রবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র

স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত গ্রাম্য-কবি রবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে রবার্ট বার্নসের পরিচিতি, রবার্ট বার্নসের খ্যাতি, রবার্ট বার্নসের প্রেম, রবার্ট বার্নসের প্রেমিকা, রবার্ট বার্নসের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

কবি রবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্ররবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র
পরিচিতিবিখ্যাত গ্রাম্য-কবি
দেশস্কটল্যান্ড
প্রেমিকানেলী ফিজপ্যাট্রিক, মিস আর্থার, মিস এলিসন
প্রেমপত্র প্রেরণমিস এলিসন
রবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র

স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত গ্রাম্য-কবি রবার্ট বার্নস প্রণয়ে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পনের বছর বয়সে তিনি গ্রাম্য-কৃষক-বালিকা নেলী ফিজপ্যাট্রিকের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর প্রেমের আকাশে তারপর উদিত হন মিস আর্থার এবং তারপর ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে মিস এলিসন বেগবি চাষার মেয়ে-রূপবতী।

বার্নস এলিসনকে লিখেছেন :

প্রিয়তমে এলিসন,

আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে প্রকৃত পবিত্র ও অনাবিল প্রেম জগতে বিরল। যাক সে কথা। আমার কাছে তোমার সঙ্গই একমাত্র পবিত্র ধর্ম। তোমাকে পেলেই আমার সব পাওয়া হয়, আর যদি তোমার সুখ সঙ্গ থেকে কখনও বঞ্চিত হই – যদি কোনো কারণে তুমি আমার চোখের আড়ালে চলে যাও তখন তোমায় চিঠি লেখাই হয় আমার একমাত্র আনন্দ। তাই আমার মনে হয় পুণ্যে যদি স্বর্গ লাভ হয় তবে প্রেমেও (যা প্রকৃত প্রেমদান) মানুষ পুণ্যবান হতে পারে – প্রেমেও স্বর্গ ভোগ সম্ভব।

তোমার মুখখানি মনে পড়লেই হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ হয় – সমস্ত সঙ্কীর্ণতা-নীচতা দূরে যায়, প্রাণের হয় পূর্ণ বিকাশ – হিংসা দ্বেষ কুটিলতা থাকে না – পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব জীবনকে যেন সার্থক করে তোলে প্রিয়ে! দুই বাহু বিস্তার করে সকলকে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছা হয় – আকাশ বাতাস আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে – দুঃখীর জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে, হতভাগ্যের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে তাকে বুকে তুলে নিয়ে আপনার-জন করে তুলতে ব্যগ্র হয়ে উঠি।

সত্য বলছি প্রিয়ে – কতদিন কতসময়ে পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ডাকি ভগবানকে, বলি “প্রভু তুমি যা দিয়েছ সে ত আমার আশাতীত, তোমার করুণা সহস্রধারায় আমার মাথায় ঝরে পড়ছে – তোমাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। তুমি দিয়েছ আমার প্রিয়াকে ভালবাসবার শক্তি। কৃতজ্ঞতায় চিত্ত ভরে উঠে, আবার বলি আশীর্বাদ কর দেব যেন প্রিয়াকে সুখী করতে পারি – তার সুখের, তার তৃপ্তি ও সন্তোষের জন্য আমার সকল চেষ্টা, সকল শ্রম যেন সার্থক হয়। দূরে যাক কঠোরতা – হৃদয়ের কোমল ও সূক্ষ্ম বৃত্তিগুলির বিকাশ হোক। প্রেম না থাকলে মানুষ বাঁচতে পারে না। নারী সে তো স্বর্গের দেবী – প্রেম ত স্বর্গীয় জিনিষ। নারী সম্বন্ধে কখনও হীন ধারণা যেন আমার না হয়।

তোমার হৃদয় প্রেমে পূর্ণ, তোমাকে যেন যুগে যুগে ভালবাসতে পারি – তোমার হৃদয়ে যেন চিরশান্তি বিরাজ করে।

তোমারই বার্নস

কিন্তু এলসিন ছিলেন অন্যের বাগদত্তা। বার্নস সে কথা মোটেই জানতেন না। কিন্তু একদিন হঠাৎ সে কথা জানতে পেরে মনে যে আঘাত লেগেছিল তাঁর আভাষ আমরা পাই এই পত্রে; বার্নস লিখছেন –

আজ কি বলে তোমায় সম্বোধন করব ভেবে পাই না। তোমার পত্র পেলাম বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মত। এতদিন তো আমায় একথা জানাওনি! আমার হৃদয় নিয়ে এভাবে খেলা করা তোমার মত কোমলাঙ্গিনীর উচিত হয়েছে কিনা কে বলবে! অন্তরের এ বেদনা ভাষায় কি প্রকাশ করা যায়! সে চেষ্টাও আমি করব না – করে লাভ? কেই বা তা বুঝবে-কার এমন দরদ! একবার-দুইবার, বারবার পড়েছি তোমার পত্র – বিশ্বাস করতে পারিনি – স্বপ্ন না সত্য! তোমার চিঠি ছিল বড় করুণ-ভাষা ছিল কোমল, যদিও আমাকে আঘাত দেবার মত একটি ছোট শব্দও তুমি ব্যবহার কর নি তবু সে পত্রের প্রতিটি অক্ষর শেলের মত আমার মর্মে আঘাত হেনেছে, প্রতি বর্ণ জ্বলন্ত অঙ্গারের মত আমার হৃদয় দগ্ধ করেছে। হা অদৃষ্ট!

তুমি লিখেছ আমার জন্য তুমি দুঃখিত, আমি তোমায় যা দিচ্ছি তুমি তার প্রতিদান দিতে পারবে না। তুমি আমায় ‘সুখী হও’ বলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছ, সত্যই কি তাই। তুমি যদি আমার না হলে তবে আমার সুখ কোথায় – আমার সব সুখ যে তোমাতেই নিহত। তোমায় নিয়েই আমার জীবন। আশা ছিল তোমায় নিয়ে আমার জীবন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করব – কিন্তু তা হল না। এ জীবনের আজই অবসান হলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন মনে করতাম।

তোমার অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য; তোমার সুকুমার সূক্ষ্ম বৃত্তি – এ সব আমায় ততটা মুগ্ধ করে না যতটা মুগ্ধ করে তোমার সকলকে আপন করা স্বভাব, তোমার নারীসুলভ কোমলতা, তোমার শান্ত মধুর ভাব। এইগুলির একত্র সমাবেশ তোমার অন্তরের এমন একটি পরিচয় প্রকাশ করিয়ে দেয় যার তুলনা সারা পৃথিবীতে আর মিলবে না। মানুষকে সম্মোহিত করবার এই যে গুণরাশি এর একটিও অন্য় কোনো নারীতে নেই – অন্তত আমার চোখে পড়ে নি। তুমি আমার মানসপটে যে ছবিটি নিয়ে বসে আছ জগতের আর কোনো নারীই তা ম্লান করতে পারবে না।

আমার আশা আকাঙ্ক্ষা আমাকে এমন প্রলোভিত করেছিল যে আমার বন্ধ ধারণা ছিল তোমায় আমি একদিন একান্ত আপনার, একেবারে নিজস্ব ভাবেই পাব। কিন্তু আজ আমার সব ভুল ভেঙ্গে গেছে, সকল আশার পথে কাঁটা পড়েছে, এখন বুঝতে পারছি তোমাকে চাওয়ার অধিকার আমার নেই। তোমাকে প্রাণময়ী হৃদয়াধিষ্ঠাত্রী রূপে আর আমি ভাবতে পারব না জানি, কিন্তু বিপদের বন্ধু (বান্ধবী) বলে মনে করতে পারি কি? এবং সেই ভেবে তোমার সঙ্গে একদিন দেখা করতে চাই, জানিনা আমার সে ইচ্ছা পূর্ণ হবে কি না।

আর দু’চার দিনের মধ্যেই এখান থেকে চলে যাব, মনে হয় তুমিও আর এখানে থাকবে না বেশী দিন – তাই জীবনের মত তোমায় একবার শেষ দেখা দেখে যেতে চাই – অন্তত তোমার মুখের শেষ কথাগুলোই হবে আমার অভিশপ্ত বাকী জীবনটুকুর সম্বল। কত কথাই না লিখলাম – আমায় ক্ষমা কর প্রিয়ে, “প্রিয়ে” সম্বোধন এই জীবনের মত শেষ হল। ক্ষমা – ইতি

রবার্ট বার্নস

(বিরহী কবির এই পত্রের কোনো উত্তর মিস এলিসন দিয়েছিলেন কি না তার কোনো প্রমাণ নেই, বহু চেষ্টা করেও তা পাওয়া যায় নি।)

(FAQ) রবার্ট বার্নসের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রবার্ট বার্নস কে ছিলেন?

স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত গ্রাম্য-কবি।

২. রবার্ট বার্নস কোন দেশের নাগরিক?

স্কটল্যান্ড।

৩. রবার্ট বার্নসের প্রেমিকাদের নাম কী?

নেলী ফিজপ্যাট্রিক, মিস আর্থার, মিস এলিসন।

৪. রবার্ট বার্নস কাকে প্রেমপত্র লিখেছিলেন?

মিস এলিসনকে।

Leave a Comment