লুই বেনেডেকের প্রেমপত্র

অস্ট্রিয়ার ফিল্ডমার্শাল লুই বেনেডেকের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে লুই বেনেডেকের পরিচিতি, লুই বেনেডেকের দেশ, লুই বেনেডেকের খ্যাতি, লুই বেনেডেকের প্রেম, লুই বেনেডেকের প্রেমিকা ও লুই বেনেডেকের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

ফিল্ড মার্শাল লুই বেনেডেকের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রলুই ভন বেনেডেকের প্রেমপত্র
পরিচিতিবিখ্যাত সেনাপতি ও সিপাহশালার
দেশঅস্ট্রিয়া
প্রেমিকাজুলিয়া
প্রেমপত্র রচনা৪ঠা আগষ্ট, ১৮৬৬ খ্রি
লুই বেনেডেকের প্রেমপত্র

লুই ভন বেনেডেক ছিলেন অষ্ট্রিয়ার প্রধান সেনাপতি ও সিপাহশালার। ১৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে তিনি সেডোয়ার যুদ্ধ-এ পরাজিত হন। ঘটনাচক্রের আবর্তনে বাধ্য হয়েই তিনি অস্ট্রিয়া বাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু পরে পরাজিত হলে সমর পরিষদের কাছে তাঁকে কৈফিয়ত দিতে হয়। তাঁর পরাজয়ের জন্য এমনকি তাঁর পত্নীও তাঁকে বিদ্রূপ ও ভৎসনাপূর্ণ পত্র লিখেছিলেন। তাতে বেনেডেক অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়েন, কারণ তাঁর ধারণা (শুধু তাঁর কেন সকলেরই ধারণা হওয়া স্বাভাবিক) যে অন্য়ে যাই বলুক না কেন প্রাণাধিকা পত্নীর নিকট তিনি সকল ব্যথার দুখের সান্ত্বনা পাবেন। বিপদরূপ কষ্টিপাথরে ভালবাসার পরীক্ষা হয় – সেই কারণেই কিন্তু মার্শাল প্রিয়তমার অনাদর ও নির্মমতায় ব্যথিত হৃদয়ে জুলিয়াকে লিখলেন –

ভিয়েনা, ৪ঠা আগষ্ট, ১৮৬৬

তোমার ২রা তারিখের ভালমন্দ মেশানো চিঠি এই মাত্র পেলাম। তুমি লিখেছ আমি সর্বদা তোমার প্রতি রূঢ় আচরণ করি, আমি নির্মম – যাক সে কথার জবাব আজ আর দোব না। সে সব কথার আলোচনা করবার ইচ্ছা আমার নেই। আমি শুধু বলতে চাই যে যখন বিশ্ববাসী সমস্বরে ও প্রকাশ্যে যেখানে সেখানে তোমার স্বামীর নিন্দা করছে, তাকে ভর্ৎসনা করছে, হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইছে তখন সেনাপতি বেনেডেকের পত্নীর উচিত তার স্বামীর সমদুখিনী হওয়া। আজ আমার ও আমার দেশের ভাগ্য বিপর্যয়ে তোমার উচিত – আমার পরাজয়কে তোমার পরমতম দুর্ভাগ্য বলে মেনে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়া। আমার দুখের সময় তোমার কর্তব্য সুমিষ্ট ব্যবহারে মধুর কথাবার্তায় আমার দুখকে লাঘব করা। চারিদিকে শত্রু ও কু-লোক বিষোদ্গার করছে, এই সময় তোমার কণ্ঠ সংযত হওয়াই বিধেয়, নইলে লোকে ভাল কথারও অপব্যাখ্যা করে আমার নিন্দা গ্লানিকে চতুর্গুণ করে তুলবে। লোকের স্বভাবই তাই – তারা অন্যের দুঃখে হাসে, দুর্ভাগ্য নিয়ে ব্যঙ্গ করে। স্বামীর শত্রুকে কোনো কথা বলবার সুযোগ দেওয়া স্ত্রীর সম্পূর্ণ অন্তায়।

পরাজয়ের আঘাত আমার বুকে ততটা বাজে নি যতটা বেজেছে তোমার অনাদর ও বিদ্রূপ। তোমার ভালভাবেই জানা উচিত এ বেদনা বড় মর্মান্তিক, এ ক্ষত বড় গভীর, চিরস্থায়ী – আর তা এসেছে প্রধানত তোমার কাছ থেকে। জগতের যা কিছু ছোট বড় উচ্চ নীচ ভালো মন্দ পরিচিত আত্মীয় কিম্বা অপরিচিত বন্ধু শত্রু, যে কেউ হোক না কেন, একমাত্র তুমি ভিন্ন আমার অন্তরের অন্তস্থলে সূক্ষ্মতম তন্ত্রীতে আঘাত করতে পারে না, আমাকে প্রকৃত ব্যথাতুর করতে পারে না, বা করবার ক্ষমতাও নেই। তোমার সে ক্ষমতা আছে বলেই বোধ হয় তুমি আমায় আঘাত করেছ, আর সেই জন্যই সে আঘাত এত প্রচণ্ড!

