সিন্ধুদেশে আরব শাসন

সিন্ধুদেশে আরব শাসন প্রসঙ্গে আরব সৈনদের প্রাপ্য, আরবদের সামরিক উপনিবেশ, ভূমি রাজস্ব, জিজিয়া কর, কর আদায়ের ভার, বিচার ব্যবস্থা, পরমতসহিষ্ণুতা ও এ সম্পর্কে হজ্জাজের মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।

সিন্ধুদেশে আরব শাসন

ঐতিহাসিক ঘটনাসিন্ধুদেশে আরব শাসন
সিন্ধু জয়৭১২ খ্রি:
আরব সেনাপতিমহম্মদ বিন কাসিম
আরবদের শাসকহজ্জাজ
সিন্ধুর রাজাদাহির
সিন্ধুদেশে আরব শাসন

ভূমিকা :- আরবরা ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ জয় করেন। নববিজিত প্রদেশকে কয়েকটি জেলায় (ইক্তা) ভাগ করা হয়। সামরিক সেবার (যুদ্ধকালে সরকারের সহায়তা) শর্তে আরবদেশীয় সামরিক কর্মচারীগণ ঐ সকল জেলার ভার পান।

আরব সৈনদের প্রাপ্য

সাধারণ সৈন্যদের কেউ কেউ জমি, কেউ কেউ নির্দিষ্ট বেতন পাইত। মুসলমান সন্ত ও মসজিদের ইমামগণ জমি পেতেন।

আরবদের সামরিক উপনিবেশ

এই সব ব্যবস্থার ফলে সিন্ধুদেশে ধীরে ধীরে আরবদের কতকগুলি সামরিক উপনিবেশ গড়ে উঠতে থাকে। তাদের মধ্যে কয়েকটি ক্রমে বাণিজ্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ কেন্দ্রে পরিণত হয়।

আরব শাসনে ভূমি রাজস্ব

ভূমি রাজস্ব ও জিজিয়া কর ছিল সরকারী আয়ের প্রধান উৎস। সাধারণতঃ উৎপন্ন শস্যের দুই-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ ছিল ভূমি রাজস্ব।

আরব শাসনে জিজিয়া কর

প্রথম দিকে জিজিয়া কর জিম্মিদের (মুসলমান রাষ্ট্রের অমুসলমান অধিবাসী) কাছ থেকে জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার বিনিময়ে আদায় করা হত। এছাড়া অতিরিক্ত আরও কর ছিল।

আরব শাসনে কর আদায়ের ভার

সাধারণতঃ নিলাম ডেকে যে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ দিতে রাজী হত তাকে এই সকল কর আদায়ের ভার দেওয়া হত।

আরব শাসনে বিচারব্যবস্থা

  • (১) সংগঠিত কোনো বিচার বিভাগ ছিল না। অভিজাত শ্রেণী নিজের নিজের এলাকায় অনুষ্ঠিত অপরাধের বিচার করতেন। গুরুতর অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেবার অধিকার তাদের ছিল। কাজীরা ইসলামের আইন অনুযায়ী বিচার করত।
  • (২) যে সব মামলায় হিন্দুরা জড়িত থাকত তাদের বিচারও ঐ আইনমতে হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিন্দুদের অত্যন্ত কঠোর সাজা দেবার বিধান ছিল। যেমন, হিন্দুরা চুরি করলে অপরাধীর পরিবারের সকলকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা হত।
  • (৩) বিবাহ, উত্তরাধিকার, ব্যভিচার প্রভৃতি যে সকল ক্ষেত্রে কেবল হিন্দুরাই জড়িত থাকত সেখানে তাদের পঞ্চায়েতেই বিচার হত।

আরব শাসনে পরমতসহিষ্ণুতা

সিন্ধুদেশ জয় করবার সঙ্গে সঙ্গেই মন্দির ধ্বংস ও কাফেরদের নির্যাতন করা শুরু হল। কিন্তু পরদিনেই বোঝা গেল যে শক্তিপ্রয়োগে হিন্দু ধর্ম উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। অতঃপর আরবেরা পরমতসহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করে।

আরব শাসনে পরমতসহিষ্ণুতা সম্পর্কে হজ্জাজের মন্তব্য

এই নীতি বর্ণনা করতে গিয়ে হজ্জাজ বলেছেন, “যখন তারা খলিফার বশ্যতা স্বীকার করে তাঁকে কর দিতে সম্মত হয়েছে, তখন তাদের কাছ থেকে ন্যায়তঃ আর কিছুই দাবি করা উচিত নয়। তারা আমাদের রক্ষণাধীনে এসেছে, অতএব তাদের জীবন ও সম্পত্তির দিকে আমরা আর কোনো ক্রমেই হাত বাড়াতে পারি না। নিজ নিজ দেবদেবীকে পূজা করবার অধিকার তাদের দেওয়া হল। কাউকেও নিজ ধর্ম অনুসরণে নিষেধ করা বা বাধা দেওয়া হবে না।” মং

উপসংহার :- মহম্মদ বিন কাসিম মুলতানে ঘোষণা করেন, “খ্রিস্টানদের গীর্জা, ইহুদীদের ধর্মসভা ও পারসিক পুরোহিতদের পূজাবেদীর মতো হিন্দুদের মন্দিরও পবিত্র থাকবে।” তার এই ঘোষণা তার পরবর্তী শাসকরা কতদূর মান্য করেছিলেন তা বলা কঠিন।

(FAQ) সিন্ধুদেশে আরব শাসন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আরবরা সিন্ধুদেশ জয় করে কখন?

৭১২ খ্রিস্টাব্দে।

২. সিন্ধু জয়ে আরবদের শাসক কে ছিলেন?

হজ্জাজ।

৩. সিন্ধু জয়ে আরবদের সেনাপতি কে ছিলেন?

মহম্মদ বিন কাসিম।

৪. আরবদের সিন্ধু জয়ের সময় সিন্ধুর রাজা কে ছিলেন?

দাহির

Leave a Comment