্তি নীতি মেনে চলেন।
বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় হরিহর
দ্বিতীয় হরিহর ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে রায়চুরের যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে সন্ধি করেন। ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে এই সন্ধি ভেঙে বিজয়নগর রাজ পুনরায় বাহমনী রাজ্য আক্রমণ করে পরাস্ত হন।
বিজয়নগর রাজ প্রথম দেবরায় ও বাহমনি সুলতান ফিরোজ শাহের সংঘাত
- (১) দ্বিতীয় হরিহরের পুত্র প্রথম দেবরায় ছিলেন বিজয়নগরের শক্তিশালী রাজা। তিনি ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসলে বাহমনী সুলতান তাজউদ্দিন ফিরোজ শাহ বিজয়নগর আক্রমণ করেন। দেবরায় পরাস্ত হয়ে ভূখা সন্ধি দ্বারা ফিরোজ শাহকে ১০ লক্ষ টাকা, মণি-মুক্তা, হাতি দিতে বাধ্য হন।
- (২) সন্ধির শর্ত স্বরূপ তিনি তার নিজ কন্যাকে ফিরোজ শাহের সঙ্গে বিবাহ দেন এবং এই বিবাহের যৌতুক হিসেবে দোয়াবের বাকিপুর জেলা বাহমনী সুলতানকে দেন। মহা আড়ম্বরের মধ্যে এই বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিবাহ দ্বারা উভয় রাজ্যের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয় নি।
বাহমনি-বিজয়নগর তৃতীয় বার যুদ্ধ
বাহমনী জোট ভেঙ্গে বরঙ্গল বিজয়নগর জোটে যোগ দিলে ১৪২০ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় বার যুদ্ধ আরম্ভ হয়। বিজয়নগরী সেনা বাহমনী রাজ্যের দক্ষিণ ও পূর্বভাগ অধিকার করে। ফিরোজ শাহ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। কৃষ্ণা নদীর মোহানা পর্যন্ত অঞ্চল দেবরায় দখল করেন।
বিজয়নগরের রাজার অপমানজনক সন্ধি
বাহমনি রাজা আহমদ শাহের শাসনকালে বিজয়নগর রাজ দ্বিতীয় দেবরায় বাহমনী আক্রমণে পরাজিত হয়ে এক অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হন। বাহমনী সুলতান এই সন্ধি দ্বারা যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ও বাৎসরিক কর পান।
বিজয়নগরের রাজার বার্ষিক করের প্রতিশ্রুতি
বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় দেবরায় রায়চুর দোয়াব আক্রমণ করলে বাহমনি রাজা দ্বিতীয় আলাউদ্দিন শাহ তাকে পরাস্ত করে বহু অর্থ আদায় করেন এবং বার্ষিক করের প্রতিশ্রুতি পান।
মামুদ গাওয়ানের বিজয়নগর আক্রমণ
তৃতীয় মহম্মদ শাহের আমলে তার মন্ত্রী মামুদ গাওয়ান বিজয়নগর রাজাকে পরাস্ত করে গোয়া বন্দর, রাজমান্দ্রী ও কোন্দাবির অধিকার করেন।
উপসংহার :- বাহমনি-বিজয়নগর সংঘাতে দুটি রাজ্যই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাহমনি রাজ্যের ভেঙ্গে যাওয়ার পর বিজয়নগর সাম্রাজ্য -এরও পতন ঘটে।
(FAQ) বাহমনি-বিজয়নগর সংঘর্ষ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রায়চুর দোয়াব।
বাহমনি রাজ্যের মন্ত্রী মামুদ গাওয়ান।
বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় হরিহর।
দ্বিতীয় দেবরায়।