বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি -র প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাকাল, সভাপতি ও সম্পাদক, সোসাইটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, সদস্য, সভার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, বিপিন চন্দ্র পালের অভিমত, প্রতিযোগিতা, আক্রমণ, কার্যাবলী, দাবি ও সোসাইটির অবলুপ্তি সম্পর্কে জানবো।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি
বিষয় | বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২০ এপ্রিল ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | জর্জ টমসন |
স্থান | কলকাতা |
সভাপতি | জর্জ টমসন |
সম্পাদক | প্যারিচাঁদ মিত্র |
ভূমিকা :- ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত প্রকৃতিকে শোষণমূলক, বিজাতীয় শাসন হিসেবে বুঝতে ভারতীয়দের ১০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি
ভারত -এ জাতীয়তাবাদ অবশ্যই ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অবশ্য তার আগে কিছু ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন ছিল, যেগুলি স্বাধীনতা সম্পর্কে কিছু আদিম ধারণা নিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।
জর্জ টমসনের ভারত আগমন
১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংল্যান্ড -এর বিখ্যাত বাগ্মী ও রাজনৈতিক নেতা জর্জ উমসনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন।
বাংলার যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধকরণ
কলকাতায় অবস্থানকালে বিভিন্ন বক্তৃতাদির মাধ্যমে টমসন বাংলার যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠাকাল
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল বেঙ্গল-ব্রিটিশ-ইণ্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
জর্জ টমসনের উদ্যোগে কলকাতায় ‘বেঙ্গল-ব্রিটিশ-ইণ্ডিয়া সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সভাপতি ও সম্পাদক
জর্জ টমসন ছিলেন এই সভার সভাপতি এবং প্যারীচাদ মিত্র এই সভার সম্পাদক ছিলেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির লক্ষ্য
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রধান লক্ষ্য ছিল –
- (১) ভারতীয় জনগণের মধ্যে সুনাগরিকের গুণাবলি গড়ে তোলা।
- (২) ভারতীয়দের মনে ব্রিটিশ শাসনের অবস্থা ও নিজেদের ন্যায্য অধিকারসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
- (৩) ইংল্যান্ডের শাসনকর্তা সার্বভৌম রাজা বা রানীর ব্যক্তি ও সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগভাবে এগুলি আদায় করার জন্য চেষ্টা চালানো।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির উদ্দেশ্য
ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অবস্থা ইংল্যাণ্ডে প্রচার এবং ভারতবাসীর জন্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার লাভ করাই ছিল এই সমিতির উদ্দেশ্য।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সদস্য
এই সোসাইটির সদস্যরা হলেন জর্জ টমসন, জি.এফ রেমফ্রাই, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ব্রজনাথ ধর, কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, হরি মোহন, গোবিন্দচন্দ্র সেন, চন্দ্রশেখর দেব, শ্যামাচরণ সেন ও সাতকড়ি দত্ত।
ইয়ং বেঙ্গল দলের সাথে বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির যোগ
এই সোসাইটির সদস্যরা সকলেই ইয়ং বেঙ্গল দলের সাথে জড়িত ছিলেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ
পণ্ডিত ভূদেব মুখোপাধ্যায় এই সভাকে ‘ভারতবর্ষীয় সভা’ নাম দেন। এই সমিতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায়ভুক্ত। ইংরেজদের তাঁরা মিত্র বলেই মনে করতেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি সম্পর্কে বিপিন চন্দ্র পালের অভিমত
বিপিন চন্দ্র পাল লিখেছেন যে, “এই জন্য আমাদের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বাধিয়া ছিল সমাজ ও ধর্মের সঙ্গে, রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে নহে।”
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতি জমিদারদের উদাসীনতা
রাধাকান্ত দেব এবং দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতো জমিদাররা এই সমিতির ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দেখান নি।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির ও জমিদার সভার প্রতিযোগিতা
জমিদার সভা ও বেঙ্গল-ব্রিটিশ-ইণ্ডিয়া সোসাইটির মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল। ‘জমিদার সভা’ জমিদারদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত ছিল। অপরপক্ষে, প্যারীচাঁদ মিত্র জমিদারদের সমালোচনা করে রায়তদের স্বার্থের কথাই বলতেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির আক্রমণ
এই সোসাইটি নিজস্ব মঞ্চ থেকে এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমিদার এবং নীলকরদের ওপর তীব্র আঘাত হানতে শুরু করে।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির কার্যাবলী ও দাবী
এই সমিতির উল্লেখযোগ্য কার্যাবলী ও দাবি গুলি ছিল নিম্নরূপ –
- (১) এই সমিতি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ সম্পর্কে কিছু সংস্কারে সফল হয়।
- (২) সরকারি চাকরিতে অধিক সংখ্যক ভারতীয়দের নিয়োগ, আদালতে দেশীয় ভাষার ব্যবহার এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের দাবি জানায়।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির অবলুপ্তি
ভারতে রাজনৈতিক দলসমূহের জন্মলাভে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করলেও ১৮৫০ সাল নাগাদ এই প্রতিষ্ঠান নিস্তেজ হয়ে যায়।
উপসংহার :- বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি বা বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি ছিল ব্রিটিশ ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক জন সংগঠন। কিন্তু এই সোসাইটি খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারে নি।
(FAQ) বেঙ্গল ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সোসাইটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল।
জর্জ টমসন।
কলকাতায়।
রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়।
ইয়ং বেঙ্গল।
জর্জ টমসন।
প্যারিচাঁদ মিত্র।