রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র

এলিজাবেথকে লেখা রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র প্রসঙ্গে রবার্ট ব্রাউনিং-এর পরিচয়, রবার্ট ব্রাউনিং-এর খ্যাতি, রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেম, রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমিকা ও রবার্ট ব্রাউনিং-এর মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

কবি রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্ররবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র
পরিচিতিবিখ্যাত ইংরেজ কবি ও নাট্যকার
দেশইংল্যান্ড
প্রেমিকাএলিজাবেথ
স্ত্রীএলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং
রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র

বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও নাট্যকার রবার্ট ব্রাউনিং ও এলিজাবেথ ব্যারেটের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে তারা বিবাহ করেন। এলিজাবেথের পত্রের উত্তরে রবার্ট ব্রাউনিং লিখছেন :

প্রিয়তমে,

তোমার গত সপ্তাহের পত্রের উত্তরে আমি আজ যৎসামান্য় যা কিছু লিখতে সক্ষম তা লেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রথমেই তোমাকে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ – আমার এ সময়েই এই অনুরোধ অত্যন্ত জরুরী – আমাকে সাহায্য করো, আর সামান্য কটি ছত্রের পশ্চাতে যে অনুভূতি অনুরাগের পটভূমি তা উপলব্ধি করে তুমি আমায় সাহায্য করো। তোমার পত্রটি আমি বারবার পাঠ করেছি। আমি তোমাকে বলি – না, না, তোমাকে নয়, যে স্বীকৃতি আমি এই মুহূর্তে করতে যাচ্ছি তা যে শুনবে সেই কল্পনার বর্ণগন্ধে গঠিত সেই নারীকে আমি বলছি – আমার সেই স্বীকৃতি ও আত্মনিবেদনে বিন্দু মাত্রও ক্লান্তি নেই অবসাদ নেই; থাকতে পারে না, কারণ পরিচয়ের প্রথম লগ্ন থেকে এই চিঠি লেখার মুহূর্ত পর্যন্ত আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে, প্রেমে আমি তোমায় জয় করবো, বা তোমার প্রেমে আমি আশ্রয় লাভ করবো। এই শব্দটাই যেন আমি লিখতে পারছি না, মনে হয় এ এমন অসম্ভব, এমন অসামঞ্জস্য়পূর্ণ; আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের এমন রূপান্তর এতে সূচিত হয় যে, মনে হয় এমন সৌভাগ্যের অধিকারী কি আমি হবো কখনও, হতে পারবো? তোমার অন্তরে যেসব অনুভূতির সঞ্চার হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি, তার কোনো একটিকে উচ্ছেদ করে কি আমি তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারি?

যদি আমি নিজেকে নব রূপে সৃষ্টি করতে পারতাম, ধরো, আমি যদি হতাম সোনা, তাহলে এখনও যে মুক্তো তুমি নিশ্চয় অঙ্গে ধারণ করো – তার পশ্চাৎপটের বেশী কিছু হতে আমি কখনও চাইতাম না। তোমার এই পত্রে যে সম্মান ও অনুরাগ তুমি আমায় দিয়েছ তোমার সে চিঠিখানি মাখায় ধরে বা বক্ষে ধরেও আমার সাধ মিটছে না – তাই আমি গ্রহণ করলাম, কম্পিত চিত্তে আর অপরিমেয় কৃতজ্ঞতায়। তোমার প্রেমে চিরঋণী হওয়ার যে প্রগাঢ় গর্ব আমার হৃদয় ভরে দিয়েছে; সে গর্বে আমি তোমার, চিরকালের তোমার। আমরা উভয়ের প্রতি সুবিচার করবো এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি যতবার তোমার পত্র পাঠ করি, আর যতই আমাকে গ্রহণ করে আমার জীবনের কল্পিত সৌভাগ্যকে নষ্ট করে দেবে বলে তোমার আশঙ্কার কথা মনে উদিত হয়, ততই আমার মন বলে, তোমাতে – তোমার প্রেমেই আমার সৌভাগ্য, আমার পূর্ণতা। কথায় তুমি যেমন আমাকে বাঁধতে পার না, আমিও তোমায় পারি না; কিন্তু, যদি আমি তোমায় ভুল বুঝে না থাকি তো শুধু এইটুকু আশ্বাস কি তুমি আমায় দেবে, যে দুঃখ আমার সহজাত তার বেশি দুঃখ আমায় দেবে না? বলবে না তো কদাচ, যে দান অপ্রেমের কেবল তাই তুমি আমাকে দিয়েছ?

তোমার পত্রের মর্ম আমি ঠিক ঠিক ধরেছি তো? তোমার কোমল, আপনভোলা হৃদয় ও তার সরল অনুভূতি মাঝে মাঝে কল্পনায় আমাকে যা জানায় আমি সত্যই তা নই। কিন্তু গত কাল থেকেই নয় বা দশ-বিশ বছর আগে থেকেও নয় – আমি আমার জীবনের গভীরে অনুসন্ধান করেছি, তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি, কীসে তার ক্ষতি বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় গভীরভাবে আলোচনা করেছি, আমি জেনেছি যদি কারও পক্ষে কিছু জানা সম্ভব – আমার জীবনকে তোমার জীবনে পরিণত করা, তোমার জীবনের সংযোগে একে পূর্ণতর কর, এতেই আমার অপরিমেয় সুখ। এ কথা আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি এবং অনুভব করছি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমি স্বার্থপরের মত তোমার আশ্রয় পেতে চাইছি। অবশ্য আমাকে তুমি নির্বোধ ভেবো না, আমি উপলব্ধি করতে পারি – অন্য একটি জীবনকে সুখী করতে পারার চেতনা থেকে তোমার চিত্ত প্রসন্ন হবে, সুখী হবে; কিন্তু জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ, মহত্তম, যা অন্যান্য় সব কিছুর মত তোমা থেকেই প্রবাহিত হবে, তা হবে তোমারই অবদানের একটি প্রতিচ্ছবি।

প্রিয়তমে, আজ এখানেই শেষ করব – যুক্তি তর্ক বা কথার অধিকার যদি আমার থাকতো তবে আমি তা ব্যবহার করতাম না – তোমাতে আমার বিশ্বাস, পরম বিশ্বাস, শুধু তোমাতেই আমার একান্ত প্রগাঢ় বিশ্বাস।

“যে কথা শোনার আমার অধিকার সে কথা আমায় বলো”; আমি তা শুনব, আর আগে যেমন ছিলাম বা এখন যেমন আছি – তেমনি কৃতজ্ঞতায় আমার চিত্ত ভরে যাবে। তোমার বন্ধুতা আমার গর্ব, আমার সুখ। যদি তুমি আমায় বলতে তোমার হৃদয় অন্য এক তারে বাঁধা, বলতে যে সেখানে আমি তোমার সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারি, তাহলে সেখানে তোমার সেবাই হতো আমার গর্ব, আমার সুখ। আমি আমার প্রেমের গতিপথের দিকে তাকিয়ে আছি; সে শুধু সম্মুখের পথে চলতে জানে; কোনো রকমের অ-প্রেম অ-সহৃদয়তা – এসব কথা ভাবতেও আমার হাসি পায় – আমাদের হৃদয়াভিসারের পথে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তোমাকে আমার হৃদয় সমর্পণ করলাম, যা বলবে তা বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত থাকবো; তোমার সামান্য়তম ইচ্ছা বলে যা আমি অনুভব করব তাই আমি পূরণ করবো – তোমার ঈপ্সিত ও ঘোষিত বাসনার কথা ছেড়েই দিলাম। এই আত্মঘোষণা ও স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল; আরও এই কারণে যে সমগ্র বিশ্ব আমাদের এই সম্পর্কের কথা জানে।

আমার জীবনের কাঠামো ও ছক বহুদিন পূর্বেই নির্দ্ধারিত হয়ে গিয়েছিল; তাতে তোমার বা তোমার মত কোনো একজনের স্থান ছিল অচিন্তনীয়। কারণ, সম্ভবতার পথ ধরেই আমরা জীবনের ছক কাটি, দৈবের কথা কে জানে – সুতরাং তোমাকে বা তোমার আশা কোথায়? সে জন্যই আমার আপন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমি ছিলাম একান্তই উদাসীন; শুধু রুটি আর আলু খেয়ে যে লোক বছরের পর বছর কাটিয়েছে সে উদাসীন থাকবে না তো কে থাকবে? তাই পদ্মকোরকের মত ফুটে ওঠা ছাড়া অন্য কোনো দিকেই আমার ব্যস্ত হবার দরকার ছিল না। কিন্তু, এখন তুমি এসেছ আমার জীবনের সান্নিধ্যে; আর সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুই হয়েছে রূপান্তরিত। এক কথায়, যা কিছু করণীয় আছে, যা কিছু করা সম্ভব বলে সবাই বলে, আমি তাই করতে প্রস্তুত; আমার সমস্ত শক্তি সংকল্প শুভ কর্মে নিয়োজিত হউক; যা কিছু প্রয়োজনীয় তা করতে আমি আত্মনিয়োগ করব।

প্রিয়তমে আমার, এসব কথার শুধু মর্মটুকু তুমি গ্রহণ করো – এই আমার অনুরোধ। তোমার যা অভিমত তাই সর্বোত্তম, আর আমি তোমার।

হ্যাঁ, তোমার চিরকালের। তুমি যা কিছু হতে পেরেছ এবং হয়েছ তার জন্য ঈশ্বর তোমার সহায় হউন; আর তিনি যা কিছু আমাদের বিধিলিপি নির্ধারণ করেছেন, ঘটুক তা, তুমি আমারই হবে।

রবার্ট ব্রাউনিং

(FAQ) রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রবার্ট ব্রাউনিং কে ছিলেন?

একজন বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও নাট্যকার।

২. রবার্ট ব্রাউনিং-এর প্রেমিকার নাম কী?

এলিজাবেথ।

৩. রবার্ট ব্রাউনিং-এর স্ত্রীর নাম কী?

এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং।

Leave a Comment