আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রসঙ্গে তার জন্ম, বংশ পরিচয়, শিক্ষা, শিক্ষকতার কাজ, ছেলেবেলার গল্প, বধিরদের জন্য যন্ত্র তৈরি, বিবাহ, টেলিফোন আবিষ্কার, টেলিফোনে প্রথম কথা, টেলিফোনের প্রর্দশনী ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

ঐতিহাসিক চরিত্রআলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
জন্ম৩ মার্চ, ১৮৪৭ খ্রি:
দেশস্কটল্যাণ্ড
পরিচিতিবিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক
আবিষ্কারটেলিফোন
মৃত্যু২ আগস্ট, ১৯২২ খ্রি:
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

ভূমিকা :- টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের নাম বিজ্ঞান জগতে এক উজ্জ্বল জ্যোতি। টেলিফোনে প্রথম ধ্বনি ও প্রথম কথা ছিল “Mr. Watson, come here please. I want you.” এই কথাগুলো বলেছিলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। আজতো সর্বত্র গ্রাহাম বেল রয়েছে। পৃথিবীর সব যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে এই গ্রাহাম বেলই। টেলিফোনের মাধ্যমেই মানুষ এক দেশ থেকে আর এক দেশে কথা বলছে।

গ্ৰাহাম বেলের জন্ম

১৮৪৭ সালের ৩রা মার্চ গ্রাহামবেল জন্মগ্রহণ করেন এডিনবরায়।

গ্ৰাহাম বেলের বংশ পরিচয়

তিনি জাতিতে স্কট ছিলেন। তাঁর বাবা মেলভিলে বেলও ছিলেন প্রতিভাবান মানুষ। মেলভিলে ফোনেটিক্সে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

গ্ৰাহাম বেলের শিক্ষা

তিনি এডিনবরা স্কুলে পড়াশুনা করেন ও পরে লন্ডনের ইউনিভারসিটি কলেজে যান। পি.এইচ.ডি ডিগ্রী পান জার্মানির উর্জবাগ থেকে।

গ্ৰাহাম বেলের শিক্ষকতার কাজ

তিনি পরে তাঁর বাবার সঙ্গে কানাডায় যান, যেখানে তিনি মুক ও বধিরদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করেন।

গ্ৰাহাম বেলের ছেলেবেলার গল্প

  • (১) ছোটবেলায় একটা গল্প তিনি সবাইকেই শোনাতেন। তিনি এডিনবরার এক করাখানায় তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ছেলেগুলোকে কিছু গমের দানা দিয়ে কারখানার অফিসার বললেন এগুলোর খোসা কালকে ছাড়িয়ে আনবি।
  • (২) বেল বাড়িতে এসে নখ পরিষ্কার করার ব্রাশ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি খোসা ছাড়িয়ে নিলেন। পরের দিন কারখানার মালিককে এই কথাটা বললেন। মালিক এই কথা শুনে ব্রাশের নীতি অনুসারে এক মেশিন বসালেন। দেখা গেল খুব সহজেই খোসা ছাড়ানো যায়।

বধিরদের জন্য গ্ৰাহাম বেলের যন্ত্র তৈরি

মূক ও বধিরদের শিক্ষা দেবার জন্য তিনি একটা বিশেষ ধরনের যন্ত্র তৈরি করেন। যে যন্ত্রটি একই কথা বার বার বলে যাবে, তিনি বধিরদের শিক্ষা দেবার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেছিলেন।

গ্ৰাহাম বেলের বিবাহ

বধিরদের শ্রবণশক্তি দান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তাছাড়া তিনি ম্যাবেল হাবার্ড নামে একটি বধির মেয়েকে বিয়ে করেন।

