সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ -এর প্রতিষ্ঠায় লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টা, সিমলা সাক্ষাৎ, প্রতিনিধি দল, দাবি সমূহ, শিবলী নোমানীর অভিমত, দাবি সমূহ মান্য করার প্রতিশ্রুতি, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, মুসলিম লীগের লক্ষ্য, প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক ও চরম হিন্দু-বিদ্বেষী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুসলিম লীগ সম্পর্কে জানবো।
মুসলিম লীগ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ, ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার রক্ষার জন্য গঠিত মুসলিম লীগ, নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগ, সিমলা সাক্ষাৎ, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, মুসলিম লীগের লক্ষ্য, মুসলিম লীগের সভাপতি ও সম্পাদক, হিন্দু বিদ্বেষী প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগ ও মুসলিম লীগের সদস্য পদ সম্পর্কে জানব।
সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা (The Birth of All India Muslim League)
বিষয় | মুসলিম লীগ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৩০ ডিসেম্বর, ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | ঢাকা |
প্রথম সভাপতি | আগা খাঁ |
সম্পাদক | মহসীন-উল্-মূলক ভিকার-উল্-মূলক |
ভূমিকা :- হিন্দু-মুসলিম বাঙালির ঐক্য বিনষ্ট করে ভারত-এর জাতীয়তাবাদকে সমূলে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সরকার ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করে।
লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টা
মুসলিম সমর্থন আদায়ের জন্য লর্ড কার্জন ঢাকার (বর্তমান বাংলাদেশ-এর রাজধানী) নবাব সলিমুল্লা-কে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন এবং মুসলিম তরুণদের নানা ভাবে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেন।
বঙ্গভঙ্গের পক্ষে মুসলিম
হিন্দু-মুসলিমের সমবেত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বা স্বদেশী আন্দোলন-এর পাশাপাশি সরকারি সমর্থনপুষ্ট কিছু মুসলিম বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিলেন।
সিমলা সাক্ষাৎ
সরকারের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় আগা খাঁ সহ ৩৫ জন বিশিষ্ট মুসলিমের এক প্রতিনিধি দল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর বড়লাট মিন্টো-র সঙ্গে দেখা করে আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ আর্চিবোল্ড রচিত একটি স্মারক লিপি মারফৎ মুসলিম সমাজের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দাবি করেন।
সিমলা সাক্ষাতে প্রতিনিধি দল
এই প্রতিনিধি দলে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কোনও অর্থেই জন প্রতিনিধি ছিলেন না। নবাব, জায়গিরদার, তালুকদার, জমিদার, উকিল, ব্যবসায়ী প্রভৃতি শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে এই প্রতিনিধি দলটি গঠিত ছিল।
সিমলা দৌত্ব-এর দাবিসমূহ
এই স্মারক পত্রে নিম্নলিখিত দাবিগুলি পেশ করা হয়।
- (১) সামরিক, বেসামরিক ও হাইকোর্ট -এ যথেষ্ট সংখ্যায় মুসলিমদের নিয়োগ এবং উচ্চ পদগুলিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ব্যতীতই নিয়োগের ব্যবস্থা।
- (২) মিউনিসিপ্যালিটি, জেলা-বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিণ্ডিকেটে মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদান।
- (৩) জনসংখ্যার অনুপাতে নয়— রাজনৈতিক গুরুত্বের ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাদেশিক আইনসভায় মুসলিমদের নির্বাচন।
- (৪) মুসলিমরা যাতে অগুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘুতে পরিণত না হয় তার জন্য পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে যথেষ্ট সংখ্যক মুসলিমের কেন্দ্রীয় আইনসভায় (Imperial Legislative Council) নির্বাচন।
- (৫) একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাহায্য করা যা হবে মুসলিম ধর্মীয় ও বুদ্ধিগত জীবনের কেন্দ্রস্বরূপ।
শিবলী নোমানীর অভিমত
এই প্রতিনিধি দলে মহম্মদ আলি জিন্না, মহম্মদ ইকবাল বা শিবলী নোমানীর মতো মানুষদের নেওয়া হয় নি। শিবলী নোমানী বলেন যে, “সিমলা ডেপুটেশনের গুরুত্ব আমরা বুঝি না। এটি হল সাম্প্রদায়িক মঞ্চের ওপর অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ও জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী।”
দাবি মান্য করার প্রতিশ্রুতি
এই সাম্প্রদায়িক ‘প্রদর্শনী’-র মূল সংগঠক ছিল ব্রিটিশ সরকার। মৌলানা মহম্মদ আলি মন্তব্য করেন যে, সিমলায় আগত প্রতিনিধি দলটি ‘কর্তৃপক্ষের আদেশে কর্তব্যরত ছিল। বড়লাট মিন্টো অবশ্য এই প্রতিনিধি দলের সাম্প্রদায়িক দাবিগুলি মেনে নেবার প্রতিশ্রুতি দেন।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা
সরকারি প্ররোচনায় এই বছরেই অর্থাৎ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ’।
মুসলিম লীগের লক্ষ্য
সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপ –
- (১) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন সুনিশ্চিত করা।
- (২) মুসলিম সমাজের স্বার্থ সর্বতোভাবে রক্ষা করা।
- (৩) জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব করা।
- (৪) মুসলিম যুবগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
- (৫) অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি যাতে মুসলিমদের বিদ্বেষ দেখা না দেয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
মুসলিম লীগের সভাপতি ও সম্পাদক
আগা খাঁ ছিলেন মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি। মহসীন-উল্-মূলক ও ভিকার-উল্-মূলক ছিলেন লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
চরম হিন্দু-বিদ্বেষী প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগ
হিন্দু-বিরোধিতা ও কংগ্রেস-বিরোধিতাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী বলেন,যে, জন্মলগ্ন থেকে ব্রিটিশ আনুগত্যের ধ্বজা উড়িয়ে লীগ হয়ে উঠেছিল মুসলিম জমিদার ও জোতদার শ্রেণীর সংকীর্ণ স্বার্থের রক্ষক, মধ্যবিত্তের শুভাশুভের প্রতি উদাসীন এবং চরম হিন্দু-বিদ্বেষী একটি প্রতিষ্ঠান।
মুসলিম লীগের সদস্য পদ
কোনও সাধারণ মুসলিম এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারত না। কারণ, লীগের সদস্যপদ পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা ছিল বার্ষিক ৫০০ টাকা আয় এবং সদস্য চাঁদা ২৫ টাকা।
উপসংহার :- বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে মুসলিম লীগ ছিল সরকারের পক্ষে এবং আন্দোলনের বিরুদ্ধে। লীগের প্রত্যক্ষ মদতে এই সময় বাংলায় বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে।
(FAQ) মুসলিম লীগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায়।
ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ।
আগা খাঁ।