অন্যে যা-ই করুক তুমি অন্তত আমায় রেহাই দেবে – শুধু এইটুকু দাবী কি আমার নেই? তোমার মনে যা এলো তা-ই লিখে আমায় ব্যথা না দিলেই কি নয়? তুমি যেন কোনো কিছুর প্রতিশোধ প্রহণ করতে উদ্য়ত, যেন কি এক রিপু আমার বিপক্ষে তোমাকে উত্তেজিত করছে। দুর্দৈব আজ আমায় যে অবস্থায় নামিয়ে এনেছে সে দুরবস্থার বিষয় আমাকে সম্যক উপলব্ধি না করিয়ে তুমি কি নিরস্ত হবে না? আমি যাতে তা চিন্তা না করি সে ব্যবস্থা তুমি করছ না কেন? প্রকৃত বীর সৈনিকের মত আমি যে পরাজয়কে সগৌরবে মাথা পেতে নিয়েছি একথা মনে করে তোমার শান্ত থাকা উচিত, তোমারও নিজেকে প্রবোধ দেওয়া উচিত।

আমি তো কিছুই অনুযোগ করি না, একদিন আসবে যেদিন আমি ন্যায় বিচার পাব, আর যদি তা নাও আসে তাহলেও আমার সান্ত্বনা যে বিবেকের কাছে, ভগবানের চোখে আমি নিষ্কলুষ।

আমার চিরদিনের আশা, তোমায় নিয়ে আমি আমার শেষ জীবন সুখে ও শান্তিতে কাটিয়ে দেব – আর সেই আমার পরম সুখ। তোমায় ভালবাসি কিনা, তোমার উপর আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা আছে কিনা তার প্রমাণ তো যুদ্ধের সময়ে তোমায় লেখা আমার চিঠিগুলো থেকেই পেয়েছ প্রাণেশ্বরি! তাছাড়া বহু পূর্বেই তো সে কথা তোমার জানা উচিত ছিল। সেগুলো যদি প্রকৃষ্ট প্রমাণ মনে না কর – যদি আমার অন্তরের ক্ষতকে প্রলেপ না দিয়ে তাকে আরও দুরারোগ্য করে তুলতে চাও, আমার দুর্ভাগ্যকে ভাল চোখে দেখতে না পার, তবে তোমার কাছ থেকে সরে থাকাই আমার শ্রেয়ঃ। বেশ তাই হবে, আমার দুর্ভাগ্য আমি একাকীই ভোগ করব, নির্জনবাসই আমার মঙ্গল – তা সে পৃথিবীর যেখানেই হোক! আমি যা বলছি তা বেশ বিবেচনা করে সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ অবস্থাতেই বলছি, মনে আমার কোনো আবিলতা – কোন ক্ষোভ নেই। আমার নিজের উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে, আমার শিরা উপশিরা স্নায়ুমণ্ডলী আমার সম্পূর্ণ আয়ত্তে। সকল অবস্থাতেই নিজকে ঠিক রাখতে পারি, শুধু পারি না যখন তোমার কথা ভাবি আর তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখ যেন নিষ্প্রভ হয়ে আসে, অন্তরে যেন কি এক অব্যক্ত বেদনা অনুভব করতে থাকি। আজকে কেবল একটু বে-ঠিক হয়ে পড়েছিলাম। সকালবেলা বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে বড্ড লেগেছে। যাক, হাত পা ভাঙ্গে নি – দু একদিনের মধেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

লিখতে বড় কষ্ট হচ্ছে – নেহাৎ তোমার কথা কখনও অগ্রাহ্য় করি নি তাই পত্র-পাঠই তার উত্তর দিলাম। আমার এখানে থাকবার দরকার নাই তবু কেন যে থাকতে হচ্ছে তা কর্তারাই জানেন, যারা আমার বিচার করছেন। আর তা ছাড়া তুমি তো জান কোনো কাজের জন্য় আমি কখন কারো খোসামোদ করি না। আমার কি ব্যবস্থা হবে তা দু একদিনের মধ্যেই জানতে পারব।

তোমার হার্টের অসুখ কেমন আছে। শরীরের প্রতি যত্ন রেখো; যাতে ভাল থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবে – কারণ তুমি সুস্থ থাকলেই আমার আনন্দ – তুমিই আমার সুখের উৎস আবার তুমিই আমার দুখের আধার। আমি যে তোমাতেই মিশে আছি। প্রিয়ে প্রিয়তমে – চুমো নিও!

লুই বেনেডেক

(FAQ) লুই বেনেডেকের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লুই বেনেডেক কে ছিলেন?

অষ্ট্রিয়ার প্রধান সেনাপতি ও সিপাহশালার।

২. কোন যুদ্ধে লুই বেনেডেক পরাজিত হন?

স্যাডোয়ার যুদ্ধে।

৩. লুই বেনেডেক কবে তার প্রেমপত্রটি রচনা করেন?

৪ঠা আগষ্ট, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment