উডের ডেসপ্যাচ

বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উডের ডেসপ্যাচ বা নির্দেশনামার উদ্দেশ্য, নির্দেশনামার বিভিন্ন সুপারিশ, মহাসনদ বা ম্যাগনাকার্টা, নির্দেশনামার ফলাফল, নির্দেশনামার গুরুত্ব হিসেবে সর্বস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ, চুঁইয়ে পড়া নীতির পরিবর্তন, মাতৃভাষার স্বীকৃতি, জনগণের ক্ষোভ প্রশমন, উচ্চশিক্ষার বিস্তার ও নিম্নস্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য প্রদান সম্পর্কে জানবো।

উডের ডেসপ্যাচ প্রসঙ্গে চার্লস উড কে, উডের ডেসপ্যাচ কি, উডের ডেসপ্যাচ এর প্রবর্তন কাল, উডের ডেসপ্যাচ এর উদ্দেশ্য, উডের ডেসপ্যাচ এর বৈশিষ্ট্য, উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ, ভারতীয় সমাজ ও শিক্ষার উপর উডের ডেসপ্যাচ এর প্রভাব, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উডের ডেসপ্যাচ এর প্রভাব, মহাসনদ বা ম্যাগনাকার্টা উডের ডেসপ্যাচ ও উডের ডেসপ্যাচ এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

উডের ডেসপ্যাচ

ঐতিহাসিক ঘটনাউডের ডেসপ্যাচ
প্রবর্তকচার্লস উড
প্রবর্তন কাল১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ
উদ্দেশ্যশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন
উডের ডেসপ্যাচ

ভূমিকা:- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রম ও পঠন রীতিতে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না।

উডের নির্দেশনামা

এই পরিস্থিতিতে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা-বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এটি উড়ের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত।

উডের ডেসপ্যাচের উদ্দেশ্য

বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উডের এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার নিম্নতম স্তর থেকে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত যোগসূত্র রচনা করা।

উডের ডেসপ্যাচে সুপারিশ

চার্লস উডের ডেসপ্যাচ -এ যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলি হল –

  • (১) ভারতবাসীর শিক্ষার দায়িত্ব ভারত সরকারকে নিতে হবে।
  • (২) সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে পাঁচটি শ্রেনীতে ভাগ করতে হবে।
  • (৩) প্রত্যেক প্রদেশে স্বতন্ত্র শিক্ষা দপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • (৪) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • (৫) কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ এই তিন প্রেসিডেন্সি শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • (৬) একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর গঠন করতে হবে।
  • (৭) উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ কর্তা হিসেবে “ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন” পদ সৃষ্টি করতে হবে।
  • (৮) বেসরকারি বিদ্যালয় গুলিকে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (৯) নারী শিক্ষা প্রসারের ব্যাপারে জোর দিতে হবে।
  • (১০) মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (১১) শিক্ষক -শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • (১২) সাধারণ শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার করতে হবে।
  • (১৩) উচ্চ শিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে প্রভৃতি।

মহাসনদ উডের ডেসপ্যাচের

উডের নির্দেশনামা বা ডেসপ্যাচের ওপর ভিত্তি করে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই জন্য এই নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার-এ ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা’ মহাসনদ’ বলা হয়।

উডের ডেসপ্যাচের ফলাফল

  • (১) উডের সুপারিশ মেনেই ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি বাংলা, বোস্বাই, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে শিক্ষা দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (২) ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে সরকারি বিদ্যালয়-এর সংখ্যা ছিল ১৩৬৩টি।
  • (৩) উডের ডেসপ্যাচকে মান্যতা দিয়ে ভারতে সরকারি বেসরকারি বহু স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

উডের ডেসপ্যাচের গুরুত্ব

চার্লস উডের ডেসপ্যাচের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল–

(১) সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ

উডের ডেসপ্যাচ ভারতবর্ষের সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্পর্শ করেছিল। উডের দলিলে সর্বনিন্ম স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের শিক্ষার বিষয়ে দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছিল।

(২) চুঁইয়ে পড়া নীতির পরিবর্তন

চার্লস উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষায় চুঁইয়ে পড়া নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার প্রসার ঘটানাের সুপারিশ করা হয়। ফলে এটি পরােক্ষভাবে জনশিক্ষা বিস্তারের পথকেই প্রশস্ত করে।

(৩) মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও জনগণের ক্ষোভ প্রশমন

উডের ডেসপ্যাচে ইংরেজির পাশাপাশি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণকেও কিছু পরিমাণে হলেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে একদিকে শিক্ষাতত্ত্বের নীতির প্রয়ােগ ঘটার সুযােগ সৃষ্টি হয় এবং অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়।

(৪) উচ্চশিক্ষার বিস্তার

উডের ডেসপ্যাচে ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ফলে ভারতীয়দের উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত হয়।

(৫) নিম্নস্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য দান

চার্লস উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাতে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করে। ফলে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা কিছুটা হলেও পূরণ হয়।

উপসংহার :- আধুনিক শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে উডের নির্দেশনামা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রম ও পঠনরীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে সক্ষম হয়েছিল।

(FAQ) উডের ডেসপ্যাচ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. চার্লস উড কে ছিলেন?

ইংল্যান্ডের বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি।

২. চার্লস উড তার শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ কবে প্রকাশ করেন?

১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই।

৩. কাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনাকার্টা’বা’মহাসনদ’ বলা হয়?

উডের ডেসপ্যাচকে।

Leave a Comment