নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন  সন্ধি

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে স্বাক্ষরিত নিউলির সন্ধি প্রসঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর, সন্ধির শর্তাবলী, ট্রিয়ানন -এর সন্ধি প্রসঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর ও সন্ধির শর্তাবলী সম্পর্কে জানবো।

নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন  সন্ধি

ঐতিহাসিক ঘটনানিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন  সন্ধি
নিউলির সন্ধি২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ
স্বাক্ষরকারীবুলগেরিয়া ও মিত্রপক্ষ
ট্রিয়ানন -এর সন্ধি৩ নভেম্বর, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ
স্বাক্ষরকারীহাঙ্গেরি ও মিত্রপক্ষ
প্রেক্ষাপটপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ
নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন  সন্ধি

ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স -এর প্যারিস নগরীর ভার্সাইয়ে অনুষ্ঠিত ভার্সাই সম্মেলন বা প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে স্বাক্ষরিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি হল নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন-এর সন্ধি।

নিউলির সন্ধি

যুদ্ধের পর বুলগেরিয়ার নতুন সরকার মিত্রপক্ষের কাছে পাঠানো এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলে যে, যুদ্ধপরাধী হিসেবে বুলগেরিয়ার বিচার হওয়া উচিত নয়, কারণ যুদ্ধে যোগদানকারী রাজাকে ইতিমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। মিত্রপক্ষ এই দাবি নাকচ করে দেয় এবং বুলগেরিয়াকে নিউলির সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করে।

নিউলির সন্ধি স্বাক্ষর

২৭ নভেম্বর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বুলগেরিয়ার সঙ্গে মিত্রপক্ষের নিউলির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

নিউলির সন্ধির শর্তাবলী

এই সন্ধির শর্তানুসারে

  • (১) বুলগেরিয়ার পশ্চিমাঞ্চল যুগোশ্লাভিয়াকে প্রদান করা হয়, যদিও এই অঞ্চলে বুলগারদের সংখ্যাধিক্য ছিল।
  • (২) পশ্চিম থ্রেস ও ঈজিয়ান উপকূল গ্রিসকে দেওয়া হয়, যদিও অর্থনৈতিক কারণে বুলগেরিয়াকে সমুদ্রপথে নিষ্ক্রমণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
  • (৩) বুলগেরিয়ার সৈন্যসংখ্যা ২০ হাজারে বেধে দেওয়া হয়। তার নৌ-বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয় এবং
  • (৪) যুদ্ধসৃষ্টির অপরাধে তাকে ক্ষতিপূরণ দানে বাধ্য করা হয়। এইভাবে বুলগেরিয়া বলকান অঞ্চলের একটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

ট্রিয়ানন -এর সন্ধি

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩রা নভেম্বর প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে হাঙ্গেরি মিত্রপক্ষের সঙ্গে ট্রিয়ানন-এর সন্ধি স্বাক্ষর করে।

ট্রিয়ানন -এর সন্ধির শর্তাবলী

এই সন্ধির শর্তানুসারে-

  • (১) হাঙ্গেরিকে অস্ট্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
  • (২) হাঙ্গেরি নিজ রাজ্যের অভ্যন্তরস্থ ম্যাগিয়ার জাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি সন্নিহিত রাজ্যগুলির মধ্যে বণ্টন করে দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে (ক) চেকোশ্লোভাকিয়াকে শ্লোভাক প্রদেশ, (খ) রুমানিয়াকে ট্রানসিলভানিয়া এবং (গ) যুগোশ্লাভিয়াকে ক্রোশিয়া দেওয়া হয়। (ঘ) বার্গেনল্যান্ড বা পশ্চিম হাঙ্গেরিকে অস্ট্রিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়।
  • (৩) হাঙ্গেরিকে খণ্ড-বিখণ্ড করে তার সৈন্যসংখ্যা ৩৫ হাজারে সীমাবদ্ধ করা হয়।
  • (৪) হাঙ্গেরির নৌ-বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়।
  • (৫) যুদ্ধসৃষ্টির অপরাধে হাঙ্গেরিকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়।

উপসংহার:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পরাজিত দেশ গুলির উপর জোর করে বিভিন্ন সন্ধি বা চুক্তি চাপিয়ে দেয়। নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন-এর সন্ধি ছিল তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

(FAQ) নিউলির সন্ধি ও ট্রিয়ানন সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কবে কাদের মধ্যে নিউলির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?

২৭ নভেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়া ও মিত্রপক্ষ।

২. কবে কাদের মধ্যে ট্রিয়ানন-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?

৩ নভেম্বর, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ হাঙ্গেরি ও মিত্রপক্ষ।

৩. কোন সম্মেলনে নিউলির ও ট্রিয়ানন-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে।

৪. কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিউলির ও ট্রিয়ানন-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

Leave a Comment