গ্ৰাহাম বেলের টেলিফোন আবিষ্কার

  • (১) ১৮৭৫ সালের একটি ঘটনা যা গ্রাহাম বেলকে সজাগ করে তোলে। টেলিগ্রাফে অনেকগুলো বার্তা পাঠানো নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই কাজ করার সাথে বিদ্যুতের সাহায্যে শব্দ পাঠানো নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করেন।
  • (২) হঠাৎ তারের ভিতর দিয়ে এক স্প্রিংয়ের টংকার ধ্বনি তাকে সচকিত করে তোলে। সেই তখন থেকেই তিনি এই কাজে মেতে উঠেন, বিজ্ঞানে এই বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু গ্রাহাম বেলই প্রথম টেলিফোনীয় সঠিক নীতি ধরতে পেরেছিলেন।
  • (৩) তিনি বলেছিলেন বায়ুর যেমন ঘনত্বের তারতম্য হয়; তেমনি শব্দ উৎপাদনে যদি বিদ্যুৎ প্রবাহের তীব্রতার তারতম্য ঘটাতে পারি তাহলে টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর বদলে আমি শব্দধ্বনি পাঠাতে পারি। অনেক চেষ্টা করে তিনি একটা যন্ত্র তৈরি করলেন, যা আজ টেলিফোন নামে খ্যাত হয়েছে।

টেলিফোনের প্রথম কণ্ঠস্বর

  • (১) কিন্তু টেলিফোন আবিষ্কারক কে এই নিয়ে তুমুল হৈ চৈ বাধে। কারণ একই আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন তিনজন তাতেই এত গোলমাল, যখন আবিষ্কর্তা নিয়ে এত হৈ চৈ তখন বেল ও তাঁর এক সহকর্মী ওয়াটসন দুইজনে মিলে টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত।
  • (২) ১৮৭৬ সালে ১০ই মার্চ বিকালে রিসিভার লাগানো তারের এক প্রান্ত কানে লাগিয়ে ওয়াটসন ঘরে বসে কাজ করছিলেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন গ্রাহাম বেলের কন্ঠস্বর, তিনি আনন্দে ছুটে গেলেন গ্রাহাম বেলের কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরলেন।

ব্রাজিলের সম্রাটের সাথে গ্রাহাম বেলের টেলিফোনে কথা

একদিন ব্রাজিলের সম্রাট ডন পেদ্রো কানে রিসিভার লাগিয়ে বসে আছেন। অন্য প্রান্ত থেকে গ্রাহাম বেল হ্যামলেট থেকে দুটো বিখ্যাত লাইন টেলিফোন আবৃত্তি করলেন “To be or not to be …. সম্রাট চেঁচিয়ে বললেন- My God! It speaks !

গ্রাহাম বেলের টেলিফোনের প্রর্দশনী

তারপর এর প্রদর্শনীতে এই টেলিফোন দেখানো হল। এই টেলিফোন দেখার ও কথা বলার ভিড় উপচে পড়ল, মানুষের চোখে ও মনে বিস্ময়। এই যন্ত্রে কথা বলা ও শোনা যায়।

টেলিফোনের আবিষ্কর্তা নিয়ে মামলা

টেলিফোন আবিষ্কর্তা কে এই নিয়ে অনেক মামলা চলে। শেষে গ্রাহাম বেলই টেলিফোন আবিষ্কারক হিসাবে গণ্য হন।

গ্রাহাম বেলের ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গ জীবন

জীবনে অনেক সম্মান পান, তবে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সুখী ছিলেন না। নিঃসঙ্গ জীবনে খুব কষ্ট পেতেন, নিজের আবিষ্কৃত টেলিফোনটাকে তিনি একসময় ঘৃণা করতেন। বললেন এই জানোয়ারটাকে আমি কখনও ব্যবহার করি না। তাঁর মানসিক যন্ত্রণাই তাঁকে খুব কষ্ট দিত।

গ্রাহাম বেলের মৃত্যু

১৯২২ সালের ২রা আগস্ট নিজের বাড়িতেই তিনি মারা যান।

উপসংহার :- বিশ্ব বিখ্যাত তাঁর আবিষ্কার টেলিফোন আমাদের প্রতি মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় বৈজ্ঞানিক গ্রাহাম বেলকে।

(FAQ) আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আলেকজান্ডার গ্ৰাহাম বেল কে ছিলেন?

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে তিনি সবচেয়ে পরিচিত।

২. টেলিফোনের আবিষ্কর্তা কে?

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।

৩. টেলিফোনে প্রথম কথাটি কি ছিল?

“Mr. Watson, come here please. I want you.”

৪. গ্রাহাম বেলের টেলিফোন আবিষ্কারের সময় ব্রাজিলের সম্রাট কে ছিলেন?

ডন পেদ্রো।

৫. কাকে বোবাদের পিতা তথা দ্য ফাদার অফ দ্য ডিফ নামে ডাকা হতো?

আলেকজান্ডার গ্ৰাহাম বেল।

Leave a Comment