উমেশচন্দ্র দত্ত

উমেশচন্দ্র দত্ত -র জন্ম, পিতামাতার নাম, শিক্ষা, ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ, বিবাহ, শিক্ষকতা, বিদ্যালয় স্থাপন, নারীশিক্ষার বিস্তারে অবদান, বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও লেখক উমেশচন্দ্র দত্ত প্রসঙ্গে উমেশচন্দ্র দত্তর জন্ম, উমেশচন্দ্র দত্তর পিতামাতা, উমেশচন্দ্র দত্তর শিক্ষা জীবন, উমেশচন্দ্র দত্তর শিক্ষকতা, উমেশচন্দ্র দত্তর বিবাহ, উমেশচন্দ্র দত্ত কর্তৃক বালিকা বিদ্যালয় ও মূক বধির বিদ্যালয় স্থাপন, মদ্যপান নিবারণে উমেশচন্দ্র দত্তর ভূমিকা, নারী শিক্ষার বিস্তারে উমেশচন্দ্র দত্তর ভূমিকা, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও সভাপতি, উমেশচন্দ্র দত্ত কর্তৃক বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা, উমেশচন্দ্র দত্তর মৃত্যু ও তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ।

সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ উমেশচন্দ্র দত্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রউমেশচন্দ্র দত্ত
জন্ম১৬ ডিসেম্বর, ১৮৪০
মৃত্যু১৯ জুন, ১৯০৭ (বয়স ৮০)
পেশাসমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ
উমেশচন্দ্র দত্ত

ভূমিকা :- শিক্ষাবিদ, সংগঠক, সম্পাদক, লেখক ও সাংবাদিক রূপে বিখ্যাত ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত। বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা তার একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি।

উমেশচন্দ্র দত্তের জন্ম পরিচয়

১৬ ডিসেম্বর, ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে উমেশচন্দ্র দত্ত ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ -এর দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মজিলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের পিতামাতা

তাঁর পিতার নাম হরমোহন দত্ত এবং মাতা হলেন সর্বমঙ্গলা দেবী।

উমেশচন্দ্র দত্তের শিক্ষা

১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুর লণ্ডন মিশনারি সোসাইটি ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ রাখেন। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রাইভেটে বি.এ.পাশ করেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ

১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেনের সান্নিধ্যে এসে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন।

বিখ্যাত নেতৃত্বের সংস্পর্শে উমেশচন্দ্র দত্ত

উমেশচন্দ্র দত্ত ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার ফলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, রামতনু লাহিড়ী, আনন্দমোহন বসু, কেশবচন্দ্র সেন, প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সংস্পর্শে আসেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের শিক্ষকতা

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে রাজপুর, হরিনাভিসহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের বিবাহ

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মমতে বিবাহ করেন এবং সপরিবারে কেশবচন্দ্র সেনের ‘ভারত আশ্রম’ -এর অন্তর্ভুক্ত হন। এই সময় থেকেই তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন কাজে যোগদান করেন।

সিটি স্কুল ও কলেজে উমেশচন্দ্র দত্তের শিক্ষকতা

১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সিটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে উমেশচন্দ্র তার প্রধান শিক্ষক এবং ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমৃত্যু তার অধ্যক্ষ ছিলেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন

তিনি মজিলপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রথম এবং সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই কাজের জন্য তাকে জমিদারের প্রবল অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল।

উমেশচন্দ্র দত্তের দ্বারা মূকবধির বিদ্যালয় স্থাপন

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্ধু যামিনীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীনাথ সিংহ ও মোহিনীমোহন মজুমদারের সহায়তায় কলকাতার মানিকতলায় মূকবধির বিদ্যালয় স্থাপন করেন ও তার সম্পাদক নিযুক্ত হন।

মদ্যপান নিবারণে উমেশচন্দ্র দত্তের ভূমিকা

মদ্যপান নিবারণের উদ্দেশ্যে তিনি মেট্রোপলিটন টেম্পারেন্স এ্যান্ড সোসাইটি’ গঠন করেন। তিনি ছিলেন এর সহ-সভাপতি।

গ্রামের সভার উন্নতিে উমেশচন্দ্র দত্তের অবদান

তিনি ১৯০৩ সালে ২৪ ডিসেম্বর লুপ্তপ্রায় ‘মজিলপুর জয়নগর হিতৈষিণী সভা’র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও সভাপতি উমেশচন্দ্র দত্ত

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন বিরোধী সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠায় উমেশচন্দ্রের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল। শিবনাথ শাস্ত্রীর কথা অনুযায়ী সেই সময় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের তিনজন আদর্শবাদী মানুষ হলেন আনন্দমোহন বসু, শিবচন্দ্র দেব ও উমেশচন্দ্র দত্ত। সেই সময় উমেশচন্দ্র সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।

নারীশিক্ষা বিস্তারে উমেশচন্দ্র দত্তের ভূমিকা

সেই সময় বাংলায় নারীশিক্ষা খুবই অবহেলিত ছিল।

  • (১) উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো এবং সচেতনতা আনার জন্য এবং তাদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা বামাবোধিনী প্রকাশ করেন।
  • (২) ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি দুটি গ্রন্থও প্রকাশ করেন – ‘বামারচনাবলী’ এবং ‘স্ত্রীলোকদিগের বিদ্যার আবশ্যকতা’।

বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পাদনায় উমেশচন্দ্র দত্ত

নারীশিক্ষার লক্ষ্যে তিনি বামাবোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা (১৮৬৩-১৯০২) তাঁর এক প্রধান কৃতিত্ব। নারীমুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর এই পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পত্রিকাটি তিনি চল্লিশ বছর সম্পাদনা করেন। দেশে নারীশিক্ষা ও প্রগতির প্রসার করাই এ পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

অন্যান্য পত্রিকা সম্পাদনায় উমেশচন্দ্র দত্ত

বামাবোধিনী পত্রিকা ছাড়াও তিনি সাপ্তাহিক ধর্মসাধন (১৮৭২) ও সাপ্তাহিক ভারত সংস্কারক পত্রিকা (১২৮০) সম্পাদনা করেন।

সেনেটের সদস্য উমেশচন্দ্র দত্ত

উমেশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য ছিলেন। শিলাইদহে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধিতে ‘দাঁড়াও পথিকবর জন্ম তব ….’ খোদিত ফলকটি তার উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছিল ।

 উমেশচন্দ্র দত্তের মৃত্যু

১৯ জুন, ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ৮০ বছর বয়সে সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ উমেশচন্দ্র দত্ত মৃত্যু বরণ করেন।

উমেশচন্দ্র দত্তের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

কলকাতায় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তারই নামাঙ্কিত স্নাতক কলেজ উমেশচন্দ্র কলেজ স্থাপিত হয়

উপসংহার :- সহজ, অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা ও মহৎ আদর্শের প্রতীক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত। উদার মনোভাবসম্পন্ন উমেশচন্দ্র দত্ত সারাজীবন নিজেকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “উমেশচন্দ্র দত্ত” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উমেশচন্দ্র দত্ত।

২. বামাবোধিনী পত্রিকার উদ্দেশ্য কী ছিল?

নারী সমাজের উন্নতি সাধন।

৩. বামাবোধিনী পত্রিকার গুরুত্ব কি ছিল?

এই পত্রিকায় নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলেছিল। এই পত্রিকায় নারীদের মধ্যে বিদ্যা শিক্ষার প্রসারের জন্য দূর করে কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষিত নারী সমাজ গড়ে তোলার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল।

Leave a Comment